হাতে ১৮০ ওভার চাই ৩২০ উইকেট আছে ৯
টেস্ট যে-ই জিতুক, শামিদের
এই খুনে বোলিং ভোলা কঠিন
ঘুম থেকে উঠে টিভি চালিয়ে স্কোরবোর্ডটা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিতই হয়ে পড়েছিলাম। ভারত দু’শো অল আউট, নিউজিল্যান্ডের তিনশো রানের লিড তখনই হয়ে গিয়েছে। দেখে মনে হয়েছিল, গেল ম্যাচটা! ওই মুহূর্তে আন্দাজ করতে পারিনি এতটা চমক অপেক্ষা করে থাকবে।
যে টিম প্রথম ইনিংসে পাঁচশো তুলল, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ডাবল সেঞ্চুরি করে চলে গেল, সেই একই টিম কি না দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ অল আউট! ডাবল সেঞ্চুরি দূরের ব্যাপার, কেউ হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত করতে পারল না! সত্যি বলছি, ভারতীয় বোলিংকে শেষ কবে এতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে দেখেছি, মনে করতে পারছি না।
ভাল বোলিং বলতে আমরা সাধারণত বুঝি, যে কোনও এক বা বড়জোর দু’জনের ভাল বোলিং। কেউ হয়তো একাই পাঁচ বা ছ’টা উইকেট নিয়ে চলে গেল। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ভারতের ইশান্ত শর্মা যেমন। ছ’টা নিল, কিন্তু রানটা আটকাল না। পাঁচশো উঠল। কেন? কারণ উল্টো দিক থেকে প্রেশারটা কেউ রেখে যেতে পারল না। ইডেন পার্ক শুধু নয়, অধিকাংশ ম্যাচেই এটা হয়ে থাকে।

শামি: ১২-১-৩৭-৩
আর ঠিক এ জায়গাতেই ‘ভাল’ থেকে ‘অসাধারণ’ হয়ে উঠল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বোলিং টিম। খেয়াল করলে দেখবেন, কোনও একজন বোলার পাঁচ বা ছ’উইকেট নেয়নি। তিনটে তিনটে করে ভাগাভাগি হয়েছে ইশান্ত আর শামির মধ্যে। জাহির দু’টো নিয়েছে। অর্থাৎ, উইকেটের দু’টো প্রান্ত থেকে চাপটা সব সময় বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উপর রেখে গিয়েছে বোলাররা। লুজ বল বলতে গেলে পড়েইনি। সবচেয়ে ভাল ব্যাপার, পিচকে ঠিকঠাক ‘রিড’ করতে পেরেছে ইশান্তরা। ইডেন পার্কের যা উইকেট, তার গতি বা বাউন্স কোনও ভাবে অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটের সঙ্গে তুলনায় আসে না। আমি তো বলব, স্পঞ্জি বাউন্স। উইকেট যে প্রবল ভাবে বোলার সহায়ক, বলা যাবে না। এখানে পেসারদের জন্য সুবিধে থাকলে ব্যাটসম্যানদের জন্যও আছে। এমন উইকেটে একশো রানে ঘরের টিমকে অলআউট করে দেওয়া প্রায় স্বপ্নের ব্যাপার! নিজের ক্রিকেটজীবনে ভাল ফাস্ট বোলিং আমিও খেলেছি। কিন্তু মাঝে মধ্যেই হয়েছে যে কোনও পেসার মারাত্মক বল করছে, কিন্তু তারই মধ্যে একটা স্পিনার এসে পড়ছে। যাকে খেলা মোটেও অসুবিধে হচ্ছে না। সেট হয়ে যাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আজ শামি, ইশান্ত বা জাহিরকেউ ম্যাকালামদের সেট হতে দেয়নি। ইডেন পার্কের উইকেটে প্রয়োজন ছিল ব্যাটসম্যানকে সামনে খেলানো। সেটা হয়েছে। অর্থাৎ, ঠিক লেংথ-টা স্পট করা গিয়েছে। আর দু’দিক থেকে চাপটা থাকায় মোটামুটি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল ব্যাটসম্যানরা। বোলিংয়ে পার্টনারশিপ শব্দটা আমরা ভারতীয় বোলিংয়ে প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। ইশান্ত-জাহিররা আজ সেটা আবার মনে পড়িয়ে দিল। ইশান্তের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হবে। এত দিন নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে ভাল বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল জাহিরের। অকল্যান্ড টেস্টের পর সেটা থাকবে ইশান্তের। আর আমি বলব, এই পারফরম্যান্সের পিছনে ইশান্তের অর্ধেক কৃতিত্ব প্রাপ্য। বাকি ধোনির। ও মার খেলে সবাই ধোনিকে গালাগাল করে। এখন ভাল করছে, ক্যাপ্টেনকে তাই প্রশংসাটা দিতেও হবে। আর এ দিন শুধু ভাল বোলিং নয়, ফিল্ডিংটাও অসম্ভব ভাল হয়েছে। প্রথম ইনিংসেও একটা সময় শামি খুব ভাল বল করছিল। কিন্তু কয়েকটা ক্যাচ পড়ে যাওয়ায় আর লাভ হয়নি। আর এ দিন? রবীন্দ্র জাডেজা যে ভাবে উড়ে গিয়ে থ্রো-য়ে ম্যাকালামকে রান আউট করল, বহু দিন মনে থাকবে।

ইশান্ত: ১০.২-৩-২৮-৩
কিন্তু এর পরেও ম্যাচটা ভারত জিতবে কি?
আমি কোনও ভবিষ্যদ্বাণীতে যাব না। তিনশো কুড়ি রান এখনও লাগবে। কাজটা কঠিন। কিন্তু হাতে আবার ন’টা উইকেট আছে। মানেব্যাটিংটা পুরো পড়ে আছে। যত দূর মনে পড়ছে, আজ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে চারশো তুলে কখনও জেতেনি ভারত। যদি জিততে পারে, ঐতিহাসিক ব্যাপার হবে। শুধু তাই নয়, ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটাও করে ফেলবে।
তবে আগেই বললাম, ও সব আলোচনায় ঢুকতে চাই না। শুধু বলব ম্যাচটা ক্লোজ হওয়ার ভাল সম্ভাবনা আছে। আর সেটা হলে শেষ পর্যন্ত অনেক কিছুই হতে পারে।
যার জন্য আবার রবিবার প্রথম এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জানি, কথাটা খুব ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু টেস্টের পরিস্থিতি যা, তাতে কথাটা আবার ব্যবহার না করে উপায় নেই।
• ধোনিরা ৪০৭ রান তুলে চলতি টেস্ট জিতলে এটাই হবে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে ভারতের টেস্ট জয়। রেকর্ড ’৭৬-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪০৬-৪ তুলে জয়।
• নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ৩৪৮-৫ তুলে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারিতে।
• নিজেদের মাঠে নিউজিল্যান্ড চতুর্থ ইনিংসে ৪৫১ (মার্চ, ২০০২) ও ৪৩১ (মার্চ, ২০০৮) করলেও দু’বারই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারে।
• নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে ইশান্ত শর্মার ৯-১৬২-ই কোনও ভারতীয় পেসারের সেরা বোলিং।
• ২০০৯-এ ওয়েলিংটনে জাহিরের ৭-১২২ এতদিন ছিল নিউজিল্যান্ডে কোনও ভারতীয় পেসারের সেরা বোলিং।
• নিউজিল্যান্ডে টেস্টে কোনও ভারতীয় বোলারের সেরা বোলিং এরাপল্লি প্রসন্নর, ১১-১৪০। অকল্যান্ডে ১৯৭৬-এ।

ছবি: এএফপি।

ভারত প্রথম ইনিংস ২০২
রোহিত বো বোল্ট ৭২
রাহানে ক টেলর বো সাউদি ২৬
ধোনি ক ওয়াটলিং বো ওয়াগনার ১০
জাডেজা ন.আ. ৩০
জাহির ক ওয়াটলিং বো ওয়াগনার ১৪
ইশান্ত ক বোল্ট বো সাউদি ০
শামি ক ফুলটন বো ওয়াগনার ২
অতিরিক্ত ১৭
মোট ২০২।
পতন: ১, ৩, ১০, ৫১, ১৩৮, ১৩৮, ১৬৭, ১৮৮, ১৮৯।
বোলিং: বোল্ট ১৭-২-৩৮-৩, সাউদি ১৯-৬-৩৮-৩, অ্যান্ডারসন ৫-০-২৯-০
ওয়াগনার ১১-০-৬৪-৪, সোধি ৬-০-১৩-০, উইলিয়ামসন ২-০-৯-০

নিউজিল্যান্ড ৫০৩ ও ১০৫
ফুলটন ক জাডেজা বো শামি ৫
রাদারফোর্ড এলবিডব্লিউ শামি ০
উইলিয়ামসন ক জাডেজা বো জাহির ৩
টেলর ক রাহানে বো জাহির ৪১
ব্রেন্ডন রান আউট ১
অ্যান্ডারসন বো শামি ২
ওয়াটলিং বো ইশান্ত ১১
সাউদি ক পূজারা বো জাডেজা ১৪
সোধি ক রোহিত বো ইশান্ত ০
ওয়াগনার ক জাডেজা বো ইশান্ত ১৪
বোল্ট ন.আ. ৭
অতিরিক্ত
মোট ১০৫।
পতন: ১, ৯, ১১, ১৫, ২৫, ৬৩, ৭৮, ৭৮, ৮০।
বোলিং: শামি ১২-১-৩৭-৩, জাহির ৯-২-২৩-২, ইশান্ত ১০.২-৩-২৮-৩
জাডেজা ৯-৪-১০-১, রোহিত ১-০-৩-০

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ৮৭-১
মুরলী ক ওয়াটলিং বো সাউদি ১৩
শিখর ব্যাটিং ৪৯
পূজারা ব্যাটিং ২২
অতিরিক্ত
মোট ৮৭-১।
পতন: ৩৬।
বোলিং: বোল্ট ৬-০-২৮-০, সাউদি ৫-০-১৮-১, ওয়াগনার ৬-২-১১-০
অ্যান্ডারসন ৩-০-৮-০, সোধি ৪-১-১৭-০, উইলিয়ামসন ১-০-৫-০

পুরনো খবর





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.