|
|
|
|
ধর্ষণের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিন, কড়া বার্তা নবান্নর
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বীরভূমের পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দিয়েছিলেন আগেই। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সমস্ত জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হল, যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় বিন্দুমাত্র প্রশাসনিক শিথিলতা বরদাস্ত করতে রাজি নয় সরকার। শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের অভিযোগ পেলে সবার আগে নির্যাতিতার বয়ান মেনে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাকে নিরাপত্তা দেওয়াই হবে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রথম কাজ।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্ন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৯টি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে এমন নির্দেশই দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি।
পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া, কামদুনি, মধ্যমগ্রাম এর আগে নানা ঘটনায় যে ভাবে বিতর্ক বেধেছিল, সেটা আর কোনও মতেই বাড়াতে চায় না রাজ্য। ধর্ষণের মতো ঘটনায় প্রশাসন যে নির্যাতিতার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবে এবং অপরাধীদের কড়া হাতে মোকাবিলা করবে, রাজ্যবাসীর কাছে এই বার্তাই দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, বৃহস্পতিবার লাভপুর ধর্ষণ-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই এসপি-কে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ ধরনের মামলায় সরকার সদর্থক পদক্ষেপ করতে কতটা আগ্রহী। এ দিনের নির্দেশিকা তারই পরবর্তী ধাপ।
বিরোধীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, এ দিন সুপ্রিম কোর্ট লাভপুর নিয়ে আলাদা করে রাজ্য সরকার এবং জেলা জজের রিপোর্ট তলব করায় সরকারের উপরে চাপ বেড়েছে। তারই মধ্যে হাওড়ায় নতুন করে একটি গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব মিলিয়ে চাপের মুখেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে সার্বিক ভাবে কড়া বার্তা দেওয়া হল।
তবে প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, এ দিনের নির্দেশিকার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপের কোনও সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে শৈথিল্য চাইছেন না। সুপ্রিম কোর্ট কিছু বলার আগেই তিনি বৃহস্পতিবার এসপি-কে সরিয়েছেন, ডিজি-কে ভর্ৎসনা করেছেন। খিদিরপুরের ঘটনাটি শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নির্যাতিতাকে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেছেন। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, দূরের জেলাগুলিতে তো মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে যেতে পারবেন না। সেখানে জেলা প্রশাসনকেই নির্যাতিতার পাশে থাকতে হবে। ওই কর্তার কথায়, “গাফিলতি প্রমাণ হলে তিন ঘণ্টার নোটিসে যে ভাবে বীরভূমের আগের পুলিশ সুপারকে সরানো হয়েছে, পরবর্তী কালে তেমনই হবে। যাঁদের জন্য সরকারের মুখ পুড়বে, সরকার তাঁদের তিরস্কার করার নীতিই নেবে।”
এ দিন ‘ভিকটিম ফার্স্ট’ বা সর্বাগ্রে নির্যাতিতার স্বার্থ মাথায় রেখে জেলাগুলিকে আরও সজাগ এবং কঠোর হতে বলেন রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তা। তাঁদের নির্দেশ: মহিলাদের উপর নির্যাতনের যে কোনও অভিযোগ এলেই তা গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে যে অভিযোগ আসবে, তার ভিত্তিতেই কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারকে নিরাপত্তা-সহ যাবতীয় সহায়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও রকম শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। পাশাপাশি, নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরকে কাজে লাগিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো জন্যও জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
জেলায় জেলায় নিচুতলার পুলিশকর্মীদের জন্য কম খরচের আবাসন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এ দিন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি-র ভিডিও কনফারেন্স হওয়ার কথা ছিল আগে থেকেই। কিন্তু ধর্ষণের বিষয় নিয়েই সেখানে দীর্ঘ আলোচনা হয়। পুলিশ প্রধান জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট এবং কেন্দ্রীয় সরকার আগেই ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছে। তা অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে সেই নির্দেশিকা ফের এক বার জেলাগুলিতে পাঠানো হবে। এর পরেই স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি বলেন, “সিনিয়র অফিসারদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। পুলিশ সুপার থেকে সংশ্লিষ্ট জোনের আইজি-কেও তদন্তে নিয়মিত নজরদারি করতে হবে। নিচুতলার অফিসারদের উপর সবটা ছেড়ে রাখলে হবে না।”
নবান্নের শীর্ষ কর্তারা জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন, অতি দ্রুত প্রতিটি জেলায় মহিলাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য আলাদা হেল্পলাইন চালু করতে হবে। আইন মেনে নির্যাতিতাদের আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে ভাল হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তা ছাড়া, যে সব এলাকায় একাধিক বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলো লাগানো, পুলিশি টহলদারি বাড়াতেও নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা।
এ দিন লাভপুর মামলা ঘিরেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বাড়তি তৎপরতা চোখে পড়েছে। গত কাল পুলিশ ধৃত ১৩ জনকে হেফাজতে না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই নির্দেশ দিয়েছিলেন, নির্যাতিতার আবার বয়ান নিয়ে এবং আদালতে তা পেশ করে পুলিশ যেন ধৃতদের হেফাজতে চায়। সেই মোতাবেক এ দিন ফের বোলপুর আদালতের দ্বারস্থ হয় বীরভূম পুলিশ। সরকারি কৌঁসুলি ফিরোজকুমার পাল বিচারককে জানান, মামলার তদন্তকারী অফিসার বৃহস্পতিবার সব কাগজপত্র তৈরি করে জমা দিয়ে উঠতে পারেননি। তাই আগের দিন পুলিশ অভিযুক্তদের হেফাজতে চায়নি। এ দিন নতুন করে আবেদন করে ১৩ জনকেই হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এ দিন সরেজমিন তদন্তে সুবলপুর গ্রামে যান শীর্ষ পুলিশ-কর্তারাও। বিকেল ৫টা নাগাদ গ্রামে যান আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি (বর্ধমান) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তাঁরা কাপড়ে মুখ ঢাকা অবস্থায় তিন অভিযুক্তকে মোড়লের বাড়ির সামনে নামিয়ে ঘটনার পুর্ননির্মাণের চেষ্টা করেন। রাতে তরুণীকে দেখতে সিউড়ি সদর হাসপাতালে যান মন্ত্রী শশী পাঁজা।
|
পুরনো খবর: ধৃতদের হেফাজতে না নেওয়ায় বিতর্ক |
|
|
|
|
|