জাতীয় সড়কে ছুটছিল সাদা জিপসি। সামনে সেনাবাহিনীর ‘স্টিকার’। চালকের পাশে যিনি বসেছিলেন তাঁর পরনে সেনা অফিসারের উর্দি। পিছনে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে চার জওয়ান। জিপসির পিছনেই সাদা রঙের ট্রাক। ত্রিপলে ঢাকা। সামনের আসনেও বসে সেনা জওয়ানের উর্দিধারী দু’জন। দেখলে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও ট্রাক বলেই মনে হবে। বৃহস্পতিবার ভোরে শিলিগুড়ির এনজেপি থানার ফুলবাড়িতে ৩১ ডি জাতীয় সড়কে গাড়ি দু’টিকে হাত দেখিয়ে পুলিশ থামতে বললে গাড়ি দু’টি প্রথমে গতি কমালেও পরক্ষণেই ঝড়ের গতিতে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কমব্যাট ফোর্সের জওয়ানেরা ঝাঁপিয়ে গাড়ি দু’টিতে উঠে পড়েন। কেড়ে নেন অস্ত্রশস্ত্র। দু’টি গাড়িতে মিলেছে ৯ টন মণিপুরী গাঁজা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। মিলেছে জার্মানিতে তৈরি একটি ৯ মিমি সাব মেশিনগান (এমপি-৫), একটি একে-৪৭, চারটি নাইন এমএম পিস্তল, ২টি এয়ার রাইফেল-সহ ১৫৮ রাউন্ড তাজা কার্তুজ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেনার নকল নথিপত্র, ব্যাজ, পরিচয়পত্রও। |
ধৃত পাচারকারীরা। জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে। ছবি: সন্দীপ পাল। |
পুলিশি সূত্রে খবর, ওই দু’টি গাড়িতে যে অস্ত্র ও মাদক পাচার করা হচ্ছিল, সে খবর প্রথম দেয় কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর। সেই মতো এ দিন শিলিগুড়ি পুলিশ কমব্যাট ফোর্স নিয়ে অভিযান চালায়। গ্রেফতার করা হয়েছে সেনার বেশে থাকা ৯ জনকেই। মেঘালয়ের ডিমাপুর থেকে ওই অস্ত্র নদিয়ার ধানতলা, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের ধারণা, ধৃতেরা অস্ত্র ও মাদকের বড় মাপের চোরাকারবারী দলের সঙ্গে যুক্ত। তবে এমপি-৫-এর মতো সাব মেশিনগান কী করে তারা পেল, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও সেনাবাহিনীও খোঁজ নিচ্ছে। সেনাবাহিনী, কমান্ডো, কিছু রাজ্যের পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী ছাড়া কারও ওই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নেই। ২৬/১১-র হামলায় জঙ্গিরা এম ৫ সাব মেশিনগান ব্যবহার করেছিল। অস্ত্রটি সেনাবাহিনীর হেফাজত থেকে চুরি করা হয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। |
ফুলবাড়িতে অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারিদের ধরার পরে বৃহস্পতিবার
সেই অস্ত্রগুলি
দেখাচ্ছেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার
জগ মোহন।
বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “ধৃতেরা অস্ত্র ও মাদকের বড় মাপের পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত। তারা আগেও কলকাতা ও বারানসীতে গাঁজা পাচার করেছে। এ বারও খড়্গপুরের দিকেই গাড়িটি যাচ্ছিল। নদিয়ার এক জনের নামও ধৃতদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে।” নদিয়ার এসপি সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “ধানতলার কার্তিক কুণ্ডু এই চোরাকারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ধৃতদের ৭ জন উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা। আর একজনের বাড়ি বিহারের সিওয়ানে। অন্য জনের মধ্যপ্রদেশের কোটমারে।
ধৃতদের জলপাইগুড়ি কোর্টে তোলা হলে ৫ জনকে পুলিশ হাজতে পাঠান বিচারক। বাকি ৪ জনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। |