ব্রিগেডে এ বার পিঠোপিঠি সমাবেশ তিন পক্ষের। কিন্তু সেই সভার আগে প্রচারে বাকি দু’পক্ষকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল!
লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ ৩০ জানুয়ারি। ক্ষমতায় আসার পরে এ বার তৃণমূলের দ্বিতীয় ব্রিগেড। তার পরে ৫ ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে ব্রিগেডে সভা করবে বিজেপি। তার চার দিন বাদেই বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশ। কিন্তু বিজেপি ও বামেদের ব্রিগেডের প্রচার থেকে অনেক বেশি জমকালো প্রচার করছে শাসক দল। তাদের সমাবেশের বিশাল বিশাল ফ্লেক্স, ব্যানার, হোডির্ং পোস্টারে ছয়লাপ শহর থেকে শহরতলি। রাস্তা, ল্যাম্পপোস্ট তো আছেই। ট্যাবলো, ঘোড়ার গাড়িও বাদ নেই! শহর ছেড়ে দূরে গ্রাম বাংলাতেও এমনই উচ্চ মাত্রায় প্রচার চলছে তৃণমূলের। হোর্ডিং-বন্যার পাশাপাশি ব্রিগেডের সভা সফল করতে তৃণমূলের ‘ত্রয়ী’ মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী-সহ দলের শীর্ষ নেতারা জেলায় জেলায় প্রচার-সভা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, শাসক দল হয়েও প্রচারের বহর এত বেশি কেন? ক্ষমতায় আসার পরে বিধানসভা বা লোকসভার উপনির্বাচন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত বা পুরভোটে ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। তার পরেও তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে মাত্রা এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পিছনে যুক্তি কী? দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, তাঁরা প্রচারে কোনও বাড়াবাড়ি করছেন না। তাঁর দাবি, “সিপিএম, বিজেপি যে ভাবে প্রচার করছে, তার তুলনায় আনুপাতিক হারে আমাদের প্রচার কম। তবে বাংলার সর্বত্র আমাদের ছেলেদের আবেগ-উচ্ছ্বাস অন্যদের থেকে বেশি। তাই কোথাও কোথাও স্থানীয় ভাবে প্রচারটা হয়তো বেশি হচ্ছে।”
সমাবেশের প্রস্তুতি-পর্ব খতিয়ে দেখতে শুক্রবার বিকালে সদলবল ব্রিগেডে গিয়েছিলেন মুকুলবাবু। তাঁর সামনেই দলের নেতা ও রাজ্য সরকারের পরিষদীয় সচিব তাপস রায় বলেন, “এ বারের ব্রিগেডের সভার তাৎপর্য আলাদা। কারণ, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিল্লির সরকার তৈরির নিয়ন্ত্রক হবেন, এই সমাবেশই সারা দেশের কাছে সেই বার্তা দেবে। তাই এ বারের ব্রিগেডের প্রচারও সেই ভাবে করতে হচ্ছে।” তবে দলের অন্দরের ব্যাখ্যা, তৃণমূল যে হেতু সবার আগে ব্রিগেডে সমাবেশ করছে, তাই বিজেপি বা বামেদের তুলনায় সব দিক থেকে তারা এগিয়ে থাকতে চাইছে। এক তরুণ তৃণমূল নেতার কথায়, “আমাদের ব্রিগেডের রেশে বিজেপি এবং বামফ্রন্টের সমাবেশ যেন ঢাকা পড়ে যায়, সে দিকে লক্ষ রেখেই প্রচার করছি।”
আর এতেই বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করেই এ বার শাসক দল তৃণমূল ব্রিগেডের প্রচারকে তুঙ্গে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। প্রচারে বিপুল পরিমাণ হোর্ডিং, ফ্লেক্স বা কাট-আউট তৈরির খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা। এখন তৃণমূল যে ভাবে রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে প্রায় সব জেলা পরিষদ, অধিকাংশ পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আছে, আগে বামফ্রন্টও তা-ই ছিল। তা-সত্ত্বেও এমন হোর্ডিং-সংস্কৃতি তাদের ছিল না বলেই সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, “ব্রিগেডের জন্য এ বার তৃণমূলের প্রচার সর্বগ্রাসী! জাতীয় সড়কের উপরেও আড়াআড়ি ব্যানার লাগানো হয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এতে যেমন দলের বৈভব জাহির করা হচ্ছে, তেমনই মানসিক ভাবে একটা ব্যাপার মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে তৃণমূল ছাড়া আর কোথাও কিছু নেই!” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহেরও অভিযোগ, “ওরা চায় বাংলায় আর কোনও রাজনৈতিক দলের চিহ্ন যেন না থাকে! সিপিএমের আগেকার পথেই এখন তৃণমূল হাঁটছে!” বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, “আমাদের ব্রিগেড সমাবেশ তো আগে! আমাদের পরে ওঁরা প্রচার করুন না! আগে থেকে অভিযোগ কেন করছেন!” |