৩০ পৌষ ১৪১৮ রবিবার ১৫ জানুয়ারি ২০১২


একই পদ এক একজনের হাতে এক একরকম। শুধু যে হাত বদলের কারণে স্বাদ বদল হয়, তা ঠিক নয়, পাল্টায় রেসিপির কারণেও। উপকরণ ও প্রণালীতে
সামান্য ‘চেঞ্জ’ মানেই রান্নাটাও গেল কিছুটা বদলে। একই দই ইলিশ, কুমড়োর ছক্কা অথচ রাঙা পিসিমা আর মেজ মাসির দু’ বাড়িতে দু’রকম স্বাদ। আবার
কখনও রান্নার প্রতি গভীর ‘প্যাশন’ থেকেও নতুন নতুন ‘মেনু’ উদ্ভাবিত হয়। গৃহিনীর কাছে রান্নাঘরটা আসলে এক মজার ‘ল্যাবরেটরি’। যদিও
পুরুষরাও এই ব্যাপারে এক্কেবারে পিছিয়ে নেই। রান্না সংক্রান্ত আপনার সমস্ত ‘এক্সপেরিমেন্ট’ ‘শেয়ার’ করার জন্য ‘আপনার রান্নাঘর’।
 
  ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শ্রীমতি কথাকলি দাস ভৌমিক
দই ফুলকপি

উপকরণ

• মাঝারি আকারের ফুলকপি: ১টা • দই কিংবা সাওয়ার ক্রিম: আধ কাপ • পেঁয়াজ বাটা: আধ কাপ • রসুন বাটা: আধ চা চামচ • আদা বাটা: আধ চা চামচ
• তিনটে এলাচ দানা, দু’টো লবঙ্গ আর তিন টুকরো দারুচিনি • লঙ্কাগুঁড়ো: পরিমাণ মতো • তেজপাতা: ১টা • চিনি: আধ চা চামচ কিংবা তার একটু কম
• সরষের তেল অথবা সাদা তেল: পরিমাণ মতো • নুন: স্বাদ মতো


প্রণালী
দই ভাল করে ফেটিয়ে রাখতে হবে। প্রথমে ফুলকপির ফুলগুলো ছোট করে কেটে নিতে হবে।
• গরম জলে একটু নুন দিয়ে তার মধ্যে ফুলগুলো পনেরো মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
• এর পর জল ঝরিয়ে ফুলগুলোকে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা ও লঙ্কাগুঁড়োর সঙ্গে মাখিয়ে নিতে হবে।
• এই মিশ্রণে দই মিশিয়ে অন্তত কুড়ি মিনিট ম্যারিনেট করে রেখে দিতে পারলে ভাল হয়।
• এর পর কড়াইতে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে গরম মশলা আর তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে দিতে হবে।
• তার পর ম্যারিনেট করা ফুলকপি তেলে দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে।
• এই সময় গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দিয়ে রান্না করতে পারলে খুব ভাল হয়। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ফুলকপি লেগে না যায়।
• দই থাকার কারণে প্রথমে অনেক জল বেরোবে। এই সময় কড়াইটা ঢাকা দিয়ে রান্না করলে ফুলকপি তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে।
• যখন জল প্রায় শুকিয়ে আসবে তখন আঁচ একদম কমিয়ে দিয়ে চিনি দিতে হবে।
• এর পর ফুলকপিটা একটু নেড়ে নিলেই রান্না শেষ। গরম ভাত কিংবা পরোটার সঙ্গে এই পদটি খুবই মানানসই।

কলকাতার নাকতলায় বাড়ি হলেও, বিবাহসূত্রে এখন বাস লস এঞ্জেলসে। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে বি.কম ও জনসংযোগ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে সংবাদপত্রে লেখালেখির কাজ। বাবার বদলির চাকরির জন্য ছোট থেকেই বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে পরিচয়। এখন অবশ্য সেই পরিধি আমেরিকা ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে অন্যান্য দেশেও। মনের মতো রান্না করা আর ইচ্ছে মতো কলম চালানো সেই ঘুরে বেড়ানোর অঙ্গও বটে।
 
হায়দরাবাদ থেকে শ্রীমতি সুমনা দে মল্লিক
বিটের বরফি

উপকরণ

• কুরানো বিট • সুজি • খোয়া ক্ষীর • দুধ • কাজু বাদাম বাটা • চিনি • ঘি • পেস্তা-আমন্ড-কাজুকুচি • ছোট এলাচ গুঁড়ো

প্রণালী
• শুকনো খোলায় সুজি একটু লাল করে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
• কড়ায় ঘি দিয়ে কুরানো বিট দিয়ে ভালো করে নেড়ে ভেজে
নিতে হবে।
• বিটের সঙ্গে এবার সুজি ও দুধ দিন।
• ভাল করে নাড়তে নাড়তে খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে নিতে হবে।
• বিট সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি দিয়ে ভাল করে পাক দিতে হবে।
• পাক হয়ে গেলে কাজু বাটা ও এলাচ গুঁড়ো দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে।
• এ বার একটা প্লেটে ঘি মাখিয়ে ওই মিশ্রণটা ঢেলে ঠান্ডা করতে দিতে হবে।
• এর পর ছুড়িতে ঘি মাখিয়ে বরফির মতো কেটে উপর থেকে শুকনো ফল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। স্বামীর কর্মসূত্রে এখন বসবাস হায়দরাবাদে। নিজের ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভালবাসেন নতুন নতুন পদ রান্না করতে। ভাল লাগে যে কোনও নতুন পদ তৈরি করতেও।

ফিজি, লাউটোকা থেকে শ্রীমতি সুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাঙা আলুর পুলি

উপকরণ

• রাঙা আলু: ৭৫০ গ্রাম • ময়দা (সাধারণ ময়দা): ২ চামচ • ঘি বা গলানো মাখন: ১-১ এবং ১/২ • নারকেল কোরা: ১ কাপ
• ছোট এলাচে গুঁড়ো: ১/২ চামচ • চিনি: ৪ কাপ • জল: ১ কাপ • গুঁড়ো দুধ: ৪-৫ চামচ বা খোয়া ক্ষীর: ১/৩ কাপ
• আমন্ড: ৭-৮ টি • কিসমিস কুচানো: ২ চামচ • রিফাইন্ড তেল: ভাজার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ (২০০ মিলি)

প্রণালী
• রাঙা আলু ধুয়ে প্রেসার কুকারে ভাল করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
• সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে ভাল করে চটকে মেখে নিতে হবে।
• এর পর ময়দা ও ঘি মিশিয়ে নিতে হবে।
• একটি নন স্টিক প্যানে নারকেল কোরা, হাফ কাপ চিনি দিয়ে নাড়তে হবে।
• ৪-৫ মিনিট পর গুঁড়ো দুধ/খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে আরও একটু নাড়তে হবে।
• যখন গায়ে লাগা হয়ে প্যান থেকে ছেড়ে আসবে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে।
• এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে বাদাম-কিসমিস কুচো মিশিয়ে নামিয়ে রাখতে হবে।
• এ বার একটু ঠান্ডা হলে ওর থেকে ছোট ছোট পুর বানিয়ে নিতে হবে।
• রাঙা আলু মাখা থেকে খানিকটা করে নিয়ে গোল চ্যাপ্টা করে তার ভেতর নারকেলের পুর ভরে মুখ ভাল করে বন্ধ করে দিতে হবে।
• এ বার প্যান বা কড়াইতে তেল ভাল করে গরম করতে হবে।
• পরে আঁচ কমিয়ে একটি পুলি দিয়ে দেখতে হবে হচ্ছে কিনা। ছেড়ে গেলে পুলিতে সামান্য ময়দা মাখিয়ে নিতে হবে।
• এই ভাবে পুলিগুলো ডুবন্ত গরম তেলে বাদামি করে দু’পিঠ ভেজে কাগজের উপরে রাখতে হবে।
• একটি সস প্যানে চিনির রস বানিয়ে রাখতে হবে।
• এই পুলিগুলো দেওয়ার আগে রস এক বার ফুটিয়ে পুলিগুলো ওতে ছেড়ে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। ডেকচি ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
• এক ঘন্টা পর রাঙা আলু পুলি পরিবেশন করুন, ইচ্ছে হলে মাইক্রোওয়েভে একটু গরম করে নেওয়া যেতে পারে।

টিপস: অনেকে চিনির রসের পরিবর্তে পাটালি গুড়ের রসে দিয়ে থাকেন।

পাটিসাপটা
উপকরণ
পুরের জন্য
• নারকেল কোরা: ১ এবং ১/৪ কাপ • গুঁড়ো দুধ: ১/২ কাপ
• চিনি: ১ কাপ • ছোট এলাচ গুঁড়ো: ১ চামচ
গোলার জন্য
• ময়দা: ২ কাপ • গলানো ঘি: ৩ চামচ • চিনি: ২ চামচ
• দুধ: দেড় কাপ • ভাজার জন্য সামান্য তেল

প্রণালী
• প্রথমে প্যান গরম করে নারকেল চিনি মিশিয়ে পাক দিতে হবে মাঝারি আঁচে।
• এর পর গুঁড়ো দুধ মেশান। পাকটা প্যান থেকে আলগা হয়ে এলে বোঝা যাবে পুর তৈরি হয়ে গেছে।
• এ বার এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
• ঠান্ডা হলে পুলির আকারে গড়ে নিতে হবে।
• এর পর গোলা তৈরি করতে হবে। এটা হবে প্যানকেকের গোলার মতন। পাতলা না হয়।
• ১৫-২০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর একটি ফ্রাইং প্যানে ১ চামচ তেল মাখিয়ে গরম করতে হবে।
• এর পর ওই গোলা থেকে এক হাতা করে গোলা ঢেলে একটা পিঠ হতে দিতে হবে।
• পাশ থেকে সামান্য তেলের ফোঁটা দেওয়া যেতে পারে।
• তলাটা সামান্য বাদামি হওয়া চাই। এক বার উল্টে ওপর দিকটাও ১৫-২০ সেকেন্ড রাখতে হবে।
• এর পর আবার উল্টে প্যানকেকের একধার থেকে লম্বা করে গোটা পুরটা দিয়ে রোল করে নিতে হবে।
• শুধুমাত্র দু’বার রোল হবে। হাল্কা রঙ ধরা দিকটা নীচে থাকবে।
• এর পর দু’পিঠ তাওয়া বা প্যানে সামান্য ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। দেখা যাবে মুখটা আটকে গেছে।
• এর পর চিনি বা গুড়ের রস করে পাটিসাপটার ওপরে ঢেলে দিয়ে অথবা ১ লিটার দুধকে ঘন করে ১/৩ লিটার করে নিতে হবে।
• স্বাদ মতন মিষ্টি দিয়ে এলাচের গুঁড়ো মেশাতে হবে।
• এর পর প্রতিটা পাটিসাপটার উপরে একটু করে ঘন ক্ষীর ঢেলে পরিবেশন করতে হবে।

কর্মসুত্রে ফিজিতে থাকলেও বাঙালি রান্না ভোলেননি। শুধু বাঙালি ঘরানা নয়, অন্যান্য ঘরানার রান্না নিয়েও চলে নানা এক্সপেরিমেন্ট। গীতবিতানের এই প্রাক্তনী রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে ও শুনতে ভালবাসেন। রাইফেল শ্যুটার হিসেবে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত হলেও গল্পের বই পড়া ও বেড়ানোর নেশার পাশাপাশি পছন্দ করেন নির্ভেজাল আড্ডা দিতে।

 


জমাটি ঠান্ডা, সঙ্গে রকমারি শাকসব্জিতে ভরভরন্ত বাজার-ঘাট। ‘উইন্টার স্পেশাল’ হিসেবে কোন ‘ডিশ’ জমিয়ে দিল অন্দরমহল?
জানান আমাদের, অবশ্যই ছবি-সহ, আর ভাগ করে নিন ইন্টারনেটের সকল বন্ধুদের সঙ্গে। রেসিপি পাঠানোর ঠিকানা
হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।

রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল স্বাদবদল • আপনার রান্নাঘর • পুরনো সংস্করণ