বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হয়েও বরাবর প্রতিযোগিতামূলক খেলা থেকে দূরেই থেকেছে সিসিএফসি। এ জন্যই ভারতের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট ট্রেডস্ কাপে অংশ নেয়নি তারা। ১৯৪০-এর দশক থেকে খেলায় ক্লাবের মান পড়তে শুরু করে। ১৯৫০ সালে ফুটবলে অবনমনও হয়। সে বছরই ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব বালিগঞ্জে (গুরুসদয় রোডে, বর্তমান ক্লাবটি যেখানে রয়েছে) স্থানান্তরিত হয়। তখন এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জি ডি গুজ, এ সি কাউড্রে প্রমুখ দিগ্গজ। এঁদের মধ্যে গুজ ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ সি কাউড্রে ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক স্যর কলিন কাউড্রের প্রপিতামহ। পরে ১৯৬৫ সালে ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবও বালিগঞ্জে স্থানান্তরিত হয়। তার পর বর্তমান ক্লাবের নামকরণ হয়। সেখানেই ধীরে ধীরে প্যাভিলিয়ন, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, সংগ্রহশালা, বার, জিম গড়ে উঠেছে। বছরভর বিভিন্ন খেলায় ঠাসা থাকে ক্লাবের ক্রীড়াসূচি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন মার্চেন্টস কাপ। ১৯৭৩ সালে সাইকেল পোলোয় প্রথম মার্চেন্টস কাপ খেলা হয় এই ক্লাবে। ইন্ডোর গেমসের মধ্যে ব্যাডমিন্টন, টেবল টেনিস, সাঁতার, ডার্ট নিয়েই মেতে থাকে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব।
দীপঙ্কর নন্দী |
ক্লাবের বর্তমান সিইও দীপঙ্কর নন্দী বলেন, “সিসিএফসি এখন মূলত পাঁচটি খেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, হকি এবং রাগবি। ১৯৮১ সালে আমি যখন এর সদস্য হই, তখন মোট সদস্যসংখ্যা ছিল সাকুল্যে ৩০০। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ১৮০০। ২০০১ সাল থেকে এই ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য অনেকে অপেক্ষারত।” তিনি জানান, এখন যে জমিতে তাঁদের ক্লাব রয়েছে, সেটিও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে লিজে নেওয়া। প্রত্যেক ৩০ বছর অন্তর লিজ পুনর্নবীকরণ হয়। যদিও ৯০-এর দশকের পর থেকে ক্লাবে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ক্লাব হাউসের সংস্কার হয়েছে। সুইমিং পুল, জিম, বার ইত্যাদি হয়েছে। নৈশালোকে খেলার জন্যে ফ্লাড লাইটও বসানো হয়েছে মাঠে। ধীরে ধীরে কলেবরে অনেক বড় হয়েছে ক্লাব। ভবিষ্যতে সদস্যসংখ্যা বাড়ানো নিয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁদের। তাঁর কথায়: “খেলাকে ভিত্তি করে ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হলেও, ঐতিহ্যকেই এই ক্লাব বরাবর প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। খেলাকে আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে দেখা হয়েছিল বলেই প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা থেকে দূরে থেকেছে সিসিএফসি। তবে গত বছর আমাদের ক্লাব হকি লিগ জিতেছে। ফুটবলেও আমরা দ্বিতীয় ডিভিশনে রয়েছি। সিসিএফসি একমাত্র ক্লাব যেখানে এখনও সাইকেল পোলো-র মতো ‘ইউনিক গেম’ খেলা হয়। প্রত্যেক বছর ‘ক্যালকাটা কাপ’ উপলক্ষে একটি রাগবি ম্যাচ খেলা হয়। ফলে আমরা ক্লাবের ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলেছি।” |