আলু কেনা নিয়ে বহু লক্ষ টাকা নয়ছয়ের মামলায় অভিযুক্ত জলপাইগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক গোবিন্দ রায়কে ফের দলে ফিরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিল ফরওয়ার্ড ব্লক। শুক্রবার জলপাইগুড়ি রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত বিশেষ জেলা সম্মেলনে নব গঠিত জেলা কমিটির সহ সভাপতি করা হয়েছে গোবিন্দবাবুকে। দল সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি ও লাগোয়া কোচবিহারে সংগঠন চাঙ্গা করতেই অভিজ্ঞ গোবিন্দবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওই মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পরে ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে গোবিন্দবাবু আত্মগোপন করেন। কিছু দিনের মাথায় স্বেচ্ছায় দলের জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক পদ থেকে সরে যান। পরে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হন তিনি। গত বছর পুজোর আগে গোবিন্দবাবু জেল থেকে ছাড়া পান। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরে দলে ফিরবেন। সেই সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জেলে থাকার সুবাদে সেখানে কী ধরনের অব্যবস্থা রয়েছে, তা নিয়ে বই লেখার কথাও ঘোষণা করেন। |
ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্মেলনের পথে। জলপাইগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র। |
তাই গোবিন্দবাবু দলে ফেরায় ফরওয়ার্ড ব্লকের একাংশই নানা প্রশ্ন তুলেছে। তবে গোবিন্দবাবু বলেন, “আমাকে যে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে, সেটা আদালতে প্রমাণিত হবে। তাই ফের দল দায়িত্ব দিতে চাওয়া সাদরে গ্রহণ করেছি।” উপরন্তু তাঁর প্রশ্ন, “কোন রাজনৈতিক নেতার নামে মামলা নেই?”
ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রের খবর, গোবিন্দবাবুকে নেতাদের একাংশ আড়াল করতে চাইছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই দলের অন্দরে অভিযোগ রয়েছে। তা নিয়ে মত বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা (যিনি গোবিন্দ রায়ের স্থলাবিষিক্ত হন), সভাপতি অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ৭ জন নেতা দলত্যাগ করেন। প্রবালবাবু ছয় অনুগামীদের নিয়ে ৫ ডিসেম্বর তৃণমূলে যোগ দেন। ৭ ডিসেম্বর দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড নামিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন প্রবালবাবু গোবিন্দবাবুকে ফরওয়ার্ড ব্লকে ফেরানোর প্রসঙ্গে বলেন, “ওই একটি ব্যক্তির জন্য ওই দলের সম্মান যে কতটা তলানিতে ঠেকেছে, সেটা রাজ্য নেতারা শুনতে চাননি। এখন টের পাবেন। ওঁরা কতটা দুর্নীতি পরায়ণ সেটা সকলেই ফের বুঝবেন।” সিপিএম অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য বলেন, “কে দলে থাকবে, সেটা ওদের বিষয়। তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।”
এদিন বিশেষ সম্মেলনে ভিড় উপচে পড়ে রবীন্দ্র ভবন চত্বরে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লক, ময়নাগুড়ি ও রাজগঞ্জ থেকে ছোটবড় গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন দলের নেতা ও সমর্থকরা। ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহ এবং দলের জেলা পর্যবেক্ষক পরেশ অধিকারী গোবিন্দবাবুকে পাশে বসিয়ে বলেন, “আমরা মনে করি গোবিন্দবাবু যে নির্দোষ তা আদালতে প্রমাণ হবে। যাঁরা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁরা স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী।” |