ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের পোঁতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে হত সিআরপি জওয়ান, হুগলির সাহাগঞ্জের বাসিন্দা রাজু রাউতের পরিবারের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজুর স্ত্রীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা এবং তাঁর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা করেছেন। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ওই পরিবার।
রাজু রাউত।
|
রবিবার সকালে টহল দেওয়ার সময়ে ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় মাওবাদীদের পোঁতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে যে দুই সিআরপি জওয়ানের মৃত্যু হয়, তাঁদের এক জন রাজু রাউত। বাড়িতে দু’মাসের ছুটি কাটিয়ে গত জানুয়ারিতে তিনি কাজে যোগ দিতে ফিরে যান ছত্তীসগঢ়ে। রবিবার ছিল তাঁর মেয়ে রাগিণীর ন’বছরের জন্মদিন। সন্ধ্যায় সেই অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সিআরপি-র দিল্লির সদর কার্যালয় থেকে ফোনে আসে রাজুর মৃত্যুসংবাদ। সোমবার তাঁর কফিনবন্দি দেহ ছত্তীসগঢ় থেকে এসে পৌঁছয় রাত ৮টা নাগাদ। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়ির সামনেই তাঁকে গান স্যালুট দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, রচপাল সিংহ, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত প্রমুখ। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীই রাজুর বাবা বাবুলাল রাউতকে ফোনে সমবেদনা জানান। নিজেদের দুরবস্থার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান বছর বাষট্টির প্রৌঢ়। বাবুলাল সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ডানলপেরই শ্রমিক আবাসনে থাকেন। বাড়িতে তিনি, তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে, রাজুর স্ত্রী এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ডানলপ কারখানা থেকে তিনি তাঁর কয়েক বছরের বেতন এবং অবসরকালীন প্রাপ্য কিছুই পাননি বলে অভিযোগ বাবুলালের। পরিবারটা চলছিল রাজুর উপার্জনে। মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন একমাত্র উপার্জনকারীকে ছিনিয়ে নেওয়ায় পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওই সাহায্যের ঘোষণা করায় অন্ধকারের মধ্যেও একটু আলোর সন্ধান পেয়েছেন বাবুলাল। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তই এ দিন ওই ঘোষণার কথা বাবুলালকে জানিয়ে আসেন। বাবুলালের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। উনি আমাদের দুরবস্থার কথা জানেন। আগের দিনই সব বলেছি। বউমা চাকরি পাবে, ছেলেমেয়েটা পড়াশোনা করতে পারবে জেনে ভাল লাগছে।”
এ দিনও রাজুর স্ত্রী নীলম কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। বাড়ির সামনে আপন মনে ঘুরছিল রাগিণী এবং তার ভাই পাঁচ বছরের আরিয়ান। বাবা যে আর নেই, এ কথা তারা যেন এ দিনও মানতে পারছিল না।
|