লাভপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে বীরভূমের জেলা জজের রিপোর্ট জমা পড়েছে বটে, কিন্তু তা সুপ্রিম কোর্টকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারল না। শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, জেলা জজের রিপোর্টে পুলিশি ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। তাই সে ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের বিশদ রিপোর্ট তলব করা হচ্ছে। রিপোর্ট পেশের সময়সীমা ধার্য হয়েছে দু’সপ্তাহ। ইতিমধ্যে লাভপুরের নির্যাতিতা তরুণী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন।
লাভপুরের আদিবাসী গ্রামে সালিশি সভায় গণধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। সেখানে ঠিক কী হয়েছে, কেন হয়েছে এবং পুরো ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকাই বা কী, তা জানতে বীরভূমের জেলা জজকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলে শীর্ষ আদালত। সেটা গত ২৪ জানুয়ারির কথা। ওই দিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে খানিকটা বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছিল। তবে ঘটনা হল, সুপ্রিম কোর্ট সে দিন রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও রিপোর্ট চায়নি। চেয়েছিল শুধু জেলা জজের কাছ থেকে।
জেলা জজের সেই তদন্ত-রিপোর্ট ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে। এ দিন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের বেঞ্চ তা খতিয়ে দেখে। বিচারপতি সদাশিবম জানান, ওই রিপোর্টে পুলিশি ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি এম ওয়াই ইকবালও জেলা জজের রিপোর্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সহমত হন। এর পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বীরভূমের জেলা জজ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে পুলিশি পদক্ষেপ সম্পর্কে আমরা কিছু খুঁজে পেলাম না।”
এমতাবস্থায় লাভপুর-কাণ্ডে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, কী ভাবে তদন্ত করেছে, এ সব নিয়ে খোদ রাজ্যের মুখ্যসচিবের থেকে স্বতন্ত্র রিপোর্ট তলব করেছে সর্বোচ্চ আদালত। “ঘটনার পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের কাছে বিশদ
রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে তা দাখিল করতে হবে।” বলেন প্রধান বিচারপতি সদাশিবম। এ প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এ দিন বলেন, “সরকারি ভাবে কিছু জানি না। নির্দেশ হাতে এলে দেখব।” সুপ্রিম কোর্টে লাভপুর-মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। লাভপুরের গণধর্ষণ-কাণ্ড ঘিরে তামাম দেশের সংবাদমাধ্যমে হইচই হওয়ায় মামলাটি যথেষ্ট গুরুত্বও পেয়ে গিয়েছে। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে মামলাটি শোনার জন্য আইনজীবীদের ভিড় উপচে পড়েছিল। এরই মধ্যে সিউড়ির হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন লাভপুরে নির্যাতিতা মেয়েটি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সিউড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রের খবর। হাসপাতালের সুপার সুপার অসিত বিশ্বাসের কথায়, “সুস্থ আছেন বলেই ওঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে কোথায় গিয়েছেন বলতে পারব না।” প্রশাসন-সূত্রের খবর, ওই তরুণীর জন্য লাভপুরের চৌহাট্টায় যে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। “আপাতত সিউড়িতেই তাঁকে রাখা হয়েছে।” —বলেছেন বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। |