নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে রিপোর্ট চাইল সুপ্রিম কোর্ট
লাভপুর গণধর্ষণ মামলায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট।
কোনও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট লাভপুর নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা গ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। লাভপুর গণধর্ষণের ঘটনায় ঠিক কী কী ঘটেছে, কেন এমন ঘটল এবং প্রশাসনের ভূমিকাই বা কী ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে রাজ্যকে।
শুধু তাই নয়। শীর্ষ আদালত বীরভূমের জেলা জজকেও ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে পৃথক একটি রিপোর্ট দিতে বলেছে। ওই রিপোর্টও সাত দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি জেলা জজের রিপোর্ট এবং রাজ্যের হলফনামা খতিয়ে দেখে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি এম ওয়াই ইকবালকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবে।
লাভপুরের ঘটনাকে যে তাঁরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, তা বোঝাতে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে বসে প্রধান বিচারপতি জানান, সুপ্রিম কোর্ট ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি জনস্বার্থ মামলা শুরু করছে। এই ভাবে মামলা করাটা নজিরবিহীন না হলেও বিরল। এর আগে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জনস্বার্থ মামলা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, দেশের যে কোনও প্রান্তে যে সব ঘটনায় জনমানসে ছাপ পড়ে সেগুলির ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতেই পারে সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধানের ১৪২ নম্বর ধারায় সুবিচার দেওয়ার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টকে এই অধিকার দেওয়া হয়েছে।
লাভপুরের ঘটনায় প্রথমে ধৃত ১৩ জনকে হেফাজতেই চায়নি জেলা পুলিশ। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারেই সরিয়ে দেন পুলিশ সুপারকে। শুক্রবার আদালতে আবেদন করার পর ধৃতদের সবাইকে হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
তার আগেই এ দিন সুপ্রিম কোর্ট তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেয়। সুপ্রিম কোর্টের এই সক্রিয়তা কতটা যুক্তিযুক্ত?
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, বর্ষীয়ান আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই নৃশংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা সঠিক হবে না। জনস্বার্থের বিচারে এই রকম সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট নিতেই পারে।” রাজ্য সরকারের হলফনামা চাওয়ার পাশাপাশি জেলা জজের রিপোর্টও তলব করে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন রাজ্য প্রশাসনের উপরে অনাস্থা প্রকাশ করেছে বলে মনে করেন সোমনাথবাবু।
তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপ রাজ্যের প্রতি অনাস্থার প্রকাশ হিসেবে দেখছেন না। বরং তাঁর মতে সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের ভূমিকা শুধু লাভপুরের ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কল্যাণের দাবি, “দেশের অনেক জায়গাতেই খাপ পঞ্চায়েত রয়েছে। তা বন্ধ করার জন্যই সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা করেছে।” তাঁর মতে, দেশের অন্যান্য জায়গাতেও সুপ্রিম কোর্টের এমন পদক্ষেপের নজির রয়েছে। ১৯৯৪ সালে ভাগলপুরের এক অন্ধ মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল। সে ক্ষেত্রেও জেলা জজকে রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশে রাজ্য প্রশাসনের উপরে অনাস্থা প্রকাশ পেয়েছে কি না, সেই বিষয়ে বিতর্কে যেতে চাননি আইনজীবী, কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষ। তবে লাভপুরের ঘটনায় বোলপুর আদালতের বিচারকের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয় বলে মনে করছেন তিনি।
“প্রতি ক্ষেত্রেই বিচারকের কাছে অভিযোগকারী বা অভিযোগকারিণীর বয়ান পেশ করতে হয়। বিচারক তা দেখেই ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে অভিযুক্তদের কোন হেফাজতে পাঠানো উচিত, সেটা ঠিক করেন।” পুলিশ অভিযুক্তদের নিজের হেফাজতে না চাইলেও বিচারক কেন নিজে সেই নির্দেশ দেননি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.