অ্যালুমিনিয়ামের বাসন তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটল শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি এলাকায়। তারপরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তালা লাগিয়ে দেন কারখানায়। তাঁদের দাবি, লোকালয়ে এই কারখানা চলতে দেওয়া যাবে না। তাঁদের দাবিকে সমর্থন করেছেন এলাকার দুই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে ফুলবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ধনতলা এলাকায় বিস্ফোরণের ফলে কারখানার ছাদে একাধিক জায়গায় ফুটো হয়ে যায়। আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও গিয়ে পড়ে বিস্ফোরকের টুকরো। সেই সঙ্গে বিকট আওয়াজে মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন বাড়ি থেকে বের হয়ে দূরে খোলা মাঠে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। |
উদ্ধার হওয়া শেল পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
সারাদিনই এলাকার বাসিন্দাদের চোখে মুখে আতঙ্কের রেশ ছিল। সেনাবাহিনীর পরিত্ত্যক্ত শেল জাতীয় কিছু আগুনে পোড়াতে গিয়েই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় যান নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশ। তাঁরা তিন বস্তা ওই ‘শেল’ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “বিষয়টির তদন্ত হচ্ছে। বিস্ফোরকটি কী জাতীয়, তা-ও পরীক্ষা করানো হবে। অনেক সময় এ ধরনের কারখানায় চুল্লিতে ভুল করে দাহ্য জিনিস পড়ে গেলে বিস্ফোরণ হতে পারে। সে রকমই কিছু হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ওই কারখানার মালিক উজ্জ্বল ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি বাইরে থাকায় কী ঘটেছে, তা জানেন না। তবে বিভিন্ন ভাঙাচোরা জিনিসপত্রের দোকান ও সেনাবাহিনীর বা বিএসএফের কাছ থেকে ফেলে দেওয়া জিনিস নিলামে কেনা হয়। তিনি বলেন, “কোনও দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক কিছু চলে আসতে পারে। তবে তা অনিচ্ছাকৃত। পুরো ব্যবসা আইন মেনেই করা হয়। তার কাগজপত্রও আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে তা পেশ করতে পারি।”
পূর্ব ধনতলার পঞ্চায়েত সদস্য অজিত সরকার বলেন, “এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানা চলছে। মোটর চলার বীভৎস আওয়াজে এলাকায় টেকা দায়। অনেকবার বলা হলেও মালিক তাতে কান দেয়নি।” অন্য এক বাসিন্দা মিলন রায় বলেন, “আমরা প্রতিবাদ করেছি। অনেকে আওয়াজে টিকতে না পেরে জমি বাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।” বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া জানার পরে উজ্জ্বলবাবু বলেন, “কেউ না চাইলে কারখানা বন্ধ করে দেব। তাতে ওখানে কাজ করেন যে ৫০ জন শ্রমিক, তাঁদের রুটি রুজিতেই টান পড়বে।” কারখানার এক শ্রমিক রতিল রায় সকালে অন্য দিনের মতো কিনে আনা পুরনো অ্যালুমিনিয়াম গলানোর জন্য চুল্লিতে ঢালেন। চুল্লিতে দেওয়ার পরেই সেই জিনিসগুলো বিকট আওয়াজে ফাটতে শুরু করে। চাল ফুটো হয়ে ছিটকে পড়ে পিছনের একটি বাড়িতে। ওই বাড়ির উঠোনে দাড়িয়ে ছিলেন গৃহকর্ত্রী সন্ধ্যা মণ্ডল। তিনি বলেন, “সাড়ে আটটা নাগাদ একটি বোমা ফাটার মতো আওয়াজ শুনি। তার পরেই আমার সামনে এসে পড়ে গোলাকৃতি ধাতব বস্তু। গায়ে পড়লে কী হত, তা ভেবে শিউরে উঠছি।” |