১ চৈত্র ১৪১৮ বৃহস্পতিবার ১৫ মার্চ ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের
খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে
হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ভ্রমণ ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়...
ঐতিহ্য
• মান্দারিন ভাষায় এ বার রবীন্দ্রনাথ
চিনের মান্দারিন ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের রচনা সমগ্র এই প্রথম প্রদর্শিত হল সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা বই মেলার ‘চাইনিজ প্যাভেলিয়ন’-এ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিন ভ্রমণে গিয়েছিলেন ১৯২৪ সালে। সে সময় চিন সরকারের উদ্যোগে অনুবাদ করা হয়েছিল তাঁর রচনা। বইমেলায় ‘চাইনিজ প্যাভেলিয়ন’-এর মুখপাত্র মদন সরাফ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২৪ খণ্ডে রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী প্রকাশ করেছে চিন সরকার। সবুজ মলাটে সোনালি ডোরা কাটা ‘ডিজাইন’-এ বাধাঁই করা প্রতিটি খণ্ডের মুখবন্ধ লিখেছেন চিনের কনসাল জেনারেল। বইমেলায় এই রচনাবলী দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু বইপ্রেমী। মদন সরাফ জানিয়েছেন, বইগুলি এ বারের বইমেলায় কেবলমাত্র প্রদশর্নীর জন্যই রাখা ছিল। আগামী বছর কলকাতা বইমেলায় বইগুলি বিক্রি করা হবে। বইমেলায় চিনা স্টল ঘুরে এসে চিনের কনসাল জেনারেল ঝাঙ লিজহং দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা বাড়ানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

• সম্প্রীতির ছোঁয়া
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের গোয়ালপাড়ার ‘মহন্ত মসজিদ’ সম্প্রীতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন এই মসজিদের পাশেই রয়েছে রাধাকৃষ্ণের একটি মন্দির। মন্দিরের পূজারী ফটিক মহন্ত এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা রক্ষা করে চলেছেন মসজিদের পবিত্রতা। এ যেন মেদিনীপুরের পাথরার ইয়াসিন পাঠানের গল্পের মতো। সম্পত্তি বিনিময় করে ও-পার বাংলা থেকে এ-পার বাংলায় এসে এক মুসলিম পরিবারের কাছ থেকে জমিটি পেয়েছিলেন মহন্তরা। সেই জমিতেই ছিল মসজিদটি। পরে মসজিদের পাশে রাধাকৃষ্ণের মন্দির নির্মাণ করলেও মসজিদের মর্যাদা রক্ষায় মহন্তরা একই রকম নিষ্ঠার পরিচয় দেন। প্রতি দিন সন্ধ্যায় মন্দির এবং মসজিদে একই সঙ্গে ধূপ ও মোম জ্বালানো হয়। মন্দিরে হিন্দুরা এসে যেমন পুজো করেন, তেমনি মুসলমানরাও আসেন মসজিদে নমাজ পড়তে কোনও অশান্তি বা বিভেদ ছাড়াই।

• ম্যান্ডেলার সম্মানে ‘ব্যাঙ্ক নোট’
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাঙ্ক নোটে এ বার স্থান পাবে নেলসন ম্যান্ডেলার ছবি। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় সরকারি ভাবে এ কথা ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা। বর্ণ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। আন্দোলনের কারণে সাতাশ বছর কারাবাসের পর ১৯৯০-এর ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান। নোবেল শান্তি পুরস্কার-সহ সারা জীবনে আড়াইশোরও বেশি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ম্যান্ডেলা। শেতাঙ্গদের ‘বর্ণ বৈষম্যের শাসন’-এর বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের স্বীকৃতি ১৯৯৩ সালের এই সম্মান। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন ম্যান্ডেলা। প্রিটোরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট জুমা বলেন, বিনীত এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ব মানব জাতির সেবায় নিযুক্ত একটি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী। ম্যান্ডেলার ছবি-সহ এই নতুন ব্যাঙ্ক নোট বাজারে কবে আসবে, এখনও তার দিন ঠিক হয়নি। তবে ছাপার কাজ চলছে পুরোদমে। আশা করা যায়, এ বছরের শেষেই দেশ জুড়ে সরবরাহ করা হবে এই নতুন নোট।

• পোড়াগাছির টেরাকোটার মন্দির
জায়গাটির প্রশাসনিক নাম চকমধুসূদন হলেও স্থানীয় মানুষের কাছে পোড়াগাছি নামেই পরিচিত। পোড়াগাছির টেরাকোটার দুর্গা, কালী ও দধি বামুন ঠাকুরের মন্দিরগুলি দক্ষিণ দিনাজপুরের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য। এগুলি স্থানীয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের মন্দির। মাঝখানে দুর্গা মন্দির আর তার দুই পাশে কালী ও দধি বামুন ঠাকুরের মন্দির সমন্বিত এমন দেবালয় সচরাচর চোখে পড়ে না। পুরনো ঐতিহ্যের দুর্গা পুজো এখনও হয়। তবে সে পুজো আজ সর্বজনীন। কালী মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসন ছিল। দধি বামুন ঠাকুরের মন্দিরে একটি নারায়ণ শিলা ছিল। যদিও সেটি প্রায় একশো বছর আগে চুরি হয়ে গেছে। ফলে আর পুজো হয় না। প্রাচীন এই টেরাকোটার মন্দির আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। দুর্গা মন্দিরে প্রবেশের তিনটি দরজা ও কালী মন্দিরে প্রবেশের দু’টি দরজা আজও অতীত স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে দধি বামন মন্দিরটির সিংহভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। দুর্গা মন্দিরের স্তম্ভগুলিতে টেরাকোটার কল্কার অপূর্ব ভাস্কর্য এখনও অক্ষত। দরজার উপর বড় খিলান। মন্দিরগুলির দেওয়ালের কিছু খিলানে কুলঙ্গি রয়েছে। কিন্তু বট, করবী ও শ্যাওড়া গাছের দাপটে মন্দিরের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। এখানকার মন্দিরের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল যে, মাথার উপরে কোনও চূড়া নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে মন্দিরগুলি ষোড়শ শতকের। দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার হয়নি।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• চিনের প্রাচীরের গঠনকথা
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি চিনের ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’। খ্রিস্ট্রপূর্ব ৪৭৫-২০৬ অব্দে বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে তৈরি হয়েছিল এই প্রাচীর। প্রথম চিনের সম্রাট কিঙ সি হুয়াং এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী কালে মিঙ রাজত্বের সময় প্রাচীরের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বিস্তৃতি, উচ্চতা ও গঠন-প্রকৃতি চিনের প্রাচীরকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। দৈত্যাকৃতির ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’-এর গঠন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই বিশেষ জানা নেই। সম্প্রতি এক চিনা প্রত্নতত্ত্ববিদ বিষয়টির উপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, ‘‘আমাদের অনেকের মনে হতে পারে ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’ একটি টানা প্রাচীর। কিন্তু আসলে তা নয়! ‘গ্রেট ওয়াল’-এর সমান্তরালে অনেকগুলো ছোট ছোট প্রাচীর আছে। যাদের সমষ্টিগত কারণেই এটি আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।’’ প্রাচীরের গঠনগত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ২০০৬ সালে চিন সরকার সমীক্ষা শুরু করে। পর্যবেক্ষক দলের ডিরেক্টর ডুয়ান জিঙবো জানান, ‘‘মূল প্রাচীরের সমান্তরালে দু’টো থেকে তিনটে ছোট ছোট দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। এগুলিই প্রাচীরকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করেছে।’’

• প্রাচীন মাছির জীবাশ্ম
সম্প্রতি চিনে পৃথিবীর প্রাচীনতম মাছির জীবাশ্ম খুঁজে পেলেন জীববিজ্ঞানীরা। আমাদের চারপাশের মাছিরা এদেরই বংশধর বলে মনে করছেন তাঁরা। আনুমানিক প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে ডাইনোসর যুগে এই মাছিদের অস্তিত্ব ছিল। অন্য দিকে, বিজ্ঞানী আন্দ্রে নেল-এর মতে মেসোজোয়িক ও জুরাসিক যুগেও এদের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে। আকারে প্রায় দশ গুণ বড় এই মাছিরা ছিল রক্তপিপাসু। এদের দৈর্ঘ্য ০.৮ ইঞ্চি, যেখানে বর্তমান মাছিদের দৈর্ঘ্য ০.১ ইঞ্চি। ডাইনোসরদের বিশালাকৃতি দেহ ছিল এদের বাসস্থান। বেঁচে থাকার রসদ ছিল ডাইনোসরদের রক্ত। ঠিক উকুনের মতোই এরা এই সব প্রাণীদের দেহ-রোমের ফাঁকে আশ্রয় নিত। বিজ্ঞানী হুয়াং জানান, ‘‘দেহাকৃতি ও মুখের শোষকের অদ্ভুত গঠনের কারণে ডাইনোসরদের মতো বড় প্রাণীদের দেহ থেকে রক্ত শোষণ করতে অসুবিধা হত না।’’ বিজ্ঞানী নেল আরও জানান, ‘‘এই মাছিরা প্রথমে গাছের রস খেত। কিন্তু ক্রমবিবর্তনের ফলে এরা রক্তপিপাসু পরজীবীতে পরিণত হয়। ফলে পাখনা বিলুপ্ত হয় আর লোম বা পালকে আটকে থাকার জন্য পায়েরও পরিবর্তন ঘটে। এক সময়ে যে পা ছিল এদের লাফানোর অন্যতম প্রধান অঙ্গ, ক্রমবিবর্তনে তা কর্মাক্ষম হয়ে পড়ে। এরা হারিয়ে ফেলে লাফানো এবং ওড়ার ক্ষমতাও।’’

• আধুনিক মানুষ VS নিয়ান্ডারথাল
আধুনিক মানব জাতি নিয়ান্ডারথালদের থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। কিন্তু সমুদ্র-ব্যবসার দৌড়ে আমাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে নিয়ান্ডারথালরা, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গ্রিসের পাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জর্জ ফেরেন্তিনোস মনে করেন, ‘‘আমাদের প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর আগের পূর্ব পুরুষদের জীবন সমুদ্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।’’ অর্থাৎ আধুনিক মানব জাতির প্রায় এক লক্ষ থেকে তিন লক্ষ বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনধারা সমুদ্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। গ্রিসের মূল ভূ-খন্ডেও লেফকাদা, কেফালোনিয়া ও জাকিনথোস দ্বীপপুঞ্জে নিয়ান্ডারথালদের ব্যবহৃত পাথরের যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। এর থেকে বোঝা যায়, সমুদ্রের সঙ্গে এদের যোগসূত্র ছিল নিবিড়। আবার কারও মতে, নিয়ান্ডারথালেরা ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলিতে বসবাস করত। আর সেই দ্বীপগুলির সঙ্গে গ্রিসের মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ থাকার কারণেই এই সব যন্ত্রপাতিগুলো সেখানে পাওয়া গেছে। ফেরেন্তিনোস যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাতে দেখা গিয়েছে নিয়ান্ডারথালদের বাসস্থান দ্বীপগুলির পারস্পরিক দূরত্ব ছিল ৩-৭ মাইলের মধ্যে। স্বভাবতই প্রতি দিনকার যোগাযোগের জন্য তারা সমুদ্রকে ব্যবহার। উন্নত মানবজাতির মধ্যে নিয়ান্ডারথালরাই প্রথম নৌকার ব্যবহার শুরু করে। সুঠাম দেহাকৃতি ও চওড়া কপালের মানুষগুলোর উচ্চতা আধুনিক মানবজাতির গড় উচ্চতা থেকে ছয় ইঞ্চি কম ছিল। কিন্তু তাদের বুদ্ধি ছিল আধুনিক মানবজাতির থেকে ২০ শতাংশ বেশি। অসাধারণ শিকারিও ছিল এরা।

• দেড়শো বছর পুরনো মুদ্রা
হুগলির গোঘাটের কাঁঠালি গ্রাম থেকে পাওয়া গেল তামার কলসি ভরা মুদ্রা। এগুলি ব্রিটিশ আমলের বলে জানিয়েছে রাজ্যের পুরাতত্ত্ব বিভাগ। মুদ্রাগুলির পুরাতাত্ত্বিক মূল্য খতিয়ে দেখেছে রাজ্যের পুরাতত্ত্ব বিভাগ। মোট ২১ ধরনের চারটি মাপের ১৩০টি মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন মুদ্রার গায়ে ১৮৪০ সাল থেকে ১৯১৩ সাল খোদাই করা রয়েছে। তার মধ্যে বড় মুদ্রাগুলি রুপোর। ছোট মুদ্রাগুলিতে আপাত দৃষ্টিতে রুপোর সঙ্গে খাদ রয়েছে বলে মনে করছে পুরতত্ত্ব বিভাগ। তাদের মতে, এই মুদ্রাগুলি খুবই উৎকৃষ্ট মানের। ওজনের হেরফের নেই। তবে সেগুলি কোন টাঁকশালের তা তারা খতিয়ে দেখছে। ঐতিহাসিক ভাবে মধ্যযুগে গোঘাট যে গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্ধিষ্ণু জনপদ ছিল, তা মান্দারণ এলাকার মাটি খুঁড়ে প্রাপ্ত সামগ্রী থেকে আগেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এই মুদ্রাপ্রাপ্তি সে রকমই আর একটি নমুনা। যখন ব্যাঙ্ক ছিল না, তখন চোর-ডাকাতের ভয়ে অনেকে মেঝে বা দেওয়ালে গর্ত খুঁড়ে এ রকম সম্পত্তি নিরাপদে রাখতেন। এটা সে রকমই কোনও ঘটনা বলেই মনে করছেন পুরাতাত্ত্বিকরা।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• সুন্দরবনে ‘পরম্পরার’ মোরগ লড়াই
আদিবাসী সমাজের বহু পুরনো ‘সংস্কৃতি’। তাই এখনও সাড়ম্বরে মোরগ লড়াই হয় সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে। উৎসবের অঙ্গ হিসাবে তিন দিনের মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ-সহ সুন্দরবনের বহু এলাকায়। পৌষ সংক্রান্তিতে কিংবা সরস্বতী পুজোর দিন মোরগ কিনে সারা বছর তাকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয় লড়াইয়ের জন্য। লড়াইয়ের দিন মোরগের পায়ে ধারাল ছুরি, ব্লেড বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরস্পরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বড়সড় চেহারার দুই প্রতিপক্ষ মোরগ। শেষমেশ রক্তারক্তি কাণ্ড। কিন্তু তা দেখে হইহই রইরই করেন দর্শকেরা। চটাপট হাততালিও পড়ে। ঐতিহ্যের মোরগ লড়াইয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাল্টেছে এই লড়াইয়ের নিয়ম-কানুনও। যেমন এখন মোরগ লড়াইয়ে বহু টাকার বাজি ফেলা হয়। জয়ী মোরগের মালিকের মেলে বীরের সম্মান। মেডেল পরানো হয় তাঁর গলায়। পরে কাঁধে চড়িয়ে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলারা তাঁর কপালে তিলক কেটে দেন। রাতভর হাড়িয়া খেয়ে চলে নাচগানের অনুষ্ঠান। এটাই পরম্পরা।

• আন্টার্কটিকার তলায় নয়া ‘সাম্রাজ্য’
গহন অরণ্য বা সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা নতুন প্রজাতির খোঁজ মাঝে মধ্যেই পাওয়া যায়। কখনও বা খোঁজ মেলে হারিয়ে যাওয়া পুরনো সাম্রাজ্যের। কিন্তু একেবারে নতুন প্রায় ছ’শো প্রজাতির বিপুল সম্ভারের খোঁজ এ ভাবে পাওয়া যাবে তা বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবেননি বিজ্ঞানীরা। তাই আন্টার্কটিকার গভীর সমুদ্রের ৮ হাজার ফুট তলায় সাতটা হাতের তারামাছ আর লোমওয়ালা কাঁকড়ার খোঁজ পাওয়ায় হইচই পড়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। সাউদাম্পটন ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন বিজ্ঞানী বিশেষ প্রযুক্তিতে গভীর সমুদ্রে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। সেখানে সম্প্রতি এক সক্রিয় আগ্নেয়গিরির পাশে খোঁজ মেলে কয়েকটি অদ্ভুতদর্শন জীবের। ভাল করে পরীক্ষা করতেই তাঁরা বুঝতে পারেন কোনও নতুন জীব নয়, কতগুলো চেনা জীবই রূপ বদলে হাজির হয়েছে তাঁদের সামনে। যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, সেখানে এত ধরনের প্রাণী বহাল তবিয়তে রয়েছে কী করে? সমুদ্রের গভীরে আগ্নেয়গিরির গলিত লাভা (প্রায় ৩৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য জোগায় প্রয়োজনীয় উষ্ণতা। আর লাভার সঙ্গে থাকা বিষাক্ত পদার্থ থেকে জোগাড় করে কাজ করার শক্তি। এ ভাবেই মানুষের অগোচরে ধীরে ধীরে অন্তত ছ’শো প্রাণীর এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা মুখ্য গবেষক অ্যালেক্স রজার জানিয়েছেন, এক মজার তথ্য। ওই লোমওয়ালা কাঁকড়ারা তাদের লোমে ‘চাষ’ করে ব্যাকটেরিয়া। সেই ব্যাকটেরিয়াই পরে খাদ্য হয় কাঁকড়াদের। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা সম্প্রতি ‘প্লস বায়োলজি’ নামে বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

• নোনাইয়ে ‘পাইপ ফিশ’
ডুয়ার্সের নোনাই নদীতে মিলল বিরল প্রজাতির মাছ ‘পাইপ ফিশ’। কার্শিয়াং কলেজের প্রাণীবিদ্যার শিক্ষক মানিক আচার্য নোনাই নদী থেকে এক জোড়া ‘পাইপ ফিশ’ সংগ্রহ করেন। ১৯৩৭ সালের পরে ২০০৬-০৮ সালে ডুয়ার্সের বক্সা অভয়ারণ্যের মাছ নিয়ে গবেষণার সময়ে ওই মাছের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম মাইক্রোফিস ডেওকাটা। সমীক্ষাকারী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু অবস্য দাবি করেছেন, সমীক্ষার সময়ে তাঁরা বক্সা, গরুমারা এবং জলদাপাড়ার প্রতিটি নদীতেই এই মাছটি খুঁজে পেয়েছেন। গত বছর বন দফতরকে বক্সা এলাকায় পাওয়া মাছের তালিকা জমা দেওয়া হয়। এ বছর নভেম্বরে গরুমারা ও জলদাপাড়ার রিপোর্ট দেওয়া হয়। প্রতিটি রিপোর্টেই এই মাছটির উল্লেখ রয়েছে। মানিকবাবু জানান, মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও মাছটি দেখতে সুন্দর। সরু ও লম্বাটে গড়নের। এই মাছটির মুখ চোখা হয়। এরা ভেলন সারিয়া নামে এক প্রকার জলজ ঘাসে থাকে। ফলে অন্যান্য মাছ এদের খেতে পারে না। মাছটি চার ইঞ্চি থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রজননের সময় পুরুষ মাছের গায়ে সবুজ রঙের আভা আসে এবং মেয়ে মাছের গায়ে বাদামী আভা দেখা যায়। মেয়ে মাছটি ডিম দিলেও পুরুষ মাছ সেগুলিকে নিজের বুকের ভেতর থাকা বিশেষ থলিতে রেখে পালন করে। মূলত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশেই মাছটি পাওয়া যায়।

• মাদাগাস্কারে গিরগিটি
মাদাগাস্কারে খোঁজ মিলেছে অত্যন্ত ছোট আকারের প্রজাতির এক গিরগিটির। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ব্রুকেসিয়া মাইক্রা’। লম্বায় মাত্র ২৯ মিলিমিটার হওয়ায় মাপের বিচারে এটি বিশ্বের অন্যতম ছোট গিরগিটি। বৈজ্ঞানিকদের মতে এদের স্বাভাবিক বাসস্থান বর্তমানে বিপন্নতার মুখে। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় এই ‘আবিষ্কারে’র বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে ‘প্লস ওয়ান’ পত্রিকায়। মিউনিখের জীববিজ্ঞানী ডঃ ফ্র্যাঙ্ক গ্ল মাদাগাস্কারের বামন গিরগিটি বিশেষজ্ঞ। অতীতেও বামন গিরগিটির বহু প্রজাতি সম্বন্ধে খোঁজ দিয়েছেন তিনি। ডঃ গ্ল জানিয়েছেন, ঘুমোনোর জন্য এরা গাছের ডালকেই বেছে নেয়। বহু বছর ধরে দ্বীপের পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে এই ধরনের গিরগিটিরা বামনাকৃতি ধারণ করেছে। তাঁর মতে ‘ব্রুকেসিয়া মাইক্রা’-র ক্ষেত্রে হয়তো ‘দুই দ্বীপের প্রভাব’ ঘটেছে। তিনি বলেছেন, মাদাগাস্কারের মতো বড় দ্বীপে সাধারণ প্রজাতির বামন গিরগিটি দেখা যায় ও অন্যান্য ছোট দ্বীপে ছোট আকৃতির গিরগিটি পাওয়া যায়।

পার্বণ
• গাঁধী স্মৃতি মেলা
সম্প্রতি দারুয়া জনকল্যাণ সঙ্ঘের পরিচালনায় ৮৫তম গাঁধী স্মৃতি প্রদর্শনী হল কাঁথিতে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, “মহাত্মা গাঁধীর পদরেণু রঞ্জিত সর্বধর্মের পীঠস্থান ঐতিহাসিক দারুয়া ময়দানে ধারাবাহিক ভাবে এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করে উদ্যোক্তারা জনমানসে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যকে যে ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।” দারুয়া জনকল্যাণ সঙ্ঘ ও প্রদর্শনী কমিটির সম্পাদক হেরম্ব কুমার দাস জানান, ১৯২৫-এর ৫ জুলাই মহাত্মা গাঁধী দারুয়া ময়দানে এসে জনসমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। তা স্মরণ করতে এবং দেশের মানুষকে গাঁধীর আদর্শ ও কর্মধারায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও জননেতা সুধীরচন্দ্র দাস ১৯২৬ সালে গাঁধী স্মৃতি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। সেই থেকেই এই প্রদর্শনী হচ্ছে।

• শ্রীনিকেতনে মাঘ মেলা
রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়নের আদর্শকে সামনে রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নব্বই তম শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হল ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। শ্রীনিকেতন কর্মী সঙ্ঘের সম্পাদক জয়দেব সরকার বলেন, “স্টলগুলিতে রবীন্দ্রনাথের কৃষি-হস্তশিল্পের প্রচার ও প্রসারের আদর্শকে সামনে রেখে এ বারের মেলায় প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রামের আর্থ-সামাজিক বিকাশে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।” মেলায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। মেলার প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মার্টিন কম্পটন। বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে এই মাঘ মেলায় মজেছিলেন স্থানীয় মানুষ-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও অগুণতি বাইরে থেকে উপস্থিত হওয়া মানুষ।

• লোসারে মাতল লেপচাখা
বক্সা পাহাড়ের সৌন্দর্য ও ডুকপা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে পযর্টকদের সামনে তুলে ধরতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার নববর্ষ ‘লোসার’ পালিত হল লেপচাখা পাহাড়ে। ডুকপাদের ওই উৎসবে নাচ গানের পাশাপাশি তিরন্দাজি সহ নানা খেলা হয়। বৌদ্ধ ধর্মের হিসেবে এ দিন থেকে নতুন বছর শুরু হল। লোসারের ডুকপা সম্প্রদায়ের পুরুষরা বক্কু (পারম্পরিক পোশাক) পরেন। এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড়ে লক্ষ্য রেখে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে দোজু (তির-ধনুক) খেলেন। আবার মহিলারা কিরাতিগো (পারম্পরিক পোশাক) পরে পারম্পরিক গানের তালে নাচ করেন। ধূপ, মুড়ি, বিস্কুট, মাখন চা, চাল দিয়ে তৈরি পানীয় দিয়ে নতুন বছরকে মন্ত্র পড়ে বরণ করেন পুরুষরা। তিরন্দাজির পাশাপাশি পাথর ছুঁড়ে খেলা দুগো, নেপালি ও আদিবাসী নাচও হয়। অনুষ্ঠান চলাকালীন সাতদিন গ্রামের সকলে শুকনো শুয়োরের মাংস ও শাক দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার পা এবং ভাত খান। জলের বদলে বোতল ভর্তি করে ঠান্ডা মাখন চা খান তাঁরা।

• কৃষি প্রদর্শনী ও মেলা
প্রতি বছর শীতের শেষে শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রমোহন শা স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত হয় শতাব্দী প্রাচীন কৃষি প্রদর্শনী ও মেলা। পোশাকি নাম শ্রী শ্রী শিবশঙ্কর জিউ কৃষি কলা শিল্প প্রদর্শনী ও মেলা। শ্রীরামপুর থানা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে ক্ষেত্রমোহন শা স্ট্রিটে স্থানীয় মানুষের স্বতস্ফুর্ত যোগদানে ১১৬ বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। শিল্প ও কৃষির সমন্বয়ে এই মেলা শুরু করেন ক্ষেত্রমোহন শা। সে সময়ে সবচেয়ে বড় ফসলগুলো এখানে প্রদর্শিত হত। এ ছাড়া কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল দিয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের দৃশ্যাবলীরও প্রদর্শন হত। এ ছাড়া থাকত গৃহস্থালীর নানা জিনিস। বর্তমানে এই মেলার উদ্যোক্তা শা পরিবারের বর্তমান কর্তা কানাইলাল শা। শিবরাত্রির দিন থেকে শুরু হয়ে এই মেলা চলে দোল পর্যন্ত, টানা এক মাস। স্থানীয় কৃষির প্রসারে ও কিছুটা ধর্মীয় আঙ্গিকে এই মেলা শুরু হলেও বর্তমানে আধুনিকতার জৌলুসে নিজেকে অনেকটাই বদলে নিয়েছে এই মেলা। আপাতদৃষ্টিতে এই মেলা আর পাঁচটা সাধারণ আঞ্চলিক মেলার মতো মনে হলেও যে বিষয়টি এই মেলাকে বাকি সব মেলা থেকে আলাদা করে দিয়েছে তা হল, স্থানীয় কৃষকদের কৃষিজ ফসলের প্রদর্শনী এবং আঞ্চলিক শিল্পীদের হস্তশিল্প ও কুটীর শিল্পের প্রদর্শনী। শহুরে মানুষের কাছে হয়তো কৃষিজ ফসলের সঙ্গে আলাদা ভাবে পরিচিতির প্রয়োজন নেই, বাজারে গেলে এই সব ফসলের সহজেই দেখা মেলে। কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে ভোক্তাদের বা ক্রেতাদের মুখোমুখি যোগাযোগের যে সুযোগ এই মেলায় পাওয়া তার গুরুত্ব কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তাই বর্তমানে মেলার চেহারা পাল্টেছে, জৌলুস বেড়েছে, বদলেছে মানুষের চাহিদা এবং যোগানের তালিকাও। কিন্তু স্বাধীনতার ৬৪ বছর পেরিয়ে এসেও বদলায়নি শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রমোহন শাহ স্ট্রিটের কৃষি প্রদর্শনী ও মেলা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব এবং কার্যকারীতা। মেলা চত্বরের মোট আয়তন বিঘা চারেক। চত্বরে একটি বড় পুকুর ও শিব মন্দির আছে। বতর্মানে মেলা প্রাঙ্গণটির ভগ্নদশা। স্থানীয় সাংসদ রত্না দে নাগ এটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাড়ির লোকেরা তা মানতে চাননি।

ট্যুরিস্ট স্পট
• সেজে উঠছে শুশুনিয়া
শুশুনিয়াকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বন দফতর শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে গড়ে তুলছে ‘ইকো-ট্যুরিজম কটেজ’। সেখান থেকে সবুজে ঘেরা পাহাড় পরিপূর্ণ ভাবে দেখা যাবে। শুশুনিয়ার ঝরনাতলা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ছোট্ট টিলার উপর তৈরি হচ্ছে দু’টি ‘কটেজ’। কটেজের প্রবেশ পথে রয়েছে ছোট্ট সেতু। তার নীচে লম্বা জলাশয়। সেখানে পদ্মের চাষ করা হচ্ছে। অল্প পাকদণ্ডী পথ পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে কটেজে। সেখানে এক সঙ্গে চারটি পরিবার থাকতে পারবে। ইচ্ছা করলে পর্যটকরা সেখানে রান্না করতে পারবেন। বন দফতরেরও রাঁধুনী থাকবে। সামনের খোলা মাঠে ছোটদের দোলনা-সহ নানা রকম মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা আছে। কটেজের কাছে গাছগাছালিতে ঘেরা সবুজ ছোট বনাঞ্চল রয়েছে। হাঁটা পথে শুশুনিয়ার ঝরনাতলা খুব দূরে নয়। ইচ্ছা করলেই পাথুরে চড়াই রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে চড়া যায়। কিংবা, শরীর না চাইলে পাহাড়তলিতে পাথরের নানা উপকরণ নিয়ে বসে থাকা শিল্পীদের কাছ থেকে শিল্প সামগ্রীও কেনা যায়। আগ্রহ থাকলে শিল্পীর পাশে বসে পাথর কুঁদে শিল্প সামগ্রী তৈরির কাজও দেখা যায়। প্রায় ৪৪০ মিটার উঁচু এই পাহাড় সবুজে ঢাকা। পাহাড়ের গায়ে অনেক নাম না জানা গাছের রঙিন ফুল পরিবেশপ্রেমীদের নজর কাড়বে। খাড়া পাথরে অনেকে ‘ট্রেকিং’ করার সুযোগ আছে। অন্য দিকে, পাহাড়ের পিছনে রয়েছে মহারাজা চন্দ্রবর্মার শিলালিপি। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য।

• সাবিত্রী লজ
অযত্নে অবহেলায় কত ঐতিহাসিক নিদর্শন যে নষ্ট হয়ে যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কোচবিহার শহরের বুকে অবস্থিত শতবর্ষ প্রাচীন ‘সাবিত্রী লজ’। এই বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের প্রপৌত্র এবং নৃপেন্দ্রনারায়ণের জ্ঞাতি ভ্রাতা কুমার গজেন্দ্র নারায়ণ ১৮৮৫-তে এই দোতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তাঁর পত্নী সাবিত্রী দেবীর নামে। সাবিত্রী দেবী ছিলেন ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের দ্বিতীয় কন্যা। মহারানি সুনীতিদেবীর ছোট বোন। সাগরদিঘির দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বাড়িটি অবস্থিত। টেম্পল স্ট্রিটের পাশের এলাকায়। সেই আমলে এই জায়গাটির নাম ছিল ব্রাহ্মপল্লি। কোচবিহারে ব্রাহ্মসমাজের গোড়াপত্তন এবং ব্রাহ্মধর্মের প্রচারের কাজ এই বাড়িটি থেকেই করা হত। নারী কল্যাণের জন্য এই বাড়িটিতেই প্রথম ‘আর্য নারী সমাজ’ গঠিত হয়। এ ছাড়া ১৯০৮-এ স্থানীয় মহিলাদের জন্য কারিগরি শিক্ষামূলক বিদ্যালয় তৈরি হয় এই বাড়িটিতে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, অতুলপ্রসাদ সেন প্রমুখ বিদগ্ধজনেরা এক সময় এই বাড়িতে অবস্থান করেছেন। বর্তমানে পুলিশের কর্মকর্তারা এই ধ্বংসোন্মুখ বাড়িটিকে আবাসন হিসেবে ব্যবহার করলেও বাড়িটির অধিকাংশ জায়গাই ঘন জঙ্গলে ঢাকা। ঐতিহাসিক ‘সাবিত্রী লজ’ এখন ভুতুড়ে বাড়ির অনুরূপ।

• বিলাসের ফাঁসে হারাচ্ছে হলং
এলসিডি ও এসি বসানোর পাশাপাশি ঘরগুলির ভোল পাল্টে ফেলায় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হারাতে বসেছে জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো। খুব দ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ঘরগুলি পুনরায় পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনা না হলে হলং-এর আকর্ষণ তলানিতে ঠেকবে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকৃতি প্রেমী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষজনেরা। প্রকৃতিপ্রেমী তথা ভ্রমণ সাহিত্যিক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য হলং-এর ঘরগুলি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “ঘরগুলিকে যে ভাবে ঢেলে সাজানোর নামে নষ্ট করা হয়েছে তা মানা যায় না। আগেকার আমেজ তো এখন আর কোনও ভাবে মিলবে না।” হলং ঘুরে যাওয়া পর্যটকরা জানান, শহরের কোনও হোটেলের সঙ্গে হলং বন বাংলোর তফাত আজ নেই। বনের সৌন্দর্য, বুনো ঘ্রাণের পাশাপাশি বন্য জন্তুদের নুন খাওয়ার দৃশ্য উপভোগও করা যায় না। হলং-এর নয়া সাজ প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা যে মেনে নিতে পারছেন না তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিচ্ছেন।

• পর্যটন-পরিকল্পনা
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বোদাগঞ্জের ভ্রামরী দেবীর মন্দির লাগোয়া এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিল বন দফতর। বন দফতরের এলাকার মধ্যেই বোদাগঞ্জের ভ্রামরী দেবীর মন্দির অবস্থিতি। বিভিন্ন লোকগাথা এবং ঐতিহাসিক কারণে ভ্রামরী দেবীর মন্দির ইতিমধ্যেই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সে কথা মাথায় রেখেই সড়ক-সহ নানা পরিকাঠামো তৈরি করে এলাকাটিকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “ভ্রামরী দেবীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে বোদাগঞ্জ এলাকাকে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানে পরিনত করা হবে।”

পরিষেবা
• আইআরসিটিসি-এর নতুন ওয়েবসাইট
‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন’ মোবাইল ফোন থেকে টিকিট বুক করার নতুন ওয়েবসাইট https://www.irctc.co.in/mobile খুলল। যে কোনও মোবাইল থেকে, যে কোনও টেলিকম সংস্থার গ্রাহক এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেলের টিকিট বুকিং করতে পারবেন। টিকিট বুকিং ছাড়াও এর আওতায় আরও কিছু পরিষেবা পাওয়া যাবে, যেমন: আগের বুকিং তালিকা দেখা, টিকিট বাতিল করা ইত্যাদি। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকিটের দাম মেটানোও যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। যে সমস্ত যাত্রীরা ইতিমধ্যেই ব্যবহারিক আই ডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করেছেন, তাঁরা পুরনো আইডি থেকেই লগ-ইন করে ওয়েবসাইটের যাবতীয় পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন।

• শিলিগুড়ি ও বালুরঘাটের মধ্যে নতুন ট্রেন চালু
শিলিগুড়ি ও বালুরঘাটের মধ্যে নতুন ডিএমইউ ট্রেন চালু হল। এর আগে বালুরঘাট থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত এক জোড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়। নতুন ডিএমইউ ট্রেনটি সপ্তাহে চার দিন অর্থাৎ রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার সকাল পৌনে পাঁচটায় বালুরঘাট স্টেশন থেকে ছেড়ে দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ এনজেপি স্টেশনে পৌঁছবে। আবার এনজেপি থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ছেড়ে বালুরঘাট পৌঁছবে রাত প্রায় ১১টায়। সপ্তাহের বাকি দু’দিন বুধবার ও শুক্রবার ডিএমইউ ট্রেনটি বুনিয়াদপুর স্টেশন থেকে চলবে। সকাল পৌনে ৬টায় ট্রেনটি বুনিয়াদপুর থেকে ছেড়ে এনজেপিতে পৌঁছবে দুপুর ১টা নাগাদ। প্রস্তাবিত বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ রেলপথ তৈরির কাজ শেষ হলে ট্রেনটি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ হয়ে এনজেপির মধ্য চলাচল করবে।

• অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে বাস
দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের একটি বাস চালু হল। পুরুলিয়া শহর থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে বাসটি দিনে দু’বার যাতায়াত করছে। অযোধ্যা উৎসব উপলক্ষে বুরুবাহা নামের ওই বাসটি চালু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বাসটি পুরুলিয়া থেকে ছাড়ার সময়: সকাল ৮টা ও দুপুর দেড়টা। দেড় ঘণ্টার পথ। অযোধ্যা হিলটপ থেকে ফেরার সময়: সকাল ১০-৪৫ ও বিকেল সাড়ে চারটে। পর্যটকেরা সকালের বাস ধরে দিনভর অযোধ্যার সৌন্দর্য উপভোগ করে সন্ধ্যার মুখে পুরুলিয়া ফিরতে পারবেন।

• সুন্দরবনের জন্য তথ্যকেন্দ্র ক্যানিংয়ে
সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা যাতে সুন্দরবন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন সে জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে তৈরি হতে চলেছে ‘সুন্দরবন ইনফরমেশন সেন্টার’। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। এ ব্যাপারে ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা মিলিয়ে সুন্দরবনের আয়তন ৯ হাজার ৬৩০ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকা ২৫৮৫ বর্গ কিলোমিটার। বনমন্ত্রী বলেন, “দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক সুন্দরবনে বেড়াতে আসেন। এখানে এসে তাঁদের কেউ কেউ নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন। তাঁদের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই ক্যানিংয়ে ‘সুন্দরবন ইনফরমেশন সেন্টার’ তৈরি করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই তথ্যকেন্দ্র থেকে পর্যটকেরা জানতে পারবেন কোথায় সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হবে। কতজনকে অনুমতি দেওয়া হয়। কোথায় কোথায় ফেরি চলাচল করে। কতজন যাত্রীকে নিয়ে ফের চলাচল করে। নিকটবর্তী বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এমনকী সুন্দরবনের কোন কোন এলাকায় তাঁরা যেতে পারবেন সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যও পাওয়া যাবে এখানে।

বসন্ত সেনারা মেতেছিল রঙের উত্সবে। তারই কিছু মুহূর্ত...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


শেয়াল পণ্ডিতরা কোথায়
আগে সন্ধে হলেই শেয়ালের ডাক শোনা যেত। ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধব মিলে ঘাস কাটতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে শেয়ালের গর্ত দেখতে পেতাম। শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে গর্তের ভেতর ঢুকিয়ে দিতাম। ঝাঁঝালো গন্ধে ভেতর থেকে শেয়াল বেরিয়ে ছুট দিত। আমরাও পেছন পেছন ছুটতাম। কিন্তু এদের আর দেখা যায় না। শেয়াল পণ্ডিতরা কোথায় গেল? এ নিয়ে তো কারও কোনও মাথা ব্যথা নেই? গ্রামগঞ্জে ঝোপের আনাচেকানাচে এক মিটারের মতো গর্ত করে সেখানেই থাকত শেয়ালরা। জনসংখ্যা বাড়ার ফলে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তারা। কিছু লোক এদের অবৈধ ভাবে শিকার করে মাংসের লোভে। এ ভাবেই শেয়াল ও পাতিশেয়াল বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছর ১৪-৩০ জানুয়ারি ‘পশু কল্যাণ পক্ষ’ উদ্যাপিত হয়। কিন্তু পশু কল্যাণ পক্ষ শেষ হলেই আর কেউ এদের নিয়ে ভাবেন না। পশু হত্যা বন্ধের জন্য বিভিন্ন সময়ে আইন জারি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এ সব আইন শুধু বই-পুস্তকে ছাপার হরফে সাজানো থাকে। আমরা ভাবি শেয়াল প্রজাতির প্রাণিটির কী দরকার? এরা বেশির ভাগই অপকার করে। পরোক্ষ ভাবে এরাও কিন্তু সমাজের উপকার করে। পৃথিবী থেকে একটি প্রাণী বিলুপ্ত হওয়া মানে জৈব বৈচিত্র নষ্ট হওয়া। আর এর প্রভাব পড়বে মানুষের উপর।
পাখির সংখ্যা কমছে
পাখিদের ডাকে আজ আর ঘুম ভাঙে না। এক সময় পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ পাখি দেখা যেত উত্তরে। কিন্তু এই সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে। এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করায় মাটির পোকারা মারা যাচ্ছে। মাটি হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। কমে যাচ্ছে পাখির খাবার। খেতের কীটনাশক বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে পড়ছে। জল বিষাক্ত হয়ে মাছ সহ অন্যান্য জলচর প্রাণীরা মরছে। তাতেও পাখির খাবার কমছে। মাইকের দাপটেও পাখিরা অস্থির। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পাখি বাসা বাঁধার উপযুক্ত স্থান পাচ্ছে না। কমছে বিদেশি পাখির সংখ্যাও। কোচবিহারের সাগরদিঘিতে আগে অনেক পরিযায়ী পাখি আসত। কিন্তু সাগরদিঘি আজ দূষিত। তাই পরিযায়ীরা আর আসে না। পাখিদের প্রজননেও দূষণের প্রভাব পড়ছে। ডিমের খোসা পাতলা হচ্ছে। ডিম ফুটে বেরোনোর আগেই খোসা ফেটে বাচ্চার মৃত্যু হচ্ছে। পাখিদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিলে ভাল হয়। আর বনাঞ্চলে পিকনিক করতে গিয়ে জোরে মাইক চালানো বন্ধ করতে হবে। পাখিদের যাতে অসুবিধে না হয় সে ভাবে চলাটাই কাম্য।

ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

 


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল স্বাদবদল • আপনার রান্নাঘর • পুরনো সংস্করণ