তদন্তে গতি আনতে কলকাতা হাইকোর্ট বীরভূম জেলা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার নিয়ে দিয়েছিল সিআইডি-র হাতে। কিন্তু বীরভূমের তৃণমূল নেতা হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষের হত্যা মামলার তদন্ত সিআইডি যে ভাবে করছে, তাতেও সন্তুষ্ট নয় আদালত। বরং সাগরবাবুর স্ত্রী-পুত্রবধূর বয়ান কেন এক বারও নেওয়া হয়নি, শুক্রবার সে ব্যাপারে হাইকোর্ট সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা তলব করল। বিচারপতির নির্দেশ, লিখিত বয়ান দিলে হবে না। আগামী পরশু ওই অফিসারকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে জানাতে হবে, তদন্ত কতটা এগোলো। প্রসঙ্গত, এই মামলার এফআইআরে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের। যদিও তাঁকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি।
কথা ছিল, সাগর হত্যা-মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এ দিন হাইকোর্টে রিপোর্ট দেবে সিআইডি। কিন্তু এ দিন রিপোর্ট পেশের পরিবর্তে সিআইডি-র তরফে আদালতের কাছে আরও সময় চাওয়া হয়। যা শুনে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাগরবাবু খুন হয়েছিলেন ২০১৩-র ২১ জুলাই। ইতিমধ্যে ছ’মাস অতিক্রান্ত। উপরন্তু এ দিন বিভিন্ন পক্ষের সওয়াল শোনার পরে বিচারপতি এ-ও জানতে পারেন, সাগরবাবুর স্ত্রী ও পুত্রবধূ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া সত্ত্বেও সিআইডি এখনও তাঁদের কোনও বিবৃতি নথিভুক্ত করেনি। “স্ত্রী ও পুত্রবধূর সামনেই ওঁকে খুন করা হল, অথচ ছ’মাসেও সিআইডি তাঁদের বিবৃতি নেওয়ার সময় পেল না! কেন?” প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দত্ত।
আর এমতাবস্থায় সিআইডি-কে রিপোর্ট পেশ করার জন্য বাড়তি সময় দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে আদালত। শেষমেশ বিচারপতি জানিয়ে দেন, সিআইডি’র আবেদন নাকচ করা হচ্ছে। আগামী সোমবার, ২৭ জানুয়ারি খোদ তদন্তকারী অফিসারকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে তদন্তের অগ্রগতি-রিপোর্ট জমা দিতে হবে। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে কলকাতা পুলিশের তদানীন্তন গোয়েন্দা-প্রধান দময়ন্তী সেনের ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণের তদন্তভার তাঁর উপরেই ন্যস্ত করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। দময়ন্তী এখন সিআইডি’র ডিআইজি। সাগর-হত্যার তদন্তও তাঁর আওতায়। তবু এখনও তাঁদের কোনও বয়ান সিআইডি না-নেওয়ায় নিহতের পরিজনেরা হতাশ। সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতীদেবীর আক্ষেপ, “আমরাই সব হারালাম। অথচ আমাদেরই কারও সঙ্গে সিআইডি কথা বলল না!”
ছেলে হৃদয়বাবুর মন্তব্য, “দময়ন্তী সেন সিআইডি-তে বদলি হয়ে আসায় স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম, কিছুই হল না! যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম, তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আমাদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করছে! বুঝতেই পারছি না, সিআইডি আদৌ কোনও তদন্ত করছে কি না!”
বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন হৃদয়বাবু। ২০১৩-র ২২ জুলাই বীরভূমে পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণ হয়। অভিযোগ, তার আগে থেকেই হৃদয়বাবুকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ভোটের ঠিক আগের দিন তাঁর বাবাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। খুনের সময়ে কারা ঘটনাস্থলে হাজির ছিল, সাগরবাবুর স্ত্রী-বৌমা তা হাইকোর্টকে জানিয়ে দিয়েছেন। পুলিশ যে তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে পরে সেখানে এফআইআর লেখে, আদালতকে তা-ও জানিয়েছিলেন দুই মহিলা। পরে সাগরবাবুর পরিবার নতুন ভাবে এফআইআর দায়ের করে। তাতেই অনুব্রতবাবুকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। |