|
|
|
|
এগারো হাজার প্রতিযোগীর
আঁকার ছন্দ কাটল অব্যবস্থায়
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
চারটি বিভাগ মিলিয়ে প্রতিযোগীর সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার ৪৪৬। প্রাথমিকের পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই সামিল উত্তরবঙ্গ উৎসবের বসে আঁকো প্রতিযোগিতায়। বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টো থেকে প্রতিযোগিতার শুরু হলেও বিপুল সংখ্যক প্রতিযোগীকে সুষ্ঠুভাবে জায়গা করে দিতে বেলা ১২টা থেকেই মাঠে বসিয়ে দেন উদ্যোক্তারা। যদিও প্রতিযোগিতার শেষে তাল কাটল বিশৃঙ্খলায়।
শিশু বিভাগের প্রতিযোগিদের মাঠ ছেড়ে বের হওয়ার সময় তুমুল বিশৃঙ্খলা হয়। স্টেডিয়ামে বসে থাকা অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে মাঠে ঢুকতে চাওয়ায় একসময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। হুড়োহুড়িতে অনেক অভিভাবক, স্বেচ্ছাসেবকরা উল্টে পড়ে যান। ভয় পেয়ে শিশুরাও কাঁদতে শুরু করে। প্রতিযোগিতা দেখতে সাদা পোশাকে স্টেডিয়ামে আসা শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহনকেও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিশৃঙ্খলার পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যদিও অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, পরিকল্পনার অভাবে এ দিন বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
এ দিন প্রতিযোগিতার শেষ হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দার্জিলিং থেকে ফিরে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আসেন। তিনি বলেন, “রেকর্ড সংখ্যক প্রতিযোগীকে নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়েছে। গতবারের প্রতিযোগী সংখ্যাও এ বার আগের বছর থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। সবকিছুই পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল। কেন বিশৃঙ্খলা হল, খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে প্রতিযোগিতা ভালভাবেই শেষ হয়েছে।” |
|
উত্তরবঙ্গ উৎসবের বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় ভিড়। —নিজস্ব চিত্র। |
প্রতিযোগিতার শুরুটা হয়েছিল ভালভাবেই। চারটি বিভাগের প্রতিযোগীদের বসার জন্য মাঠে বাঁশ দিয়ে চারটি পৃথক ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি বিভাগের প্রতিযোগীদের ঢোকা-বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট নির্দিষ্ট করা হয়। লাগানো ছিল সিসি ক্যামেরাও। দুপুর থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার স্টেডিয়াম চত্বর জুড়ে শুধু রঙের কোলাজ। শিশু থেকে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ‘ক’ বিভাগে কোনও বিষয় নির্দিষ্ট করা ছিল না। একটি ইংরেজি মাধ্যমের শিশু বিভাগের পড়ুয়া রিয়া সরকার একটি বাড়ি একে তার পাশ দিয়ে সরু নদী একেছে। পাশে একটা তালগাছ, তার দূরে পাহাড়। রিয়ার কথায়, “নদী থাকবে, গাছ থাকবে তবে পাহাড় কেন থাকবে না?” রিয়ার কিছুটা পাশেই ছিল খড়িবাড়ির একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ দাসের পৃষ্ঠায় থইথই সমুদ্র, জলের রং কোথাও লাল কোথাও আবার নীল।
চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির বিভাগে বিষয় ছিল ‘অরণ্য’ অথবা ‘তোমার প্রিয় বন্ধু।’ পরের দুটি বিভাগের বিষয় ছিল শীতকাল এবং দশম শ্রেণি থেকে বিষয় গ্রাম অথবা উৎসব। কোনও খাতায় জঙ্গল, কোথায় গ্রামের মেলায় জিলিপির দোকান, নাগরদোলা কোথাও আবার মায়ের হাত ধরে স্কুল পড়ুয়ার ঢোল কিনে বাড়ি ফেরা এমন নানা ছবির রঙিন কোলাজ দেখা গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন চত্বরে। প্রতিযোগিতায় দেখা গেল বন্ধুত্বও। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সঞ্জয়ের খাতায় একে দিতে দেখা গেল পাশে বসা জয়কে। জয়ের কথায়, “স্কুলেও আমরা পাশাপাশি বসি। ও তো ভাল আঁকতে পারে না তাই সাহায্য করলাম।”এ দিন সকালে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে আয়োজিত ম্যারাথনে দৌড়োতে এসেছিলেন ৩৫ বছরের ওয়াংদি লামা। তিনিও বসে আঁকো প্রতিযোগিতার কথা শুনে রং-তুলি কিনে নিয়ে মাঠে বসে পড়েন।
রং আর উৎসবের এই মেজাজে বিশৃঙ্খলার ‘ছন্দপতনের’ ঘটনায় উদ্যোক্তারা আগামীবারের প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে চাইছেন। উৎসব কমিটির সম্পাদক জগদীশ রায় বলেন, “সব কিছু ভালভাবেই হয়েছে। তবে যদি কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা হয়, তার থেকে আগামী দিনে নিশ্চই পদক্ষেপ করব।” উৎসব কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি অরবিন্দ ঘোষ জানান, ছবি সম্বলিত অংশগ্রহণকারীদের ওই সমস্ত আবেদন পত্রগুলি এ দিন সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি ‘লিমকা বুকস অব রেকর্ডে’ নথিবদ্ধ করার জন্য পাঠানো হবে।
খড়িবাড়ি, নকশালবাড়ি, বিধাননগরের মতো দূরের এলাকা থেকে প্রতিযোগীদের আনার জন্য বাসের ব্যবস্থা করে উৎসব কমিটি। |
|
|
|
|
|