পাচারের জন্য আনা দুই ট্রাক ভর্তি কচ্ছপ আটক করল পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। রবিবার রাত আড়াইটা নাগাদ বনগাঁর কালুপুর এলাকায় যশোহর রোড থেকে কচ্ছপগুলি উদ্ধার হয়। পুলিশের জানিয়েছে, আটক করা পাঁচ হাজার কচ্ছপের বাজারমূল্য আনুমানিক কুড়ি লক্ষ টাকা। দুই ট্রাকচালক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বনগাঁ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ট্রাকে করে কচ্ছপ পাচার হচ্ছে বলে খবর পায় এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। হাবরার চোংদামোড় থেকে কচ্ছপ ভর্তি দুই ট্রাককে তাড়া করে বনগাঁ থানার পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের অফিসাররা। কিন্তু ট্রাকচালকেরা ট্রাক না থামিয়ে উল্টে পুলিশের গাড়িকে ধাক্কা মারতে থাকে। ধাক্কার চোটে পুলিশের দু’টি গাড়ির ক্ষতি হলেও না দমে ট্রাকদু’টিকে সমানে তাড়া করতে থাকে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত কালুপুরের কাছে ট্রাক দু’টিকে আটকাতে সক্ষম হয় তারা। উত্তর ২৪ পরগনা ডিএসপি ব্রাঞ্চের ডিএসপি মির সহিদুল আলি বলেন, “অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনম থেকে কচ্ছপগুলি আনা হয়েছিল। বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে সেগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চলতি মরসুমে এত বড় পরিমাণে কচ্ছপ উদ্ধার এই প্রথম। কচ্ছপ পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।” বনগাঁ থানার আইসি চন্দ্রশেখর দাস বলেন, প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। কচ্ছপ বিক্রি ও পাচারের একটি চক্র এখানে বেশ সক্রিয়। তবে তাদের ধরা যায়নি। ধৃতদের জেরা করে ওই চক্রের পাণ্ডাদের খোঁজ চলছে।” সোমবার বন দফতরের আধিকারিকেরা কচ্ছপগুলি নিয়ে যান। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া কচ্ছপগুলি সফ্ট শেলড টারটেল, যা গাঙ্গেয় উপত্যকায় দেখা যায়। ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কিলো পর্যন্ত। জেলার মুখ্য বনাধিকারিক বিকাশরঞ্জন মল্লিক বলেন, “কচ্ছপগুলি যে পরিবেশে অভ্যস্ত, সেরকম পরিবেশে ওদের জলে ছেড়ে দেওয়া হবে।” |
উদ্ধার হওয়া কচ্ছপ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ভাবে কচ্ছপগুলি পাচার করা হচ্ছিল তা অভিনব। ট্রাকে সারি সারি সাজানো রয়েছে একের পর এক ক্রেট। তার ভিতরে চটের বস্তা। বস্তার মুখ সুতো দিয়ে বাঁধা। বস্তা খুূললেই সামুদ্রিক মাছ। আর তার নীচে রয়েছে নানা আকারের কচ্ছপ। সাধারণ ভাবে কারও বোঝারই উপায় নেই যে বস্তায় মাছের নীচে ওই ভাবে কচ্ছপ রয়েছে। পুলিশের দাবি, ভিন রাজ্য থেকে রোজ রাতে ট্রাকে করে এ ভাবেই বনগাঁর বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকছে হাজার হাজার কচ্ছপ। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বাজারগুলিতে। প্রকাশ্যে বিক্রিও হচ্ছে। কাঁটাতার পেরিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশেও। বেশ কয়েক বছর ধরে শীতের মরসুমে এই ব্যবসার রমরমা বেড়েছে বনগাঁয়।
পুলিশ, বন দফতর ও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে প্রচুর কচ্ছপ উদ্ধার করলেও পাচার বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ জানায়, কচ্ছপ পাচারের মূল ডেরা গাইঘাটার চাঁদপাড়ায়। ভিন রাজ্য থেকে আসা কচ্ছপগুলি প্রথমে চাঁদপাড়ায় নামানো হয়। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকায় তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতার বাগুইআটি ও উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা, চাঁদপাড়া ও অশোকনগরে ওই চক্র সক্রিয়। তবে মাছভর্তি বস্তার ভিতরে কচ্ছপ নিয়ে আসাটা পাচারকারীদের নতুন কৌশল বলে পুলিশের দাবি। রাস্তায় পুলিশ আটকালে মাছের গাড়ি বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল পাচারকারীরা। এমনকী বস্তা খুলে পুলিশকে মাছও দেখায় তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
হাবরা, মছলন্দপুর, চারঘাট, হেলেঞ্চা, স্বরূপনগর, অশোকনগর, বনগাঁ, গাইঘাটা, গোবরডাঙা, বারাসতের বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যেই কচ্ছপ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। বিক্রেতারাও জানান, কচ্ছপের মাংসের চাহিদা থাকায় বিক্রিতে লাভও বেশি। বাজারে একেকটি কচ্ছপ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৬০০ গ্রাম থেকে দেড় কিলো ওজনের সুন্দরী প্রজাতির কচ্ছপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি জেলার বাজারগুলিতে। জেলা বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কচ্ছপ বিক্রি রুখতে অতীতে লিফলেট করে প্রচার করা হয়েছে। বাজার কমিটিগুলিকেও চিঠি দিয়ে কচ্ছপ বিক্রি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সচেতনতা বাড়েনি। |