নির্যাতিতার পরিবারকে ঠাঁই দিতে রাজি নয় সুবলপুর
বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। এমন সময়ে সুবলপুর গ্রামে এসে ঢুকল দশটা পুলিশের গাড়ির মস্ত কনভয়। গাড়ি থেকে নামেন পুলিশকর্তারা, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, ডিআইজি (বর্ধমান) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, আর বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। ছিল লাভপুর থানার পুলিশকর্মীরাও। সঙ্গে সিআরপিএফ। গ্রামবাসীদের মধ্যে চাঞ্চল্য পড়ে যায় যখন কাপড়ে মুখ-ঢাকা অবস্থায় তিন অভিযুক্তকে নামানো হয় গাড়ি থেকে। তাদের তালগাছের সামনে নিয়ে গিয়ে, মোড়লের বাড়ির সামনে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা শুরু হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট গ্রামে থাকার পর বন্দিদের নিয়ে পুলিশের গাড়ি আবার রওনা দেয় গ্রাম থেকে।
পুলিশের গাড়ি দেখেই চাপা উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামে। এই বুঝি বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ধরপাকড় শুরু হল। তেমন কিছুই না হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অনেকে। মুখ দেখা না-গেলেও ওই তিনজন সুনীল কিস্কু, দেবরাজ মণ্ডল এবং বালু কিস্কু বলে দাবি করলেন তাঁরা। সবাই বলাবলি করতে লাগলেন, বাকিদেরও কি এমন করে গ্রামে নিয়ে আসবে? এ দিন দুপুর নাগাদ সমাজকল্যাণ দফতরের একটি কমিটির সদস্য অশোকেন্দু সেনগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রশাসনিক দলও আসে সুবলপুরে। দলে ছিলেন জেলা শিশু কল্যাণ আধিকারিক সংযুক্তা ভট্টাচার্য এবং লাভপুরের যুগ্ম-বিডিও ভবেশ পাল। তাঁরা গ্রামে পা রাখতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ল সুবলপুর। গত পাঁচ দিনে জমা-থাকা ক্ষোভ গ্রামের মহিলারা তাঁদের কাছেই উগরে দিলেন।
প্রশাসনের লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন গ্রামবাসী। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
গণধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা, এই দাবি করে শ্যামলী মন্ডল, সুখী মাড্ডি, পার্বতী কিস্ক বলেন, “ওই পরিবারকে আর আমরা গ্রামেই ঢুকতে দেব না।” জরিমানার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্যই ওই তরুণী ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করেছে, দাবি করেন তাঁরা। গ্রামবাসীর এই সম্মিলিত দাবির মুখে অশোকেন্দুবাবু বলেন, “ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, তা তদন্তেই জানা যাবে। তবে, মেয়েটি ও ছেলেটিকে যে ভাবে সারারাত গাছে বেঁধে রাখা হয়েছিল, তা চূড়ান্ত অমানবিক এবং বেআইনি।” অশোকেন্দুবাবু এ দিন সিউড়িতে নির্যাতিতা তরুণী ও তাঁর মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন।
গ্রামে ঢুকতে না-দেওয়ার হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তরুণীর পরিবার। পাশের গ্রামে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার করা তরুণীর ছোট ভাই বলেন, “গ্রামের লোকেরা ফতোয়া জারি করেছে দিদি আর মাকে বাড়ি ঢুকতে দেবে না। কী যে হবে, ভাবতে পারছি না।” যদিও অশোকেন্দুবাবু বলেন, “নির্যাতিতার পরিবার যাতে গ্রামে নিরাপদে থাকতে পারেন, প্রশাসনের তরফে তার সব ব্যবস্থা করা হবে।”
গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, তাঁদের কথা শুনতে সারাদিনে গ্রামে কোনও জনপ্রতিনিধি আসেননি। লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ ভারতী ঘোষ বলেন, “আমি একটি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণে ছিলাম। তাই বিষয়টি জানতে পারিনি। বৃহস্পতিবারই জেনেছি। আজ, শনিবার সুবলপুরে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলব।” সংশ্লিষ্ট চৌহাট্টা-মহোদরী ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শেখ ফিরোজ বলেন, “আমি পঞ্চায়েতে প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত রয়েছি। ঘটনাটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ব্যাপার। বহিরাগতদের নাক গলানো, তাঁরা ভাল চোখে দেখেন না। তাই পঞ্চায়েত থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ওই গ্রামের বিষয়টি নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি।” এ দিকে, তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বুধবার এলাকায় বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের মনিরুল ইসলাম। তা সত্ত্বেও তিনি কেন একটি বারের জন্যও গ্রামে গেলেন না এ প্রশ্ন করতেই ‘নো কমেন্টস’ বলে ফোন কেটে দেন। অন্য দিকে, ২৪ ঘণ্টা পরে নিজের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় পঞ্চয়েত সদস্য অজয় মণ্ডল বলেন, “আমি ওই সালিশি সভায় ছিলাম না। কারও হয়ে টাকাও জমা দিইনি। আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।” গ্রামবাসীরা অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন, অজয়বাবু সালিশি সভায় ছিলেন। তাঁর হাত দিয়েই ওই তরুণীর পুরুষসঙ্গীর পরিবার জরিমানার টাকা পৌঁছে দেয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.