ন’বছরের জন্মদিনের কেকটা আর কাটা হল না রাগিণীর।
রবিবার সন্ধ্যায় ছোট্ট মেয়েটার জন্মদিন পালনের তোড়জোড় চলছিল জোরকদমে। আসতে শুরু করেছিলেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, পড়শিরা। আলোয় ঝলমল করছিল গোটা ঘর। আচমকা ফোন। তার পরেই একরাশ অন্ধকার।
|
রাজু রাউত |
ওই সকালেই টহল দেওয়ার সময়ে ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় মাওবাদীদের পোঁতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে যে দুই সিআরপি জওয়ানের মৃত্যু হয়, তাঁদের এক জন রাগিণীর বাবা, হুগলির সাহাগঞ্জের বাসিন্দা রাজু রাউত (৩৩)। বাড়িতে দু’মাসের ছুটি কাটিয়ে গত জানুয়ারিতেই যিনি কাজে যোগ দিতে ফিরে যান ছত্তীসগঢ়ে। যাওয়ার আগে রাগিণীর জন্মদিন পালনের সব ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। আর সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সিআরপি-র দিল্লির সদর কার্যালয় থেকে ফোনে এল তাঁর মৃত্যুসংবাদ।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ডানলপ হিন্দি হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাগিণীকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। সে জানত, বাবার লেগেছে। চিকিৎসা চলছে। রাগিণীর কথায়, “বাবার লেগেছে। তাই বাবা আমাকে ফোন করতে পারেনি। বাবা বলেছে, পড়াশোনা ভাল করে করলে পরের বছর সাইকেল কিনে দেবে। তাই ভাল করে পড়াশোনা করছি।” রাতে রাজুর দেহ আনা হয় সাহাগঞ্জে। আর কান্না থামানো যাচ্ছিল না রাগিণীর।
সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানার শ্রমিক আবাসনেই থাকে রাজুর পরিবার। তাঁর বাবা বাবুলাল রাউত ওই কারখানার কর্মী ছিলেন। ২০১২-য় অবসর নেন। এখনও বকেয়া পাননি। বাড়িতে তিনি, তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে, রাজুর স্ত্রী এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবারটা চলছিল রাজুর উপার্জনে। মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন উপার্জনকারীকে ছিনিয়ে নেওয়ায় পরিবারটি দিশাহারা। ২০০৩-এর মার্চে সিআরপিতে যোগ দেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ রাজু। কাজ শুরু মধ্যপ্রদেশে। তার পরে মিজোরাম হয়ে দু’বছর ধরে কর্মরত ছিলেন ছত্তীসগঢ়ে। বাবুলালের কথায়, “এই তো এ বার ছুটিতে এসে রাজু আমার ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক করে গিয়েছিল। ও যে এ ভাবে অকালে চলে যাবে ভাবতে পারছি না! মেয়ের বিয়েও কী ভাবে দেব জানি না!”
রাজুর ছেলেবেলার সঙ্গী তারকেশ্বর সিংহ-ও সিআরপি জওয়ান। তিনিও ছুটিতে এসেছেন। সোমবার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরও ছত্তীসগঢ়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে, তাঁকে শেষ দেখার জন্য এ দিন আর যাননি। তারকেশ্বরের কথায়, ‘‘ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী এলাকায় সব সময়েই প্রাণ হাতে নিয়ে চলতে হয়। রাজু কোনও কিছুতেই ভয় পেত না। দেশের জন্য প্রাণ দিল।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিন ওই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান মন্ত্রী রচপাল সিংহ, বেচারাম মান্না এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। |