সেনা জওয়ানের ভেক ধরে অস্ত্র-মাদক পাচার করতে গেলে আদবকায়দা হওয়া চাই চোস্ত। সেই সব আদবকায়দায় সড়গড় হওয়ার মতলবে নাগাল্যান্ডে একটি জঙ্গি সংগঠনের (এনএসসিএন-আইএম) ক্যাম্পে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার ফুলবাড়িতে ধরা পড়া নয় দুষ্কৃতীকে জেরা করে এমনই তথ্য জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় দুষ্কৃতীরা তাদের জানিয়েছে, জঙ্গি গোষ্ঠীর ‘লিঙ্কম্যান’ বাহারুদ্দিন তাদের আশ্বাস দিয়েছিল, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ বাদেও কাজ হাসিল হলে তাদের মাথা পিছু ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার ফুলবাড়িতে ৩১-ডি জাতীয় সড়কে ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। একটি জিপসি ও একটি ট্রাক থেকে উদ্ধার হয় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৯ টন মণিপুরী গাঁজা। পাওয়া যায় একটি ৯ মিমি সাব-মেশিনগান, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল, চারটি নাইন এমএম পিস্তল, দু’টি এয়ার রাইফেল-সহ ১৫৮ রাউন্ড তাজা কার্তুজ। বাজেয়াপ্ত করা হয় সেনাবাহিনীর নকল নথি, ব্যাজ, পরিচয়পত্রও। |
সেনার পোশাকে ধৃত পাচারকারীরা। —ফাইল চিত্র। |
পুলিশের দাবি, ধৃতদের মধ্যে আজমগড়ের বাসিন্দা পাপ্পু গিরি দলের নেতা। সে উত্তরপ্রদেশে নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত বলে পুলিশের নথিতে রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে পাপ্পু দলবল নিয়ে ডিমাপুর পৌঁছয়। সেখানেই এক পাহাড়ি গ্রামে এক মাস ধরে তাদের ‘প্রশিক্ষণ’ চলে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন শুক্রবার বলেন, “প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকা লিঙ্কম্যানের নাম জানা গিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে অস্ত্র ও মাদক পাচারে চক্রটি সক্রিয় বলেও জেরায় বোঝা গিয়েছে। সে সব রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।” তিনি জানান, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নদিয়ায় ধৃত কার্তিক কুণ্ডুকে শিলিগুড়ি আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের (ডিআরআই) উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শীর্ষ কর্তা জানান, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড থেকে তাঁদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নাগাল্যান্ডে এনএসসিএন-আইএম সংগঠনটির ‘নাগা আর্মি’ বলে পরিচিত সামরিক শাখাকে পাপ্পুদের প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়। ওদের মদতেই মণিপুরের উখরুল জেলা থেকে গাঁজা নেওয়া হয় বলে পুলিশের সন্দেহ।
পরে সেগুলিকে ডিমাপুরের শিবিরে এনে মেশিনে ২০ কেজির প্যাকেট তৈরি করে পাপ্পুদের দিয়ে পাঠানো হয়। তা ছাড়া, উদ্ধার হওয়া সাব মেশিনগান-সহ সমস্ত অস্ত্র কোথায় পাচার করা হচ্ছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্তারা।
২০০৯-এ প্রথম বার কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর মহম্মদ বাহারুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির নাম জানতে পারে। ওই বছর ১১ জুলাই অসমে সেনার সাহায্যে ডিআরআই অফিসারেরা মেঘালয়ের জোরাবাট থেকে একটি বড় ট্রাক-সহ সাত জনকে ধরেন। সকলেই ‘ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ানের’ (আইআরবি) পোশাক পরেছিল। ট্রাকে ধানের আড়ালে রাখা ৩৩০ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়। মিলেছিল আগ্নেয়াস্ত্রও।
সে বার ধৃতদের জেরা করেই বাহারুদ্দিনের নাম পাওয়া গিয়েছিল। এই বাহারুদ্দিনই পাপ্পুদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। সে দীর্ঘ দিন ধরে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে অস্ত্র ও মাদক পাচারে জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। তবে এই নামটি আসল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, “বাহারুদ্দিনের নামটি আমরাও জেনেছি। আপাতত এর বেশি বলা যাচ্ছে না।” |