৩০ পৌষ ১৪১৮ রবিবার ১৫ জানুয়ারি ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এই সমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।

ঐতিহ্য
• এলিজাবেথ টেলরের স্মারক
নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টি’স নিলামঘরে হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের বহু স্মারক-সহ গয়না, আসবাবপত্র বিকোল প্রায় ১৫ কোটি ডলারেরও বেশি দামে। গত ডিসেম্বরের ওই নিলামে ছিল লিজ টেলরের ‘দ্য ন্যাশনাল ভেলভেট’-এর চিত্রনাট্যও। চামড়ায় বাঁধানো চিত্রনাট্যটি ক্রিস্টি’স-এ বিকিয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ডলারে। এ ছাড়া ষোড়শ শতকের মুক্তো বসানো একটি নেকলেসও বিকিয়েছে ‘রেকর্ড’ দাম ১ কোটি ১৮ লাখ ডলারে। ক্রিস্টি’স-এর চেয়ারম্যান মার্ক পোর্টার জানিয়েছেন, “প্রত্যেকটি বিভাগেই দর হেঁকেছেন অনেকে এবং নিলামে সাফল্য আশাতীত। নিলামে সংগৃহীত অর্থমূল্যের অধিকাংশই দেওয়া হবে লিজ টেলর প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য এলিজাবেথ টেলর এডস ফাউন্ডেশন’-এ।

• অরসন ওয়েলস-এর অস্কার
৮,৬১,৫৪২ ডলারে ক্যালিফোর্নিয়ার নেট ডি স্যান্ডার্স নিলামঘরে বিকোল অরসন ওয়েলস-এর অস্কার পুরস্কার। ১৯৪১ সালে ‘সিটিজেন কেন’ ছবির সেরা চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার জিতেছিলেন পরিচালক-অভিনেতা-গল্প লেখক অরসন ওয়েলস। ছবিটি ন’টি বিভাগে মনোনীত হলেও শেষ পর্যন্ত ‘অস্কার’ পেয়েছিল মাত্র একটিতেই। অরসন ওয়েলস সারা জীবনে বহু স্মরণীয় ছবি পরিচালনা করলেও মূল বিভাগে অস্কার পেয়েছিলেন মাত্র এক বার। সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭০ সালে অ্যাকাডেমির তরফ থেকে তাঁকে সাম্মানিক অস্কার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটি মূল বিভাগের না হওয়ায় ‘সিটিজেন কেন’-এর ‘অস্কার’টির গুরুত্ব অনেক বেশি। এর আগেও এই অস্কারটি বিক্রির চেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ছবির চিত্রগ্রাহক গ্যারি গ্রেভার দাবি করেন, পারিশ্রমিক হিসেবে তাঁকে অস্কারটি দিয়েছিলেন স্বয়ং ওয়েলস সাহেব। কিন্তু ওয়েলসের পরিবারের পক্ষ থেকে এই দাবির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বহু আইনি লড়াই পেরিয়ে অবশেষে ওয়েলস-পরিবার পুরস্কারটি ফেরত পায়। এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলাম হওয়া অস্কারের নতুন মালিকের নাম সর্বসমক্ষে আনা হয়নি। তবে নিলামঘরের তরফে জানানো হয়েছে, অস্কারটি নিজের কাছে রাখতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর হেঁকেছিলেন বিখ্যাত যাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড।

• ইতিহাসের মুর্শিদাবাদ
ইতিহাস-সমৃদ্ধ মুর্শিদাবাদের জেলার নানা প্রান্তে বেশ কিছু সুপ্রাচীন ভবন দেখা যায়। কিন্তু সেগুলি কী প্রয়োজনে কে কখন তৈরি করেছিলেন, তা জানা যায় না। শুধু হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, মোগল, পাঠান নয়, বিদেশি বণিক হিসেবে আগত পর্তুগিজ, ফরাসি, আর্মেনীয়, ওলন্দাজ ও ইংরেজদেরও ধর্মীয় প্রভাব এখানে পড়েছে। তবে রাঢ় এলাকায় বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রচলন ছিল বেশি। চৈতন্য পরবর্তীকালে বৈষ্ণব ধর্মের একটা জোয়ার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। সুলতানি আমলের পরে পরধর্ম সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। জৈনরা ধর্মাচরণের জন্য নিজেদের উপাস্য দেবদেবীর মন্দির নির্মাণ করেন। এছাড়াও ষোড়শ শতাব্দী বা মোগল-পাঠান আমল থেকে এই জেলায় মসজিদ নির্মিত হতে থাকে এবং তার বিস্তার ঘটে হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) ও নবাবি আমলে (১৭০৪-১৮৮১)। ফলে মন্দির-মসজিদ-গির্জার নির্মাতা হিসেবে রাজা-মহারাজা, নবাব-বাদশা, জমিদার-জোতদার, বণিক, সমাজের ধনী ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফে মুর্শিদকুলি খাঁ-এর কন্যা আজিবুন্নেষার সমাধি, রেসিডেন্সি সমাধি, রানি ভবানির মন্দির, চার মন্দির-সহ শিব মন্দির, মিরমদনের সমাধি, ডাচ সমাধি, পুরনো ইংরেজ সমাধি, আলিবর্দি খান ও সিরাজদ্দৌলার সমাধি, সুজাউদ্দিনের সমাধি, মুর্শিদকুলি খাঁ-র সমাধি ও কাটরা মসজিদ, জাহানকোষা কামান, হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও ইমামবাড়া, সংগ্রহশালা, দক্ষিণ দরওয়াজা, হলুদ মসজিদ, সাদা মসজিদ, ত্রিপোলিয়া গেট, নীলকুঠি, কর্ণসুবর্ণ অধিগ্রহণ করে সংস্কার ও সংরক্ষণের বন্দোবস্ত হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর এই সমস্ত স্মৃতি-সৌধ সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• মধ্যযুগীয় চার্চ
মধ্যযুগীয় চার্চের অংশবিশেষের সন্ধান পাওয়া গেল বুলগেরিয়ার সোজোপলের সেন্ট ইভান দ্বীপে। চার্চের স্থাপত্যরীতি ও সেখান থেকে পাওয়া জিনিসপত্র পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানা যায় এটি ১২-১৪ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। চার্চের দেওয়ালগুলি ১২ মিটার দীর্ঘ, ৭০ সেন্টিমিটার পুরু। আর উচ্চতা ৩-৪ মিটার। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, চার্চটি সম্ভবত নির্মিত হয়েছিল জন দ্য ব্যাপটিস্টের উদ্দেশে।

• নাজিরপুরের স্তূপ
দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামের কাছে নাজিরপুরের স্তূপ। সুপ্রাচীন স্তূপটি প্রায় ১৫-২০ ফুট উঁচু এবং দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৭০ ফুট। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই স্তূপটি আরও উঁচু ছিল, এখন কিছুটা বসে গিয়েছে। আগে এখানে একটি পাকুড় গাছ ছিল, বর্তমানে সেটা আর নেই। অনুমান করা হয়, এখানে আগে কোনও প্রাচীন সৌধ ছিল, আজ তা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত। স্তূপের পাশে রয়েছে একটি পুকুর। এখানে আগে বৈশাখ মাসে কালীপুজো হত। পুজো উপলক্ষে মেলাও বসত। বছর কুড়ি হল মেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই স্তূপ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। ক্ষেত্রসমীক্ষা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। উঁচু ঢিবিটি বৌদ্ধবিহার বলে অনেকে মনে করেন। স্তূপের সামান্য অংশ খনন করলেই মাটির ফলক পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা বর্তমান টালির মতো। অনেকে আবার বলেন, স্তূপটি পাল-সেন যুগের সমসাময়িক। হয়তো এটি বাণগড়ের ক্ষুদ্র একটি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। স্থানীয়দের মতে, স্তূপটির উপর সৌধটি মোগল যুগের হতে পারে।

• প্রত্নবস্তুর তথ্য সংগ্রহ
থরে থরে সাজানো পোড়ামাটির ইট, টালি, তৈজসপত্র, পাথরের মূর্তি বা ধাতব মুদ্রা। কোনওটা গোটা, কোনওটা অর্ধেক, কোনওটার আবার সামান্য এক টুকরো অবশেষ। আর এদের প্রত্যেকটি বহন করে চলেছে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস। এই সব ইট, কাঠ, পাথরকে যত্ন করে তুলি দিয়ে ঝেড়ে, মুছে তার ছবি তুলে আকার-আয়তন-ওজন নিখুঁত বিবরণ লিখে রাখা হচ্ছে। রীতিমতো ফিতে-স্কেল ধরে মাপজোক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তার পর একটি বিশেষ নম্বর দিয়ে সেটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।এর মধ্যে কোনও মূর্তির বয়স দু’হাজার বছর, আবার কোনওটা এক হাজার বছরের পুরনো। অতীত দিনের এই সব স্মারকের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী যে তারও বয়স নয় নয় করে তিনশো বছর পার। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে শুরু করে মৌর্য-শুঙ্গ যুগ, পাল-সেন যুগ হয়ে অষ্টদশ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের এমনই কয়েকশো পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সংগ্রহে। যার মধ্যে মৌর্য-শুঙ্গ যুগের যক্ষিনী বা কুবেরের মূর্তি কিংবা মধ্যযুগের মুদ্রা রয়েছে। তেমনই রয়েছে পাল-সেন যুগের বিষ্ণু মূর্তি, প্রাচীন ওডিশি চিত্রকলার নিদর্শন- রঙিন দশাবতার এবং অসংখ্য প্রাচীন পুঁথি। সেই সব প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনের বিস্তারিত তথ্যসংগ্রহ এবং নথিভূক্তকরণের কাজ চলছে। কেন এই উদ্যোগ? এই প্রসঙ্গে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ের উপ অধিকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই ভাবে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় পুস্তিকা বা ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার’ তৈরি করা হচ্ছে যেখানে রাজ্য বা সংস্থা বা ওই ক্রমিক নম্বর ধরে খোঁজ করলে সংশ্লিষ্ট স্মারকটি সম্পর্কে জানতে পারবেন আগ্রহীরা। পুরো বিষয়টি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনেও পাওয়া যাবে।’’

wA}MyÅ ও বন্যপ্রাণ
• ব্রিটেনে প্রজাপতি
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী ব্রিটেনে প্রজাপতির সংখ্যা কমেছে ৭২ শতাংশ। এমনকী সাধারণ প্রজাতির সংখ্যাও কমেছে ২৪ শতাংশ। যৌথ ভাবে এই সমীক্ষা করেছে ‘বাটারফ্লাই কনজারভেশন’ এবং ‘সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজি’ বা সিইএইচ। সমীক্ষায় মান্য করা হয়েছে বিগত দশ বছরের পরিসংখ্যান। এ ছাড়া বহু দিন ধরে চলা দু’টি সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাবেই ব্রিটেনে কমেছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি। বিলুপ্ত হওয়া প্রজাপতির মধ্যে রয়েছে ‘পার্ল-বর্ডারড ফ্রিটিলারি’, ‘দ্য ডিউক অফ বার্গেন্ডি’, ও ‘দ্য হাই ব্রাউন ফ্রিটিলারি’-এর মতো প্রজাতি। এর মধ্যে ‘দ্য হাই ব্রাউন ফ্রিটিলারি’ প্রজাপতির বিলুপ্তি ঘটেছে ৬৯ শতাংশ। ‘স্মল স্কিপার’, ‘কমন ব্লু’, ‘স্মল টরটয়েসশেল’-এর মতো বেশ কয়েকটি সাধারণ প্রজাতিও বিলুপ্ত। যদিও সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, সংরক্ষণের ফলে বহু বিরল প্রজাতির প্রজাপতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য মার্শ ফ্রিটিলারি’ ও ‘লার্জ ব্লু’। যা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৮০ সালে ফের ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। সিইএইচ-এর ডা. মার্ক বথাম জানিয়েছেন, প্রজাপতি সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের দেখাশুনো করা খুবই জরুরি।

• হাতির ‘ষষ্ঠ’ আঙুল
সম্প্রতি ‘জার্নাল সায়েন্স’-এর এক রিপোর্টে জানা গেছে হাতির পায়ে ছ’টি আঙুল! হাতির পায়ে মাংসের দলার মতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অংশ নিয়ে বৈজ্ঞানিকদের কৌতূহল দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি হাতির জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, চার কোটি বছর আগে হাতির পায়ে এই মাংসের বৃদ্ধি শুরু হয়। তখন থেকেই হাতির বিশালাকার দেহের ভার বহনে সাহায্য করে এই ‘ষষ্ঠ’ আঙুল। এই রিপোর্টের প্রধান রচয়িতা জন হাচিনসন জানিয়েছেন, “১৭০৬ সালে প্রথম বারের জন্য হাতির শব ব্যবচ্ছেদ করেন এক স্কটিশ শল্য চিকিস্যক। তখন থেকেই এই ‘ষষ্ঠ’ আঙুল নিয়ে জল্পনার শুরু। বহু গবেষক মনে করতেন হাতির পায়ের কার্টিলেজ-এর উপর একটি মাংসের দলা রয়েছে, যার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক ছিল বরাবরই। কিন্তু এ নিয়ে কখনও কোনও যুক্তিগ্রাহ্য তথ্য সামনে আসেনি।” সম্প্রতি অধ্যাপক হাচিনসন ও তাঁর সহযোগীরা হাতির শব ব্যবচ্ছেদ-সহ সিটি স্ক্যান, হিস্টোলজি ও ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি পদ্ধতির সাহায্যে উত্তর খুঁজে বার করতে সমর্থ হয়েছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, হাতির পায়ে হাড়ের তৈরি এই আঙুলটির গঠন একটু অদ্ভুত ধরনের। পায়ের অন্য পাঁচটি আঙুল সামনের দিকে এগোনো থাকলেও ছ’নম্বর আঙুলটি পেছনের দিকে বাঁকানো, যা বিশাল শরীরের ভার বহন করা-সহ সোজাসুজি ভাবে দাঁড়াতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

• কাজিরাঙার বারাশিঙা হরিণ
অসমের কাজিরাঙায় হরিণ গণনায় গত বারের তুলনায় বারাশিঙা (ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার) হরিণের সংখ্যা কমেছে ২৪টি। ২০১০ সালের নভেম্বরের সুমারিতে বারাশিঙার সংখ্যা ছিল ১১৬৮টি। আর ২০১১-য় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১১৪৪। ১৯৯১ সালে কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে ৫৫৯টি বারাশিঙা ছিল। কাজিরাঙা বস্তুত বিপন্নতার তালিকায় একেবারে উপরের সারিতে থাকা ‘ইস্টার্ন সোয়াম্প ডিয়ার’ বা পূর্বী বারাশিঙার শেষ আবাসস্থল হিসাবে স্বীকৃত। ২০০৭ সালের সুমারিতে এখানে মিলেছিল মাত্র ৬৮১ টি বারাশিঙা হরিণ। পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলি এই পরিসংখ্যান পেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। অতঃপর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে যে সুমারি হয়, সে সময় বারাশিঙার সংখ্যা বেড়ে বেড়ে হয় ১১৬৮টি। ওই বছরই ৩ নভেম্বর, দিল্লিতে কাজিরাঙার বারাশিঙা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন দফতর ও ডব্লিউটিআইয়ের তিন বছরে মোট ৮৫ লক্ষ টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। তবে বারাশিঙার সংখ্যা আবার কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় চিন্তিত পরিবেশ আন্দোলকারী ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী সংগঠনগুলি। বনকর্তাদের ধারণা, অসুখবিসুখ ও বাঘ-সহ শ্বাপদদের আক্রমণেই কমেছে বারাশিঙার সংখ্যা। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিপন্ন এই প্রজাতির হরিণ সংরক্ষণে জোরদার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁদের আশঙ্কা, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে কাজিরাঙার অন্যতম সম্পদ এই বারাশিঙা। এই প্রজাতির হরিণ প্রজননেও তেমন উৎসাহী নয়। অবসাদের এই প্রবণতাও এই হরিণ প্রজাতিকে বিপন্নতর করে তুলছে। স্থানীয় ভাষায় দল (কাদা) হরিণ নামে পরিচিত এই প্রজাতিটি ‘সোয়াম্প ডিয়ার’-এর তিনটি প্রজাতির অন্যতম। ভারত ও নেপালে মেলা অন্য দু’টি প্রজাতি হল— গাঙ্গেয় উপত্যকার ‘ওয়েটল্যান্ড সোয়াম্প ডিয়ার’ ও মধ্য ভারতের ‘হার্ডগ্রাউন্ড সোয়াম্প ডিয়ার’।

পার্বণ
• হাতি ও গাছ বাঁচাতে বনদেবতার পুজো
এক সময়ে ভয় থেকে হাতির পুজো শুরু করেছিলেন। এখন হাতির সংরক্ষণ ও গাছ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে চিলাপাতা জঙ্গলে পুজো করছেন আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরের বাসিন্দা সুনীল ভদ্র। সম্প্রতি চিলাপাতার জঙ্গলে বন দেবতার পাশাপাশি তিনটি কুনকি হাতিকে পুজো করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পেশায় ঠিকাদার সুনীলবাবু বলেন, “বছর আটেক আগে চিলাপাতা এলাকায় রাতের বেলায় আমার ক্যাম্পে এক দল বুনো হাতি ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। হাতির উপদ্রবে সেই সময় আমার ক্যাম্পে কেউ থাকতে চাইতেন না। হাতির উপদ্রব ঠেকাতে আমি সেই সময় চিলাপাতা রেঞ্জের বানিয়া নদীর ধারে মহাকাল বাবার পুজো শুরু করি। আজও সেই পুজো চলে আসছে। শিবের মূর্তির পাশাপাশি বনদেবতা ও চিলাপাতা রেঞ্জের তিনটি হাতির পুজো করা হয়। চাল, কলা নৈবেদ্যর পাশাপাশি ধান, কলা, কলাগাছ, ভাঁপাপিঠে, গুঁড়, হাতিকে খাওয়ানো হয়। চিলাপাতা রেঞ্জের মাহুতরা তিনটি কুনকি হাতি সাহারুল, অনুসূয়া ও বছর দুয়েকের শঙ্করীকে নিয়ে আসেন। হাতিগুলিকে বানিয়া নদীতে স্নান করানো হয়। হাতিগুলিকে পুজোস্থলে উলুধ্বনি দিয়ে মহিলারা কুলোয় প্রদীপ জ্বেলে বরণ করেন। মাথায় সিদুঁর লেপে কলা খাওয়ানো হয়। সুনীলবাবু বলেন, “এই পুজো বর্তমানে আমজনতার পুজোয় পরিণত হয়েছে। হাতি পুজো করার আগে কিংবা পরে একটি গাছকে বনদেবতা রূপে পুজো করা হয়।”

• পীঠস্থানে ফকির উৎসব
ফকিরদের পীঠস্থান গোড়ভাঙা। বাংলার পর্যটন-মানচিত্রে সাম্প্রতিক সংযোজন। গোড়ভাঙার ফকিরদের কণ্ঠেই পুনরাবিষ্কৃত হয়েছে বাংলা কাওয়ালি গানের লুপ্তপ্রায় ধারাটি। বাংলা সুফি গানও সারা পৃথিবীতে ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে এখানকার শিল্পীদের সুরে ও কথায়। নদিয়ার করিমপুরে বাংলাদেশ সীমান্ত-লাগোয়া এই গ্রামে ১৩-১৫ জানুয়ারি সারাদিন, সারারাত বাউল-ফকির দরবেশি গানের আখরা বসেছে। এই উৎসব তিন বছরে পড়ল। শুধু গান শোনা নয়, বাংলার জীবনদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও একাত্ম হওয়া যায়। গান-পাগল বহু মানুষ সারা বছরই আসেন গোড়ভাঙায়। ভিড় সামলাতে অতিথিদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

• গাঁধী স্মৃতি মেলার প্রস্তুতি
মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধীর স্মৃতি-বিজড়িত ‘গাঁধী স্মৃতি প্রদর্শনী ২০১২’ শুরু হতে চলেছে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে মহকুমাশাসকের সভাঘরে প্রদর্শনীর উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহকুমাশাসক সুমিত গুপ্তের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কাঁথির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির আধিকারী ও তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু আধিকারীকে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরামর্শদাতা করে একটি মেলা কমিটি গঠন করা হয়। মেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন মহকুমাশাসক সুমিত গুপ্ত। মেলা কমিটির সম্পাদক হেরম্ব কুমার দাস জানান, ১২ দিন ব্যাপী এই মেলার বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।

mJ©A}ò  èm
• বোলঞ্চার এক গম্বুজের মসজিদ
শুধু রাস্তাঘাট দিঘি খননই নয়, বাংলার অন্য জমিদারদের মতো উত্তরবঙ্গের বোলঞ্চার জমিদাররাও দান-ধ্যানে এগিয়ে এসেছিলেন। কথায় বলে কীর্তির্যস্য স জীবতি। তাঁদের উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল বোলঞ্চার এক গম্বুজের মসজিদ। ইসলামপুর থেকে মাটিকুণ্ডা যেতে পথের ধারে দেখা যাবে এই মসজিদ। মসজিদের পাশেই পশ্চিম দিকে জমিদার জাবাহের আলির জরাজীর্ণ বাড়ি। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জমিদার জাবাহের আলি এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বমুখী এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট, প্রস্থ ২১ ফুট এবং উচ্চতা ৩০ ফুট। তার ২৫ ইঞ্চি চওড়া দেওয়াল ইট-বালি-চুন-সুরকির। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বের দেয়াল কারুকার্যময়। বিশেষ করে পূর্বের অর্থাৎ সামনের দেওয়ালে লতাপাতার কারুকার্য দেখার মতো। চারটি খিলানের উপর স্থাপিত একটি সুবৃহৎ গোলাকার গম্বুজ এবং ন’টি মিনার। এদের শীর্ষদেশে দেখা যায় কলসি আর পদ্মফুল। এদেরও কারুকার্য লক্ষণীয়। সুরম্য এই মসজিদের অভ্যন্তরে ঢুকলেই চোখে পড়বে কুলঙ্গি আর মেহরাব। মেহরাবের পাশে বসে মৌলবি মফিজুদ্দিন সাহেব কোরান পাঠ করেন। বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ মনোযোগ সহকারে সেই কোরানপাঠ শুনে থাকেন। পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে অতি আকর্ষণীয় এই এক গম্বুজের মসজিদ।

• জলপাইগুড়ির নবাববাড়ি
ঝাড়বাতি উধাও, ভাঙা জাফরির আবডালে ঘুমন্ত শ্বেতপাথরের দরবার। শূন্য মহল, মেহফিলে অনুপস্থিত অতিথি। ভারত তখন ইংরেজদের। তবু জলপাইগুড়ির নবাবকে তোপধ্বনির বিরল সম্মানে স্বাগত জানায় ব্রিটিশ। এই নবাব পরিবারের সূচনা সিপাহি বিদ্রোহের পর। মহারানি ভিক্টোরিয়া এক সনদ বলে ১৮৫৮-তে শাসনক্ষমতা স্বহস্তে নেন। এই সময় মহারানির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্নেল হিদায়েত আলির উদ্যোগেই জলপাইগুড়ি এলেন নবাব পরিবারের প্রথম ব্যক্তিত্ব রহিম বক্স। ১৮৬৪-তে ব্রিটিশ-ভুটানি মহারণ বাধে। কর্নেল হিদায়েত আলি এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলে ভুটানিরা পরাজিত হয়ে পাহাড়ে চলে যায়। সম্ভবত কর্নেলের নামেই ভুটানের পথে আলিপুরদুয়ার। যুদ্ধের সময় রহিম বক্স ব্রিটিশ সেনাদের রসদ-সহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করলে ইংরেজ সরকার তাঁকে জমি-সহ প্রচুর পারিতোষিক দেয় এবং খানবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে। রহিম বক্স ইংরেজি ভাষা শিখে নেন এবং ডেপুটি কমিশনারের পেশকার নিযুক্ত হন। ১৮৭৫-এ ব্রিটিশরা ডুয়ার্সে প্রথম চা-বাগান তৈরির কাজ শুরু করলে ১৮৭৭-এ মুন্সি রহিম বক্সই প্রথম ভারতীয় হিসেবে চা-বাগান নির্মাণের সম্মতি পান। তাই তাঁর স্মৃতি আজও অম্লান। ১৮৮২-তে জলপাইগুড়ি শহরে চা শিল্পের রেনেসাঁস শুরু হয়। রহিম বক্সের বিবি মেহেরুন্নেসা ও গুলাবজাম’কে চা-বাগান তৈরির জন্য চেংমারি তালুকে ৭৭৭.৮২ একর জমি দিলে তাঁরাই প্রথম মহিলা হিসেবে ভারতে ইংরেজদের বাণিজ্যিক স্বীকৃতি লাভ করেন। রহিমের কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। দুই মেয়ের মধ্যে রহিমুন্নেসা খাতুন বড় এবং ফয়জুন্নেসা ছোট। ফয়জুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয় নবাব মুশারফ হোসেনের। তিনিই রহিম বক্সের একান্ত অনুগত হয়ে সম্পত্তি দেখভাল শুরু করেন। ১৯০৩-এর ৪ সেপ্টেম্বর রহিম বক্সের মৃত্যু হয়। মুশারফ হোসেন জার্মানি ও ইতালি থেকে শিল্পী এনেই গড়ে তোলেন এ নবাববাড়ি। এখন এই নবাব বাড়ি-ই পর্যটকদের কৌতূহলের বিষয়।

• দার্জিলিং শহরে ‘সম্প্রীতি’
প্রাচীন কাল থেকে দার্জিলিং-এ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান লক্ষ করা যায়। দার্জিলিং শহরের অবজার্ভেটরি পাহাড়ে মহাকালের মন্দিরে একই সঙ্গে মহাদেব ও বুদ্ধদেবের পুজো হয়। পাশাপাশি বসে থাকেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও বৌদ্ধ লামা। মন্দিরে পুজো দিতে এসে ভক্তরা জ্বলন্ত প্রদীপ ভগবানের উদ্দেশে নিবেদন করেন। অবজার্ভেটরি হিল-এ আগে একটি বৌদ্ধ মঠ ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে সিকিমের পেডং মঠের একটি শাখা হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোর্খাদের আক্রমণে এই মঠ ধ্বংস হয়। পরে সংস্কার করা হলেও ১৮৭৮-’৭৯-এ মঠটি স্থানান্তরিত হয়ে ভুটিয়াবস্তি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ম্যাল পাহাড়ের নীচে ভুটিয়া বৌদ্ধ মঠ ও বিহারটি তার অতীত ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। মঠটি লামা মতবাদের ‘কর-মা-পা’ অনুগামীদের। পরিচালনার দায়িত্বে ঘুম মঠের পরিচালকবর্গ। মঠের দেওয়ালে নানা রঙিন চিত্রের সমাবেশ। এ ছাড়া আছে নানা পাণ্ডুলিপি ও ব্রোঞ্জমূর্তি। মহাকাল শৈল-এর মন্দিরে মহাকাল, তাঁর শক্তি মহাকালী, শিব, পার্বতী, সন্তোষীমাতা প্রভৃতি দেবদেবী স্থাপিত হয়েছেন। এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীরাই পুজো করেন। পুজোর জন্য ফুল ও দুধ দেওয়া হয়। রঙিন সুতো, নকুলদানা দেবদেবীকে অর্পণ করা হয়। দর্শনার্থীরা ঘণ্টা বাজিয়ে প্রণাম জানান এবং সাত বার প্রদক্ষিণ করে বেড়ার বংশ দণ্ডের উপর নানা রঙের সুতো ঝুলিয়ে পতাকার মতো উড়িয়ে দেন। একে ‘বায়ু-ঘোটক’ বলে। মহাকালের কাছে একটি হোমকুণ্ড আছে। কিছু দূরে এক জন লামার সমাধি আছে। এই পাহাড়ের গায়ে একটি সুড়ঙ্গ-সহ গুহা আছে। প্রবাদ, এই সুড়ঙ্গ তিব্বতের লাসা পর্যন্ত গিয়েছে। বর্তমানে বিপদের কথা ভেবে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং এখন পর্যটকে ভরে উঠেছে। ম্যাল থেকে দু’পা বাড়িয়ে ঘুরে আসাই যায় এই সম্প্রীতির মন্দিরে।

পর্যটন কেন্দ্র
• চিলাপাতায় নয় বিদেশি ভ্রমণ কাহিনি লেখক
ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে দেশ বিদেশের ভ্রমণ কাহিনির লেখকদের চিলাপাতায় হাজির করল ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম’-এর কর্তারা। ভ্রমণ কাহিনির ওই লেখকদের দলে জার্মান, বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তের লেখকেরা হাজির ছিলেন। জার্মানির লেখক দম্পতি স্টিফান ও রেনাট লজ বলেন, “কেবল শীতকাল নয়, সারা বছর যাতে পর্যটকদের ডুয়ার্সে আনা যায় সেই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত।” রাজ্য সরাকারের পযর্টন দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ বলেন, “ডুয়ার্সে মেগা ট্যুরিজম প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। এই প্রজেক্টে পযর্টনের উন্নয়নের জন্য পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শীতকাল ছাড়া যাতে গরম ও বর্ষা কালে দেশ বিদেশের পযর্টকদের ডুয়ার্সে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।” ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম’ অবশ্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, “সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা দেশবিদেশের পযর্টকদের আকৃষ্ট করার জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়েছি। দেশবিদেশের ট্যুরিজম সংস্থাগুলিকে ডুয়ার্সে আনার পাশাপাশি এ বার নয় সদস্যের ভ্রমণ কাহিনি লেখকদেরও আনা হয়েছে । জার্মানি, বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট লেখকেরা ডুয়ার্স ঘুরে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও লোকসংস্কৃতির প্রশংসা করেছেন।”

• হুড়ার পুটিয়ারি জলাধার
শীতে চেনাছকের বাইরে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ধরা পড়ে পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের পুটিয়ারি জলাধারে। শুধু জলাধারই নয়, সেখানে গেলে আকাশটাও অন্য রকম মনে হয়। দিগন্তবিস্তৃত আকাশ যেন মাথার উপর নেমে এসেছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার ৬০এ জাতীয় সড়কের উপরে লধুড়কা মোড় থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এই জলাধার। আবার আদ্রা কিংবা আনাড়া স্টেশনে নেমেও সড়ক পথে এখানে আসা যায়। কী ভাবে সৃষ্টি হল এই জলাধার? চারপাশের উঁচু এলাকা থেকে বৃষ্টির জল পুটিয়ারি জোড়ে নেমে আসত। অনেক জল পাশের অন্য এলাকায় বেরিয়ে যেত। সেচ দফতর বেশ কয়েক বছর আগে পুটিয়ারিতে আরও বেশি জল জমার ব্যবস্থা করে। জলধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় পুটিয়ারি এখন জলাধারে পরিণত হয়েছে। ২২৫ একর জায়গা জুড়ে এই জলাধার। চারপাশে সবুজ গাছগাছালি। জলাধারের পাড়ে বসে দেখা যায়, খানিক দূরের তিলবনি পাহাড়। সেই পাহাড়ের নীচে বিরাট জঙ্গল। জলাধারে পর্যটকদের জন্য নৌকা বিহারের ব্যবস্থাও রয়েছে।

• দিঘা সৈকত উৎসব
শুক্রবার ১৩ জানুয়ারি থেকে দিঘায় শুরু হল চার দিনের সৈকত উৎসব। সৈকত উৎসবকে কেন্দ্র করে দিঘা ও মন্দারমনি সেজে উঠেছে। উৎসব উপলক্ষে সৈকত-শহরের চেহারায় বদল আনারও নানা রকম চেষ্টা চালিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। পর্যটন, মৎস্য, পূর্ত ও সেচ দফতরও উৎসবে সামিল হয়েছে। দিঘা শহরকে আলোকমালায় সাজানো হয়েছে। আলোকসজ্জার দায়িত্বে থাকা সংস্থার পক্ষে মানস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দিঘায় স্থায়ী সুদৃশ্য পথবাতির জন্যই শুধু ৬৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পযর্টন দফতরের পক্ষ থেকে উৎসবে আগত পর্যটকদের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ ও আনন্দ দিতে বিশেষ টেন্ট তৈরি করা হয়েছে। করা হয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসেরও আয়োজন। মন্দারমনিতেও পর্যটন দফতর, স্থানীয় কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েত ও হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ওয়াটার-স্পোর্টস ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিঘা-মন্দারমনি সৈকতে এই উৎসবের মাঝে ‘বঞ্চনা’র ক্ষোভ ছড়িয়েছে শঙ্করপুর ও তাজপুরে। উৎসবের আঙিনা থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভ।


পরিষেবা
• রেলযাত্রীদের সুরক্ষায় হেল্পলাইন
রেলযাত্রীদের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করার লক্ষ্যে রেল মন্ত্রক জাতীয় স্তরে একটি হেল্পলাইন নম্বর ‘১৩৫’ চালু করতে চলেছে। ভারতে ২৪ ঘন্টার এমন রেল যাত্রী পরিষেবা এই প্রথম। যে কোনও ধরনের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যাত্রীরা এই নম্বরে যোগাযোগ করে নিজেদের অসুবিধার কথা জানাতে পারবেন। মূলত বিভিন্ন জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতেই এই সহায়ক পরিকল্পনাটি রূপায়িত হয়েছে। এই দফতরের দায়িত্বভার সম্পূর্ণ ভাবে আরপিএফ-এর হাতে থাকবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা হবে নয়াদিল্লি থেকে। রেল মন্ত্রক এখনও পর্যন্ত ৪.৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এই খাতে। রাজ্যসভায় প্রস্তাবিত এই বিলটি পাশ হয়ে এখন লোকসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

• শক্তিশালী ডিজেল ইঞ্জিন এ বার ভারতীয় রেলে
৫,৫০০ অশ্বশক্তি বিশিষ্ট (ডব্লুডিজি-৫) ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন বানাচ্ছে ডিজেল ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘ইলেক্ট্রো মোটিভ ডিজেল’। উন্নত পরিষেবার স্বার্থে এতে ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশান, রাডিয়াল গ্রিড, হালকা ফাইবার দিয়ে বগি প্রস্তুত করার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধুমাত্র যাত্রী পরিষেবাই নয় চালক এবং সহ-চালকদের সুযোগ সুবিধার দিকেও নজর দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ও শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে এই ইঞ্জিনে।

• চিনের বিমানবন্দরে নতুন পরিষেবা
যাত্রী পরিষেবা বাড়াতে চিনের বিমানবন্দর গুলিতে আনা হয়েছে নতুন পরিষেবা। যাত্রীরা যাতে সহজেই নিজেদের পছন্দসই ভাষায় (চিনা, ইংরেজি ও জাপানি) বসার জায়গাটি বাছতে ও বোর্ডিং পাসের প্রিন্ট আউট নিতে পারেন তার জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে চেক-ইন করতে হবে না।

বিপন্ন সুন্দরবনকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা
সুন্দরবনের বিপর্যয় রুখতে এ যাবৎকাল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের বিনাশ ও তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-বদল নিয়ে চিন্তার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে সঠিক কারণেই। যদিও এর পিছনে সুন্দরবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্যময় সোয়াম্প ফরেস্টের বিনাশ নিয়ে আমাদের বিচলিত হতে দেখা যায়নি। সুন্দরবনের পলি-জমা ঊর্বর কর্ষণক্ষেত্র পেয়ে মানুষ নির্বিবাদে সেখানকার সোয়াম্প ফরেস্টের প্রাণী, উদ্ভিদ ও চরিত্র বদলে দিয়েছে। প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়াটার বাফেলো, জাভান ও ওয়ান হর্নড রাইনো, সোয়াম্প ডিয়ার আজ ইতিহাসে! এই অঞ্চলের বিপন্ন উদ্ভিদদের মধ্যে কোনও রকমে টিকে আছে চেঁচো, ঝেঁঝো, ব্যাঙহাতা ও ভিলো-র (স্থানীয় নামে উল্লেখ্য) মতো জলাভূমির লতা ও উদ্ভিদ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সোয়াম্প বাস্তুতন্ত্রে জল ও মাটির লবণের নিয়ন্ত্রক ভূমিকা রয়েছে। এ দেশেও শালুক লতার নুন নিয়ন্ত্রণের উপর গবেষণা হয়েছে। এরা সামগ্রিক ভাবে জল ও মাটির নুন কমাতে পারে। আবার এই উদ্ভিদকুল হরিণ, শুয়োর, গণ্ডারদের মতো তৃণভোজীদের বড় প্রিয় খাদ্য। সে জন্য ওই অঞ্চলের সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ছিল পরস্পরের পরিপূরক। একই সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধে ম্যানগ্রোভের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দ্বীপভূমি রক্ষায় তাই এই দুই বনেরই পরিচর্যা দরকার এখনই। সাগরঘেঁষা সুন্দরবনের পশ্চিমে সাগরদ্বীপ থেকে পূর্বে ভাঙাদোয়ানি পর্যন্ত দ্বীপসমূহ ভূমিক্ষয় ও নিমজ্জমান অঞ্চলে অবস্থান করে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে বিপদ ধরলে আগামী দশ বছরে এই অঞ্চলে ১৩টি দ্বীপ আমরা হারাতে পারি। বিপন্ন ওই অঞ্চলের প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষের (সুন্দরবনের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের কিছু বেশি) ভাগ্য। এদের পুনর্বাসন দরকার মূল ভূখণ্ডের লাগোয়া দ্বীপে আর কাজ দরকার নতুন জায়গার পুনর্গঠনে। ২০২০ সালকে সীমারেখা ধরলে এখনই উচিত হবে এই অঞ্চলের জন্য মাস্টার প্ল্যান বানিয়ে কিছু করার। মানুষ সরিয়ে যদি আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় (যা জরুরি) তবে ওখানে সোয়াম্প ফরেস্টের বিকাশ করতে হবে। তখন হয়তো বেড়ে চলা একশৃঙ্গ গণ্ডার দেখতে মানুষ উত্তরবঙ্গে না-গিয়ে সুন্দরবনেও যেতে পারে। শুধু সুন্দরবনের ওই অংশে বনসৃজন করলেই গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ঠেকানো যাবে না ঠিকই, কিন্তু দ্বীপগুলির ভূমিক্ষয় এড়ানো যাবে। কালের ভবিতব্যকে রুখে দিতে না-পারা গেলেও বিলম্বিত করা যাবে। এটাই চিকিৎসার নিয়ম। সমগ্র দ্বীপ অঞ্চলের অন্যত্রও কর্ষণক্ষেত্রের ব্যাপকতা কিছুটা কমিয়ে বাঁধ-লাগোয়া ম্যানগ্রোভ বনের পিছনে সোয়াম্প ফরেস্টের আদলের কাছাকাছি বাস্তুতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যায় কি না, চেষ্টা করে দেখতে হবে। এই প্রচেষ্টায় দ্বীপগুলির ভূমিক্ষয় রোধে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকেও কাজে লাগানো যাবে।
 
 


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল স্বাদবদল • আপনার রান্নাঘর • পুরনো সংস্করণ