২৯ শ্রাবণ ১৪১৮ সোমবার ১৫ অগস্ট ২০১১



একই পদ এক একজনের হাতে এক একরকম। শুধু যে হাত বদলের কারণে স্বাদ বদল হয়, তা ঠিক নয়, পাল্টায় রেসিপির কারণেও। উপকরণ ও প্রণালীতে সামান্য
‘চেঞ্জ’ মানেই রান্নাটাও গেল কিছুটা বদলে। একই দই ইলিশ, কুমড়র ছক্কা অথচ রাঙা পিসিমা আর মেজ মাসির দু’ বাড়িতে দু’রকম স্বাদ। আবার কখনও রান্নার
প্রতি গভীর ‘প্যাশন’ থেকেও নতুন নতুন ‘মেনু’ উদ্ভাবিত হয়। গৃহিনীর কাছে রান্নাঘরটা আসলে এক মজার ‘ল্যাবরেটরি’। যদিও পুরুষরাও এই ব্যাপারে
এক্কেবারে পিছিয়ে নেই। রান্না সংক্রান্ত আপনার সমস্ত‘এক্সপেরিমেন্ট’ ‘শেয়ার’ করার জন্য ‘আপনার রান্নাঘর’। এই সংখ্যায় তিন গৃহিনীর রান্নাঘরের খবর।
  হিউস্টন থেকে শ্রীমতি সৃজিতা সরকার
রুই পাতুরি

উপকরণ

• রুই মাছ: ৬ পিস • পোস্ত বাটা: ৬ বড় চামচ • নারকেল বাটা: ৫ বড় চামচ • পেঁয়াজ বাটা: ৪ বড় চামচ • সরষের তেল: ৩-৪ পলা
• কাঁচা লঙ্কা চেড়া: ৭-৮ পিস • নুন , হলুদ: আন্দাজ মতো • ধনেপাতা কুচি • কলাপাতা

প্রণালী

• রুই মাছের টুকরোগুলো ভাল করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে তার মধ্যে পোস্ত বাটা, নারকেল বাটা,
পেঁয়াজ বাটা, কাঁচা লঙ্কা চেড়া, ধনেপাতা কুচি আর সরষের তেল দিয়ে ভাল করে মেখে নিতে হবে।
• এবার পুরো মিশ্রণটিকে একটি পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া কলাপাতাতে মুড়ে কলাপাতাটিকে ভাল
করে শক্ত সুতো বা কলাপাতার পাশ থেকে চিড়ে নেওয়া অংশ দিয়ে ভাল করে বেঁধে দিতে হবে,
যাতে ভিতর থেকে গ্রেভীটা বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারে।
• বাঁধা হয়ে গেলে পুরো জিনিসটাকে একটা অ্যালুমিনিয়ামের চাটুর ওপর বসিয়ে দিতে হবে একটু ধিমে আঁচে।

• আধাঘন্টা পর থেকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। যখন কলাপাতাগুলি পুড়ে একটা খুব সুন্দর গন্ধ বেরোতে
থাকবে তখন খুব সাবধানে পুরো জিনিসটাকে উল্টে দিতে হবে চাটুতে।
• এরপর আরও ২০-২৫ মিনিট পর পুরো জিনিসটার একটা দারুণ গন্ধ বেরোতে শুরু করবে।

• দেখে নিতে হবে, কলাপাতার দুটো দিকই ভাল করে পুড়ে গেলে বোঝা যাবে রুই পাতুরি তৈরী।
• এবার একটু ঠান্ডা হলে গ্যাস থেকে নামিয়ে, বাঁধন খুলে দিন।
• অল্প ধনেপাতা ছড়িয়ে দিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।


এই একই রান্না কন্ভেনশনাল ওভেনেও করা যায়
• ওভেনটাকে প্রিহিটেড করে নিতে হবে ৩৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়।
• তারপর একটি বেকিং ট্রে বা অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলের উপরে পুরো কলাপাতা মোড়া মিশ্রণটি রাখতে হবে।
• ৩০-৪০ মিনিট পরে এক পিঠের কলাপাতা পুড়ে গিয়ে গন্ধ বেরোতে শুরু করলে ওভেন থেকে বের করে পুরো জিনিসটাকে উল্টে দিন।
• এই ভাবে আরও ৩০-৩৫ মিনিট পরে অন্য পিঠটাও হয়ে গেলে সুন্দর গন্ধ বেরোবে আর ওভেন বন্ধ করে দিতে হবে।

কলকাতার মেয়ে। পড়াশুনো থেকে প্রথম জীবনের কাজের জগত্ সব এখানেই। বিগত চার বছর ধরে স্বামীর কাজের সুবাদে হাউস্টনের বাসিন্দা। কলকাতার মতন এক প্রাণবন্ত শহরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায় কাটিয়ে সুদূর মার্কিন দেশে মন টিকানো বেশ কঠিন। তাই সময় সুযোগ পেলেই কাছেদূরে ঘুরে বেড়ানোটা কেমন নেশার মতো হয়ে গেছে।

  কলকাতা থেকে শ্রীমতি ভ্রমরী নন্দী
চিতল মাছের মুইঠা

উপকরণ


• চিতল মাছের পেটি (কাঁটা বেছে নেওয়া): ৫০০ গ্রাম • পেঁয়াজ: ৩টে (একটা কুচি করা আর ২টো পাতলা করে স্লাইস্ করা)
• আদা বাটা: ১ বড় চামচ • আদা কুচোনো: ১ চা চামচ • রসুন বাটা: দেড় চা চামচ • টমেটো কুচি: ২টি • লঙ্কা চেড়া: ৪-৫টি • লঙ্কা কুচি: ২টি
• হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ • লঙ্কা গুঁড়ো: দেড় চা চামচ • তেল: আধ কাপ • গরম মশালার গুঁড়ো: ১ চা চামচ • ঘি: ১ বড় চামচ • জল ১ কাপ
• নুন, চিনি: স্বাদ অনুযায়ী • ধনেপাতা কুচি • টক দই: আধ কাপ (ভাল করে ফেটানো) • ময়দা ৪ চা চামচ • গোটা জিড়ে • তেজপাতা ২টি



প্রণালী


• একটা পাত্রে চিতল মাছ, সামান্য নুন, লঙ্কা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, আদা কুচি, ১/২ চা চামচ রসুন বাটা,
১/২ চা চামচ লঙ্কা গুঁড়ো আর ময়দা দিয়ে ভাল করে মাখতে হবে (কিছুটা আদা বাটা, রসুন বাটা, লঙ্কা গুঁড়ো বাঁচিয়ে রেখে)।
• হাতে ময়দা মেখে নিয়ে মাছের মিশ্রণ থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে নিন।
• অল্প তেল ফ্রাইং প্যানে দিয়ে এই বলগুলো হাল্কা করে ভেজে তুলে রাখুন।
• এবার স্লাইস্ করা পেঁয়াজ ভেজে নিন।
• একটা কড়াইতে ২ বড় চামচ তেল গরম করে আধ চা চামচ গোটা জিড়ে আর ২টি তেজপাতা দিন।
• বাকি আদা বাটা, রসুন বাটা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, চেড়া লঙ্কা, স্বাদ অনুযায়ী নুন-চিনি দিন কড়াইতে আর ভাল করে কষতে থাকুন।
• মশলা ভাল করে কষান হলে পেঁয়াজ ভাজা আর সামান্য জল দিয়ে ফোটাতে হবে।
• জলটা বেশ গাঢ় হলে গ্যাস কমিয়ে ফেটানো দইটা দিয়ে দিন।
• এই মিশ্রণটি ফুটে উঠলে সাবধানে মাছের বলগুলো দিয়ে দিন।
• ২-৩ মিনিট ফুটতে দিন।
• ঘি গরম মশলা ছড়িয়ে দিন ওপরে।
• ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে গরম ভাত, পোলাও বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।


কলকাতার এন্টালিতে জন্ম। চার বছর কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করার পর এখন বিবাহসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। আড্ডা, শপিং আর রান্না— এ তিনটিই ভালবাসার বিষয়। নতুন নতুন রান্না শেখার বিষয়েও রয়েছে যথেষ্ট উত্সাহ।

  সানদিয়েগো, সিএ থেকে শ্রীমতি সুচিস্মিতা সেন
ইলিশ পাতুরি
(৬ টুকরো)


উপকরণ

• মাছ: ৬ পিস • সরষে-পোস্ত বাটা: ৬ বড় চামচ • সরষের তেল: ৩-৪ পলা • টক দই: আধ কাপ (ভাল করে ফেটানো)
• কাঁচা লঙ্কা: ৭-৮ পিস • নুন, হলুদ, চিনি: আন্দাজ মতো

প্রণালী

• ভালো করে ধুয়ে মাছের টুকরোগুলোয় নুন হলুদ মাখিয়ে রাখুন।
• সরষে, পোস্ত, কাঁচা লঙ্কা, টক দই বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন।
• পেস্টের মধ্যে স্বাদমত নুন হলুদ মিষ্টি মিশিয়ে নিতে হবে।
• তারপর এই পেস্টটা মাছের গায়ে আধঘন্টা মাখিয়ে রাখতে হবে।
• আধঘন্টা পর এক একটা মাছকে এক একটা কলাপাতায় মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে স্টিলের টিফিন বক্স-এ পুরে প্রেসার কুকারে ২টো করে সিটি দিয়ে মাছগুলোকে রান্না করতে হবে।
• তারপর মাছগুলোকে বের করে তাওয়া তে অল্প তেল দিয়ে সেঁকে নিতে হবে (কলাপাতার পোড়া পোড়া রঙটা আসবে)। তৈরী জিভে জল আনা ইলিশ পাতুরি


জন্মসূত্রে কলকাতার মেয়ে। বর্তমানে স্বামীর কাজের সূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ার সানদিয়েগোর বাসিন্দা। নতুন নতুন পদের রান্না শিখে নিজের রান্নাঘরে সেই পদ্ধতিতে রান্না করাটা আসলে একটা প্যাশন। রান্না বাদে আরও একটা বিষয়ে খুবই আগ্রহ, সেটা হল ফোটোগ্রাফি।

এ বারে বর্ষাকালটা যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না... ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি, প্যাচপ্যাচে রাস্তাঘাট, স্যাঁতসেঁতে ঘরবাড়ি! প্রাপ্তি একটাই— খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা। কিন্তু শুধু ইলিশ কেন? অনুষঙ্গ তো কত কী হতে পারে! আর খিচুড়িও যদি হয় নানা রকমের, তা
হলে জিভের জল আটকায় কে! দেরি না করে নীচের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন
‘আপনার রান্নাঘর’-এর সেই ভিন্ন স্বাদের খিচুড়ি
ও তার সাইড-ডিশের রেসিপি। অবশ্যই ছবি-সহ। সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।

হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com




রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর • খানা তল্লাশি • পুরনো সংস্করণ