পুলিশের চোখে ধুলো ছুড়ে, ব্লেড চালিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে পালাল ছয় বন্দি। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়া সংশোধনাগার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ধরা পড়ে যায় দু’জন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, চুঁচুড়া আদালত থেকে এ দিন ২৫ জন বন্দিকে ফেরত নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সংশোধনাগারে। তামলিপাড়া ঘাটের কাছে আচমকাই বন্দিদের কয়েক জন গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করে। অতর্কিত হামলার মুখে পুলিশও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। সেই সুযোগে পালায় ওই ছ’জন। পিছনেই ছিল পুলিশের আরও একটি গাড়ি। সেটি এসে পড়ায় বাকি বন্দিরা গাড়ি থেকে নামতে পারেনি।
মারধর, ব্লেডের ঘায়ে জখম হন প্রশান্ত মণ্ডল, বাসুদেব হালদার, পলাশ মণ্ডল নামে তিন কনস্টেবল এবং জহর দাস নামে এক হাবিলদার। চার জনকেই পরে ভর্তি করা হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ধুলোর ঝাপটায় চোখের ক্ষতি হয়েছে কারও কারও। মাথায় চোটও আছে। পুলিশ জানায়, পলাতক বন্দিরা হল জিকো পাল, লক্ষ্মীকান্ত চক্রবর্তী ও তার দুই ছেলে অভিজিৎ-বিশ্বজিৎ, রাজা দাস এবং দীপঙ্কর কর্মকার। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, হুগলি জেলায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসাবে পরিচিত জিকো। বছর খানেক আগে পোলবায় এক মহিলাকে ধর্ষণ করে তাঁর স্বামীকে খুনের ঘটনার মামলা চলছে এই ছ’জনের বিরুদ্ধে। |
চুঁচুড়া হাসপাতালে জখম পুলিশকর্মী। —নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনার মিনিট দশেকের মধ্যেই সংশোধনাগার থেকে কিছুটা দূরত্বে মোগলটুলির কাছে জনতার হাতে ধরা পড়ে যায় লক্ষ্মীকান্ত ও তার ছেলে বিশ্বজিৎ। পরে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কী ভাবে বন্দিরা পালাল, কোথা থেকেই বা ব্লেড, ধুলো এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, পোলবার ওই মহিলার সঙ্গে জিকোর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। তার স্বামীকে খুন করার জন্য লক্ষ্মীকান্তকে ‘সুপারি’ দেয় জিকো। লক্ষ্মীকান্ত ও তার ছেলেরা পেশাদার খুনি বলেই জানতে পারে পুলিশ। অভিযোগ, ডাকাতির গল্প ফেঁদে জিকোর প্রেমিকার স্বামীকে খুন করা হয়। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত ছক না মেনেই ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে লক্ষ্মীকান্তরা। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “মামলায় চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই রায় জানানোর কথা। সে কারণেই বন্দিরা এতটা মরিয়া হয়ে পালানোর চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।”
তবে বন্দি পালানোর ঘটনায় কারা দফতরের দায় নেই বলেই জানাচ্ছেন কর্তারা। দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, সাধারণ ভাবে জেল থেকে আদালতে বন্দিদের যাতায়াত পুলিশি হেফাজতেই হয়। ফলে আদালতের আসা-যাওয়ার পথে কোনও বন্দি পালালে তার দায়িত্বই পুলিশ-প্রশাসনেরই।
কয়েক বছর আগেও চুঁচুড়া সংশোধনাগারের সামনে থেকে বন্দি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল।
সে বার কয়েক জন বন্দির আত্মীয় আদালত জেলের সামনে জড়ো হয়ে প্রিজন ভ্যানের উপরে হামলা চালায়। পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও। সে যাত্রায় অবশ্য বন্দিরা কেউ পালাতে পারেনি। |