স্কুল-কলেজে পড়া থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পেতাম। আমার প্রথম স্মরণীয় অনুষ্ঠান ছিল শিশির মঞ্চে। সেই অনুষ্ঠানে অন্যরা কে ছিল শুনবেন! প্রথম সারিতেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেনের মতো কলকাতার আরও অনেক সেলিব্রিটি। তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য ঘটনা, সুচিত্রা মিত্র ও শান্তিদেব ঘোষের সঙ্গে একই মঞ্চে অনুষ্ঠান করা আমি এখনও যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারি না। এখনও কানে বাজে সেই সব ব্যক্তিত্বের প্রশংসা।
ছোট থেকেই কলকাতার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্ন জনের আবৃত্তি শুনতাম। তা শুনে নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নিতাম। বেশ কয়েক জন শিল্পী নিজের ভাইয়ের মতো কাছে ডেকে শুধু ভুল শোধরাতেন না, প্রেরণাও দিতেন। সেই সব অভিজ্ঞতা কতটা যে কাজে লেগেছিল তা বুঝেছিলাম যখন প্রথম বার দেশের বাইরে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠান করতে যাই। সেটি ছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল’। বুঝুন! বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা হাজির সেখানে। ভুলচুক হবার জো নেই। ঢাকা শহরের বিশিষ্টজনরাও এসেছেন আমার আবৃত্তি শুনতে। আমি সেই যে শুরু করেছি আর শেষ করতে পারছি না। নির্ধারিত আবৃত্তির পরেও একের পর এক আবৃত্তি শোনাতে হচ্ছে শ্রোতাদের অনুরোধে। এই সাফল্য আমাকে পরবর্তীতে সত্যিই অনেক সাহস এনে দিয়েছিল। আর তখনই ঢাকার একটি বড় ক্যাসেট কোম্পানি আমার আবৃত্তি রেকর্ড করার অনুমতি চেয়ে নেয়।
আমার জীবনের এই সাফল্যের বড় প্রেরণা কিন্তু আমার বাবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি যে ভাবে আমাকে সময় দিতেন তার সুফল আজও পাচ্ছি। মাত্র কয়েক মাস আগে বাবা মারা গেলেন। আমার আবৃত্তির বড় অভিভাবক চলে গেলেন। হাজার দুঃখের মাঝেও তাই ভাবি, মানুষ তো চিরকাল বাঁচেন না। তাই নিজের ইচ্ছে এবং প্রতিভাকে আমার মধ্যেই দিয়ে গেলেন। |