|
|
|
|
মমতার অখণ্ডতার বার্তাকে স্বাগত পাহাড়ে
কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান • দার্জিলিং |
এক জানুয়ারি থেকে আর এক জানুয়ারি--রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষায় অনমনীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপে পরিবর্তন ঘটল পাহাড়ের পরিবেশের। গত বছর ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙের ম্যালে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাগ হতে দেব না বলার পরে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান ওঠে। নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে সেই স্লোগান থামিয়ে দিতে বাধ্য করেন মমতা। তারপরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এক বছর পরে কিন্তু পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই ম্যালেই সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালনের সরকারি মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফের রাজ্যে অখণ্ডতার বার্তা দেওয়ার পরে হাততালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন পাহাড়বাসী। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গও সভায় জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের সঙ্গে একযোগে হেঁটেই পাহাড়ের সার্বিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
এ দিন দুপুরে ম্যালের অনুষ্ঠানে ভিড় উপচে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বলেছেন, “দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বেঁচে থাকতে কোনও অবস্থাতেই বাংলা ভাগ হতে দেব না। সে জন্যই তো রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালনের মূল অনুষ্ঠান করা হল দার্জিলিঙে। সমতলের অনুষ্ঠান হবে পাহাড়ে। পাহাড়ের অনুষ্ঠান হবে সমতলে। সকলকে মিলেমিশে এগোতে হবে।” |
 |
এক মঞ্চে। নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রঞ্জিত মল্লিক,
দীপঙ্কর দে, শুভাপ্রসন্ন, দেব, রোশন গিরি, বিমল গুরুঙ্গ ও
সুগত বসু। দার্জিলিঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
ওই মঞ্চ থেকেই জিটিএ প্রধান গুরুঙ্গও উল্লেখ করেন, সুভাষচন্দ্র যে অখণ্ড ভারতের কথা বলেছিলেন, তা সকলকেই মাথায় রাখতে হবে। গুরুঙ্গের কথায়, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র এক জন মহীরূহ। পাহাড়ের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল। তাঁর জন্মদিবস পালনের মূল অনুষ্ঠান দার্জিলিঙে করার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ।”
কথা কম বলে উন্নয়নের কাজেই মনোযোগ দেওয়ার উপরে এ দিনও জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার প্রথমে ‘রায় ভিলা’ ও পরে লেবংয়ে পুলিশের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমল গুরুঙ্গকে পাশে বসিয়েই বলেছিলেন, ‘‘শুধু কথা বলে, হইচই বাধালে পাহাড়ের উন্নয়ন হবে না। কথা কম বলে কাজ করতে হবে। আর তা না হলে পাহাড়ের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
এ দিন সেই বক্তব্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এত দিন তো পাহাড়ে কেউ আসত না। আমরাই তো বারবার আসছি। আমরা নতুন দার্জিলিং গড়তে দায়বদ্ধ। সেই কাজটা মিলেমিশে করতে হবে। কাজ না-করে বড় বড় কথা বললে চলবে না। আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সব রকম চেষ্টাই তো করে যাচ্ছি। সে জন্যই তো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীর সব থেকে বড় অনুষ্ঠান পাহাড়ে করেছি।”
ফি বছরই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে কলকাতার রেড রোডে সুভাষচন্দ্রের জন্মদিবস পালনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই প্রথম কলকাতার বাইরে সেই অনুষ্ঠান হল। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দার্জিলিঙের অনুষ্ঠানে নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন ও টলিউডের তারকা সমাবেশও হয়।
বেলা সওয়া ১২টায় সুভাষচন্দ্রের জন্ম মুহূর্তে সাইরেন বাজিয়ে, বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দার্জিলিঙের হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ‘আস্থা’ নামে একটি বাজার তৈরি করা হবে। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সেই ভবনের শিলান্যাসও করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। |
|
|
 |
|
|