২৮ কার্তিক ১৪১৮ মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০১১


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• হেপবার্নের পোশাক
‘রোমান হলিডে’ ছবির শেষ দৃশ্য। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি রাজকুমারী অ্যান। সামনে এক ঝাঁক সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছেন রোমের ‘ডেইলি আমেরিকান’ সংবাদপত্রের প্রতিনিধি জো ব্র্যাডলি। অ্যানের ভূমিকায় অড্রে হেপবার্ন আর ব্রাডলি-র চরিত্রে গ্রেগরি পেক। সেই বিখ্যাত দৃশ্যে অড্রে হেপবার্ন যে সাদা গাউন পরে অভিনয় করেছিলেন এ বার সেই পোশাকই নিলামে, নভেম্বরের ২৯ তারিখে। কেরি টেলর নিলামঘরের কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, গাউনের দর উঠতে পারে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার পাউন্ড। ১৯৫৩-র সেই রোম্যান্টিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজের প্রথম অস্কার পুরস্কার পেয়েছিলেন অড্রে হেপবার্ন। অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও ওই একই গাউন পরেছিলেন অড্রে। বিখ্যাত এই পোশাকের পরিকল্পক ছিলেন এডিথ হেড। অড্রের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও অস্কার পেয়েছিলেন সেরা পোশাক পরিকল্পক হিসেবে। যদিও এই বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য গাউনের নকশায় সামান্য হেরফের করেছিলেন অড্রে। পোশাকের পেছনের গলার দিকের অংশ আরও নীচু করে কেটে এক জোড়া ‘স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ’ও গাউনে জুড়েছিলেন তিনি। অড্রে ভাবতেন এই এটি তাঁর ‘সৌভাগ্য সূচক’ পোশাক। গাউনের নামকরণও সেই ভাবেই করেছিলেন তিনি ‘লাকি ড্রেস’। বহু কাল পরে গাউনটি মা এলা ফান হেমস্ট্রা-কে উপহার দিয়েছিলেন অড্রে। তাঁর মা শেষ পর্যন্ত পোশাকটি উপহার দিয়েছিলেন এক মার্কিন বন্ধুকে। পোশাকটি যে আসল তার প্রমাণস্বরূপ একটি চিঠি-সহ গাউনটি বিক্রি করে দেয় সেই বন্ধুর পরিবার।

• পুরনো মোটরগাড়ি
গত ৮ অক্টোবর আমেরিকায় বিকোল বিশ্বের সবথেকে পুরনো বাষ্পচালিত মোটরগাড়ি। পেনসিলভেনিয়ার হার্শে অঞ্চলে বিশ্বখ্যাত আরএম নিলামঘরে এর দর উঠেছিল প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। যদিও এই গাড়ির নতুন মালিকের নাম এখনও জানা যায়নি। তিনি এখন অজান্তেই পুরনো যুগের সবথেকে দামি মোটরগাড়ির মালিক। কারণ এখনও পর্যন্ত এটিই সবথেকে বেশি দামের বাষ্পচালিত গাড়ি! ১৮৮৪ সালে গাড়ি সংস্থার অন্যতম মালিক ফরাসি কাউন্ট ডি ডিয়ঁ-র জন্য এই চার চাকার ডি ডিয়ঁ-বুয়োঁ য়েত ত্রেপার্দ্যুঁ গাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। এর ডাক নাম ‘লা মারকুইস’। গাড়িটির জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হত কাঠ, কয়লা ও কাগজের অংশবিশেষ। ১৮৮৭ সালে প্রথম বারের জন্য ঘন্টায় ৩৮ মাইলের সর্বোচ্চ গতিবেগ নিয়ে রেসে দৌড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে গাড়িটি। যদিও বর্তমানে যাত্রা শুরু করতেই গাড়িটি আধ ঘন্টাখানেক সময় নেয়, কিন্তু এক বারের জ্বালানীতে এখনও ২০ মাইল যেতে পারে ‘লা মারকুইস’।

• এক শিবকেই পুজো দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের
এক মন্দির, এক দেবতা। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো করেন দুই তিথিতে। অসমের কাছাড় জেলার সোনাইবাজার থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রগিরির শিবটিলার শিবমন্দিরে দুই আলাদা তিথিতে পুজো করেন মণিপুরি ও ডিমাসারা। বাঙালি-সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষও ভিড় জমান পুজোর জন্য, বিশেষ করে মহিলারা। এই পুজো নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আদৌ কোনও রেষারেষি নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ, রাজ আমলেই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রায় আড়াইশো বছর আগে ডিমাসা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মণিপুরি রাজকন্যা ইন্দুপ্রভাকে বিয়ে করেছিলেন। শিবটিলার মন্দিরটিও কৃষ্ণচন্দ্রের আমলেই নির্মিত। এই মন্দির ঘিরে আছে নানা জনশ্রুতি। কেউ বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এক বার রাজধানী খাসপুর থেকে ভুবনমন্দিরে যাওয়ার পথে শিবটিলায় রাত কাটান। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী জয়সিংহ। শিব সেই রাতে জয়সিংহকে ওই জায়গাতেই মন্দির নির্মাণের স্বপ্নাদেশ দেন। সকালে জয়সিংহ রাজাকে এই কথা জানালে রাজাই তাঁকে মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন। পরে কার্তিক মাসে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া তিথিতে এখানে পূজার্চনা শুরু হয়। এই তিথিটি এখনও ডিমাসারা ভক্তিভরে পালন করেন। নতুন মন্দিরে রানি যান পরবর্তী রবিবারে। তিনি সেখানে মণিপুরি রীতি অনুসারে শির্বাচনা করেন। সেই থেকে ডিমাসাদের উৎসবের পরবর্তী রবিবারে শিবের পুজো করে আসছেন মণিপুরিরা। মন্দিরের গায়ে দু’টি শিলালিপি রয়েছে। তাতে লেখা, স্বর্ণাক্ষরপুর নগরে জয়সিংহ এই মন্দির নির্মাণ করেছেন। চৈত্র মাস, ১৭০৯ শকাব্দ। এ থেকেই স্পষ্ট যে, তখন এই অঞ্চলের নাম ছিল স্বর্ণাক্ষরপুর। ১৭০৯ শকাব্দের চৈত্র মাস, মানে হিসেব কষে দেখা যায়, ১৭৮৭ সালের মার্চে ১২ ফুট দৈর্ঘ ১০ ফুট প্রস্থ এবং ১২ ফুট উচ্চতার এই মন্দির নির্মিত হয়। অন্য জনশ্রুতিটি এ রকম— ইন্দুপ্রভার বিয়ের পর তিনি কৃষ্ণচন্দ্রকে একটি শিবমন্দির গড়ে দিতে বলেন। মহারাজা তখনই মন্ত্রী জয়সিংহকে ওই মন্দির তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন দেহাবশেষ
সাল ১৯১৮। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখনও চলছে। ফরাসিরা জার্মানি সেনা-ঘাঁটিগুলির উপর আক্রমণ শুরু করে। মারা যায় অসংখ্য সেনা। সম্প্রতি এমনই একটি গোপন ডেরা থেকে ২১ জন সেনার দেহাবশেষের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রথমে মাটির নীচে একটি বিশাল মাপের সুড়ঙ্গ খুঁজে পান তাঁরা। ৬ মিটার গভীর, ১.৮ মিটার উচুঁ ও ৪১০ ফুট লম্বা এই সুড়ঙ্গের প্রথম সন্ধান মেলে জার্মানির আলসেস প্রদেশের ছোট্ট শহর কার্সপাসে। টেলিফোন, বিদ্যুৎ, বিছানা ইত্যাদি সমস্ত রকমের সুবিধা-সহ এই সুড়ঙ্গ ১৬ টি গমনপথ ও আপৎকালীন অবস্থায় ৫০০ জনের আশ্রয়বিশিষ্ট, যার ছাদ, সিঁড়ি সবই পোক্ত কাঠের তৈরি। যুদ্ধ চলাকালীন সুড়ঙ্গে মোট ৩৪ জন সেনা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের দেহ কোনওক্রমে উদ্ধার করা হলেও বাকি সেনার দেহ সেই সুড়ঙ্গেই পড়ে থাকে। খুঁজে পাওয়া ২১ জন সেনার দেহগুলির পাশ থেকে বুট, শিরোস্ত্রাণ, অস্ত্র, পকেট বই ও তাঁদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায়। ছাগলের একটি কঙ্কালও মেলে এখানে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান সম্ভবত সেনারা দুধের জন্য ছাগল পুষত। পম্পেইয়ে এই রকম একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল ল্যানডল্ট বলেন, ‘‘একই জায়গায় এত জন সেনার মৃতদেহ মেলার ঘটনা ইতিহাসে বিরল।’’

• কুবলাই খাঁ-এর জাহাজ
জাপানের নাগাসাকির তাকাশিমা দ্বীপের কাছে সমুদ্রের তলদেশে একটি যুদ্ধজাহাজের ভগ্নাবশেষের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইউয়ান রাজত্বের সময়কার এই জাহাজ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, কুবলাই খাঁয়ের নেতৃত্বে সমুদ্রপথে মোঙ্গলরা জাপান আক্রমণ করে। সালটা ছিল ১২৭৪ থেকে ১২৮১-র মধ্যে। সেই সময় প্রায় ৪,৪০০ টি জাহাজ তাকাশিমার কাছে সমুদ্রে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে এই জাহাজটি বালিতে ঢেকে থাকার কারণে অনেকটাই অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। ওকিনওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোশিফুমি ইকেদা জানান, ‘‘জাহাজটি ইউয়ান রাজত্বের সময়কালীন কিনা তা জানতে ত্রয়োদশ শতকের জাহাজ নির্মাণ ও পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।’’ তবে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যে সব অস্ত্র, পাথর ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ইউয়ান রাজত্বে ব্যবহৃত দ্রব্যাদির অনেক সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া গেছে। মোঙ্গলরা চিনে ১২৭১ থেকে ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করে। তারা জাপান দখলের জন্য সমুদ্রপথকেই বেছে নিয়েছিল। খুঁজে পাওয়া জাহাজের আকৃতি ও গঠনের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কুবলাই খাঁয়ের হারিয়ে যাওয়া জাহাজের সঙ্গে সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

• কম্বোডিয়ায় প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি
সম্প্রতি কম্বোডিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পৃথিবী বিখ্যাত আঙ্কোরভাট মন্দির চত্বরে খনন-কাজ চালান। সেখানে খুঁজে পান বুদ্ধের প্রাচীনতম পাথরের দু’টি মূর্তি। ‘‘এই মুণ্ডহীন মূর্তিগুলি দ্বাদশ শতাব্দীর এবং সেগুলি সম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেলে সম্ভাব্য উচ্চতা হত ১০ ফুট’’, জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ লাই ভানা। সরকারি তথ্যানুযায়ী ১৯৩০ সালের পর কম্বোডিয়ায় এত বড় প্রত্ন-আবিষ্কার আর হয়নি।
বন্যপ্রাণ
• শামুকখোলের সঙ্কট
বিমান উড়বে বলে কোচবিহার বিমানঘাঁটির চারপাশে ৪০টির বেশি শতাব্দী প্রাচীন ‘রেন ট্রি’ কেটে ফেলা হয়েছে। আর তার ফলে নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে ওই সমস্ত ‘রেন ট্রি’তে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ায় অভ্যস্ত কয়েক হাজার শামুকখোল। বছরের এই সময়ে শামুকখোলের দল ওই ‘রেন ট্রি’গুলিতে বাসা বাঁধত। এ বছর বিমানঘাঁটির চারপাশে ওই ‘রেন ট্রি’গুলি নেই। কিন্তু বিমানঘাঁটির উপর রোজ উড়ছে সেগুলি। শামুকখোলের এই উড়ান জেলার পরিবেশপ্রেমী মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। কেন বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হল না সেই প্রশ্নও উঠেছে। ২০০৬ সালে কোচবিহারে বিমানঘাঁটি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের পরে বিভিন্ন পরামর্শের মধ্যে বিমান ওঠানামায় সমস্যার কথা জানিয়ে ওই রেন ট্রি গুলি কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। বন দফতর থেকে শতাব্দী প্রাচীন ২৫টি গাছ কেটে ফেলা হয়। পরের বছর আরও ১৫টি গাছ কাটা হয়। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই সমস্ত গাছে প্রায় ৭ হাজারের বেশি শামুকখোল প্রতি বছর আশ্রয় নিত। একেবারে গাছের মাথায় বাসা তৈরি করে সেগুলি। লাগোয়া এলাকায় প্রচুর জলা রয়েছে। সেখান থেকেই খাবার সংগ্রহ করে। কোচবিহার জেলায় বনভূমির সংখ্যা এমনিতেই কম। মোট আয়তনের মাত্র ১.৬৮ শতাংশ। কিন্তু এত বড় ও প্রাচীন গাছ জেলায় খুব বেশি নেই। কোচবিহার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপের মুখপাত্র অরূপ গুহ বলেন, “ব্যাঙ্ককে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর লাগোয়া গাছে বহু পাখি রয়েছে। সেখানে তো গাছ কাটতে হয়নি। কোচবিহারেও কয়েক দশক আগে বিমান চালুর সময়ে লাগোয়া এলাকায় প্রচুর শকুন ছিল। গাছ কাটা পড়ায় সেগুলিও বিদায় নেয়।”

• বিনা মিলনে ডিম পাড়তে পারে পিট ভাইপার
অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল ছিল। কিন্তু এত দিন কিছুতেই তার উত্তর পাচ্ছিলেন না তাঁরা। অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রতীক্ষার পরে তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে, একটি বিশেষ প্রজাতির পিট ভাইপার সাপ প্রয়োজনে কোনও যৌন মিলন ছাড়াই ডিম পাড়ে। আর সেই ডিম থেকে সন্তানও জন্ম নেয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পদ্ধতিকে ‘পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি’ বলে। মৌমাছি বা বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে এটা খুবই প্রচলিত। পুরুষ মৌমাছিরা এ ভাবেই জন্মায়। কিন্তু সাপের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্মের প্রথম প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা। নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক পাঁচ বছর আগে একটি মেয়ে পিট ভাইপারকে ধরে খাঁচায় পুরে রাখেন। গত পাঁচ বছরে অন্য প্রজাতির একটি পুরুষ সাপ ছাড়া অন্য কোনও সাপের কাছাকাছি আসেনি সে। আর প্রকৃতির নিয়মে অন্য কোনও প্রজাতির সঙ্গে স্বাভাবিক যৌন মিলন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ২০০৯-এ ওই মেয়ে পিট ভাইপারটি চারটি ডিম পাড়ে। এর মধ্যে দু’টি ডিম থেকে সন্তানের জন্মও হয়। তাদের জিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, এদের জিন তাদের মায়ের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে। অন্য কোনও পুরুষ সাপের অস্তিত্ব নেই তাদের জিনে। অর্থাৎ মেয়ে ভাইপারটি যৌন মিলন ছাড়াই সন্তানের জন্ম দিয়েছে। তাঁদের এই গবেষণা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘লিনিয়ান সোসাইটি’-তে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ঘটনা প্রমাণ দেয় যে, উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবেই এই পদ্ধতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে মেয়ে ভাইপারটি।

• তিন চোখো মাছ
মাছের তিন চোখ! অবিশ্বাস্য হলেও এমনই মাছ ধরা পড়ল আর্জেন্তিনার করডোবায়। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা এক পরমাণু কেন্দ্রের জলাধার থেকে ধরেছেন এই বিরল মাছটি। প্রত্যক্ষদর্শী জুলিঅ্যান মুট জানিয়েছেন, ‘‘এই বিরল প্রজাতির মাছটি ধরে আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম। প্রথমে অন্ধকার থাকায় মাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করা যায়নি। পরে টর্চের আলো জ্বালিয়ে দেখা যায় মাছটির আরও একটি চোখ আছে।” স্থানীয়রা বলেছেন, করডোবার পরমাণু কেন্দ্রের দূষিত গরম জল পাইপের মাধ্যমে জলাধারের মধ্যে ঢালা হয়। খুব সম্ভবত দূষণই এ বিরল ঘটনার জন্য দায়ী। মাছটি বিক্রি বা খাওয়ার কথা ভাবছেন না কেউই। পরমাণু দূষণের ফলেই মাছের তিনটি চোখ হয়েছে কিনা তা জানতে মাছটিকে পরীক্ষার জন্য বর্তমানে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পার্বণ
• ছটপুজো
১ নভেম্বর দেশ জুড়ে হয়ে গেল ছটপুজোর আয়োজন। সূর্যদেবকে উদ্দেশ্য করে ছটপুজো একটি প্রাচীন উৎসব। উৎসবটি বিহার-সহ পশ্চিমবঙ্গ,ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ ও অসমেও পালিত হয়। শুধু তাই নয় ভারতের বাইরে নেপালেও সূর্য দেবের আরাধনা জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। কথিত আছে রাজা দক্ষ শ্রেষ্ঠ পুরোহিতদের নিমন্ত্রণ করতেন সূর্য দেবের আরাধনার জন্য। ঋক বৈদিক যুগে সূর্যের উদ্দেশে স্তুতিগান করা হত। এই আচারটি পৌরানিক মহাভারতেও আছে। দ্রৌপদি এই আচার অনুষ্ঠানের বর্ণনা করেছেন। আবার অনেকে মনে করেন, সূর্যদেবের পুত্র কর্ণ এই ছট পুজো শুরু করেছিলেন। চার দিন ধরে এই উৎসব বিভিন্ন ধর্মীয় আচার এবং আঞ্চলিক ভাষায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। উত্সব শুরু গঙ্গা স্নানে সূর্যদেবের আরাধনার মধ্যে দিয়ে। ভোরের উদীয়মান সূর্য এবং বেলা শেষের অস্তগামী সূর্যের পুজো করা হয়। পুজোর অন্যতম প্রসাদ ঠেকুয়া, যা বিভিন্ন ফল মিষ্টান্ন ও চালের মিশেলে বানানো হয়। সারাদিন উপোস থেকে দিনের শেষে ভূমি পুজোর পর পায়েস, লুচি এবং কলা খেয়ে উপবাস ভাঙা হয়। তার পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টাও আবার নির্জলা উপবাস থাকতে হয়। পুজোর তৃতীয় দিনে প্রসাদ তৈরি এবং তা পরিবার পরিজন-সহ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। চতুর্থ এবং শেষ দিনে সূর্য ওঠার আগে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে ফল নৈবেদ্য দিয়ে ভোরের সূর্যকে পুজো করার মধ্যে দিয়ে উপবাসের অন্ত। বাড়ি ফিরে সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

• ঐতিহ্যের রাস, কোচবিহার ও বিষ্ণুপুরে
১০ নভেম্বর থেকে শুরু হল কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা। ১৫ দিন ধরে মেলা চলবে শহরের এমজেএন স্টেডিয়াম লাগোয়া মাঠে। মদনমোহনের কাছে কোচবিহার জেলায় শান্তি ও উন্নয়নের প্রার্থনা জানালেন জেলাশাসক মোহন গাঁধী। এ দিন পুজো করে রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করেন তিনি। শুরুর দিন থেকেই রসের লড়াইয়ে মেতে উঠছে রাসমেলা। মেলা চত্বরেই পর পর পসরা সাজিয়ে বসেছেন জিলিপি বিক্রেতারা— গোটা কোচবিহারের রকমারি জিলিপি। রাসমেলায় জিলিপি খেয়ে রসনার তৃপ্তি যাঁরা চান ফি বছরের মতো এ বারও তাঁদের নিরাশ হওয়ার তাই কোনও কারণ ঘটেনি। রসের স্বাদ দিতে ভেটাগুড়ি থেকে বাবুরহাটের জিলিপি সবই আছে। উৎসাহীরা জানেন মেলায় গরমাগরম জিলিপি খাওয়ার মজা। বাসিন্দাদের উৎসাহে জিলিপি বিক্রেতাদের মুখেও ফি বছরের মতো এ বারেও হাসি ফোটাচ্ছে রাসমেলা। শুধু কী ভেটাগুড়ি বা বাবুরহাটের জিলিপি! মেলায় মিলছে নীলকুঠির জিলিপি, দেওয়ানহাটের জিলিপি, পুণ্ডিবাড়ির জিলিপির মতো হরেকরকমের জিলিপির দোকান। একই জায়গায় সার দিয়ে থাকা ওই জিলিপির দোকানেই ভিড় জমছে। অন্য দিকে, কোচবিহারের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রাস উত্সব অনুষ্ঠিত হল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে মল্লরাজারা যখন তাঁদের রাজধানী বিষ্ণুপুরকে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন তীর্থ’ হিসেবে গড়ে তুলছিল, তখন প্রায় ১৬০০ খ্রীস্টাব্দে মল্লরাজা বীর হাম্বীর তৈরি করেন ১০৮ দরজার পিরামিড আকৃতির রাসমঞ্চ। সেই রাসমঞ্চে মল্লরাজাদের আমলে বিখ্যাত রাস বসত। মন্দিরটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের নিয়ন্ত্রণের আসার পরে ঠিকানা বদল করে রাস উৎসব ছড়িয়ে পড়ে শহরের তিনটি স্থানে— কৃষ্ণগঞ্জ, মাধবগঞ্জ ও বাহাদুরগঞ্জে। এ বারের রাস উপলক্ষে শহরের তিনটি এলাকার মধ্যে সব থেকে বড় মেলা বসেছে কৃষ্ণগঞ্জে। বাহাদুরগঞ্জের রাসটি চৌধুরীবাড়ির। সেখানে শ্রীশ্রী রাধাদামোদর ঠাকুর জীউ-এর রাসপর্বও সমানভাবে আকর্ষণ করে বিষ্ণুপুরবাসীকে। নজরকাড়া ভিড় হয়েছে মাধবগঞ্জের শ্রীশ্রী মদনগোপালজীউয়ের রাসউৎসবেও। সাবড়াকোড় গ্রাম থেকে সেখানে আনা হয়েছে ডেঙ্গা রামকৃষ্ণ-সহ আরও বহু প্রাচীন বিগ্রহ। তিনটি মেলা ঘিরে শহরে ১০ নভেম্বর ছিল উৎসবের মেজাজ।

• অশান্তি ভুলে রাস জঙ্গলমহলে
অশান্তি কাটিয়ে রাস উৎসবে মেতে উঠেছে জঙ্গলমহল। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াবেড়া থানার চোরচিতা গ্রামে স্থানীয় দত্তপাড়ার উদ্যোগে হয়েছে দুই শতাব্দী প্রাচীন রাস উৎসব ও কুঞ্জ মেলা। ৬ দিন ব্যাপী উৎসব ও মেলা চলেছে। সংকীর্তন-পরিক্রমা দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সেই সঙ্গে ধূপ ও ধুনোর মাঙ্গলিক আরত্রিক-দলের সঙ্গে ফুল ও আবির ছড়িয়ে সম্প্রীতির পরিক্রমায় অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রথাগত ভাবে উৎসবের সূচনা করেন শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের মহান্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেবগোস্বামী। উৎসব উপলক্ষে প্রতিদিন ভাগবদ্গীতা-পাঠ, লীলাকীর্তন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কুঞ্জমেলায় বিভিন্ন পৌরাণিক ঘটনা উপস্থাপিত করা হয়েছিল তিরিশটি মূর্তির মাধ্যমে। ছিল রংবেরঙের আলোকসজ্জা। ১০ নভেম্বর রাসপূর্ণিমার দিন রাস-উৎসবের উৎপত্তি ও তাৎপর্য সম্পর্কে একটি আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষাজগতের বিশিষ্টজনেরা। আগে বেলিয়াবেড়া এলাকাটি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের তৎকালীন চিয়াড়া পরগনার অধীনে ছিল। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে চোরচিতার জমিদার বৈদ্যনাথ দত্ত এই রাস উৎসবের সূচনা করেন। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ময়ূরভঞ্জের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভঞ্জ। জনশ্রুতি, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হাতির পিঠে চেপে আসতেন রাস উৎসবে। জাঁকজমকের রাস দেখতে আসতেন দূর দূরান্তের হাজার হাজার মানুষ। জঙ্গলমহলের অশান্তির জন্য গত দু’বছর নিয়ম রক্ষার রাস উৎসব পালিত হয়েছিল। পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক হয়ে ওঠায় শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যের রাস উৎসবের পুরনো জৌলুস এবার অনেকটাই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা।
পূর্ব মেদিনীপুরেও ঐতিহ্যবাহী ময়নার রাস মেলা শুরু হয়েছে ১০ নভেম্বর। এ বারও রাসমেলা হয়েছে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায়।
একই দিনে আব্বাস মেলা আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছিল ময়নাগুড়ির লোকশিল্পী কল্যাণ সমিতি শেকড়। উত্তর খাগরাবাড়ির নবোদয় সঙ্ঘ ময়দানে ওই মেলা হয়। লোকসঙ্গীত সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের ১১০ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার একঝাঁক লোকশিল্পী। তিস্তাপাড়ের ভাওয়াইয়া থেকে বাউলের সুরে মেতে উঠেছিল বাতাস। শুধু সঙ্গীত পরিবেশন নয় নতুন প্রজন্মকে আব্বাসউদ্দিনের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করতে মেলা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা। ছিল প্রদর্শনীর আয়োজনও।
পর্যটন কেন্দ্র
• বেড়ানোর নতুন ঠিকানা মধুবনী
গয়েরকাটার মধুবনীতে উদ্বোধন হল পর্যটন কেন্দ্রের। শুক্রবার ওই পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মাদারিহাট-বীরপাড়া এলাকার আরএসপি বিধায়ক কুমারী কুজুর। চা বাগান ও জঙ্গলে ঘেরা মধুবনী ঝোরার পাশের এক ফালি খালি জমিতে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় পরিবেশ প্রেমী-সহ নানান স্তরের বাসিন্দারা। মনোরম ওই জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির কাজে এগিয়ে আসে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। টানা ৬ বছর ধরে কাজ চলার পর শেষ পর্যন্ত ১০ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়ায় ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে নতুন পালক সংযোজিত হল বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। ১০ একর জমিতে শিশু উদ্যান ও পর্যটকদের রাত কাটাবার জন্য ৪টি ঘর উদ্বোধন করেন স্থানীয় বিধায়ক। তিনি বলেন, “মধুবনীতে এলে মানুষ ডুয়ার্সের জঙ্গল ও চা বাগানের স্বাদ এক সঙ্গে মেটাতে পারবেন। খুব তাড়াতাড়ি জায়গাটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করছি।” এক সময় কাঠের ব্যবসার জন্য গয়েরকাটার নাম জানতেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা। সরকারের নানান বিধিনিষেধে কাঠ ব্যবসা এখন আর আগের মতো নেই। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে পর্যটনই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। গয়েরকাটা থেকে এক কিলোমিটার দূরে শান্ত মধুবনী নদীতে ফি রাতে ও ভোরে জল খেতে আসে বুনো হাতির পাল। খুট্টিমারি বনের পাশে ওই পর্যটন কেন্দ্রের পাশে রয়েছে গয়েরকাটা চা বাগান। বর্তমানে ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির হেপাজতে থাকা ওই পর্যটন কেন্দ্রের ঘরগুলি চালাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্তামোহন রায় বলেন, “এত সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রে যে কেউ বার বার ছুটে আসবেন।” ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পক্ষে তাপস রায় ও শ্যামল মুখোপাধ্যায় বলেন, “উদ্বোধনের কয়েকমাস আগে থেকে পর্যটকরা এখানে রাত কাটাবার জন্য আবদার করছেন। খুব শীঘ্র আমরা ওয়েবসাইট ও রেল স্টেশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালাব।” স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সুব্রত পাল বলেন, “মধুবনী সফল হলে এই এলাকা ঘিরে বহু পর্যটক আবাস গড়ে উঠবে। গয়েরকাটা বাজার আগের মত রমরম করে চলবে মনে করছি।”

• নতুন ভাবে সাজছে পটনার চিড়িয়াখানা
নয়া প্রজন্মকে টেনে আনতে নতুন করে ঢেলে সাজছে পটনার সঞ্জয় গাঁধী জৈবিক উদ্যান। তৈরি হচ্ছে ঝাঁ চকচকে ত্রিমাত্রিক সিনেমা হল। এ ছাড়াও থাকছে মাটির তলায় অ্যাকোয়ারিয়াম-সহ অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁও। কাজ শেষ হলে ভোল বদলে যাবে এই চিড়িয়াখানার। সঞ্জয় গাঁধী জৈবিক উদ্যানের অধিকর্তা অভয় কুমার বলেছেন, “একশো আসন বিশিষ্ট একটি ত্রিমাত্রিক সিনেমা হল গড়ার উদ্যোগ চলছে। ওই হলে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থাপনাই থাকবে। তবে ওই হলে শুধুমাত্র পশুপাখি সংক্রান্ত ছবিই দেখানো হবে।” অভয় কুমারের দাবি, “নয়া প্রজন্মকে শুধু আকর্ষণ করাই নয়, জীবজগৎ সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্যও এই ব্যবস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” প্রাণীজগৎ সম্পর্কে ধারণা বাড়াতে একটি শিক্ষামূলক কেন্দ্রও তৈরি করা হচ্ছে চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণের মধ্যে। সেখানে অত্যাধুনিক ‘টাচ স্ক্রিন’-এর মাধ্যমে জীবজগৎ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন দর্শকেরা। তার সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন বিষয়ে দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনাও। এখানেই শেষ নয়, চিড়িয়াখানার ভোল বদলানোর সেরা অস্ত্র হতে চলেছে মাটির তলার অ্যাকোয়ারিয়ামও। চিড়িয়াখানার একটি অংশে মাটির তলায় অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি করা হয়েছে। মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে একটি পথ। তার দু’ধারে থাকছে অ্যাকোয়ারিয়াম। দর্শকদের দেখে মনে হবে, তারা যেন জলের তলাতেই দাঁড়িয়ে আর তার চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গাছপালা এবং জলের তলার প্রাণী। এ সব ছাড়াও তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক ফুড কোর্ট। অভয় কুমার জানান, পটনা চিড়িয়াখানার বর্তমান রেস্তোরাঁটি ভেঙে ফেলেই নতুন ফুড কোর্টটি গড়া হচ্ছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে চিড়িয়াখানার গেস্ট হাউসটিও। সেই জায়গাতেই নতুন শিক্ষামূলক কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। অভয়ের কথায়, “চিড়িয়াখানায় গেস্ট হাউসের কোনও প্রয়োজন নেই বলেই ওটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি কাজটি প্রায় শেষের পথে।
পরিষেবা
• বেড়াতে যাবেন, আগাম আবহাওয়া জানতে টোল ফ্রি ফোন
এত দিনে প্রাপ্তবয়স্ক হতে চলেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর! রাজ্যের যে-সব পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণার্থীদের ভিড় হয়, আলিপুর আবহাওয়া দফতর এ বার থেকে সেই সমস্ত জায়গার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেবে। কলকাতা-সহ ১০টি পর্যটন কেন্দ্রের আবহাওয়া কেমন যাবে, তিন দিন আগে থেকেই তা জানতে পারবে ওই দফতর। তারই ভিত্তিতে তারা পর্যটকদের আগাম আশ্বস্ত করবে বা সতর্ক করে দেবে। ১ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এত দিন রাজ্যের বিভিন্ন ভ্রমণকেন্দ্রে আবহাওয়ার মতিগতি জানার উপায় না-থাকায় পর্যটকেরা অনেক সময়েই সেখানে গিয়ে দুর্যোগের মধ্যে পড়তেন। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের নতুন ব্যবস্থায় সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। যে-সব পর্যটন কেন্দ্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যাবে, তার মধ্যে কলকাতা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গেই আছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি (ডুয়ার্স), মালদহ, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, শান্তিনিকেতন, বাঁকুড়া, দিঘা প্রভৃতি। তবে বাংলার সব চেয়ে আকর্ষক পর্যটন কেন্দ্রগুলির অন্যতম দার্জিলিং পাহাড় কিংবা সুন্দরবন ও সাগরদ্বীপের জন্য এখনও পূর্বাভাস দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এই কাজের জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্যের ২৭টি জায়গায় স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। সেগুলির মাধ্যমেই ১০টি পর্যটন কেন্দ্রে আগামী তিন দিন পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে, তা আগাম জানানো সম্ভব হবে। ১৮০০১৮০১৭১৭ নম্বরে (টোলফ্রি) ফোন করলে ওই সব কেন্দ্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যাবে। ঝড়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, তাপপ্রবাহ এবং শৈত্যপ্রবাহ-সহ সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম তথ্য মিলবে ওই নম্বরে যোগাযোগ করলেই।

• এনজেপি থেকে পাহাড়ে সাতটি বাস
পর্যটকদের পাহাড়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ৭ টি বাস চালু করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বর থেকে ওই বাস চলাচলের সূচনা হয়। ঠিক মতো যাত্রী পেলে আরও নতুন বাস চালু করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বলেন, “নতুন এই বাস চালু হওয়ায় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। পর্যটকরা যাতে হেনস্থা না-হয় তা দেখা হবে। তাদের এই বাসে গন্তব্যে সঠিক ভাড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে যাতে এই বাসগুলি দাঁড়াতে পারে সে জন্য ডিভিশনাল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সেই ব্যবস্থা করা হবে।” এনজেপি থেকে দার্জিলিং যাচ্ছে ৩ টি বাস, দু’টি কালিম্পং এবং একটি বাস যাচ্ছে গ্যাংটক। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস বা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলির সময়ের সঙ্গে যোগ রেখে বাসগুলি চালানো হচ্ছে। ওই সমস্ত ট্রেন দেরিতে পৌঁছালে সেই মতো বাসও ছাড়ছে।

• ট্রেকিং-বন্ধু
নতুন প্রজন্মকে পাহাড়-বনে টেনে আনার কাজটা অনেক দিন ধরেই চুপচাপ করে আসছিলেন ইউব্যাকের রানা রায়। ওঁর খ্যাপা বাহিনীর সৌজন্যে অনেকেই ছকবন্দি জীবনের খাঁচা থেকে বেরিয়ে জীবনকে দেখতে শিখেছে অন্য চোখে। জঙ্গল-পাহাড়ে ক্যাম্পিং, ট্রেকিং যে আসলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজীবন শৃঙ্খলাবদ্ধ, নিয়মানুবর্তী হওয়ার শিক্ষা জোগায় এ অভিজ্ঞতাটা কিন্তু প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে না এলে অর্জিত হয় না। এ বার প্রায় নিঃশব্দে আরও একটা জরুরি কাজ সেরে ফেললেন তাঁরা। প্রথম বার যারা ট্রেকিং বা ক্যাম্পিংয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য প্রকাশ করলেন ‘ট্রেকবই’। স্যাক গোছানো থেকে পাহাড়ি পথের নিয়ম নীতি, ম্যাপ-কম্পাস-ওষুধ, দড়ি-গেরো-ফাঁস জরুরি প্রতিটি বিষয়ের তালিকা ও নির্দেশিকা মিলবে এই বইয়ে। লিখেছেন অভিজ্ঞরাই। রয়েছে অজস্র রেখাচিত্র। পাহাড়ি পথে এ বার পকেটে করেই নিয়ে যাওয়া যাবে নির্ভরযোগ্য এই নতুন বন্ধুকে।

আন্তর্জাতিক বাদুড়বর্ষ
এই বছরটি হল আন্তর্জাতিক বাদুড়বর্ষ। বাদুড় একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যে উড়তে পারে। প্রায় ৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বাদুড়েরা বাস করছে। মেরুপ্রদেশ ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ছাড়া সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বাদুড় দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে প্রায় ১০০০ প্রজাতির বাদুড় আছে। দক্ষিণ এশিয়াতে ১২৩ প্রজাতির বাদুড় মেলে। দক্ষিণ এশিয়ার ৪৫০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ২০ শতাংশ হল বাদুড়। বেশির ভাগ বাদুড়ই কালো অথবা বাদামি। তবে উজ্জ্বল কমলা, হলুদ, রুপোলি, সাদা ও ধূসর রঙের বাদুড়ও দেখা যায়। কিছু বাদুড়ের গায়ে ও ডানায় ছিটে ছিটে দাগ এবং লম্বা লম্বা দাগ দেখা যায়। বাদুড়রা বাসা তৈরি করতে পারে না। খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী দু’ধরনের বাদুড় দেখা যায়। প্রথম ধরনটি হল, ফল খায় এবং আকারে বড়। দক্ষিণ এশিয়াতেই ১৪ রকমের ফল খাওয়া বাদুড় আছে। তবে এরা ছোট পোকামাকড়ও খায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, এদের ‘মেগাকাইরোপটেরা’ বলে। দ্বিতীয় ধরনটি আকারে ছোট। এরা পোকামাকড়, ইঁদুর, সরীসৃপ, ব্যাঙ, মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের ‘মাইক্রো কাইরোপটেরা’ বলে। সবচেয়ে বড় বাদুড় ডানা ছড়ানো অবস্থায় প্রায় ৬ ফুট লম্বা এবং ডানা দুটির ওজন প্রায় এক কেজি। একটি মা বাদুড় বছরে একটি বাচ্চা প্রসব করে। বাদুড়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র ও পেশি এমন ভাবে তৈরি যে, মাথা নীচের দিকে ঝুলে থাকলেও কোনও অসুবিধা হয় না। বাদুড় আলট্রাসনিক শব্দ ব্যবহার করে খাদ্যের অবস্থান ও সামনে থাকা বাধা বোঝার জন্য। সমস্ত বাদুড় অন্ধ নয়, ফল-খাওয়া বাদুড়রা ভালই দেখতে পায়। বাদুড় কখনও মানুষকে আক্রমণ করে না। এরা পরিচ্ছন্ন প্রাণী। বহু বার নিজের শরীর নিজেরা পরিষ্কার করে। বাদুড় পরাগ-মিলনে সাহায্য করে ও ফলের বীজ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করে। বাদুড় গাঢ় অন্ধকারে চুলের মতো সরু পদার্থকেও বুঝতে পারে, নিজেদের আবাসস্থল নিজেদের মূত্রের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারে। আগে এ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বাদুড়ের দেখা মিলত, এখন খুব কম দেখা যায়। গাছ কেটে ফেলায় বাদুড়ের নিরুপদ্রবে বাস করার জায়গা নষ্ট হচ্ছে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে বাদুড়ের খাদ্য পোকামাকড় ধ্বংস হচ্ছে। ফলও হয়ে উঠছে বিষাক্ত। জীববৈচিত্র যদি ধ্বংসের মুখে পড়ে মানুষও যে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে, তা বুঝতে সমাজের মাথাদের আরও কত সময় লাগবে কে জানে!




রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর • খানা তল্লাশি • পুরনো সংস্করণ