নিয়তির আজব পরিহাস!
এ ছাড়া আর কী-ই বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে এই অকাল মৃত্যুর? শনিবার সকালে অভিনেতা ফিলিপ সেমোর হফম্যানের মৃত্যুর খবরকে ভুয়ো বলে উড়িয়েছিলেন তাঁর মুখপাত্র। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে সেই খবরই হয়ে গেল ‘ব্রেকিং নিউজ’, কঠিন বাস্তব। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের আবাসনে মিলল এই অস্কারজয়ী অভিনেতার নিথর দেহ। হাতের মুঠোয় সিরিঞ্জ। সংবাদমাধ্যমের দাবি, মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনেই মৃত্যু হয়েছে ফিলিপের।
এমনটা যে অসম্ভব নয়, সেটা অবশ্য অনেকেই মানছেন। আসলে, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে নাটক নিয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই মদ এবং মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন ফিলিপ। তবে সেই নেশা কাটিয়েও উঠেছিলেন। এক মার্কিন দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন, তার পর থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর মাদক ছোঁননি। বন্ধুরাও তা-ই জানতেন। কিন্তু গত মে-তে ফের হেরোইন নিতে শুরু করেন তিনি। সপ্তাহখানেক নেশা করার পর নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হন। ফের কাটিয়ে ওঠেন নেশা। কিন্তু তার পর কী হল? আবার কি ফিলিপ মাদক সেবন শুরু করেছিলেন? উত্তর অস্পষ্ট। |
শুধু যেটা জানা, তা হল সম্প্রতি পনেরো বছরের বান্ধবী মিমি ও’ডনেলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল ফিলিপের। নিউ ইয়র্ক পুলিশ সূত্রেও তেমনটাই জানা গিয়েছে। তবে সেই কারণেই ফিলিপ আবার নেশার দিকে ঝুঁকেছিলেন কি না, তা জানা নেই। কিন্তু পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির এই প্রাণোচ্ছল মানুষটা যে এই কারণে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারেন, তা যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না প্রতিবেশীদের। সব সময় সাধারণ মানুষের মতোই থাকতেন। আচারে-ব্যবহারে কোথাও ফুটে উঠত না তারকাসুলভ হাবভাব। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিব্যি ছিলেন এই চলচ্চিত্র এবং নাট্যতারকা। হাসিখুশি। নিজের চেহারা-ছবি নিয়ে উদাসীন। সব সময়ই কপালের উপর পড়ে থাকত না-আঁচড়ানো একগুচ্ছ চুল। দাড়িও কাটতেন না মাঝে মধ্যেই।
কিন্তু তা বলে পেশাদার জীবনে মোটেও খামখেয়ালি ছিলেন না। মঞ্চে এবং রুপোলি পর্দায় দুটোতেই সমান সাবলীল ছিলেন ফিলিপ। হলিউড অবশ্য প্রথম দিকে এই অসামান্য অভিনেতার জন্য পার্শ্বচরিত্রই বরাদ্দ রেখেছিল। কিন্তু তাতেই কিস্তিমাত। ১৯৯২ সালে ‘সেন্ট অব আ ওম্যান’ ছবিতে বখে যাওয়া ছাত্রের চরিত্রে দর্শকের চোখ টানেন। তার পর ‘টুইস্টার’, ‘বুগি নাইটস’, ‘দা বিগ লেবওস্কি’ প্রভৃতি ছবিতে নজরকাড়া অভিনয়। এমনকী, ‘ম্যাগনোলিয়া’ এবং ‘মিশন ইমপসিবল থ্রি’ তে টম ক্রুজের পাশে অভিনয় করেও যথেষ্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ফিলিপ। কিন্তু শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অস্কার আসে ‘কাপোটে’ ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে। সময়টা ২০০৬ সাল। তার পরও তিন বার অস্কারে শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেতার বিভাগে মনোনয়ন পান তিনি। এর মধ্যে গত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে ‘দা মাস্টার’ ছবির জন্য পুরস্কার না এলেও মেলে অফুরন্ত প্রশংসা। |
ঘাতক মাদক |
মেরিলিন মনরো |
জিমি হেনড্রিক্স |
জিম মরিসন |
এলভিস প্রেসলি |
কার্ট কোবেইন |
মাইকেল জ্যাকসন |
হুইটনি হিউস্টন |
অ্যামি ওয়াইনহাউস |
|
এর পাশাপাশি নাটকেও কাজ করে গিয়েছেন ফিলিপ। সেখানেও মিলেছে সম্মান, এসেছে পুরস্কার। কিন্তু কাজের ভারে কখনও ক্লান্তও দেখায়নি তাঁকে। তবে পেশাদার জীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনকেও সমান গুরুত্ব দিতেন। ছেলেমেয়েদের জন্য দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অনীহা ছিল না তাঁর।
রবিবার খালি কথার খেলাপ করে ছেলেমেয়েদের আনতে গেলেন না। তখনই সন্দেহ হয় মিমির। বন্ধু এবং নাট্যকার ডেভিড বার ক্যাটজকে সে কথা জানালে, তিনিই তড়িঘড়ি পৌঁছন ফিলিপের আবাসনে। বাকিটা সবার জানা।
শুধু মিলল না একটা ধাঁধার উত্তর। বারবার মারণ নেশা থেকে বেরিয়ে এসেও কেন তার দিকেই ফিরলেন ফিলিপ? হলিউডে অবশ্য এমন উদাহরণ অজস্র। কিন্তু সব অর্থেই ছকভাঙা ফিলিপ এ ব্যাপারে কেন পূর্বসুরিদেরই অনুসরণ করলেন, তা আর জানার উপায় নেই। |