|
|
|
|
দু’দিনের থমথমে গ্রামে বাঁধ ভাঙল কান্না
নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
গত দু’দিন ধরেই পরিবেশ ছিল থমথমে। খারাপ খবরটা আসার পরেই বাঁধ ভাঙল কান্না।
প্রায় দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে অন্ডালের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা, খাসকাজোড়া কোলিয়ারির ৬ নম্বর খনির কর্মী পাঁচকড়ি নন্দীর দেহ মেলে বুধবার গভীর রাতে। বাবার নিখোঁজ থাকার খবর পেয়ে বুধবারই বেঙ্গালুরু থেকে চলে এসেছিলেন তাঁর ছেলে বাপন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁচকড়িবাবুর দেহ বাড়ি আনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী, ছেলে, দিদি-সহ পরিজনেরা। প্রতিবেশীদেরও চোখে জল।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে পাঁচকড়িবাবুর দেহ পড়েছিল, সেখানকার তাপমাত্রা বেশ বেশি। মঙ্গল ও বুধবার দিনভর তল্লাশি চালানো হলেও তাই ওই দিকটিতে উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা বিশেষ নজর দেননি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। কেন্দা এরিয়ার উদ্ধারকারী দলের সহ-অধিনায়ক ভবানীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ তাঁরা ৬ জন খনিতে নামেন। সেখানে ‘ফ্রেশ এয়ার বেস’-এ পৌঁছে দেখেন, কাজোড়া এরিয়ার উদ্ধারকারী দল এবং অন্য আধিকারিকেরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। |
বাড়িতে পাঁচকড়িবাবুর দেহ ফেরার পরে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী-ছেলে। |
ভবানীপ্রসাদবাবু বলেন, “ওঁরাই আমাদের দলকে জানান, ১৩ নম্বর প্যানেলের কাছে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ কথা শুনে আমাদের অধিনায়ক কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। কয়েকশো ফুট দূরে যেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল, সেখানকার তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রাত দেড়টা নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, ভেন্টিলেশন স্টপিং ওয়ালের পাশে পাঁচকড়িবাবুর নিথর দেহ। এর পরে তাঁকে উপরে আনা হয়।”
কয়লা কেটে নেওয়ার ফলে নিচু হয়ে যাওয়া একটি জায়গা থেকে পাঁচকড়িবাবুর দেহ মিলেছে বলে খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই ঘটনার পরে খনির সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সিটুর খনিকর্মী সংগঠনের নেতা মলয় বসুরায়ের বক্তব্য, “শ্রমিক নিরাপত্তা যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তা পরিষ্কার। কয়লা কেটে নেওয়ার পরে যে কোনও প্যানেল ব্যারিকেড করে ঘিরে রাখা উচিত। তা হলে সেখানে কোনও কর্মী যেতেই পারবেন না।” |
শোকার্ত পরিজনেরা। |
ভিড় পড়শিদের। |
|
খনির মাইনিং সর্দার ও ওভারম্যানদের সংগঠন ‘ইনমোসা’র সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় মাজির আবার দাবি, “অসুস্থ হয়ে পড়া এক কর্মীকে একা ছেড়ে চলে যাওয়া রীতিমতো খনি আইন বিরোধী। পাঁচকড়িবাবু তাঁদের থাকতে দেননি, এ কথা সঙ্গীরা বলতে পারেন না। কারণ, তাঁদের এ সব জানা উচিত। খনি কর্তৃপক্ষের উচিত, আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।”
বৃহস্পতিবার পাঁচকড়িবাবুর পরিজনদের আক্ষেপ, কোনও এক জন সঙ্গী তাঁর সঙ্গে থেকে গেলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের অবশ্য দাবি, পাঁচকড়িবাবু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তা বলা ঠিক হবে না। তিনি সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, অস্বস্তি বোধ করছেন, একটু বসতে চান। তাঁর কাছে এক কর্মীকে বসিয়ে রাখতে চাইলে তিনিই বারণ করেছিলেন। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “শেষ পর্যন্ত যা ঘটল, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।” খনির নিরাপত্তা তলানিতে, এ কথা মানতে চাননি নীলাদ্রিবাবু। ইসিএলের তরফে জানানো হয়, বুধবার রাতেই মৃতের ছেলেকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। |
ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ। |
পুরনো খবর: দু’দিন নিখোঁজ খনিকর্মী, চক্রান্ত দেখছে পরিবার |
দুর্গন্ধেই খনিকর্মীর দেহ মিলল অন্ডালে
নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
প্রায় চল্লিশ ঘণ্টা তল্লাশির পরে অন্ডালের খনিগর্ভে মিলল নিখোঁজ সার্ভেয়র পাঁচকড়ি নন্দীর (৫৬) দেহ। দুর্গন্ধ পেয়ে খনির একটি নিচু জায়গায় গিয়ে দেহটি দেখতে পান উদ্ধারকারীরা।
বর্ধমানের কাজোড়া এরিয়ার ওই খনিতে মঙ্গলবার সকালে কাজে নেমে যেখানে বসে পড়েন পাঁচকড়িবাবু, বুধবার গভীর রাতে তার কয়েকশো ফুট দূরে কয়লা কেটে নেওয়ায় তৈরি একটি নিচু জায়গায় তাঁর দেহ মেলে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “ওই জায়গার তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই আগে উদ্ধারকারী দল সেখানে নজর দেয়নি। দুর্গন্ধ পেয়ে তারা সেখানে যান।” আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, গরমে অসুস্থ হয়েই ওই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের অনুমান। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ইসিএল সূত্রের খবর, খাসকাজোড়া ৬ নম্বর খনিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার গোড়েলাল সিংহ-সহ চার জনের সঙ্গে মঙ্গলবার কাজে নামেন পাঁচকড়িবাবু। তাঁর সঙ্গীদের দাবি, খনিগর্ভে খানিকটা গিয়ে পাঁচকড়িবাবু জানান, তাঁর গরম লাগছে, বসতে চান। বাকিদের এগিয়ে যেতে বলায় তাঁরা ভিতরে চলে যান। ঘণ্টা চারেক পরে কাজ সেরে ফেরার পথে তাঁরা আর তাঁকে সেখানে দেখতে পাননি। জানা যায়, তিনি উপরেও ওঠেননি। তার পর থেকেই দফায়-দফায় তল্লাশি চালায় ইসিএলের উদ্ধারকারী দল।
খনি কর্তৃপক্ষ জানান, খনির ১৩ নম্বর প্যানেলে একটি জায়গায় প্রায় ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পড়েছিল পাঁচকড়িবাবুর নিথর দেহ। পাশে খুলে রাখা ছিল তাঁর জামা। উদ্ধারকারী দলের অনুমান, অসুস্থ বোধ করায় উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন পাঁচকড়িবাবু। ভুল পথে গিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছন। |
|
|
|
|
|