বিশ্বের ক্রিকেট-রত্নকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন ভারতের। আজ, মঙ্গলবার। রাষ্ট্রপতি ভবনে সচিন তেন্ডুলকরের হাতে ভারতরত্ন পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
২৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শেষ হওয়ার দিনে যে ঘোষণা করা হয়েছিল, তা পূর্ণতা পাওয়ার দিন আগত। এই প্রথম কোনও ক্রীড়াবিদকে এই সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান দেওয়া হচ্ছে, যা এর আগে কখনও হয়নি। সরকারি ভাবে প্রথা বদলে সচিনকে এই সম্মান দিচ্ছে ভারত সরকার। মঙ্গলবার ভারতের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ভারতরত্নের ফলক, যা অতীতে পেয়েছেন ভারতের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে নিজেদের নাম লেখা বহু ব্যক্তি।
যদিও দেশের ক্রীড়ামহলে এই নিয়ে কম বিতর্ক নেই। অনেকের মত ছিল, সচিন তেন্ডুলকরকে দেশের এই সর্বোচ্চ সম্মান দিলে হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদকে অবহেলা করা হবে। এ দিন দেশের বিভিন্ন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, সেই বিতর্কের আঁচ এখনও রয়েছে। কিংবদন্তি অ্যাথলিট মিলখা সিংহ যেমন ফোনে বললেন, “ক্রীড়াবিদদের জন্য যখন ভারতরত্নের দরজা খোলাই হল, তখন প্রথম সম্মানটা ধ্যানচাঁদকেই দেওয়া উচিত ছিল। তাই বলে সচিন তেন্ডুলকরকে ভরতরত্ন দেওয়া নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ধ্যানচাঁদকে না দিয়ে সচিনকে এই সম্মান দেওয়া নিয়ে সামান্য হলেও দ্বিধা রয়েছে। এই ব্যাপারে সরকারের ভাবা উচিত ছিল।”
ভাইচুং ভুটিয়া অবশ্য এই বিতর্কে সে ভাবে ঢুকতে চান না। তাঁর বক্তব্য, “সচিনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ও প্রথম ভারতরত্ন পাচ্ছে, এটা দেশের ক্রীড়াজগতের কাছে বিশাল গর্বের ব্যাপার। ধ্যানচাঁদ না সচিন, জানি এই নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু আমি এই বিতর্কে ঢুকতে চাই না। কারণ, ভারতের হয়ে যেমন ধ্যানচাঁদের প্রচুর অবদান আছে, তেমন সচিনেরও আছে। এ বছর সচিনকে সম্মান জানানো হচ্ছে। আমার অনুরোধ, পরের বছর ধ্যানচাঁদকে দেওয়া হোক।”
প্রাক্তন টেনিস তারকা নরেশ কুমার আবার এই ব্যাপারে একটু বেশিই চাঁচাছোলা। তাঁর মতে, “সচিন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ভারতরত্ন পাচ্ছে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে গর্ববোধ করছি। তবে এই প্রসঙ্গে গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর একটা লেখার কথা বলতে ইচ্ছে করছে। অতীতে যাঁরা ভারতরত্ন পেয়েছেন, তাঁরা বেশির ভাগই হয় এ দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামী, নয় সঙ্গীত, বিজ্ঞান জগতের দিকপাল। এই প্রথম ভারতরত্নর গায়ে কেমন যেন বাণিজ্যিক ছোঁয়া লেগে গেল। ভারতরত্ন পাওয়ার পর দিনই হয়তো টিভিতে কোনও নরম পানীয় বা গাড়ির বিজ্ঞাপনে সচিনকে দেখা যাবে। যেখানে সে বলবে, অমুক নরম পানীয় খান বা তমুক গাড়িটা কিনুন। ভারতরত্নদের এটা ঠিক মানায় না। তবে সচিন ভারতরত্ন পাওয়ার সম্পূর্ণ যোগ্য।” কাকে আগে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত, এই নিয়ে সচিন ও ধ্যানচাঁদের মধ্যে যে তুলনা শুরু হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে নরেশ কুমার বলেন, “ধ্যানচাঁদ যে সময় হকি খেলতেন তখন হকিও সারা বিশ্বে ক্রিকেটের মতোই খুব কম দেশ খেলত। ধ্যানচাঁদের খেলা আমি একবারই দেখেছি। তাই বলতে পারব না তিনি ঠিক কতটা গ্রেট ছিলেন। সচিনকে কিন্তু ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে একাসনে বসানো হয়। কখনও বা ব্র্যাডম্যানেরও আগে।” |
প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, ১৪ নভেম্বর মুম্বইয়ে সচিনের বিদায়ী টেস্টের প্রথম দিনই এই
ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়। সেই দিনই দুপুরে ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে সচিনের জীবনপঞ্জী বা
বায়োডেটা চেয়ে পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ১৫ নভেম্বর রাহুল গাঁধী সচিনের খেলা দেখতে
ওয়াংখেড়েতে এসেছিলেন এবং সে দিনই যাবতীয় নিয়ম মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে সচিনকে
ভারতরত্ন দেওয়ার সুপারিশ পাঠিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। |
“ক্রীড়াবিদদের জন্য যখন ভারতরত্নের
দরজা খোলাই হল, তখন প্রথম সম্মানটা
ধ্যানচাঁদকেই দেওয়া উচিত ছিল।” —মিলখা সিংহ |
“ভারতের হয়ে যেমন ধ্যানচাঁদের প্রচুর অবদান আছে,
তেমন সচিনেরও আছে। এ বছর সচিনকে সম্মান জানানো হচ্ছে।
আমার অনুরোধ, পরের বছর ধ্যানচাঁদকে দেওয়া হোক।” —ভাইচুং ভুটিয়া |
“ধ্যানচাঁদের খেলা একবারই দেখেছি।
জানি না তিনি ঠিক কতটা গ্রেট ছিলেন।
সচিনকে কিন্তু ডনের সঙ্গে একাসনে বসানো হয়।
কখনও বা আগে।” —নরেশ কুমার |
|
|
ভারতীয় দলের প্রাক্তন হকি অধিনায়ক ধনরাজ পিল্লাই সচিনের ভারতরত্ন পাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাইলেন না। ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই নিয়ে একটা কথাও বলতে চাই না আমি। এই ব্যাপারে আমার কিছু বলা বারণ আছে।”
জানা যাচ্ছে, সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। তথ্য অধিকার আইনে এক অনুসন্ধানের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ কথা জানিয়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেয়নি তো? জনৈক ক্রীড়াপ্রেমী হেমন্ত দুবে-র অনুসন্ধানের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, ১৪ নভেম্বর মুম্বইয়ে সচিনের বিদায়ী টেস্টের প্রথম দিনই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়। সেই দিনই দুপুরে ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে সচিনের জীবনপঞ্জী বা বায়োডেটা চেয়ে পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সে দিন বিকেলেই সচিনের বায়োডেটা পাঠিয়ে দেয় ক্রীড়ামন্ত্রক।
১৫ নভেম্বর রাহুল গাঁধী সচিনের খেলা দেখতে ওয়াংখেড়েতে এসেছিলেন এবং সে দিনই যাবতীয় নিয়ম মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার সুপারিশ পাঠিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ১৬ নভেম্বর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ১৭ নভেম্বর সচিনকে পাঠানো হয় সেই চিঠি। ১৪ পাতার নথি-সহ এই তথ্য দুবেকে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। |