|
|
|
|
প্রতিবন্ধকতা জয়ের আরও সাত পুরস্কার
সোমনাথ চক্রবর্তী • কলকাতা |
কেবল রৌশনারা খাতুন নয়, প্রতিবন্ধকতার উজান ঠেলে নিজের স্বপ্নকে সফল করার দৌড়ে সামিল হয়েছে আরও সাত কন্যে।
কেউ স্বাস্থ্যকর পানীয়ের উদ্ভাবনে তাক লাগিয়েছে, কেউ দারিদ্রকে জয় করে এখনই হয়ে উঠেছে পেশাদার আলোকচিত্রী, কেউ আবার প্রতিবন্ধী হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছে।
এ রাজ্যের নাবালিকাদের মধ্যেও রয়েছে এমন আগুনের স্ফুলিঙ্গ। আজ, শুক্রবার রবীন্দ্র সদনে ‘জাতীয় শিশুকন্যা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে এমন আট কন্যাকে কুর্নিশ জানাবে সরকার। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে এই মেয়েরাই বীরাঙ্গনা। শুধু ছোটদের নয়, বড়দের কাছেও এগিয়ে চলার প্রেরণা।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই কৃতীদের এক-এক জনের হাতে ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হবে।
পুরুলিয়ার অখ্যাত বোঙ্গাবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্রী দেবাদৃতা মণ্ডল দিল্লির ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড রিসার্চ’-এর কর্তাদের নজর কেড়েছে। মফস্সলের মুখচোরা মেয়ের ভাবনায় রয়েছে এ দেশের গরিব ঘরের শিশুরা। পুষ্টির অভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে যাদের শৈশব। গম, গুঁড়ো দুধ, চিনি, সয়াবিনের মিশেলে শিশুদের জন্য সস্তার এক স্বাস্থ্যকর পানীয়ের উদ্ভাবনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দেবাদৃতা। |
|
পোস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরের ছাত্রী সুস্মিতা মণ্ডলের ছবি।—নিজস্ব চিত্র। |
পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় রয়েছে খিদিরপুরের ফিরোজা খাতুন, তমলুকের সিলি আচার্য বা মালদহের নুর বানু। দারিদ্র্য ফিরোজার স্বপ্নগুলো দমাতে পারেনি। প্রতিভা ও পরিশ্রমের ফসল কুড়িয়ে কলেজের প্রথম বর্ষেই ফিরোজা এক জন পেশাদার আলোকচিত্রী। ৫০ শতাংশ মানসিক প্রতিবন্ধী সিলি অ্যাথলেটিক্সের আসরে নামলেই অন্য রকম! গত বছর স্পেশ্যাল অলিম্পিক এশিয়া প্যাসিফিক মিটের আঞ্চলিক আসরে দৌড়ে রুপো ও ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে সে। নুরের লড়াইটা আবার অনেকটাই রৌশনারার ধাঁচের। মালদহের ছাত্রীটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে কিছুতেই মা-বাবার কথা শুনে অকালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নয়। সাহস করে বান্ধবীর মোবাইল থেকে সটান থানায় ফোন করে সে। পুলিশের হস্তক্ষেপে তার বিয়ে বন্ধ হয়।
রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের তরফে গোটা রাজ্য ঢুঁড়ে মেধাবিনীদের খুঁজতে তৎপরতা শুরু হয়। সেই সঙ্গে এটাও দেখা হচ্ছিল, কোন মেয়েদের কৃতিত্বকে তুলে ধরলে একটি ইতিবাচক সামাজিক বার্তা দেওয়া সম্ভব। তাই রৌশনারা, নুরদের কথা ভাবা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের শেরপুর গ্রামের ১৬ বছরের আসমা খাতুন বা বারাসতের নাজমা খাতুনও বিয়ের জন্য পড়াশোনা ছাড়তে রাজি হয়নি। চাপের কাছে মাথা না-নুইয়ে বিয়ে দিতে ইচ্ছুক মা-বাবার সঙ্গে সংঘাতে যেতেও তারা পিছপা হয়নি। রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এই সব মেয়েরা আমাদের সম্পদ। এদের দেখেই মেয়েদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে। এই মেয়েদের মাধ্যমেই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে চেতনাও গড়ে উঠবে।”
জাতীয় শিশুকন্যা দিবস উপলক্ষেই ‘বিয়ে নয়, চাই পড়াশোনা’ এই বার্তা সামনে রেখে সম্প্রতি স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে এক পোস্টার প্রতিয়োগিতার আয়োজন করেছিল রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরও। বিভিন্ন জেলার ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিয়া যোগ দেয়। প্রতি জেলা থেকে প্রথম তিন জনকে নিয়ে হয় রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতা। সেখানে প্রথম হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ আর আর বি বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা মণ্ডল। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাপাসএড়্যার যওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পূজা সামন্ত। তৃতীয় স্থান পেয়েছে হুগলির শেওড়াফুলির নেতাজি বালিকা বিদ্যামন্দিরের ঝুমা সাঁতরা। আজ, ওই মঞ্চ থেকে এই তিন জনকেও পুরস্কৃত করা হবে। |
|
|
|
|
|