সম্পাদকীয় ১...
এই বার সতর্ক হউন
ঘুরাম রাজনকে দেখিয়া ভরসা জাগিয়াছিল, তিনি যুক্তিবাদী এবং স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। বস্তুত, গোটা বাজার যখন অপেক্ষায় ছিল যে তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হইয়াই সুদের হার কমাইবেন, সেই প্রত্যাশাকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করিতে রাজনের বাধে নাই। আশ্চর্যের, প্রত্যাশা না মিটিলেও বাজার কিন্তু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় নাই। অন্য কোনও গভর্নরের ক্ষেত্রে বাজার এতখানি বুঝদার হইত কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। অনুমান করা চলে, রাজনের সিদ্ধান্তগ্রহণের পদ্ধতির স্বচ্ছতাই বাজারকে আশ্বস্ত করিয়াছিল। তাঁহার যুক্তির প্রবাহটি স্পষ্ট ছিল ব্যাঙ্কের কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং যত ক্ষণ না মূল্যস্ফীতির হার সহনসীমায় ফিরিতেছে, তত ক্ষণ কঠোর আর্থিক নীতিই চলিবে। নীতি ও কাজের সাযুজ্যই রাজনের অভিজ্ঞান ছিল। শকুন্তলার ন্যায় তিনিও সেই অভিজ্ঞানটি হারাইয়া ফেলিলেন কি না, এই প্রশ্নটি অনেককে ভাবাইতে পারে। জানুয়ারির শেষ প্রান্তে তাঁহার সুদের হার বাড়াইবার সিদ্ধান্তটিই চিন্তার কারণ। সুদের হার সামান্য বাড়িয়াছে বলিয়া নহে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি যে কেবল চড়া সুদের চৌকাঠেই আটকাইয়া নাই, এই কথাটি পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম ভিন্ন সকলেই স্বীকার করিবেন। চিন্তার কারণ নীতির সঙ্গে সিদ্ধান্তের সামঞ্জস্য রক্ষায় রাজনের (আপাত) ব্যর্থতা।
ব্যর্থতাটি ‘আপাত’ কেন, সেই প্রশ্নে যাইবার পূর্বে ব্যর্থতার চরিত্র নির্ণয় করা প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতির হার সহনসীমায় ফিরিয়া আসে নাই। কাজেই, সুদের হার চড়াইয়া রাখিবার নীতির দিনও ফুরাইয়াছে বলা চলে না। কিন্তু, গত ডিসেম্বরে রাজন যখন সুদের হার অপরিবর্তিত রাখিয়াছিলেন, তাহার সহিত আজিকার পরিস্থিতির ফারাক কোথায়? পাইকারি মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতি খানিক হইয়াছে বটে, কিন্তু তাহা যে মূলত চাহিদা বৃদ্ধির কারণে, সেই কথা রাজনও মানিবেন। ভোগ্যপণ্য সূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে যে জায়গায় ছিল, এখনও কম-বেশি সেখানেই আছে। তাহা হইলে, যে পরিস্থিতিতে রাজন ডিসেম্বরে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখিলেন, জানুয়ারিতে সেই পরিস্থিতিই তাঁহাকে সুদ বাড়াইবার পথে হাঁটাইল কেন? তাহা হইলে বলিতে হয়, রাজন যে কোনও একটি পরিস্থিতিতে যুক্তিপরম্পরা বিসর্জন দিয়াছিলেন। না কি, সিদ্ধান্ত দুইটি আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী হইলেও তাহাদের মধ্যে সাযুজ্য আছে? কোনও একটি বিশেষ চিন্তার সূত্র রক্ষা করিতেছে এই দুইটি সিদ্ধান্ত?
দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি যে নিতান্তই অলীক, এমন দাবি করিবার মতো ভাবমূর্তি, অন্তত এখনও, রঘুরাম রাজনের নহে। কেহ অনুমান করিতে পারেন, ডিসেম্বরে তিনি জল মাপিতেছিলেন। সুদের হার (অনস্বীকার্য ভাবে, বেশ চড়া হারেই) অপরিবর্তিত রাখিলে মূল্যস্ফীতির উপর তাহার কী প্রভাব পড়ে, তাহা দেখা প্রয়োজন ছিল বইকী। স্পষ্টতই, মূল্যস্ফীতি কমে নাই, বরং কিছু ক্ষেত্রে বাড়িয়াছে। কাজেই, বর্তমান সিদ্ধান্তটি তাঁহার ঘোষিত লক্ষ্যের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। উরজিৎ পটেল কমিটির সুপারিশ তিনি গ্রহণ করিবেন কি না, ব্যাঙ্কের নীতি সত্যই বদলাইবে কি না, এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখনও অস্পষ্ট। কিন্তু মূল্যস্ফীতির যে হার এখনও চলিতেছে, বিশেষত ভোগ্যপণ্য সূচকের নিরিখে, তাহা কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের চোখেই স্বাভাবিক ঠেকিবে না। কাজেই, ব্যাঙ্ক নিজের পথেই আছে। তবে, রাজনেরও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, আর্থিক নীতির কঠোরতারও সীমা রাখিতে হয়। দ্বিতীয়ত, যুক্তিপরম্পরা বিষয়ে এক বার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইলে তাহা আর ফিরিয়া পাওয়া মুশকিল। আর্থিক বৃদ্ধিকে ফের সম্মানজনক হারে লইয়া যাইবার দায়িত্বটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের, কিন্তু ব্যাঙ্কও নিজের সামর্থ্যের মধ্যেই সেই কাজে সহায়তা করুক। এবং, রাজন যুক্তির পথে অবিচলিত থাকুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.