ভারতীয় রেলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই রেল আমাদের জীবন রেখা। সেই রেলপথের ১৫০ বছর পূর্তি। ক্যানিং রেলপথ ভারতের তৃতীয় রেলপথ। উল্লেখ্য, ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগে ১৮৫৬-৬২— গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং-এর সময়ে ভাগীরথী নদীতে অতিমাত্রায় পলি পড়ায় কলকাতা বন্দর সম্বন্ধে নানা আশঙ্কা হয়েছিল। চেম্বার অফ কমার্স প্রস্তাব দেয়, কলকাতা বন্দর নষ্ট হলে নিদারুণ সঙ্কট সৃষ্টি হবে। ক্যানিং-এর মাতলা নদীর তীরে একটা বন্দর করে নদীপথ এবং রেলপথ করে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। সেই সময় পোর্ট ক্যানিংয়ের সৃষ্টি। কলকাতা থেকে ক্যানিং রেলপথের দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। ক্যানিং, ক্যানিং টাউন বা পোর্ট ক্যানিং মাতলা নদীর তীরে অবস্থিত। সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশদ্বার। ভাগীরথী নদীর বিকল্প বন্দর হিসাবে ক্যানিংকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। রেল এবং জলপথে যোগাযোগ রাখার জন্য ১৮৬২-৬৩ সালে লর্ড ক্যানিং এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড এলগিনের সময় ক্যানিংয়ে রেলপথ চালু হয়। প্রথমে চম্পাহাটী এবং শেষে ক্যানিং। সেই বন্দরের জন্য মাতলার উপর পাঁচটি এবং বিদ্যাধরী নদীতে দু’টি জেটি, ডক ও ট্রামওয়ে নির্মিত হয়েছিল। এখন আর কিছুই নেই।
১৮৬৫-৬৬ সালে গভর্নর জেনারেল লরেন্স-এর সময় ২৬টি জাহাজ এসেছিল। বর্তমানে পোর্ট নেই। কোম্পানির অবলুপ্তি ঘটেছে। সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকের মধ্যে ৭টি ব্লকের যাত্রীরা ক্যানিং-এর রেলপথ ব্যবহার করেন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে জীববৈচিত্র্য ক্ষেত্র ঘোষণা করে (World Heritage Site)। ভ্রমণ পিপাসুরা সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য এই রেলপথ বেছে নেন। আজ থেকে ৮০ বছর আগে ১৯৩২ সালে ২৯ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ কয়লার ইঞ্জিনে টানা রেলগাড়িতে চড়ে ক্যানিং হয়ে সুন্দরবনের গোসাবায় স্যর ড্যানিয়েল হ্যামিলটনের পল্লিকেন্দ্র দেখতে যান। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় ক্যানিং রেলপথকে ডবল লাইনে পরিণত করেন। প্রথম পর্যায় ঘুটিয়ারি শরিফ এবং এ বছরের মধ্যে ক্যানিং পর্যন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। ক্যানিং রেলপথের সার্ধশতবর্ষে সার্বিক উন্নয়নের জন্য মাননীয় রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিবাণী মুখোপাধ্যায়। ক্যানিং টাউন।
আত্মবিকাশের পথে প্রতিশ্রুতি— সম্ভাবনার আলো
তেভাগা আন্দোলনের প্রথম ১৩ জন শহিদের নিথর দেহ শায়িত রাখা হয়েছিল এই স্টেশনটির প্ল্যাটফর্মে।
‘ছলছলাইল ঘুরঘুটি অন্ধকার রাতে’ গানটি লিখে গেয়ে শুনিয়েছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার প্রয়াত সলিল চৌধুরী এই স্টেশন চত্বরেই।
স্টেশনটি দোমহানি রেল স্টেশন। ১৯১৭ সালে তিস্তা নদীর পারে দোমহানিতে স্থাপিত হয় বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেল (বিডিআর)-এর স্বয়ংসম্পূর্ণ হেডকোয়ার্টার। এক সময়ে জেলার ব্যস্ততম রেলস্টেশনটি অতীতের কঙ্কাল হয়ে প্রতিশ্রুতির দিন গুনছিল আর রোমন্থন করছিল সেই সব স্মৃতি। দোমহানি-লালমণিহাট-বিহারের ছোটনাগপুর লাইন ধরে ছুটে চলেছে বেঙ্গল-ডুর্য়াস রেলগাড়ি। খরস্রোতা তিস্তাকে পাশে রেখে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে নিউমাল-চ্যাংড়াবান্ধা। ৪৭-এ দেশভাগের পর ১৯৫৪-য় বার্নেশঘাট- দোমহানি রেললাইন তুলে দেওয়া হয়। তার পর ১৯৬৮-র ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত নিউমাল-চ্যাংড়াবান্ধা রেললাইনও উঠে যায়।
বি ডি আর-এর গুরুত্ব হারিয়ে দীর্ঘ কাল মৃত সরীসৃপের মতো পড়ে থাকা রেলপথকে ঘিরে কোনও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি শোনা যায়নি দীর্ঘ দিন। অবশেষে দোমহানির আকাশে বিপর্যয়ের মেঘ কেটে আত্মবিকাশ করতে চলেছে প্রতিশ্রুতি-সম্ভাবনার আলো। যে স্বপ্ন নিয়ে এক সময় ড্রাইভার হারাধন সেন ড্রাইভার হয়ে এসেছিলেন লালমণিহাট থেকে দোমহানিতে, সে স্বপ্নের পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশায় চ্যাংড়াবান্ধা থেকে নিউমাল ভায়া দোমহানি হয়ে পাতা হয়েছে নতুন রেললাইন। নতুন পলেস্তরা আর রঙে সেজে উঠেছে দোমহানি রেলস্টেশন। রেলের তদানীন্তন জেনারেল ম্যানেজার পলহোয়েলের নামে ১৮৯২ সালে স্থাপিত হয় জেলার প্রথম রেলওয়ে বিদ্যালয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সেই পলহোয়েল উচ্চবিদ্যালয়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে পাতা নতুন পথ দিয়ে ছুটবে রেলগাড়ি-চ্যাংড়াবান্ধা-দোমহানি-নিউমাল। কখনও ‘আপ’ কখনও ‘ডাউন’। গৌতমেন্দু নন্দী, জলপাইগুড়ি।
—নিজস্ব চিত্র
ছবিতে বন্যপ্রাণ
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইতিমধ্যেই পস্তাচ্ছি আমরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল
হাতেনাতে পেয়েও টনক নড়ে
ক’জনের?
ব্যাতিক্রম অবশ্য আছে। আর সেই ব্যাতিক্রমী
মানুষদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করি আমরা। তাঁদের দলবদ্ধ অথবা
ব্যক্তিগত
উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়ে পাঠক সমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনার শরিক হতে চাইলে আমাদের জানান নীচের ঠিকানায় সংবাদের হাওয়াবদল
হাওয়াবদল আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১ ই-মেল করুনhaoabadal@abp.inঅথবাhaoabadal@gmail.com
Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.