|
|
|
|
ব্রিগেডে তৃণমূলের সভায় যাবে মোর্চাও
দেবাশিস ভট্টাচার্য ও কিশোর সাহা • দার্জিলিং |
খাদের কিনারায় চলে যাওয়া সম্পর্ক মেরামত করে ফের কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল তৃণমূল ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে আগামী ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোর্চা সূত্রের খবর, পত্রপাঠ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন গুরুঙ্গও। তৃণমূলনেত্রীকে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ব্রিগেডের সমাবেশে যাবেন। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বক্তব্য, “বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়ে আমরা ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমরা সেখানে অবশ্যই যোগ দেব।”
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজ্যের শাসক দল ও জিটিএ-র শাসক দল মোর্চার কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়াকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবেই দেখছেন পাহাড়-সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। তবে তৃণমূল ও মোর্চা, উভয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে লোকসভা ভোট নিয়ে কথা হতেই পারে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত লোকসভার দার্জিলিং আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তাই এক প্রাক্তন ফুটবল তারকার নাম নিয়ে নানা ভাবে হইচইয়ের চেষ্টা হলেও তাতে আমল দিতে রাজি হননি তৃণমূল ও মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানান, প্রাক্তন ওই ফুটবল-তারকা রাজ্য সরকারের নানা অনুষ্ঠানে থাকলেও আদতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রতিবেশী রাজ্যের বাসিন্দা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “দার্জিলিং লোকসভা আসনে দেশের একজন প্রাক্তন ফুটবল তারকা দাঁড়াতে পারেন বলে রটানো হলেও তা ঠিক নয়। প্রার্থী নিয়ে আমাদের দলে কিংবা তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আলোচনাই এখনও হয়নি।”
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দার্জিলিং পাহাড়ে সংগঠন আগের তুলনায় অনেকটা জোরদার হওয়ায় দলের প্রতীকেই কাউকে লোকসভা আসনে প্রার্থী করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তাঁর চাপেই বন্ধের মতো জনজীবন বিপর্যস্ত করার আন্দোলন বন্ধ হওয়ায় পাহাড়ে তৃণমূলনেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে বলেও তৃণমূল নেতাদের ধারণা। সেই সঙ্গে প্রথমে লেপচা উন্নয়ন বোর্ড গঠন ও পরে তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক বোর্ডের আশ্বাস দেওয়ার ফলে দলনেত্রীর জনপ্রিয়তা পাহাড়েও ঊর্ধ্বগামী বলে ভাবছেন পাহাড়ে তৃণমূলের নেতারা। যে কারণেই তৃণমূলের পাহাড়ের নেতা-কর্মীদের অনেকেই চাইছেন, দলের প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে একক ভাবে লড়া হোক। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের একটি অংশ এটাও ভাবছেন, যদি মোর্চার সঙ্গে সমঝোতায় ঘাসফুল প্রতীকে প্রার্থী দেওয়া যায়, তা হলে লড়াইটা অনেক মসৃণ হতে পারে।
মোর্চাও হিসেব কষে পা ফেলতে চাইছে। মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে সমর্থন করেও ‘কাজের কাজ’ তেমন হয়নি বলে দলের অন্দরেই সমালোচিত হয়েছেন গুরুঙ্গ। মোর্চা নেতারা অনেকেই স্বীকার করছেন, গত জুলাইয়ে তাঁদের আন্দোলনের সময় বিজেপি-কে সে ভাবে পাশে পাননি তাঁরা। পাহাড়ে মোর্চা ভেঙে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। রাজ্যের অনমনীয় মনোভাব, তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি দেখে যাবতীয় আন্দোলন থেকে সরতে বাধ্য হয়েছে মোর্চা।
মোর্চার অন্দরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে মোর্চার ঘনিষ্ঠতা বাড়লে পাহাড়ে তাঁদের দল ভেঙে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে লোকসভায় তৃণমূলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়েও মোর্চার মধ্যে আলোচনা চলছে। তাই মোর্চা নেতারা সিংহভাগই রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে ফের বিরোধিতায় যেতে চাইছেন না। বরং রাজ্যকে পাশে নিয়েই আগামী দিনে দিল্লি থেকে বাড়তি বরাদ্দ আদায়ের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে মোর্চা নেতাদেরও। মোর্চার এক শীর্ষ নেতা জানান, সমস্ত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাজেই লোকসভা ভোটের মুখে তৃণমূল-মোর্চা সম্পর্ক কতটা গভীর হবে তা ব্রিগেডের সমাবেশেই হয়তো স্পষ্ট হয়ে যাবে। |
|
|
|
|
|