সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• জাদু-শহর ‘জানাডু’
‘জানাডু’— শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাদুকর ম্যানড্রেক ও পাহাড়ের উপর তার সেই গোলোকধাঁধাঁ বাড়ি। তবে, বাস্তবে চিনের জানাডু ছিল কুবলাই খানের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। পরে তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে, বেজিঙে। জানাডুর প্রকৃত নাম কাইপিং। ১২৫২ থেকে ১২৫৬ সালের মধ্যে নির্মিত এই শহরের স্থাপত্যশিল্পী ছিলেন লিউ বিংঝং। ১২৬৪ তে শহরের নাম হয় শাংডু।

শহরটি ছিল বর্গাকার এবং দু’ভাগে বিভক্ত— অন্দর ও বাহির। ২০০৮ সাল থেকে খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ও ২৯টি রাজপথ। সে যুগের নিকাশি ব্যবস্থা বর্তমানের থেকে বেশ উন্নত ছিল, জানিয়েছেন জানাডুর বিশেষ প্রত্নতত্ত্ব দলের প্রধান টালা। চিন দেশের প্রতীক ড্রাগনের ছবি আঁকা মার্বলের থাম, গির্জা, মসজিদ ও বৌদ্ধ বিহারও উদ্ধার হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ থেকে অনুমান করা হয় যে কুবলাই খানের রাজপ্রাসাদ চত্বর ছিল বেজিং শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা জুড়ে। শহরের চারপাশে যে দেওয়াল ছিল তা এখন ঘাসে ঢাকা জমি। এই শহর চিনের ৪২তম হেরিটেজ সাইট ও বিশ্বের ৩০তম।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যোগসূত্রের শহর ছিল জানাডু। এর প্রভাব পড়েছিল সাহিত্য ও অন্যান্য সৃষ্টিশীল কাজে। ১২৭৫ সালে বিশ্বখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো এসেছিলেন এই শহরে। কুবলাই খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা লিখে গেছেন মার্কো পোলো। ইউয়ান সাম্রাজ্যের এই রাজাকে নিয়ে ১৭৯৭ সালে কবিতা লেখেন ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ। জানাডু ছিল এই সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী, যেখানে এগারো জন রাজার মধ্যে ছ’জনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৩৬৯ সালে মিঙ সেনাদের আক্রমণে শেষ হয়ে যায় ইউয়ান সাম্রাজ্য। তখন রাজা ছিলেন তোগুন তেমুর।

ইতিহাস, স্থাপত্য, সাহিত্য, শিল্পকর্ম— সব মিলিয়ে জানাডু, ২০১২ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর তালিকাভুক্ত হয়।

• ‘কুলি ঘাট’-এর ইতিকথা
১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে দাস প্রথা বন্ধ করে চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের নতুন পন্থা বেছে নেয় ইংরেজ সরকার— ‘ইনডেনচার্ড লেবরর’। এ ব্যবস্থায় তারা ঠিক করে, প্রত্যেক স্ত্রী বা পুরুষ ‘দাস’-এর কর্মক্ষেত্র হবে তার স্বদেশ থেকে দূরে। সেখানে সাধারণ কর্মী হিসেবে তারা কাজ করবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সেই সময় মরিশাসে চিনি উত্পাদন এতটাই বেশি হত যে ঠিক হয় ওখানেই প্রথম বার এই নতুন ধারার শ্রমিক পাঠানো হবে।

২ নভেম্বর ১৮৩৪, ৩৬ জন ভারতীয় শ্রমিক নিয়ে শুরু হয় এই ‘গ্রেট এক্সপেরিমেন্ট’। রওনা হল শ্রমিকেরা। জাহাজের নাম অ্যাটলাস। ভারত থেকে জলপথে মরিশাস পৌঁছতে লাগত ৮ থেকে ১০ দিন। শ্রমিকদের নামানো হত ‘কুলি ঘাটে’। নানা রকম কাগুজে ক্রিয়াকলাপ ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য দু’দিন সেখানেই থাকতে হত তাদের। সম্পূর্ণ সুস্থরাই কাজের বরাত পেত। আর সামান্য কোনও অসুস্থতা বা সংক্রমণ থাকলে চিকিত্সার জন্য পাঠানো হত হাসপাতালে। তখনকার দিনে মহামারির আকার নিত ‘গুটি বসন্ত’। তাই ওই ঘাটেই সবার টিকাকরণ করা হত। ঘাটের প্রশাসনিক দফতরে নথিভুক্ত করা হত প্রত্যেক শ্রমিকের ব্যক্তিগত তথ্য। ১৮৬৫ সাল থেকে শ্রমিকের ছবি তোলা শুরু হয়, যার একটি লাগানো থাকত এই নথির সঙ্গে। আর অন্যটি থাকত শ্রমিকের কাছে।

১৮৪৯ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত কুলি ঘাটে নামে প্রায় পাঁচ লক্ষ শ্রমিক। সব থেকে বেশি আসে ১৮৪৩ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে। মূলত ভারত থেকেই ‘ইনডেনচার্ড লেবরর’ পাঠানো হত। তবে চিন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মাদাগাস্কার ও পূর্ব আফ্রিকাও পিছিয়ে ছিল না। ভারতের বিভিন্ন শহর, যেমন বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল ও মুম্বই থেকে রফতানি করা হত এই শ্রমিকদের। ১৮৭০ সাল থেকে এই প্রথার অবসান শুরু হয় এবং ১৯১০ সালে সম্পূর্ণ ভাবে তা বন্ধও হয়ে যায়।

কুলি ঘাটের ঘরগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়। ১৯৫০ সালে সেখানে ইনডেনচার্ড লেবররদের নথিগুলি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ এক দফতর গঠন করা হয়। কিন্তু ১৯৬০ সালে সামুদ্রিক ঝড় ‘ক্যারল’ আছড়ে পড়ায় বেশ ক্ষতি হয় এই জায়গার। পরে এই ঘাটের আরও বেশ কিছু অংশ নষ্ট হয় সড়কপথ তৈরির কারণে। পরবর্তী কালে সব নথি মরিশাসের মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউটে সরিয়ে আনা হয়। অবশেষে এই স্থান ঐতিহাসিক মর্যাদায় জাতীয় ঐতিহ্য আখ্যা পায় ১৯৮৭ সালে। ‘কুলি ঘাট’ পরিচিত হয় পরিবর্তিত নাম ‘অপ্রবাসী ঘাট’ হিসেবে। মরিশাসে জাতীয় ছুটির তালিকায় ২ নভেম্বর ঢুকে পড়ে ২০০২ সালে। তৈরি করা হয় অপ্রবাসী ঘাট ট্রাস্ট ফান্ড— ইতিহাসের সংরক্ষণ, প্রতিস্থাপন ও উন্নীতকরণের জন্য। ২০০৬ সালে লিথুয়ানিয়ায় ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে অপ্রবাসী ঘাট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিভুক্ত হয়।

• প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রাপ্তি ব্রাজিলে
২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৪তম অধিবেশন বসে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায়। একুশটি নতুন জায়গা স্থান পায় ‘ঐতিহ্য’ তালিকায়— যার মধ্যে ১৫টি সাংস্কৃতিক, ৫টি প্রাকৃতিক ও একটি ‘মিক্সড’, অর্থাত্ যে জায়গা সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক, উভয় ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যমণ্ডিত।

৫টি প্রাকৃতিক ও একটি ‘মিক্সড’ ঐতিহ্য তালিকায় যাদের নাম স্থান পায়—

• চিনা দানসিয়া: লাল বেলেপাথরের খুব উঁচু ও খাড়াই পাহাড়, তাতে হঠাত্ করে গজিয়ে ওঠা থাম, খাদ, গুহা, উপত্যকা, এমন কি ঝরনাও— দক্ষিণ-পশ্চিম চিনে এই ধরনের ভুখণ্ড একেবারেই বিরল নয়। এবং এই ধরনের পাহাড়ের ফাঁকফোকরে এখনও জীবনধারণ করে প্রায় চারশোর বেশি বিরল ও লুপ্তপ্রায় প্রাণিকুল ও উদ্ভিতজগত্। দেশের ৬টি ‘দানসিয়া’ বৈশিষ্ট্য স্থান প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যোগ হয় একই বছরে— গুয়ানডঙের মাউন্ট দানসিয়া, হুনানের মাউন্ট ল্যাংসান, জিয়াংসির মাউন্ট লোংঘু, ঝেজিয়াঙের মাউন্ট জিয়াংলাং, ফুজিয়ানের তাইনিং ও গুইঝৌয়ের চিসুই।

• পিপা (ফিনিক্স আইল্যান্ড সংরক্ষিত অঞ্চল): মধ্য প্রশান্ত সাগরের প্রায় ৪ লক্ষ ৮ হাজারেরও বেশি জায়গা জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সামুদ্রিক সংরক্ষিত স্থান। অস্ট্রেলিয়া ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাঝামাঝি রয়েছে কিরিবাটি গণতন্ত্র, তিনটে দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে তৈরি এই জলজ গণতন্ত্রের একটি হল ফিনিক্স আইল্যান্ড। এ দ্বীপপুঞ্জের বৈশিষ্ট্য এখানকার ৮০০ রকমের প্রাণিকুল— ২০০ রকমের প্রবাল, ৫০০ রকমের মাছ, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী ও পাখি। প্রায় ৪ হাজার মিটার গভীর জলস্তম্ভের কারণে এই অঞ্চল পৃথিবীতে গভীরতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।

পিপা

শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস

পুতরানা মালভূমি

চিনা দানসিয়া
• পুতরানা মালভূমি: বলগা হরিণ ও ‘বিগ হর্ন’ মেষ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মধ্য সাইবেরিয়ার এই মালভূমিতে ১৯৮৮ সালে গড়ে ওঠে এক সংরক্ষিত স্থান। আগ্নেয়গিরিজাত ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি এই মালভূমিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উত্তরমেরুর মরু অঞ্চল এবং অস্পৃষ্ট ঠান্ডা জলাশয়। এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কামেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ মিটার উচ্চতায়।

• রিইউনিয়ন আইল্যান্ড: ফ্রান্সের লা রিইউনিয়ন জাতীয় উদ্যানের পাশেই দু’টি আগ্নেয়গিরি বিশিষ্ট এই দ্বীপ দৃশ্যত খুবই মনোরম। পাহাড় ও গাছ-গাছালির এমন বৈচিত্রই এই স্থানকে জায়গা করে দিয়েছে ঐতিহ্যের তালিকায়।

• শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস: লুপ্তপ্রায় বেশ কিছু প্রাণী, যেমন পার্পেল ফেসেড লাঙ্গুর ও চিতাবাঘের বাসস্থান শ্রীলঙ্কার এই অঞ্চলে। ‘পিক উইল্ডারনেস’ সংরক্ষিত স্থান ও ‘হর্টন প্লেনস’ জাতীয় উদ্যান— প্রকৃতির এই দুই অঞ্চল নিয়ে সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস। ১৯৮৮ সালে সিংহরাজা সংরক্ষিত বনাঞ্চল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পাওয়ার ২২ বছর পর শ্রীলঙ্কার আরও এক প্রাপ্তি এই সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস।

• পাপাহানাউমোকুয়াকিয়া: ২০১০ সালের একমাত্র ‘মিক্সড’ তকমা মেলে হাওয়াই দ্বীপের এই অংশের। ২০০৬ সালে এই অঞ্চলকে জাতীয় সামুদ্রিক স্থান হিসেবে আখ্যা দেন তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ। প্রায় ১৯৩০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই দ্বীপপুঞ্জের নাম পাপাহানাউমোকুয়াকিয়া হয় ২০০৭ সালে। সমুদ্রের প্রকৃতিগত মূল্যের সঙ্গে হাওয়াই দ্বীপের আদি সভ্যতার আভাস পাওয়া যায় এই দ্বীপ সমূহে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• পাওয়া গেল ‘হেলমুট’ কে
প্রায় ৯ ফুট লম্বা উলি ম্যামথের কঙ্কাল পাওয়া গেল প্যারিসের মার্নে নদীর তীরে। একবিংশ শতাব্দীর সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। খুঁজে পাওয়া ম্যামথের দাঁত ও হাড় পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, এর অস্তিত্ব ছিল আনুমানিক ২০ হাজার বছর আগে।

শিকার তো বটেই, পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন ও সংক্রামক রোগের কারণেই পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ম্যামথ। মৃত্যুকালে ম্যামথটির বয়স ছিল ৩০। উদ্ধারস্থলের পাশে পড়ে থাকা কয়েকটি ধারালো অস্ত্র দেখে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাংসের জন্য নিয়ান্ডারথালরা ম্যামথটিকে শিকার করে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এর নামকরণ করেছেন ‘হেলমুট’।

• কর আদায়ে নীলনদের তীরে ফারাও
খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে মিশরের ছবি— নৌকাযোগে রাজা চলেছেন কর আদায়ে। সঙ্গে পাত্র-মিত্র-অমাত্য। রাজার মাথায় সাদা মুকুট। নীলনদের তীরে ১৮৯০ সালে আবিষ্কৃত হয় ফারাও নারমেরের রাজত্বকালের এই চিত্রকলা। সত্তর বছর পর ১৯৬০ সালে মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিক লাবিব হাবাশি নিদর্শনগুলির কিছু ছবি তুললেও সেগুলি কখনও প্রকাশ করেননি।

প্রায় ১২০ বছর বিস্মৃতির অতলে থাকার পর ২০০৮ সালে পুনরাবিষ্কৃত হয় নিদর্শনগুলি। দক্ষিণ মিশরের নাগ-এল-হামদুলাব শহরের পশ্চিমপ্রান্তে আবিষ্কৃত এই নিদর্শনগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ দীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত। ফারাও আমলের প্রাচীনতম এই ছবির সঙ্গে বেশ কিছু পশুপাখির ছবিও পাওয়া গিয়েছে ওই এলাকা থেকে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ফারাও যুগের সূচনার ইতিহাসের অনেক অজানা কথা এই ছবিগুলি থেকে জানা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

• ‘ভিন্ গ্রহের প্রাণী’র খুলি উদ্ধার
মেক্সিকোর এক সমাধিক্ষেত্র খুঁড়ে পাওয়া গেল গ্রহান্তরের প্রাণীদের মতো দেখতে পঁচিশটি খুলি। প্রায় হাজার বছরের পুরনো এই সমাধিক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় মেক্সিকোর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের ওনাভাস গ্রামে। এলাকায় একটি সেচখাল কাটার সময়ে স্থানীয়দের নজরে আসে বিচিত্র দর্শনের এই খুলিগুলি।

গ্রহান্তরের প্রাণীদের খুলি বলে প্রথমে মনে করা হলেও পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীদের দাবি, এগুলি বানানো হয়েছে মানুষের খুলি দুমড়ে মুচড়ে, বিকৃত করে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রাচীন কালে মধ্য আমেরিকায় এই খুলি-বিকৃতির চল থাকলেও উত্তরপ্রান্তে এই ধরণের আবিষ্কার এই প্রথম। পঁচিশটি খুলির মধ্যে তেরোটি খুলির করোটি ও পাঁচটি খুলির দাঁতের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে শ্রেণি বিভাজন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচার এই খুলি-বিকৃতির প্রধান কারণ। তবে স্থানীয় মানুষেরা এগুলিকে গ্রহান্তরের প্রাণীদের খুলি বলেই মনে করেন। তবে দু’টি ঘটনায় এখনও অন্ধকারে বিজ্ঞানীরা। এক, বেশ কিছু খুলিতে অলঙ্কারের অস্তিত্ব রয়েছে আর দুই, পঁচিশটির মধ্যে মাত্র একটিই মহিলার কঙ্কাল।

• মিলল ইউরোপের প্রাচীনতম শহরের খোঁজ
কৃষ্ণ সাগরের উপকূল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বুলগেরিয়ার একটি ছোট্ট শহর প্রোভাদিয়া। ইউরোপের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক শহরগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। সম্প্রতি অধ্যাপক ভাসিল নিকোলভের নেতৃত্বে এক দল প্রত্নতাত্ত্বিক এখানে খননকার্য চালান। অধ্যাপক নিকোলভ জানিয়েছেন, এই শহরের অস্তিত্ব ছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০০ অব্দে। ৩ মিটার উঁচু ও ২ মিটার পুরু পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল সমগ্র শহরটি। এ রকম ঘেরা শহর প্রাগৈতিহাসিক ইউরোপে প্রথম। প্রায় তিনশো থেকে সাড়ে তিনশোটি পরিবার এখানে বাস করত। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলি বাস করত দোতলা বাড়িতে। সমুদ্র থেকে লবণ উত্পাদন ও রফতানিই ছিল এঁদের প্রধান জীবিকা। আর এই লবণ ব্যবসার কারণে এই শহরটিকে বলা হত বলকানের ‘টাঁকশাল’।

অন্য দিকে, প্রত্নতাত্ত্বিক মার্গারিটা লিউনচেভা জানিয়েছেন, শহরে দুই শ্রেণির মানুষ বসবাস করতেন— উচ্চবর্গ ও নিম্নবর্গ। শহরে প্রাপ্ত অন্যান্য জিনিস থেকে এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে, প্রায় ৭ হাজার বছর আগে শহরে শ্রেণিব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া বাঁকানো সূচের মতো তামার কয়েকটি জিনিস থেকে অনুমান করা যায়, মহিলারা চুল বাঁধার ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। সবচেয়ে যে বিষয়টি প্রত্নতাত্ত্বিকদের আশ্চর্য করেছে তা হল, শহরবাসীর শেষকৃত্যের রীতি। একটি সমাধিক্ষেত্র খনন করে দেখা গিয়েছে, কোমরের অংশ থেকে মৃতদেহগুলি দু’ভাগে ভাগ করা। সমাধিস্থ করার সময় কোমরের অংশটি উপরের দিকে রাখা হত ও দেহের উপরি ভাগ নিচের দিকে। তবে সমাধিস্থ করার এই রীতির বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• প্রবালের দেশে নতুন সদস্যদের খোঁজ
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবালপ্রাচীরের দেখা মেলে। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত ন’শোটিরও বেশি দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ২৯০০ রকমের প্রবাল সমৃদ্ধ এই জায়গা ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ নামে খ্যাত। প্রবাল হল নিডারিয়া বর্গভুক্ত অ্যান্থোজোয়া শ্রেণির এক প্রকার ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী, যারা একত্রিত হয়ে কলোনি আকারে অবস্থান করে ‘পলিপ’ পরিচিতি নিয়ে। কলোনির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবগুলি আত্মরক্ষার জন্য ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটা আস্তরণ সৃষ্টি করে যা জমাট বেঁধে রিফ বা প্রাচীর তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বয়স আনুমানিক ২০ হাজার বছর। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের আয়তনও বৃদ্ধি পেয়েছে। কমপক্ষে ৭০ রকমের জীবমণ্ডলে বিভক্ত এই রিফের মধ্যে ৩০ টাতেই বিভিন্ন গোত্রের প্রবালের দেখা মেলে।

এত দিন এর অধিকাংশই ছিল বিজ্ঞানীদের অজানা। এ বার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৫ মিটার গভীরে অজানা এক প্রবাল-দেশের খোঁজ পেলেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক গবেষণায় গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ২৩০০ কিলোমিটার পরিমণ্ডলে ৩০টি নতুন প্রবালপ্রাচীরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যাদের গভীরতা প্রায় ৬০ মিটার। সমুদ্রের অন্দরে এ জায়গায় রাতের মতো অন্ধকার এবং একদমই মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে উষ্ণায়ণ, জলস্তরের উচ্চতাবৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে পারমাণবিক পরীক্ষানিরীক্ষা, উপকূলবর্তী দূষণ ইত্যাদি নানা কারণে এই প্রজাতি ধ্বংসের মুখে।

• ‘আবহাওয়াবিদ’ শামুক
শামুক গাছে উঠলে নাকি বৃষ্টি পড়ে! ঠাকমা, দিদিমাদের মুখে শোনা এই গল্পকথাকেই বাস্তবে প্রায় মিলিয়ে ফেললেন স্কটল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাগৈতিহাসিক জলবায়ুর বিশদ বিবরণ দিতে সক্ষম মোলাস্কা পর্বের এই প্রাণীরা।

কী রকম? ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুহা থেকে পাওয়া খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৯ হাজার থেকে ২.৫ হাজার বছর আগের কিছু শামুকের খোলসের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। আর সেখান থেকেই প্রাগৈতিহাসিক বিভিন্ন যুগের জলবায়ুর পরিবর্তন, আদ্রতার ওঠা নামা সংক্রান্ত অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় এই রকম অনেক স্থল-শামুকের খোলসের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘মাস স্পেকট্রোমিটার’ যন্ত্রে খোলসগুলির রাসায়নিক উপাদানের আইসোটোপ পরীক্ষা করে প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তরযুগ এবং তাম্র ও ব্রোঞ্জ যুগের জলবায়ুর পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। শামুকের খোলসের বহিঃস্তরে মুখ্যত ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের একটি আস্তরণ থাকে যা একটি জটিল জৈব যৌগ সৃষ্টি করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন ও কার্বনের পর্যায়ক্রমিক জারণ-বিজারণ সংক্রান্ত পরিবর্তনের ফলে এই যৌগেরও পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীরা বর্তমান যুগ ও প্রাগৈতিহাসিক যুগের খোলসের উপর তুলনামূলক পরীক্ষা চালিয়ে বর্তমান যুগের সঙ্গে হাজার বছর আগের আবহাওয়ার পার্থক্য লক্ষ করেছেন।

• ‘ভিনদেশী টিয়া’ শোনে-গায় পছন্দের গান
শেখানো বুলি আওড়ে হামেশাই তাক লাগিয়ে দেয় বাড়ির পোষ মানা টিয়া। অনুকরণের এই ক্ষমতা তাদের সহজাত। তবে এ বার জানা গেল, শুধু কথা বলাই নয় পছন্দের গান শুনতেও ভীষণ পছন্দ করে আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির টিয়া। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সিট্টাকাস এরিথাকাস— ধূসর রঙের এই বিশেষ প্রজাতির টিয়ার দেখা মেলে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে। মূলত ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য, সাভানা তৃণভূমি, ম্যানগ্রোভ বন এদের পছন্দের জায়গা। ‘রক’ ও ‘ফোক’ গানের তালে তালে নাচ এদের বিশেষ পছন্দ।

তবে, শুধু গান শুনতে নয়, এরা গাইতেও ভালবাসে এবং সেটা পছন্দের ঘরানার গান। একান্তে ইউ ২, ইউবি ৪০, জন বেজ প্রমুখ ব্যান্ডের ‘রক’ গান গুনগুন করতেও দেখা গিয়েছে এদের। এই টিয়ারা গানের সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে ছন্দ ও তালের সামঞ্জস্যও বজায় রাখে। এ যেন ঠিক মানুষেরই মতো। আবার সব ধূসর টিয়ার পছন্দ একই রকম নয়। বিজ্ঞানীরা একই প্রজাতির বিভিন্ন টিয়াদের পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কারও ‘পপ’ পছন্দ তো কারও ‘জ্যাজ’, আবার কেউ কেউ ‘অর্কেস্ট্রা’তেও মতি রাখে!

• বিপাশার তীরে হুপারের উড়াল
১১৩ বছর পরে হিমাচলের বিপাশা নদীর ধারে ফের দেখা মিলল বিরল প্রজাতির পরিযায়ী, হুপার রাজহাঁসের। প্রতি বছরই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি ভিড় জমায় হিমাচল প্রদেশের পং ড্যাম লেকে। ধৌলাধর পর্বতমালায় ঘেরা হিমাচলের কাংড়া জেলায় ১৯৬০ সালে পং ড্যাম লেক বা মহারানা প্রতাপ সাগর ভারতের অন্যতম বাঁধ হিসেবে গড়ে উঠলেও ১৯৮৩-তে এটি পাখিরালয়ের মর্যাদা পায়।

সমীক্ষা অনুযায়ী গত বছর সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়া থেকে প্রায় ৯০টি প্রজাতির দেড় লক্ষ পরিযায়ী পাখি জড়ো হয়েছিল এই লেকে। বন দফতরের এক আধিকারিকের মতে বিগত দশ বছরের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশে মোট সাড়ে বারোশো প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে বিরল হুপার রাজহাঁস ৪১৮তম প্রজাতির তকমা লাভ করেছে।

পাখিবিদদের মতে এই রাজহাঁসের আদি নিবাস মুখ্যত মধ্য এশিয়া ও ইউরোপে। এ ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার চিন, জাপান ও ইন্দোনেশিয়াতেও এদের দেখা মেলে। ফিনল্যান্ডের জাতীয় পাখি হুপার রাজহাঁস ভারতে প্রথম আসে ১৯০০ সালে। বৈজ্ঞানিক নাম, সিগনাস সিগনাস। ২০-৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের বিরল প্রজাতির এই হাঁসের পা দু’টি দেহের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এরা দেহের ভার বহন করতে অক্ষম। তাই বেশির ভাগ সময়ই এদের জলাভূমিতে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। প্রজননের জন্যও এরা বেছে নেয় জলাভূমি সংলগ্ন এলাকা। সে জন্যই সুদূর দক্ষিণ ইউরোপ থেকে হাজার মাইল অতিক্রম করে এরা ছুটে আসে বিপাশার ধারে গড়ে ওঠা পছন্দের জলাভূমি পং ড্যাম লেকে।

পার্বণ
• বসন্তের খাজুরাহো
শীতের তেজ অনেকটাই ফিকে হয়ে আসে যখন, প্রকৃতি জুড়ে ঋতুরাজ বসন্তের ওড়াউড়ি, তখন স্থাপত্য সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ খাজুরাহো মাতে নৃত্যোত্সবে — খাজুরাহো ফেস্টিভ্যাল অফ ডান্স। ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ ধ্রুপদী এই নৃত্যোত্সবে দেশের নানা প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন নৃত্যধারা প্রদর্শিত হয়। একই মঞ্চে কত্থক, কুচিপুডি, ওড়িশি, ভারতনাট্যম, কথাকলি ইত্যাদি ধারার নাচ পরিবেশিত হয়। দেবী জগদম্বার মন্দির, বামন মন্দির, চতুর্ভুজ মন্দির, চিত্রগুপ্ত মন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির— ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের মিশেলে খাজুরাহো বিশ্বখ্যাত। নজর কাড়া এই স্থাপত্যকলার টানে সারা বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। বসন্তে এলে তাঁদের ‘রথ দেখা, কলা বেচা’ দুই-ই হয়।

প্রতি বছর বসন্তে এক সপ্তাহ ধরে এই নাচের উত্সব হয়। এ বছর যেমন ২০ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নাচের অনুষ্ঠানগুলি মূলত হয় খাজুরাহোর চিত্রগুপ্ত ও বিশ্বনাথ মন্দিরের সামনে মুক্তাঙ্গনে। সাম্প্রতিক কালে ‘ফিউসন ডান্স’ও এই উত্সবে জায়গা করে নিয়েছে। খাজুরাহো-সহ ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প সংস্কৃতি ‘জেন ওয়াই’য়ের কাছে তুলে ধরাই এই উত্সবের মূল উদ্দেশ্য। দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পীরা এখানে নৃত্য পরিবেশন করেন। প্রতি দিন সন্ধে থেকে শুরু হওয়া নাচের এই উত্সবে প্রবেশ অবাধ।

• রঙে মাতোয়ারা রাজস্থানের ব্রিজ
ভরতপুর জেলার ব্রিজ, ঐতিহ্যপূর্ণ একটি উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষে প্রতি বছর তিনদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রিজ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দোল উৎসবের কিছুদিন আগে এই মহোৎসবে এর আয়োজন করা হয়।

এ উত্সবে গ্রামবাসীরা রঙবেরং-এ নিজেদের সাজিয়ে কৃষ্ণ এবং রাধার প্রেমকাহিনি রাসলীলায় মাতে। এ ছাড়াও লোকনৃত্য-লোকগীতির আসরও বসে। আবালবৃদ্ধবনিতা, ধনী, দরিদ্র সকলেই একত্রিত হয়ে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে বসন্তকে আহ্বান জানায়। স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ব্রিজ উত্সব। দেশ বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আসেন রঙের এই উৎসবে নিজেদের রাঙিয়ে তুলতে।

• সুরজকুণ্ড হস্তশিল্প মেলা
রাজ্যের পর্যটন দফতরের উদ্যোগে হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে হস্তশিল্প মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর। কুটির ও হস্তশিল্পের প্রসার ঘটানোই এই মেলার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীদের কাছে একটি অন্যতম প্রদর্শন ও বিপণন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এই মেলা জন্মলগ্ন থেকেই। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই হয় মেলা। এ বছরও ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুরজকুণ্ডে এই মেলা চলল।

প্রতি বছর এই মেলায় দেশের এক একটি রাজ্য বা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ‘থিম’ করা হয়। ২০১০-এ রাজস্থান, ২০১১য় অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ২০১২ ও ১৩-র ‘থিম রাজ্য’ কর্নাটক। ২০০৮ সালে এই মেলার ‘থিম রাজ্য’ ছিল পশ্চিমবঙ্গ। সুরজকুণ্ড হস্তশিল্প মেলা হরিয়ানার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের প্রসারের ক্ষেত্রেও বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে।

প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রিত দেশই সুরজকুণ্ড হস্তশিল্প মেলায় আমন্ত্রণ পায়। সে রীতি মেনে এ বারের মেলায় আমন্ত্রিত দেশ ছিল আফ্রিকা। সার্ক অন্তর্গত সব দেশই এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অসংখ্য শিল্পী আসেন। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য মেলার প্রবেশমূল্যে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। বয়স্কদের মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য দূষণ মুক্ত ব্যাটারি চালিত ছোট গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়। শুধু তাই নয়, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থাও ছিল। এই প্রথম অন লাইনে মেলার টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরিবেশ দূষণ রুখতে মেলায় প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এ বারের সুরজকুণ্ড হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

• কোনার্ক নৃত্য ও সঙ্গীত উত্সব
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় নাম রয়েছে ওড়িশার কোনার্কের সূর্য মন্দিরের। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর জন্য এই সূর্যমন্দিরের টানে সারা বছর দেশি বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসেন এখানে। পুরীতে আসা অধিকাংশ পর্যটক ও পূণ্যার্থীরাও কোনার্কে আসেন। এ হেন কোনার্কে স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহ্যের সঙ্গে একেবারে সামঞ্জস্য রেখে ঐতিহ্যবাহী এক ধ্রুপদী নৃত্য ও সঙ্গীতের উত্সব হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সমন্বয়ে মন্দির চত্বরের মঞ্চে আয়োজিত এই উত্সব আসলে আধ্যাত্মিক ও আত্মানুভূতির এক অদ্ভুত মিশেলের জন্ম দেয়। এ বছর ২৮তম কোনার্ক নৃত্য ও সঙ্গীত উত্সব ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হবে। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি। উত্সব কোনারকের সূর্যমন্দির সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে হয়। প্রধানত জগন্নাথ ও সূর্যদেবের আরাধনায় নানা নৃত্য প্রদর্শিত হয়। ঘুঙুর,পাখোয়াজ, কাঁসর-ঘণ্টা সহযোগে পরিবেশিত অসাধারণ নৃত্যশৈলী পরিবেশটাকে মায়াময় ও সুন্দর করে তোলে। ওড়িশা পর্যটন দফতর ও ওড়িশি রিসার্চ সেন্টারের যুগ্ম প্রয়াস এই নৃত্যোত্সবটি বর্তমানে আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আকর্ষণের কেন্দ্রে।

পর্যটন কেন্দ্র
• স্বর্গের ছোঁয়াচ লাগে লোলাব উপত্যায়
জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার লোলাব উপত্যকাকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনল রাজ্য সরকার। আর এই সরকারি প্রয়াসকে স্বাগত জানালেন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা কুপওয়ারা জেলার মানুষ। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, লোলাব ও বুঙ্গুস ভ্যালিকে নতুন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

লোলাব— মখমলের মতো ঘাসে ঢাকা উপত্যকা আর কারাকোরাম পর্বতমালার রুক্ষ সৌন্দর্য, সব মিলিয়ে ভূ-স্বর্গের এক অনন্য দৃশ্যপট। এ ছাড়াও রয়েছে সাতবরণ পাহাড়ের শতাব্দী প্রাচীন গুহা এবং সুড়ঙ্গ। কথিত আছে এই সুড়ঙ্গগুলি নাকি রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে এগুলি খুবই মূল্যবান। সম্প্রতি এই পাহাড়গুলিকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের পর্যটন দফতরের অনুমান, নতুন এই জায়গাটি বিশেষত বিদেশি পর্যটকদের খুবই পছন্দের হবে।

কাশ্মীরে অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে সামরিক অভিযানের জন্য গুহাগুলি বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যাতে ক্ষতি না হয় সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। এমনিতেই জনসংখ্যা এবং বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে হিমবাহগুলি দ্রুত গলতে শুরু করেছে। এমনকী পুরোপুরি অবলুপ্তও হয়েছে বেশ কিছু হিমবাহ। তাই, এলাকার আর্থিক বিকাশ এবং স্থানীয়দের কাজের সুযোগ ইত্যাদির পাশাপাশি পরিবেশের কথাও মাথায় রেখেই লোলাব উপত্যকাকে এক নতুন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

• ভ্রমণ তালিকায় ‘পভার্টি পয়েন্ট’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর লুইসিয়ানার এপস্ গ্রাম— ইউনেস্কোর নজরে আসার কারণ আনুমানিক প্রায় ১৬৫০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বে নির্মিত এই অঞ্চলের অসংখ্য মাটির বাঁধ ও দেওয়াল। আশপাশের বিশেষ এক ধরনের গাছালির নামানুসারে অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় ‘পভার্টি পয়েন্ট’। আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের এই সভ্যতা মিসিসিপি নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে গড়ে উঠেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণায় এই গড়ে ওঠার নানাবিধ কারণ উঠে এসেছে। যেমন, ন’শো একরেরও বেশি জায়গা জোড়া এই ‘পভার্টি পয়েন্ট’ হয়তো ছিল বাণিজ্য কেন্দ্র বা সাধারণ বাসপোযোগী জায়গা। অনেকে আবার বলেছেন, এখানে ধর্মীয় আচার বিধি পালন করা হত। কারও কারও মতে এই জায়গায় আছে আধ্যাত্মিক শক্তি। আবার কেউ কেউ বলেন বহির্জগতের ‘স্পেসশিপ’ অবতরণ করত এখানকার মাটিতে!

বিংশ শতকের গোড়ার দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের নজরে আসা এই অঞ্চলটির নামকরণ হয় সেই সময়ই। ১৯৬০ সালে পভার্টি পয়েন্টকে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন প্রত্নতাত্ত্বিক জন গ্রিফিন। সে প্রস্তাব মনোনীত হয় ১৯৬২ তে। ২০০৬ সাল থেকে পভার্টি পয়েন্টে গবেষণার কাজ করছেন ডায়না গ্রিনলি। মূলত তাঁর তত্ত্বাবধানেই ২০১৪ সালে পভার্টি পয়েন্ট জায়গা করে নিতে পারে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এটিই হবে লুইসিয়ানার প্রথম স্থান।

জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষিত হওয়ার পর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে পভার্টি পয়েন্টে। পর্যটকদের জন্য রোজই খোলা থাকে— সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা। ইংরেজি নববর্ষ,থ্যাঙ্কসগিভিং ডে ও ক্রিসমাস— বছরের এ তিন দিন বন্ধ থাকে পভার্টি পয়েন্টের দরজা। জাতীয় ঐতিহ্য দর্শনের মূল্য জন প্রতি চার ডলার। তবে ১২ বছরের নীচে ও ৬২ বছরের উপরে বয়স হলে বিনামূল্যে প্রবেশ।

• শালকুমার হাট দিয়েই এ বার জলদাপাড়ায়
এ বার থেকে শালকুমার হাট এলাকা দিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করতে পারবেন পর্যটকরা। তাদের কথা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বন দফতরের পক্ষ থেকে।

আলিপুরদুয়ারের শালকুমার লাগোয়া পূর্ব জলদাপাড়া রেঞ্জে শুরু হয়েছে কার সাফারির জন্য নতুন টিকিট কাউন্টার তৈরির কাজ। এত দিন শুধু মাত্র মাদারিহাট এলাকা দিয়ে বন দফতরের কার সাফারির মাধ্যমে জলদাপাড়ার গন্ডার-হাতি দেখার সুযোগ পাওয়া যেত। গত বছর বন দফতরের কর্তারা শালকুমার হাট দিয়ে পর্যটকদের জলদাপাড়া জঙ্গলে সাফারি করানোর বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হন। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের মতে, “ফি বছর পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে মাদারিহাটে অত্যাধিক ভিড় হচ্ছে। অনেক পর্যটক কার সাফারির সুযোগ পাচ্ছেন না।” তা ছাড়া শালকুমার হাট, প্রধানপাড়া, নতুনপাড়ার বাসিন্দারা পূর্ব জলদাপাড়া রেঞ্জ দিয়ে কার সাফারি চালুর দাবি জানান।

বন্যপ্রাণী ৩ বিভাগের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর জানিয়েছেন, “মাদারিহাট এলাকা দিয়ে কমপক্ষে ১৭টি জিপসি জলদাপাড়ায় যাতায়াত করে। সেখান থেকে কার সাফারিতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে একটি জিপসির জন্য ভাড়া পড়ে ১২৫০ টাকা। গাইড ২০০ টাকা নেন। প্রতিদিন সকাল ৫ টা থেকে ৭টা, ৭টা থেকে ৯টা ও বিকেল ৩ টে থেকে ৫ টা পর্যন্ত কার সাফারি হয়। পূর্ব জলদাপাড়া রেঞ্জেও একই প্রবেশ মূল্য নেওয়া হবে।” এলাকার বন দফতরের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গাইড উত্তম ছেত্রী জানান, “১০ কিমি দূরে মাদারিহাটে গিয়ে পর্যটকদের জঙ্গলে আনতে হত। এ শালকুমার হাট দিয়ে পূর্ব জলদাপাড়া রেঞ্জ হয়ে পর্যটক ঢোকার বিষয়টি চালু হলে এলাকার প্রায় ১৫ জন গাইড উপকৃত হবে।”


• অপেক্ষায় ঝিঙাখালির অতিথি নিবাস
সব কিছু ঠিক মতো চললে হয়তো সুন্দরবনের পর্যটকদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে চলেছে। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে ব্লকের ঝিঙাখালি ফরেস্ট অফিসের পাশেই জঙ্গলের মধ্যে আগাপাস্তলা জালে ঘেরা একটি জায়গায় তৈরি হয়েছে গেস্ট হাউস।

মাটি থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু পিলারের উপর তৈরি গেস্ট হাউসের ভিতরে রয়েছে দু’টি শোওয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, শৌচাগার ও খাওয়ার জায়গা। সুসজ্জিত বিছানায় পাতা রয়েছে ঝকঝকে চাদর। দরজা ও জানলায় ঝুলছে রঙিন পর্দা। জঙ্গলকে উপভোগ করার জন্য রয়েছে ব্যালকনি। পাশেই রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। চারপাশ ঘিরে রয়েছে বাইন, সুন্দরী, কেওড়া, হোগলা প্রভৃতি গাছ। বন বিভাগের কর্মীদের মতে, গেস্ট হাউসটি উদ্বোধন হলে ঝিঙাখালির গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে পর্যটকদের কাছে। এতে সরকারের আয় যেমন বাড়বে তেমনই এলাকার মানুষের উন্নয়নও সম্ভব হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

পরিষেবা
• ফ্লাইবির নতুন উড়ান
সাদাম্পটন থেকে ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর নন্ত-এ যাওয়ার দৈনিক নতুন উড়ান চালু করল গ্রেট ব্রিটেনের এক নম্বর এবং ইউরোপের বৃহত্তম আঞ্চলিক উড়ান সংস্থা ফ্লাইবি। টিকিটের দাম শুরু কর-সহ ৪০ পাউন্ড থেকে। নতুন এই গন্তব্য-সহ প্রতি সপ্তাহে ব্রিটেনের সাদাম্পটন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার ফ্লাইবি এয়ারলাইন্সের মোট ৭৮টি উড়ান চালু হয়েছে।

ফ্লাইবির মার্কেটিং ডিরেক্টর সাইমন লিলির অভিমত, পর্যটকদের জন্য এই উড়ান যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে। অন্য দিকে সাদাম্পটন বিমানবন্দরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভ লি মনে করেন, শুধু মাত্র পর্যটকরাই নয়, ইংল্যান্ডে চাকরিরত ফরাসি নাগরিক এবং এই অঞ্চলে পড়তে আসা আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীরাও লাভবান হবেন।

• এয়ার ইন্ডিয়া— দিল্লি থেকে প্যারিস
দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দকে সরাসরি জুড়ে দিল এয়ার ইন্ডিয়া। এআই-১৪২ উড়ানটি প্রতি দিন দুপুর ১টা ১০ মিনিটে দিল্লি থেকে প্যারিস রওনা হবে। প্যারিস থেকে ছাড়া বিমানটি রোজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে এসে পৌঁছবে দিল্লিতে।

আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবাযুক্ত নতুন ৬টি ২৫৬ আসনের ‘ড্রিমলাইনার’ বিমান আসায় আন্তর্জাতিক পরিষেবার পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এর আগে দুবাই এবং জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফার্ট ছাড়া অন্যান্য ঘরোয়া উড়ান পরিষেবা দিতে ড্রিমলাইনার ব্যবহার করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। টানা ৫ বছর লোকসানে দৌড়ানোর পর এ বছর ড্রিমলাইনারের হাত ধরে ‘স্বপ্নের উড়ান’ শুরু করতে চায় এয়ার ইন্ডিয়া।

• বৌদ্ধস্থল জুড়ল মহাপরিনির্বাণ এক্সপ্রেস
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে শান্তির বাণী প্রচার করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। সে বাণীর সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার যত হয়েছিল, ভারতর্ষে ততই বেড়েছিল বৌদ্ধস্তূপ এবং বিহারের সংখ্যা। এ বার সেই বিশেষ স্থানগুলিকে কেন্দ্র করে একটি অসাধারণ ‘ভ্রমণ পরিকল্পনা’ করল রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর শ্রীলঙ্কা, চিন, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে প্রচুর পর্যটক ভারতে আসেন এই জায়গাগুলি দেখার জন্য। মূলত, তাঁদের কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ ট্রেন ‘মহাপরিনির্বাণ এক্সপ্রেস’ চালু করল ভারতীয় রেল।

বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যের বিভিন্ন সৌধ ও মন্দিরগুলি দর্শন করা যাবে মহাপরিনির্বাণ এক্সপ্রেসে চেপে। শুধু তাই নয়, এই জায়গাগুলির সঙ্গে নেপালের লুম্বিনীতেও যাওয়া যাবে যেখানে গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন। এ ছাড়াও বিহারের বুদ্ধগয়া, আগরা, উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর (যেখানে তিনি নির্বাণ লাভ করেছিলেন), ওড়িশার ভুবনেশ্বর, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি প্রভৃতি জায়গাগুলিতে ট্রেন থামবে। যে হেতু বেশি সংখ্যক বিদেশি পর্যটক এই বিশেষ ট্রেনে ভ্রমণ করছেন, তাই ভ্রমণস্থলগুলির মধ্যে আগরার নামও রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ বাতানুকূল এই ট্রেনের প্রতি টিকিটের দাম থাকা ও খাওয়া-সহ ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে।

• দৃষ্টিহীন যাত্রীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ রেলের
ভ্রমণকালীন দৃষ্টিহীন যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিল ভারতীয় রেল। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিটি মেল, এক্সপ্রেস তো বটেই এমনকী গরিবরথে ব্রেইল স্টিকার লাগানো হবে। যাতে দৃষ্টিহীন যাত্রীরা রেল ভ্রমণের সময় বিশেষ সুবিধা পান। এই স্টিকারগুলি ছুঁয়ে কারও সাহায্য ছাড়াই অতি সহজেই তাঁরা ট্রেনের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় যাতায়াত করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ২৩০০ এসআরএলডি ও এসি কোচও বানানো হয়েছে। আগামী ২০১৩-১৪ সালের রেল বাজেটে এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হবে বলে রেল সূত্রে খবর।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ