দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ মার্চ ১৯৬২ থেকে ২০ এপ্রিল ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

কলিকাতা, বুধবার, ৭ই চৈত্র, ১৩৬৮ (৩০শে ফাল্গুন, ১৮৮৩ শকাব্দ) WEDNESDAY, MARCH 21, 1962
• পৌর শ্রমিকদের বিক্ষোভ: মঙ্গলবার বিকালে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক মাসিক বেতনের দাবিতে কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় ভবন প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে। ঐ বিক্ষোভের ফলে কর্পোরেশন ভবনের কয়েকটি কাচের দরজা-জানালা ভাঙ্গিয়া যায়। অবস্থা এইরূপ দাঁড়ায় যে, বিক্ষোভকারীদের অপসারণ করিবার জন্য শেষ পর্যন্ত পুলিসের সাহায্য লইতে হয়। অবশ্য পুলিস আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারিগণ একে একে ঘটনাস্থল পরিত্যাগ করে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কলিকাতা কর্পোরেশনের তিন নম্বর ডিস্ট্রিক্টের প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক গত ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন পায় নাই অথবা লয় নাই। এবং ঐ বেতন আদায়ের দাবিতেই উক্ত বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়।
• ঝড়ের সঙ্কেত:
সারাদিন জ্বরের রুগীর মত গরমের ঝোঁকে ছট্ফট্ কলিকাতার শুকনো গরম শরীরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েছিল। কিন্তু মাটি ভেজাবার আগেই দেখতে না দেখতেই সেই জলের ফোঁটা শুকিয়ে গেল। অথচ আবহাওয়া অফিস এই আশ্বাস দিয়েছিলেনবিকেলে হয়তো ‘উদ্দাম উল্লাসে’ কালবৈশাখীর মাতন দেখা দেবে, বজ্র পড়বে, বৃষ্টি হবে। সূর্যাস্তের সময় অবশ্য পশ্চিম আকাশে মেঘ দেখা দিয়েছিল, কিন্তু ঝড় ওঠেনি। অবশেষে সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটায় উঠেছিল এলোমেলো হাওয়া আর ঝড়েছিল টুপ্ টুপ্ করে কিছু বৃষ্টির ফোঁটা। তারপর মেঘের দল বিদায় নিল। দেখা গেল পূর্ণিমায় ভরা চাঁদ।

চৈত্র শেষ হইতে অনেক বাকি, কিন্তু ইহারই মধ্যে কলিকাতার
আকাশে কালবৈশাখীর নীলাঞ্জন ছায়া লাগিয়াছে। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, শুক্রবার, ৯ই চৈত্র, ১৩৬৮ (২রা চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, MARCH 23, 1962
কেওড়াতলায় বিজ্ঞানী ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহের শেষকৃত্য সম্পন্ন: বৃহস্পতিবার কলিকাতার কেওড়াতলা শ্মশানে বিজ্ঞানী ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই দিন সকালে বিজ্ঞান কলেজ ভবন হইতে তাঁহার নশ্বর দেহ লইয়া অন্তিমযাত্রা শুরু হয়। শোকযাত্রা পূর্ণ দাস রোডে তাঁহার আবাসভবনে ও পরে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অধ্যক্ষ জে সি গুহের বাসভবনেও লইয়া যাওয়া হয়। বিজ্ঞান কলেজ হইতে যাইবার পথে শোকযাত্রা আসিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কিছু সময়ের জন্য থামে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রীসুরজিৎ লাহিড়ী তাঁহার শবাধারে মাল্য অর্পণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের বহু সদস্য এইদিন শ্রীগুহের উদ্দেশ্যে তাঁহাদের শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। গত মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে এগারটায় লক্ষ্নৌতে অকস্মাৎ হৃদরোগে ডঃ গুহের মৃত্যু হয়। তাঁহার ৫৮ বৎসর বয়স হইয়াছিল।
• কলিকাতায় সমারোহময় হোলি উৎসব: প্রতিবারের মত এই বৎসরও কলিকাতায় হোলি উৎসবের সমারোহ স্রোতে বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়ে নাই। অশোভন অথবা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দু’একটি অভিযোগ ছাড়া মহানগরীর বসন্তোৎসব মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। এই বৎসর হোলির দিন কলিকাতার পথে পুলিশের হাতে ধৃত ব্যক্তির সংখ্যা ১৭৯। অনেকে দল বাঁধিয়া জিপে করিয়া শহর ঘুরিয়াছেন, লরিতে করিয়াও বা কোন কোন দলের শহর পরিক্রমা দেখা গিয়াছে। দুপুর পর্যন্ত ট্রাম বাস বন্ধ ছিল। উৎসবমত্ত নরনারী ও নিতান্ত প্রয়োজনে যাঁহারা বাহির হইয়াছেন, এমন পথচারী ছাড়া এইদিন দিনের একভাগে শহরের পথ জনহীন ছিল। এইদিন শহরের অন্তত ১৫টি স্থানে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রাচীন রীতি অনুযায়ী বসন্তোৎসব উদ্যাপিত হইয়াছে। যৌথভাবে সকলে রঙ খেলিয়াছেন।
• পৌরসবার ৬২-৬৩ সালের অভূতপূর্ব বাজেট: বৃহস্পতিবার বাজেট আলোচনার পঞ্চম দিবসে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টাকাল বিতর্কের পর ফিনান্স কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত কলিকাতা কর্পোরেশনের আগামী বছরের (১৯৬২-৬৩) বাজেট ৩৫-১৯ ভোটে গৃহীত হয়। বাজেটে আগামী বছরের ব্যয়ের খাতে কোন কোন দফার হ্রাস-বৃদ্ধি করিবার জন্য কংগ্রেস ও বিরোধী উভয় পক্ষ হইতেই প্রায় ২৫ জন কাউন্সিলর একশতটি সংশোধন প্রস্তাব আনয়ন করেন। মেয়র শ্রী রাজেন্দ্রনাথ মজুমদার উক্ত সংশোধন প্রস্তাবগুলি বিচার-বিবেচনার জন্য ফিনান্স কমিটির নিকট প্রেরণের প্রস্তাব করিয়া বলেন যে, ঐ কমিটি পুর্নবিবেচনা করিয়া যেগুলি গ্রহণযোগ্য মনে করিবেন সেগুলি পুনরায় কর্পোরেশনের সম্মুখে আনয়ন করা হইবে এবং তদানুযায়ী সংশ্লিষ্ট দফা-সমূহের বরাদ্দগুলির সামঞ্জস্য বিধান করিবার ক্ষমতা কমিটির থাকিবে। কর্পোরেশনের মেয়রের ঐ প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। ফিনান্স কমিটির উত্থাপিত বাজেটে কর্পোরেশনের আগামী বছরের রাজস্ব খাতে ৯কোটি ৫৫ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা আয় এবং ৯কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় অনুমোদিত হইয়াছে। ফলে ৩৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা ঘাটতি হইবে বলিয়া ধরা হইতেছে। কর্পোরেশনে এত বেশী আয়-ব্যয়ের বাজেট আর ইতিপূর্বে হয় নাই।


শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আবির্ভাব মহোৎসব উদযাপন উপলক্ষে বুধবার অপরাহ্নে
দক্ষিণ কলিকাতায় এক বিরাট বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার অনুষ্ঠান হয়। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, শনিবার, ১০ই চৈত্র, ১৩৬৮ (৩রা চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MARCH 24, 1962
• কলিকাতায় রাষ্ট্রীয় পরিবহন কর্পোরেশনের আয়: কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন কর্পোরেশনের ১৯৬২-৬৩ সালে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা লাভ হইতে পারে বলিয়া আসা করা যাইতেছে। প্রকাশ, কলিকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নিকট হইতে ১৯৬২-৬৩ সালের যে খসড়া বাজেট অনুমোদনের জন্য পাঠান হইয়াছে, তাহাতে প্রত্যাশিত আয় ধরা হইয়াছে ৪কোটি ৫৬ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা। বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা হইবে বলিয়া আসা করা যাইতেছে। ১৯৬১-৬২ সালের বাজেটে আয়ের পরিমাণ ধরা ছিল ৪ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা।

কলিকাতা, সোমবার, ১২ই চৈত্র, ১৩৬৮ (৫ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, MARCH 26, 1962
• অদূর ভবিষ্যতে বিনা বর্ষণেই কলিকাতা প্লাবিত হইতে পারে: সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ শ্রমিক যথাযথভাবে কাজ না করার ফলে কলিকাতা মহানগরীর ভুগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটিতেছে। এই অবস্থা চলিতে থাকিলে শুধু বর্ষাকালেই নয়, অদুর ভবিষ্যতে বিনা বর্ষণেই মহানগরী প্লাবিত হইয়া যাইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে।
সম্প্রতি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ইঞ্জিনীয়ার মহানগরীর ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী কাজের অব্যবস্থা সম্পর্কে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকট এক রিপোর্ট দাখিল করিয়াছেন। ঐ রিপোর্টেই ড্রেনেজ ইঞ্জিনীয়ার উল্লিখিত-রূপ ভয়াবহ চিত্রটি তুলিয়া ধরিয়াছেন। উক্ত রিপোর্টে এইরূপ অভিযোগ করা হয় যে, বিভাগীয় শ্রমিকগণ গত ১৯৫৬ সম হইতে ছোট ছোট পয়ঃপ্রণালীর কাজে একেবারে হাত দিতেছে না। ফলে ঐ সকল পয়ঃপ্রণালী একেবারে বুজিয়া গিয়াছে। রিপোর্টে আরও অভিযোগ করা হয় যে, গত ১৯৫১ সন হইতে “আউটফল সুইয়ার”-এর কাজও সম্পূর্ণ বন্ধ রহিয়াছে। উক্ত রিপোর্টে বলা হয়, ‘ইঞ্জিনীয়ারিং ম্যানুয়েল’ অনুযায়ী প্রতিটি শ্রমিককে কাজ করার কথা। এবং উহাই আইন সম্মত। কিন্তু গত ১৯৫৭ সন হইতে শ্রমিকগণ নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা অনেক কম সময় কাজ করিতেছে বলিয়া ঐ রিপোর্টে অভিযোগ করা হইয়াছে। রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, এ সম্পর্কে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সহিত কর্পোরেশনের বিভাগীয় অফিসারগণ, এমন কি স্বয়ং অফিসারগণ, এমন কি স্বয়ং কমিশনার বহুবার আলাপ-আলোচনা করিয়াছেন। ঐ আলোচনায় আজ পর্যন্ত কোন ফল হয় নাই।

• নেতাজীর মূর্তি স্থাপনের স্থান: কলিকাতার এসপ্ল্যানেডে যে স্থানটি নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মূর্তি স্থাপনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার মনোনীত করিয়াছেন, কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট তৎসম্পর্কে আপত্তি তুলিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে। বর্তমানে ইটবিছানো এই স্থানটি প্রধানত মোটরগাড়ী রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। ইহার একাংশে ঘোড়ার গাড়ীও রাখা হয়।
• কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্টানে শ্রীযুক্তা পণ্ডিতের ভাষণ: লেক ময়দানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবের প্রথম দিন জাতীয় অধ্যাপক শ্রীসত্যেন্দ্রনাথ বসু বিদেশী ভাষা এ দেশে শিক্ষা বিস্তারের পক্ষে অন্তরায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরে মাতৃভাষা শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত বলিয়া যে অভিমত প্রকাশ করেন, দ্বিতীয় দিন রবিবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে শ্রীমতী বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত এবং উপাচার্য শ্রীসুরজিতচন্দ্র লাহিড়ী উহার দৃঢ় বিরোধিতা করেন। এইদিন দীক্ষান্ত ভাষণে শ্রীমতী পণ্ডিত ইংরাজী ভাষার ‘‘আন্তর্জাতিক মর্যাদার” উল্লেখ করেন এবং বলেন, কিছুকালের জন্য ভারতের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই ভাষার যোগ্য স্থান থাকা উচিত। শ্রী লাহিড়ী মনে করেন, স্নাতকোত্তর এবং অনার্স স্তরে ইংরাজীর স্থলে হিন্দী অথবা বাংলা বা অন্য যে কোন আঞ্চলিক ভাষা শিক্ষার বাহন হইলে উহা শুধু যে প্রতিক্রিয়াশল ব্যবস্থা হইবে তাহা নয়, শিক্ষারও পরিপন্থী হইবে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১৩ই চৈত্র, ১৩৬৮ (৬ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MARCH 27, 1962
• কলিকাতার পথের আলো: কলিকাতা কর্পোরেশনের অন্তর্গত রাজপথ এবং অলিতে-গলিতে শতকরা ৫০টি বৈদ্যুতিক আলো নাকি জ্বলিতেছে না বলিয়া অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। বিশেষ করিয়া দক্ষিণ কলকাতার যে সকল রাস্তায় ফ্লুরোসেন্ট টিউব লাইট আছে, তাহার অধিকাংশই রাত্রিবেলায় হয় ‘নিবু নিবু’ অথবা একেবারে নিভান অবস্থায় থাকে বলিয়া অভিযোগে প্রকাশ। ইহা ছাড়া গ্যাসবাতিগুলির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হওয়ায় চৌরঙ্গী ও পার্ক স্ট্রীট এলাকার কোন কোন জায়গায় প্রায়ই মোটর দুর্ঘটনা ঘটিতেছে। গত শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের ১৩ নং বরো কমিটির সভায় জনৈক সহযোগী সদস্য উল্লিখিত মর্মে এক অভিযোগ করেন।


ঘন্টা বাজতে এখনও কিছু দেরী যতটা পারা যায়, শেষবারের মত
দেখে নেই। পরীক্ষাকেন্দ্রের রোয়াকই সই। ফটো: আনন্দবাজার
(বাঁ দিকে) পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজা সবে খুলিল। সোমবার স্কুলফাইন্যাল ও
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন দলে দলে পরীক্ষার্থীরা প্রবেশ করিতেছে তাহাদের
বুক কিন্তু দুরুদুরু। সাহস জোগাইতে অভিভাবকরা দরজা পর্যন্ত গিয়াছেন।


কলিকাতা, শুক্রবার, ১৬ই চৈত্র, ১৩৬৮ (৯ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, MARCH 30, 1962
• ১০৩ ডিগ্রী: কলিকাতায় গরম ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে। বৃহস্পতিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রী ফাঃ হিঃ (৩৯ সেঃ) ছিল। ইহা স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪ ডিগ্রী সেঃ বেশী। এ বৎসর ইহাই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এইদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭৬ ডিগ্রী ফাঃ হিঃ (২৪ সেঃ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আকাশ ভালই থাকিবে। তাপমাত্রা ইতরবিশেষ হইবে না।
• কলিকাতায় মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান: ককেশাস পাহাড়ের দক্ষিণ কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব এর মাঝে যে ভূখণ্ড সেখান থেকে এই মানুষগুলি এসেছেন নিজাম প্যালেসের মঞ্চে। দস্তইয়েভস্কির উপন্যাস থেকে নয় এসেছেন পুশকিনের কবিতা থেকে। গত কাল থেকে কলিকাতায় শুরু হবে জর্জিয়ান ডান্স আসেম্বলের লোকৃনৃত্য অনুষ্ঠান সূচী। উদ্যোক্তা, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটার। ব্যবস্থাপক, ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সংস্কৃতি দপ্তর। দিল্লি, আমেদাবাদ, বম্বের পর ওঁরা এখন কলকাতার অতিথি।
অনুষ্ঠান প্রায় দু-ঘন্টার। এই সময়ের মধ্যেই শিল্পীরা বুঝিয়ে দেন, তাঁরা আসছেন তুষারপাতের দেশ থেকে, সে দেশের রঙের সমারোহ রবীন্দ্র কবিতার মতই বিচিত্র, শৌর্য ও দেশাত্মবোধ সে দেশের প্রতি ধূলিকণায়।
• ১৭ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ: বুধবার কলিকাতা পুলিস ১৭ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিটিকে এইদিন দুপুরে রাইটার্স বিল্ডিংসের একটি ক্যান্টিনে দেখা গেলে জনৈক পুলিস অফিসার অতর্কিতে তাহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়েন ও তাহাকে গ্রেপ্তার করেন। ঐ ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, ঐ ব্যক্তি নাকি কিছুকাল পূর্বে সংবাদপত্রে ব্যবসায়ের আমানতকারী চাহিয়া বিজ্ঞাপন দেয়। ইহাতে দিল্লির জনৈক পদস্থ সামরিক অফিসার বিজ্ঞাপনটির প্রতি আকৃষ্ট হন। ঐ অফিসার তাঁহার পুত্রকে ব্যবসায়ে নিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপনদাতাকে ১৭ হাজার টাকা দেন। টাকা লইবার পর বিজ্ঞাপনদাতা নাকি নিখোঁজ হয়। গত সোমবার ঘটনাটি পুলিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়। তৎপর ঐ বিজ্ঞাপনদাতার সন্ধান শুরু হয়। অবশেষে বুধবার তাহাকে রাইটার্স বিল্ডিংসের ক্যান্টিনে গ্রেপ্তার করা হয়।

জর্জিয়ায় লোকনৃত্যের একটি দৃশ্য।
গত বৃহস্পতিবার হইতে জর্জিয়ার
লোকনৃত্যের আসর নিজামপ্রাসাদের
উদ্যানে অনুষ্ঠিত হইতেছে।
ফটো: আনন্দবাজার
কলিকাতা মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ডারগণ তাহাদের জনৈক সহকর্মীর মৃত্যু
সম্পর্কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করিতেছে। তাহাদের অভিযোগ এই যে, ইমার্জেন্সী
ওয়ার্ডে তাহাদের একজন সহকর্মীকে ভর্তি করার জন্য লইয়া যাওয়া
হইয়াছিল। কিন্তু বহুক্ষণ তাহার চিকিৎসার জন্য কোন ব্যবস্থাই
করা হয় নাই। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, শনিবার, ১৭ই চৈত্র, ১৩৬৮ (১০ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MARCH 31, 1962
• কলিকাতার সিনেমা গৃহ অধিকাংশের অবস্থা স্বাস্থ্যবিধি সম্মত নহে: কলিকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক সমীক্ষার রিপোর্টে এরূপ অভিযোগ করা হইয়াছে যে, মহানগরীর শতকরা সত্তরটি সিনেমাগৃহ স্বাস্থ্য-বিধিসম্মত নহে। এ ব্যাপারে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার সুপারিশ করা হইয়াছে বলিয়াও প্রকাশ। ইউ সি সি দলের সদস্য ডাঃ কে পি ঘোষের এক প্রস্তাবানুযায়ী কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যসচিবের পক্ষে ঐ সমীক্ষা কার্য পরিচালনা করা হয়। উক্ত সমীক্ষায় এইরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করা হইয়াছে যে, অনেক সিনেমাগৃহে বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা না থাকার ফলে বহু মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি হাজার হাজার সিনেমা দর্শকের মধ্যে ছড়াইয়া পড়িতেছে। অথচ দর্শক সাধারণ ঘুণাক্ষরেও ইহা জানিতে পারিতেছেন না। ইহা ছাড়া প্রস্রাবাগারেরও উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা না থাকার ফলে দর্শকদের দুর্ভোগের একশেষ হয়। কলিকাতা কর্পোরেশনের এলাকাকে ৭টি ডিস্ট্রিক্টে ভাগ করা হইয়াছে। ঐ ৭টি ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে প্রধান তিনটি ডিস্ট্রিক্টে সমীক্ষার কাজ সম্পূর্ণ হইয়াছে। রিপোর্টে অভিযোগ করা হইয়াছে যে, এক নম্বর ডিস্ট্রিক্টে মোট ১৯টি সিনেমা গৃহের মধ্যে ১৬টি স্বাস্থ্যবিধি সম্মত নহে। ২ ও ৩ নম্বর ডিস্ট্রিক্টে যথাক্রমে ৮টির মধ্যে ৪টি এবং ১৮টির মধ্যে ১৪টি সিনেমাগৃহ স্বাস্থ্যবিধিসম্মত নহে। ঐ তিনটি ডিস্ট্রিক্টে মোট ৪৫টি সিনেমাগৃহের মধ্যে ৩৫টিই স্বাস্থ্যবিধিসম্মত নহে। এই অবস্থার রিপোর্টে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সিনেমা হলগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করিবার সুপারিশ করা হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ।
• মহানগরীতে পরিস্রুত জল সরবরাহ ও ময়লা নিষ্কাষণ সমস্যা: শুক্রবারও কলিকাতা কর্পোরেশনের সভায় মহানগরীতে পরিস্রুত জল-সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা এবং ময়লা নিষ্কাশণের সমস্যা সম্পর্কে কংগ্রেস ও ইউ-সি-সি দলের বিভিন্ন সদস্য আলোচনা করেন। অবিলম্বে জরুরী ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়া ঐ সমস্যাগুলি সমাধান করিবার দাবী জানাইয়া এই দিন বহু সদস্য একাধিকবার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিরোধী দলের জনৈক কাউন্সিলার এই মর্মে এক প্রস্তাব পেশ করেন যে, বর্তমান অবস্থায় হয় কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বাড়াইবার জন্য কলিকাতা পৌর আইনের সংশোধন করিতে হইবে, আর না হয় কর্পোরেশনের কর্তৃত্বভার সামরিকবাহিনীর হাতে তুলিয়া দিতে হইবে।

কলিকাতা, সোমবার, ১৯শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১২ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, APRIL 2, 1962
• কলিকাতা বন্দরে সঙ্কটজনক অবস্থার আশঙ্কা: কলিকাতা বন্দরের পাইলটেরা এখনও পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অটল আছেন বলয়া রবিবার তাঁহাদের জনৈক মুখপাত্র জানান। তিনি আরও জানান যে, আগামী ৬ই এপ্রিল রাত্রি বারটায় কলিকাতা বন্দরের ৪৬ জন পাইলটের মধ্যে ৪০ জনেরই কাজে যোগ না দিবার সম্ভাবনা বেশী।
পাইলটেরা কাজে যোগ না দিলে বন্দরে যে জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হইবে তাহার সম্মুখী হইবার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অল্প সংখ্যক কর্মীর সাহায্যে কাজ চালু রাখিবার পরিকল্পনা বিবেচনা করিতেছেন। তবে বন্দরে জাহাজ চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পাইলটের সহিত বিরোধের আপোষ-মীমাংসার জন্যও তাঁহারা প্রস্তুত আছেন বলিয়া কলিকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের জনৈক মুখপাত্র রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানান। এদিকে ভারতের বৃহত্তম বন্দর কলিকাতায় পাইলটদের পদত্যাগের সম্ভাবনায় জাহাজী কারবারের সহিত সংশ্লিষ্ট মহলেও উদ্বেগের সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। সাধারণ অবস্থায় কলিকাতা বন্দরে জাহাজে মাল খালাস করাইতে ও জাহাজ ভিড়াইতে বেশ কয় দিন কাটিয়া যায়। তাহার উপর বন্দর পাইলটদের পদত্যাগে কাজ আরও মন্থর হইলে কলিকাতা বন্দর এক সঙ্কটের সম্মুখীন হইবে এবং সমগ্র ভরতের জাতীয় অর্থনীতিতে এক গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইবে বলিয়া ওয়াকিবহাল মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
• মহানগরীতে দুঃস্থ পরিবারগুলির অর্থনৈতিক পুনর্বাসন: কলিকাতা মহানগরীর দুঃস্থ পরিবারগুলির অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৬২-৬৩ সনের বাজেটে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়বরাদ্দ করিয়াছেন। রাজ্য ত্রাণ দপ্তরের কর্তৃপক্ষ ১৯৬১ সনের প্রথমদিকে এক সমীক্ষা কার্য চালাইয়া দেখিয়াছেন যে, কলিকাতা শহরে বহু দুঃস্থ পরিবারের লোকজন অর্থাভাবে কোন কাজ করিতে পারিতেছেন না। অথচ তাঁহাদের কোন না কোন কাজ করিবার ক্ষমতা আছে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার দুঃস্থ পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের পরকল্পনাটি গ্রহণ করিয়াছেন। ভারতে এই ধরণের পরিকল্পনা ইহাই প্রথম। আপাতত ইহা কলিকাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে। ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই পরিকল্পনাটি সম্প্রসারিত করিবার একটি প্রস্তাবও সরকারের বিবেচনাধীন আছে।

ছুটির দিনের বিকালে

তাপমাত্রা সহ্যাতীত। তবুও মাঠ-ময়দানের চিরাচরিত জীবনধারার কোন বিরাম নাই। চৈত্রের
অপরাহ্নে সেখানে চলিয়াছে ধর্ম গ্রন্থপাঠ: একসঙ্গে পরকালের কাজ আর তাপের শান্তি। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২০শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৩ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, APRIL 3, 1962
• কলিকাতায় কলেরার প্রকোপ: চাঁদি-ফাটা রোদ আর গলা শুকানো গরমের সঙ্গে সঙ্গে এই মহানগরী কলিকাতার পথেঘাটে আখের রস এবং নানারকম কাটা-ফল বিক্রি শুরু হইয়া গিয়াছে। এদিকে শহরের হাসপাতালগুলিতে কলেরা রোগাক্রান্ত সন্দেহে রোগী ভর্তির ভীড়ও বাড়িয়া চলিয়াছে। সোমবার রাত ১১টার মধ্যে হাসপাতালে কলেরা-রোগাক্রান্ত সন্দেহে ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়তাহাদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১৪ জনকে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কলিকাতায় ১৬ জন কলেরা রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৪ জন ঐ রোগে মারা যায়। কলিকাতা কর্পোরেশন হইতে এই হিসাব পাওয়া গিয়াছে।
• কলিকাতায় বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধি: কলিকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন যে হারে ‘রেট’ বাড়াইতেছেন তাহার ফলে ২ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয় হইবে বলিয়া রাজ্য সরকার প্রাপ্ত তথ্যাদির ভত্তিতে অনুমান করেন। ২৯ শে এপ্রিল হইতে যে বিল তৈয়ারী করা হইবে তাহা ঐ নূতন রেট অনুযায়ী হিসাব করা হইবে। রাজ্য সরকার মনে করেন, ৭০ লক্ষ টাকা হইলেই ১৯৬২-৬৯ সালের অনুমিত ঘাটতি পূরণ হওয়া ছাড়াও সম্পত্তির উপর শতকরা ছয় ভাগ ‘ন্যায্য’ আয় বাড়বে। ঐ টাকা পাইবার জন্য কর্পোরেশন ‘হাইভোল্টেজ রেট’ শতকরা দশ ভাগ বাড়াইতে পারেন বলিয়া প্রস্তাব করা হয়। রাজ্য সরকার ঐ সংস্থার নিকট তিন বৎসরের হিসাব চাহিয়া পাঠান। প্রকাশ, কর্পোরেশন তন্মধ্যে ১৯৬১-৬২ সালের হিসাব পাঠান। তাহাতে ন্যায্য আয়, মুনাফা ও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পত্তি এবং ন্যায্য আয়ের ভিতরে ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার পাউন্ড দেখান হয়। আর দুই বৎসরের হিসাব শীঘ্রই পাঠান হইবে।

কলিকাতা, বুধবার, ২১শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৪ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, APRIL 4, 1962
• কলিকাতায় কলেরা: মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে এগারটার মধ্যে কলিকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কলেরা রোগাক্রান্ত সন্দেহে মোট ১৬ জনকে ভর্তি করা হয়। গতকাল কলেরা রোগাক্রান্ত সন্দেহে মোট ১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়াছিল। গত ৩১-৩-৬২ তারিখে সমাপিত সপ্তাহে কলিকাতা মহানগরীতে ১৮ জন কলেরা রোগাক্রান্ত হন। তন্মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়। ইহার আগের সপ্তাহে ১৬ জন কলেরা রোগাক্রান্ত হন এবং তন্মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর এই দুইটি সপ্তাহে যথাক্রমে ৫১ ও ৫৪ জন কলেরা রোগাক্রান্ত হন এবং তন্মধ্যে যথাক্রমে ৮ ও ১১ জনের মৃত্যু হয়।
• বর্তমান মেয়র ও ডেপুটি মেয়রের বহাল থাকার সম্ভাবনা: এখন ইহা একরূপ নিশ্চিত যে, বর্তমান মেয়র ও ডেপুটি মেয়র যথাক্রমে শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং শ্রীতুলসীচরণ আর এক বছরের জন্য মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হইবেন। যতদূর জানা যায়, কংগ্রেস মিউনিসিপ্যাল-এসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রীঅতুল্য ঘোষ বর্তমান পরিস্থিতিতে নূতন কোন প্রার্থীকে ঐ পদ দুইটির জন্য মনোনয়ন দিবার পক্ষপাতী নহেন।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ২২শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৫ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 5, 1962
• মহানগরীকে বাঁচানোর জন্য দাওয়াই বিশেষজ্ঞ কমিটি: আবর্জনা পরিস্কার ও জলনিকাশের ব্যাপারে অব্যবস্থার ফলে দিনে দিনে কলিকাতা অবনতির পথে চলিয়াছে। তাহা হইতে মহানগরীকে বাঁচাইবার দাওয়াই বাতলাইবার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। প্রকাশ, ঐ বিশেষজ্ঞ কমিটি শহরের আবর্জনা অপসারণ ও জল-নিকাশের বর্তমান দূরবস্থা এবং উহার কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করিবেন। সম্ভবত উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থারও সুপারিশ করিবেন। ঐ কমিটিতে রাজ্য সরকার ও কলিকাতা কর্পোরেশন উভয়ের প্রতিনিধিরাই থাকিবেন। ইহা ছাড়া এখনই শহরের বিশেষত বস্তি এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহ বাড়াইবার সক্রিয় ব্যবস্থা লইতেও সরকার উদ্যোগী হইয়াছেন।

কলিকাতা, শুক্রবার, ২৩শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৬ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, APRIL 6, 1962
• কলিকাতায় ঠেলাগাড়ির পরিবর্তে তিন চাকার ডেলিভারি ভ্যান: পশ্চিমবঙ্গ সরকার অতি শীঘ্র কলিকাতায় প্রায় এক হাজার তিন চাকার ডেলিভারি ভ্যান লাইসেন্স দিবার একটি প্রস্তাব বিবেচনা করিতেছেন বলিয়া জানা গিয়াছে। সম্প্রতি কলিকাতায় ধীর গতির যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা দিয়াছে এই ভ্যানগুলি চালু হইলে তাহা সমাধান হইতে পারে বলিয়া অনেকে মনে করেন। প্রকাশ যে, পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় এই ব্যাপারে স্বয়ং উৎসাহী হইয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট কলিকাতার ঠেলাগাড়ির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ও ডেলিভারি ভ্যানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তথ্য জানিতে চহিয়াছেন। প্রথম স্তরে ঠেলাগাড়ির মালিকেরা ডেলিভারি ভ্যানের লাইসেন্স পাইবার পক্ষে অগ্রাধিকার পাইতে পারেন। তবে কতগুলি ঠেলা পিছু একটি ডেলিভারি ভ্যান দেওয়া হইবে সরকার তাহা এখনও ঠিক করিয়া উঠিতে পারেন নাই। কলিকাতায় ১০,০০০ হাজারের কিছু বেশী ঠেলাগাড়ি আছে। এক একজন ঠেলা মালিকের প্রায় ২৫ হইতে ৩০ খানি করিয়া ঠেলা আছে। সরকার পক্ষের অভিমত, ৮ হইতে ১০টি ঠেলা পিছু একটি করিয়া ডেলিভারি ভ্যানের অনুমতি দেওয়া। পক্ষান্তরে ঠেলার মালিকবৃন্দ অন্তত প্রতি পাঁচটি ঠেলা পিছু একটি করিয়া ডেলিভারি ভ্যানের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। তবে সরকার পক্ষের বর্তমান মনোভাব যদি কার্যকরী হয় তাহা হইলে অন্তত এক হাজার ডেলিভারি ভ্যান পথে বাহির হইবার লাইসেন্স পাইবে।
কলিকাতার দুই চাকার ঠেলাগাড়িগতির যুগে
এই ধরণের যানবাহনের বিদায় কি আসন্ন?
ফটো: আনন্দবাজার
তিন চাকার ডেলিভারি ভ্যান বীরগতিযানের
স্থান এই ধরণের দ্রুতগতিযান উত্তরোত্তর
গ্রহণ করিবে। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, শনিবার, ২৪শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৭ই চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, APRIL 7, 1962
• কলিকাতা বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি: শুক্রবার রাত্রি ১২টা হইতে কলিকাতা বন্দরের ৪৬ জন পাইলটের মধ্যে ৪০ জনই পদত্যাগ করিয়াছেন। শনিবার কলিকাতা বন্দর হইতে তাঁহারা কোন জাহাজ বাহির সমুদ্রে লইয়া যাইবেন না বা বঙ্গোপসাগরের স্যান্ড হেডেও কোন জাহাজের ভার গ্রহণ করিবেন না। অচিরে এই সঙ্কটের কোন সুরাহা না হইলে ভারতের বৃহত্তম বন্দর কলিকাতায় গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হইবে। যে ৬ জন পাইলট পদত্যাগ করেন নাই বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁহাদের সাহায্যে সামান্য পরিমাণ কাজ চালু রাখিবার চেষ্টা করিলেও এই সঙ্কট এড়ান যাইবে না বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন। ইতিমধ্যে বৃস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ সিপিং এজেন্টদের এক বৈঠকে পাইলটদের একযোগে পদত্যাগ জনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁহাদিগকে অবহিত করিয়াছেন। অবস্থার উন্নতি না হইলে জাহাজগুলিকে অন্য বন্দরে ঘুরাইয়া দেওয়া যাইতে পারে বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।

কলিকাতা, সোমবার, ২৬শে চৈত্র, ১৩৬৮ (১৯শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, APRIL 9, 1962
• রাণী বিড়লা গালর্স কলেজ: রবিবার পূর্বাহ্নে বিশ্বভারতীয় উপাচার্য শ্রীসুধীরঞ্জন দাস এক চিত্রাকর্ষক অনুষ্ঠানে কলিকাতায় রাণী বিড়লা গার্লস কলেজ-ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। ৭৮ নং সৈয়দআমীর আলি এভিনিউস্থিত চারতলা এই সুরম্য ভবনটির স্থাপত্য ও গঠন পদ্ধতি যেমন মনোরম, পরিবেশও তেমনি চমৎকার। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি-বিজড়িত বিড়লা পার্কেরই একাংশে কলেজের এই ভবনটি গড়িয়া উঠিয়াছে। স্বর্গত রাজা বলদেও দাস বিড়লার সহধর্মিণী এবং শ্রী জি ডি বিড়লার মাতৃদেবীর নামানুসারে এই মহিলা মহাবিদ্যালয়ের নামকরণ হইয়াছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, বিড়লা ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই মহ্যবিদ্যালয় ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হইল। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, রাণী বিড়লার বয়সও বর্তমানে শতবর্ষ চলিতেছে। তিনি আরও সুস্থশরীরে বারাণসীতে স্বীয় ভবনে বাস করিতেছেন। বেদগানের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। বর্তমানে বিড়লা পরিবারের অন্যতম প্রধান শ্রী জি ডি বিড়লা এবং শ্রী বি এম বিড়লাসহ বহু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। মহাবিদ্যালয়ের বিস্তীর্ণ শ্যামল অঙ্গনে এক সুদৃশ্য চন্দ্রাতপতলে পত্র-পুষ্পের বিপুল সমারোহ অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।

রবিবার মার্কাস স্কোয়ারে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের নবম বার্ষিক
অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আনন্দবাজার পত্রিকার
সম্পাদক শ্রীঅশোককুমার সরকার ভাষণ পাঠ করিতেছেন।
বিশ্বভারতীয় উপাচার্য শ্রীসুধীররঞ্জন দাস
রবিবার সকালে রাণী বিড়লা কলেজভবনের
উদ্বোধন করিতেছেন। ফটো: আনন্দবাজার


কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২৭শে চৈত্র, ১৩৬৮ (২০শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, APRIL 10, 1962
• রবীন্দ্র-পুরস্কার: শ্রীবলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) ও শ্রীজিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩৬৮ সনের ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’পাইয়াছেন বলিয়া নির্ভরযোগ্যসূত্রে জানা গিয়াছে। প্রকাশ, সৃষ্টিমূলক রচনা হিসাবে শ্রী মুখোপাধ্যায়ের ‘হাটে-বাজারে’ উপন্যাস এবং মৌলিক গবেষণা হিসাবে শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পঞ্চোপাসনা’ গ্রন্থ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রতি বৎসর প্রদত্ত এই পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ৫ হাজার টাকা। উপরোক্ত দুই গ্রন্থকার প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা পাইবেন। অন্যান্য আরও কয়েকটি বিশিষ্ট বেসরকারী ‘সাহিত্য-পুরস্কারের’ ফলও ঘোষণা করা হইয়াছে। ‘আনন্দবাজার’ ও ‘দেশ’ পক্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত ‘প্রফুল্লকুমার সরকার পুরস্কার’ পাইয়াছেন কথা-সাহিত্যিক শ্রীনরেন্দ্রনাথ মিত্র। তাঁহারা প্রত্যেকে ১০০০ টাকা পাইবেন।
• স্বর্গত প্রফুল্লকুমার সরকার: আগামী ৩০শে চৈত্র (ইং ১৩ এপ্রিল) শুক্রবার অপরাহ্ন ৫ ঘটিকার সময় আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক স্বর্গত প্রফুল্ল কুমার সরকার মহোদয়ের অষ্টাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-কার্যালয়ে তাঁহার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের জন্য এক স্মৃতিসভার অধিবেশন হইবে। রাজ্য বিধান-পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডঃ শ্রীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই সভায় পৌরহিত্য করিবেন। আহ্বারকগণশ্রীসুধাংশুকুমার বসু সম্পাদক, ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’, শ্রীসরোজ আচার্য, সহ-সম্পাদক, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ও শ্রীসাগরময় ঘোষ, সহ-সম্পাদক, ‘দেশ’।
• মুসলমান ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল: মুসলমান ছাত্রদের একটি মিছিল সোমবার দুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করিয়া রাইটার্স বিল্ডিংসে অভিযান চালায়। ১৪৪ ধারা বলে প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিবার অভিযোগে পুলিস ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে বলিয়া প্রকাশ। ‘মনোহর কঁহানীয়া’ নামে এক হিন্দী পুস্তকে নাকি হজরত মহম্মদের ছবি ছাপা হইয়াছেএই অভিযোগ উত্থাপন করিয়া মিছিলকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। দুপুরে মুসলমান ছাত্রদের একটি মিছিল ফেস্টুন লইয়া নেতাজী সুভাষ রোড দিয়া রাইটার্স বিল্ডিংসে প্রবেশের চেষ্টা করে। তাহাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া প্রতিবাদ জানান। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগে পুলিস ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘তাহানে রসুল বন্ধ কর, ভগবান সিংকে গ্রেপ্তার কর।’ তাহাদের মুখে ধ্বনি ছিল ‘আল্লা হো আকবর’, ‘নারায়ে তকদীর’ ইত্যাদি।
ফটো: আনন্দবাজার
• উত্তর কলিকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জঞ্জালের স্তূপ: একে তো শ্রমিকদের কাজে আংশিক অনুপস্থিতি এবং প্রশাসনিক নানা কারণে কলিকাতা শহরে আবর্জনা ও পয়ঃপ্রণালী পরিস্কারের কাজ বিশেষভাবে ব্য্যহত হইতেছে। ইহার উপর আছে আবর্জনা পরিস্কারের লরী লইয়া গোলমাল এবং ভারপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট খুদে অফিসারদের জন্য পারস্পরিক রেষারেষি জনিত অব্যবস্থা। ইহার ফলে গত ছয় সাতদিন যাবৎ উত্তর কলিকাতার বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চলে আবর্জনা পরিস্কারের কাজ প্রায় বন্ধ থাকার দরুণ ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ জঞ্জালস্তূপে পরিণত হইয়াছে। ইহা ছাড়া পয়ঃপ্রণালী সাফাইয়ের অভাবে কোন কোন গলিতে জল জমিয়া নীলবর্ণ ধারণ করিয়াছে এবং উহা পূতিগন্ধ ছড়াইতেছে। প্রচন্ড গরমে কলিকাতায় যখন কলেরা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়াছে, তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় ঐ অঞ্চলে নাগরিক সাধারণ মহামারীর আশঙ্কায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িয়াছেন। অবস্থা এইরূপ শোচনীয় আকার ধারণ করিয়াছে যে, একনম্বর ও দুই নম্বর ডিস্ট্রিক্টের কোন কোন কাউন্সিলর রবিবার কর্পোরেশনের কতৃপক্ষের নিকট উহার আশু প্রতিকার ব্যবস্থা না করিলে তাঁহাদের পক্ষে পদত্যাগ করা ছাড়া গত্যন্তর নাই বলিয়া জানান।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ২৯শে চৈত্র, ১৩৬৮ (২২শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 12, 1962
• কলিকাতায় তীব্র উত্তেজনা: ইতস্তত হাঙ্গমা: একটি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলের প্রায় সকলেই একমতগত কয়েকদিন যাবৎ কলিকাতার বুকে একদল লোক যেভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তাপ সৃষ্টির চেষ্টা করিতেছেন তাহা দেশ ও সমাজের পক্ষে মারাত্মক। কাহারা ইহার পিছনে ইন্ধন জোগাইতেছে, বা কাহাদের স্বার্থে এই উত্তাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে সে বিষয়ে কিন্তু সকলে একমত নহেন। রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রীবিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা মনে করি ইহার পিছনে অন্যান্য শক্তি কাজ করিতেছে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের লোকজন তো আছেই, সম্ভবতঃ এই ব্যাপারে একটা রাজনৈতিক চক্রান্তও আছেকংগ্রেস সরকারকে অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে এক দল লোক এই ব্যাপারে উস্কানি দিতেছে বলিয়া মনে হয়।”
• মেডিকেল হাসপাতালে সাংবাদিক লাঞ্ছনায় সর্বত্র বিস্ময় ও ক্ষোভ: একজন রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করিয়া মঙ্গলবার রাত্রে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাঙ্গণে যে খন্ডযুদ্ধ হইয়া গিয়াছে, বুধবার বিভিন্ন মহল হইতে তাহার বিরুদ্ধে ধিক্কারধ্বনি উঠিয়াছে। বিশেষ করিয়া, বিবরণ সংগ্রহ করিতে পরে ঘটনাস্থলে আগত দুইজন সাংবাদিকের উপর ‘কাপুরুষোচিত আক্রমণে’ ঐ সকল মহল বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। কলিকাতার মেয়র এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের দাবি জানাইয়াছেন। মেয়র শ্রী রাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এক বিবৃতিতে বলেন, মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে সাংবাদিক নিগ্রহ এবং অন্যান্য ঘটনার সংবাদ জানিয়া আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কোন অবস্থাতেই এই ধরণের কাপুরুষোচিত আক্রমণের কথা ভাবা যায় না। কাহারও কোন বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকিলে তাহা প্রকাশের আরও অনেক পথ আছে। এইরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে তৎপর হওয়া দরকার। প্রয়োজন হইলে এ সম্পর্কে তদন্তের জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা উচিত।

কলিকাতা, শুক্রবার, ৩০শে চৈত্র, ১৩৬৮ (২৩শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, APRIL 13, 1962
• কলিকাতায় বিপুল সংখ্যায় পাকিস্তানী মুসলমানের অনুপ্রবেশ: কলিকাতায় বিপুল সংখ্যায় পাকিস্তানী মুসলমানদের অনুপ্রবেশ বর্তমানে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে বিশেষ উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিয়াছে। এই ব্যাপক বে-আইনী অনুপ্রবেশ বন্ধ করিতে না পারিলে অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে বড় রকমের আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিবার আশঙ্কা রহিয়াছে বলিয়া অনুমান করা হইতেছে। প্রকাশ, কলিকাতা শহর ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে বর্তমানে পাকিস্তানী মুসলমানদের সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি গিয়া দাঁড়াইয়াছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর বহু চেষ্টা করিয়াও এই অনুপ্রবেশ বন্ধ করিতে পারিতেছেন না। ইতিমধ্যে আরও জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলে বিশেষ করিয়া নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্রমাগত পাকিস্তানীদের দৌরাত্ম্যে ভারতীয় শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত হইয়াছেন। এই এলাকা আজ যেন একটি ছোটখাট পাকিস্তানে পরিণত হইয়াছে বলিয়া স্থানীয় অধিবাসী অনেকের নিকট প্রতিভাত হইতেছে।
• দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ছিটেফোঁটা বারিপাত: অনেক দিনের উৎকন্ঠ প্রতীক্ষার পর তৃষিত মাটির বুক ভিজিল। বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে ধূসর মেঘে ছাওয়া আকাশে মেঘ গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় দাপাদাপি। পথে বাহির হইয়া দেখি, পুষ্পিত কৃষ্ণচূড়ার গাছ যেন উল্লাসে মাতিয়া উঠিয়াছে, বায়ু-আন্দোলিত শাখাপ্রশাখায় অভ্যর্থনার সমারোহ। বৃষ্টি অবশ্য ছিটে ফোঁটা, ঝড়ের বেগও বেশী নয়। তবুও বৃহস্পতিবারের বারবেলার বৃষ্টিতে রাস্তা ভিজিয়াছে এবং দাবদগ্ধ মহানগরীর অঙ্গ কিছুটা শীতল হইয়াছে। মেঘের ডমরুর মধ্যে শোনা গিয়াছে কালবৈশাখীর প্রথম পদধ্বনি। অফিস ফেরতার দল ভিজিয়াছেন, খুশী মনেই ভিজিয়াছেন। টিপ টিপ বৃষ্টিতে স্কুলের ছাত্ররা রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িয়াছে, ট্রাম বাসের যাত্রীরা অনেকে হাত বাড়াইয়া দেখিয়াছেন একি স্বপ্ন, একি মায়া, না সত্যসত্যই বৃষ্টি, বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি। এইদিন অপেক্ষাকৃত কম গরম অনুভূত হয়। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১০১০ ফারেনহিট, বৃহস্পতিবার দুই ডিগ্রি কমিয়া তাহা দাঁড়ায় ১৯০ ফারেনহিটে।
এস হে বৈশাখ

১২ই এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা: এক পশলা বৃষ্টির পর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।


কলিকাতা, শনিবার, ১লা বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৪শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, APRIL 14, 1962
• কলিকাতায় চড়কপূজা: কলিকাতার সেদিন আর নাই। চড়কপূজায় তেমন ঘটা আর হয় না। তবে চড়ক গাছ, আজও ঘোরে। চৈত্র অবসানে পথ আর ঘরের সন্ন্যাসীদের ব্রত ভঙ্গ হয়। কলিকাতা শহর হইলেও গাজন উৎসবে গ্রাম বাংলার সঙ্গে তাল দিতে ভোলে না। ছাতুবাবুর বাজার, পদ্মপুকুর এবং অন্যান্য স্থানে চড়কের মেলা বসে। অন্তত একদিনের জন্য হইলেও সাবেককালের পদ্মপুকুর মুখ ফুটিয়া কথা বলিতে চায়। এবারও ইহার ব্যতিক্রম হয় নাই। শুক্রবার পদ্মপুকুর ও ছাতুবাবুর বাজারের মেলা বেশ জমাটি হইয়াছে। মেলা বলিতে যাহা বোঝায় সেই ঘর-সমসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সস্তার খেলনা ও খাবার। লোকে সেখানে চড়কগাছ ঘোরা দেখিয়াছে, টুকুটাকি জিনিস কিনিয়াছে এবং শেষে গুটি গুটি পায়ে ভীড় ঠেলিয়া বাড়ী ফিরিয়াছে। আর আগেরদিন রাত্রে যেসব গাজন সন্ন্যাসীরা ব্রতভঙ্গ করিতে কলিকাতা হইতে তারকেশ্বর গিয়াছিল তাহারা এদিন রাত্রে ফিরিয়া আসিয়াছে।
ছাতুবাবুর বাজারে চড়ক।
ফটো: আনন্দবাজার

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ৪ঠা বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৭শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, APRIL 17, 1962
• লবণ হ্রদ উদ্ধারের শুভ সূচনা: সোমবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় উল্টাডাঙ্গা স্টেশনের কাছে দক্ষিণদ্বারীতে লবণহ্রদ পুনরুদ্ধারের কাজের উদ্বোধন করেন। শহর কলিকাতার এক পাশে উত্তর ও দক্ষিণ লবণহ্রদ এলাকায়, আজ যেখানে বিস্তীর্ণ জলাভূমিতাহার উপরে ২৪০০ একর জমি লইয়া আগামী দিনে এক বিরাট জনপদ গড়িয়া উঠিতেছে। কলিকাতা শহর সম্প্রসারণের বৃহত্তম পরিকল্পনাটির এই উদ্বোধন মুহূর্তটিকে এই দিন মুখ্যমন্ত্রী ‘একটি নূতন ভাবনায় জলমগ্ন’ বলিয়া অভিহিত করেন। গঙ্গা হইতে পাইপে করিয়া মাটি আনিয়া এখন লবণ হ্রদের ভরাট কাজ চলিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী এইদিনে একটি বোতাম টিপিবামাত্রই আনুষ্ঠানিকভাবে ভরাটের কাজ শুরু হয়। মোটা পাইপ দিয়া মাটি ও বালু আসিয়া লবণ হ্রদে পড়িতে থাকে। ১৮ বর্গমাইল এলাকা জুড়িয়া উত্তর লবণহ্রদ পুনরুদ্ধারের কাজ দুই ভাগে শুরু হইবে। শহরের সংলগ্ন ৩.৭৫ বর্গমাইল এলাকা মাটি ভরাট করিয়া কলিকাতা শহরের সমান উঁচু করা হইবে। বাকী ১৪ বর্গমাইল এলাকা জুড়িয়া ডাচ ‘পোলডার’-এর অনুকরণে কৃষিকাজ, মাছ ও ফলের চাষের জন্য রাখিয়া দেওয়া হইবে।

কলিকাতা, বুধবার, ৫ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৮শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, APRIL 18, 1962
• কলিকাতায় কালবৈশাখী: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলিকাতায় কিছুক্ষণের জন্য কালবৈশাখীর আবির্ভাব ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ৬.৫ ডিগ্রি (সেন্টিগ্রেড) কমিয়া যায়। বিকাল ৫টা হইতেই ঈশান কোণে কালো মেঘের প্রস্তুতের ঘটা পড়িয়া যায়। ৬টায় প্রথমে দমকা হাওয়ায় ধূলির ঝড় বহিতে থাকে। ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৫০ মাইল ছিল। তার কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টির ঝাপট তাপদগ্ধ কলিকাতায় কিছুটা শান্তির প্রলেপ লাগাইয়া দেয়। বৎসরের ইহাই প্রথম কালবৈশাখী। এইদিন আলিপুরের আবহাওয়া অফিস হইতে জানানো হইয়াছে যে, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত যে ২৪ ঘন্টা শেষ হইয়াছে তাহার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১০ সে (১০৫০ ফাঃ)। স্বাভাবিক অপেক্ষা এই তাপ ছিল ৫০ সেঃ ডিগ্রি বেশী। সর্বনিম্ন তাপ ২৭০ সেঃ (৮১০ ফাঃ) স্বাভাবিক অপেক্ষা ৩ ডিগ্রি বেশী। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৬ ইঞ্চি (৬.৭) মিমি।
• জলকষ্টের শোচনীয় পরিণতি: কলিকাতা মহানগরী ও সহরতলী অঞ্চলে গ্রীষ্মের দাবদাহ ক্রমশঃ বাড়িতেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতেছে, জলকষ্ট এবং বিভিন্ন নলকূপে জল সংগ্রহকারীদের মধ্যে বচসা। মঙ্গলবার এই অবস্থারই এক শোচনীয় অভিব্যক্তি ঘটে সহরতলীতে ৯৩নং বাসরুটে খড়িবাড়ীতে এক নলকূপে জল সংগ্রহের উদগ্র আগ্রহকে কেন্দ্র করিয়া। শেষ পর্যন্ত ঐ ঘটনায় এক সংঘর্ষে কয়েকজন অল্পবিস্তর আহত হয় এবং উক্ত ৯৩নং রুটের বাস চলাচল সারাদিনের জন্য বন্ধ থাকে। পুলিশীসূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, বাসস্ট্যান্ডের অদূরে অবস্থিত ঐ নলকূপে পূর্বাহ্নের দিকেজল লইবার জন্য বহু লোক সমবেত হয়। ইতিমধ্যে ৯৩নং রুটের একখানি বাসের জনৈক পাঞ্জাবী ড্রাইভার কলিকাতার দিকে যাত্রা করিবার আগে ঐ নলকূপের জলে স্নান করিতে আরম্ভ করে। জল সংগ্রহকারীদের লাইন দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হইতে থাকে। ক্রমশঃ ঐ লাইনের লোকজন অধৈর্য হইয়া উঠে। কথায় কথা বাড়িয়া যায়; পরে একদিকে ঐ ড্রাইভার ও তার কন্ডাক্টর এবং অপরদিকে জল সংগ্রহকারী স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বচসা সুরু হয়। ড্রাইভারের পক্ষে অন্যান্য কয়েকটি বাসের চালক, কন্ডাক্টর ও ক্লিনাররাও আসিয়া যোগ দেয়। শেষে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ লাগে। এই সংঘর্ষে কিলঘুষি ইত্যাদি ছাড়াও বালতি, মগ, ঘটি, কলসী ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়।
• কলিকাতা হাইকোর্টে ১লা জুলাই হইতে তিনদিনব্যাপী শতবর্ষ পূর্তী উৎসব: হাইকোর্টের লাল রঙের গথিক পদ্ধতির বিরাট বাড়ীটি এই মহানগরীর ইতিহাসের সঙ্গে আজ অঙ্গাঙ্গীভাবে মিলিয়া গিয়াছে। এই বাড়ীটির নির্মান শেষ হইয়াছিল ঠিক নব্বই বছর আগে ১৮৭২ সালের মে মাসে। কিন্তু রাম জন্মের পূর্বে রামায়ণ রচনার মত বর্তমান হাইকোর্ট তৈয়ারী হইবার পূর্বেই কলিকাতা হাইকোর্টের জন্ম হইয়াছিল ১৮৬২ সালের ১লা জুলাই। সুতরাং হাইকোর্টের শতবর্ষ পূর্তি আসন্ন। সেই শতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী জুলাই মাসে ১লা হইতে ৩রা পর্যন্ত কলিকাতা হাইকোর্টের তিনদিনব্যাপী শতবর্ষ উৎসব উদযাপিত হইবে। উৎসবের যে স্মরণী পুস্তিকা প্রকাশের প্রস্তাব হইয়াছে তাহাতে হাইকোর্টের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে বার এসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরী ক্লাব প্রভৃতিরও চিত্তাকর্ষক বিবরণ থাকিবে বলিয়া আশা করা যায়।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৩৬৯ (২৯শে চৈত্র, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 19, 1962
• কলিকাতা কর্পোরেশনে মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পুনর্নির্বাচিত: বুধবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সভায় শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার (কংগ্রেস) এবং শ্রীতুলসীচরণ পাল (নির্দলীয়) ১৯৬২-৬৩ সালের জন্য যথাক্রমে মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র পদে পুনঃ নির্বাচিত হন। পৌরসভার প্রধান বিরোধী পক্ষ ইউ সি সি দল হইতে মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী দাঁড় করান হয়। কিন্তু ঐ প্রার্থিদ্বয় পরাজিত হন। শ্রী মজুমদার ৫০-২৫ ভোটে এবং শ্রী পাল ৪৯-২৫ ভোটে মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদে নির্বাচিত হন। বঙ্গীয় পৌরশাসন আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত শ্রী বি সরকার এই দিনকার সভার কর্ম পরিচালনা করেন।
• কাগজে সংবাদ ছাপার দায়িত্ব: বুধবার কলিকাতায় নিখিল ভারত মুদ্রক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় বলেন, ছাপার অক্ষরে কিছু প্রকাশের পেছেনে গুরু দায়িত্ব থাকে। কারণ অনেকের ধারণা ‘যাহা ছাপা হইয়াছে তাহা অভ্রান্ত।’ উদাহরণ দিবার জন্য ডাঃ রায় এক পুরানো কাহিনীর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯২৮ সালে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচারের জন্য তিনি বাংলাদেশের এক জমিদারের কাছে গিয়াছিলেন। জমিদার মহাশয় তো কিছুতেই তাহার নিজের পছন্দসই প্রার্থীকে ছাড়া অন্য কাহাকেও ভোট দিবেন না। অবশেষে তিনি ( ডাঃ রায়) মোক্ষম অস্ত্র ছাড়িলেন। সেই দিনের সংবাদপত্রে ঐ মনমত প্রর্থী সম্পর্কে যাহা ছাপা হইয়াছিল সেইটি জমিদারবাবুর সামনে তুলিয়া ধরিলেন। ওমনি ওষুধ ধরিল। জমিদার মহাশয় ঠিক করিলেন ঐ প্রার্থীকে আর সমর্থন করিবেন নাকারণ ‘কাগজে যাহা ছাপা হইয়াছে তাহা তো মিথ্যা হইতে পারে না।’
• বিডন স্কোয়ারে রবীন্দ্র জন্মোৎসব: রবীন্দ্রমেলার গত সাধারণ সভায় রবীন্দ্র জন্মোৎসব পালনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণকে লইয়া একটি শক্তিশালী কর্ম-পরিষদ গঠিত হয় এবং সভায় আগামী ২৫শে বৈশাখ হইতে রবীন্দ্রকাননে (বিডন স্কোয়ারে) দশ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের সিদ্ধান্ত করা হয়। পৃষ্ঠপোষক - ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, অতুল্য ঘোষ, প্রফুল্লচন্দ্র সেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোককুমার সেন, সন্তোষকুমার ঘোষ, স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, স্বামী প্রজ্ঞানন্দ, ডঃ গৌরীনাথ শাস্ত্রী, ডঃ অজিত ঘোষ, ডঃ সুকুমার সেন, দক্ষিণারঞ্জন বসু, রতননাথ দত্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নৃপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র, ডঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ, বিনয় রায়চৌধুরী, কেশবচন্দ্র বসু, বীরেন্দ্রনাথ সরকার, অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রমথনাথ বিশী, পার্বতীকুমার ইন্দ্র, সত্যেন্দ্রলাল রায়। অনুষ্ঠানসূচী উপদেষ্টা - অহিন্দ্র চৌধুরী, শান্তিদেব ঘোষ, শুভ গুহঠাকুরতা, রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভাত গুপ্ত, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, শৈলজারঞ্জন মজুমদার অনাদিকুমার দস্তিদার ক্ষেমেন্দ্রনাথ সেন, মন্মথনাথ ঘোষ। সভাপতি - ডঃ নীহাররঞ্জন রায়। সহ-সভাপতি -- অশোককুমার সরকার, শীতলচন্দ্র দত্ত, সুকমল ঘোষ, সারদাচরণ দাস, সুনীলচন্দ্র সান্যাল, শঙ্করদাস বাগচী। সাধারণ সম্পাদক - সুহৃদ রুদ্র। যুগ্ম-সম্পাদক - কালিদাস দে, অমল সরকার। কোষাধ্যক্ষ - কমলকৃষ্ণ সরকার। হিসাবপরীক্ষক - মদন গুপ্ত।


নিখরচায় দাওয়াই
কলিকাতা হইতে মাছের জন্য যে বরফ পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয় তাহা পাকিস্তান ‘হজম’ করিয়া ফেলিতেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


প্রথম পাতাঅতীতের তাঁরাতারাদের চোখেআমার শহরশিরোনামে শেষ তিরিশ • আনাচে-কানাচে

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.