সবে বিড়িতে সুখটান দিয়েছেন এক সিভিক পুলিশকর্মী। পাশ থেকে তাঁর সহকর্মীর ফিসফিস, “অ্যাই, করছিস কী? এখানে সিসিটিভি রয়েছে কিন্তু।”
কথা শেষ হওয়ার আগেই মুখ থেকে বিড়ি সোজা জুতোর নীচে। ধোঁয়াটাও বেবাক গিলে ফেলেছেন। দম বন্ধ করে চাইছেন এ দিক-ও দিক।
চুলে জেল লাগিয়ে ঘুরঘুর করছিল কয়েকটি রোমিও। এক স্বেচ্ছাসেবক হাসতে হাসতেই বললেন, “সামলে বাবা, সিসিটিভি রয়েছে। যাই কর না কেন, সব ধরা পড়বে ওই ক্যামেরায়।” মুহূর্তের কোথায় যেন উবে গেল রোমিওর দল। |
প্রথমে তর্কাতর্কি। তার পরে জামার কলার ধরে হাত উঠবে-উঠবে। হঠাৎই কার যেন মনে পড়ে গেল-- ‘থাম, থাম, ক্যামেরা রয়েছে। চল, যা হবে বাইরে...।’ মুহূর্তে তুলকালাম থমকে ফ্রিজ শট। কারও কাউকেই সামলাতে হল না। আপনিই থেমে গেলে উটকো ঝামেলা।
২৮ জানুয়ারি থেকে ডোমকল বইমেলায় দিনভর ধরা পড়ছে এমনই সব টুকরো-টাকরা ছবি। ১ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হওয়ার পরে অনেকেই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। যাক, অদৃশ্য চোখের নজর তো আর নেই!
গত বছর থেকে সীমান্তবর্তী শহর ডোমকলে শুরু হয়েছে বইমেলা। এ বার পাঁচ দিনের মেলায় বাজেট ছিল দু’লক্ষ টাকা। বইয়ের স্টল ছিল ৫০টি। বই বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলায় ভিড় হলেও বই কিন্তু তেমন বিকোয়নি। এই রকম একটি মেলায় সিসিটিভি-র ব্যবস্থা করতে হল কেন? বইমেলা কমিটির সভাপতি অনুরাধা সেনগুপ্ত বলছেন, “নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা। খরচ একটু বেড়েছে বটে কিন্তু সিসিটিভি যে এত কাজের হতে পারে, তা আমাদেরও জানা ছিল না। ভাগ্যিস এসডিপিও পরামর্শটা দিয়েছিলেন।”
এসডিপিও (ডোমকল) অরিজিৎ সিংহ বলেন, “মূলত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা মেলা কর্তৃপক্ষকে সিসিটিভি-র ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। আসলে সিসিটিভি থাকলে একটা চাপ থাকে। অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। খেয়াল করে দেখুন, ডোমকল বইমেলায় কিন্তু কোনও গোলমাল হয়নি।”
বান্ধবীদের সঙ্গে বইমেলায় এসেছিলেন ডোমকল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শবনম রিয়া। তাঁর কথায়, “চারদিকে মেয়েদের সঙ্গে যা ঘটছে, তা শুনলে চমকে উঠতে হয়। এখানে বইমেলায় সিসিটিভি-র ব্যবস্থা হয়েছে শুনে আমাদের ভালই লেগেছিল। নিরাপত্তার দিকটা যত আঁটোসাঁটো হয়, ততই ভাল।” বইমেলা কমিটির সম্পাদক ধীমান দাশ বলছেন, “সিসিটিভি-র সৌজন্যে ভালয়-ভালয় মেলাটা মিটল। গত বার ছোটখাটো কিছু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এ বারের বইমেলায় কোনও ঝামেলা ছিল না।”
ঝামেলায় পড়েছেন শুধু সিসিটিভি-র দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। শনিবার, শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েই তাঁরা জানিয়ে দেন, কিছু ঝামেলা যেমন কমেছে, কিছু বেড়েও গিয়েছে। কী রকম? তাঁরা ব্যাখ্যা দেওয়ার আগেই এসে হাজির মেলা প্রাঙ্গণে টাঙানো এক দেওয়াল পত্রিকার সম্পাদক। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা— “আমাদের পত্রিকা কে বা কারা ছিঁড়ে দিয়েছে, একটু দেখান তো!”
কর্মীরা ভ্যাবাচাকা। সামলে ওঠার আগেই আর এক তরুণ এসে হাজির। তিনি কিন্তু চোর-ছ্যাঁচোড় খুঁজতে আসেননি। বিগলিত মুখে ছোট্ট একটি আবদার— “আমার এক বন্ধুকে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে এলাম। এখান থেকে ওকে কেমন দেখাচ্ছে, এক বার দেখাবেন প্লিজ?” |