নতুন নাম নিয়ে বিতর্ক সিপিএমে, তবে বাড়তি ভোট কংগ্রেসকেই
রাজ্যসভায় তাদের একমাত্র নিশ্চিত আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে, দিনভর দফায় দফায় আলোচনা করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল না সিপিএম! পুরনো মুখ বদলে এ বার যে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দিল্লিতে দলের পলিটব্যুরো বৈঠকেই সেই মর্মে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই নতুন মুখ কে হবেন, সেই প্রশ্নেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে। আপাতত ঠিক হয়েছে, এ রাজ্য থেকে দলের পলিটব্যুরো সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকে মতামত জানাবেন। তার পরে শরিকদের সঙ্গে কথা বলে নিয়ে নাম ঘোষণা করা হবে।
একটি মাত্র নাম নিয়ে সিপিএমের অন্দরে নজিরবিহীন টানাপোড়েন দেখা দিলেও এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে গ্রহণযোগ্য কোনও নির্দল প্রার্থীকে যে বামেদের উদ্বৃত্ত ভোট দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার অনুমোদিত হয়েছে রাজ্য বামফ্রন্টে। সিপিএমের পলিটব্যুরো ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। বাম শরিকেরাও এ দিন একই মতে সায় দিয়েছে। এর ফলে পঞ্চম আসনে কংগ্রেসের প্রস্তাবিত নির্দল প্রার্থী বামেদের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী আহমেদ হাসান ওরফে ইমরানকে হারিয়ে দিতে পারবেন। বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে এ দিন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “বামেদের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরেও ১২টি ভোট অতিরিক্ত থাকবে। যদি মালিহাবাদী বা তাঁর মতো কোনও নির্দলকে কংগ্রেস প্রার্থী করে, তা হলে আমরা তাঁকে ভোট দেব। বামফ্রন্টের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” যে হেতু সরাসরি কোনও দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন করতে হচ্ছে না, তাই এই রফাসূত্রে কংগ্রেস বা বাম, দুই শিবিরেই অস্বস্তি কম।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম আসনটিতে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ইতিহাসবিদ হোসেনুর রহমানকে দাঁড় করাতে পারে কংগ্রেস। হোসেনুরের নামে বাম শিবিরেরও আপত্তি নেই। এ ছাড়াও বিবেচনায় আছে বর্তমান সাংসদ সৈয়দ আহমেদ মালিহাবাদীর নাম। যিনি ৬ বছর আগে বাম ও কংগ্রেসের মিলিত সমর্থনেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা অবশ্য এখনও হয়নি। প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন বলেছেন, “রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে হাইকম্যান্ড। এ ব্যাপারে রাজ্য কংগ্রেসের মত জানার জন্য শনিবার আমাকে ও কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতাকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ওই দিন প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হয়ে যাবে।”
পঞ্চম আসনে রফাসূত্র বেরিয়ে এলেও নিজেদের আসনটি নিয়ে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়েছে আলিমুদ্দিন! নতুন প্রার্থী হিসাবে কে উপযুক্ত হবেন, এ দিন অন্তত গোটা দিন আলোচনা করেও তার মীমাংসা হয়নি! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একটি প্রভাবশালী অংশ ওই আসনে দলের ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করতে উৎসাহী। শারীরিক কারণে ফের রাজ্যসভায় না-দাঁড়ানোর ইচ্ছা জানিয়ে দলের কাছে সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা বিদায়ী সাংসদ শ্যামল চক্রবর্তীও ঋতব্রতের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। কিন্তু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য অংশ ঋতব্রতকে এখনই রাজ্যসভায় পাঠানোর বিপক্ষে। তা ছাড়া, গত এপ্রিলে দিল্লিতে যোজনা ভবনের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে ঘিরে বিক্ষোভ ও নিগ্রহের ঘটনায় ঋতব্রতের নাম জড়ানোয় তাঁকে প্রার্থী করলে বিতর্ক উঠতে পারে। রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে মতের ফারাক হওয়ায় দিল্লিতে সংসদীয় দলের নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে যোগাযোগ করে মত চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। ইয়েচুরি ঋতব্রতের পক্ষেই মত দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও বিষয়টি ঝুলে থাকায় এ রাজ্য থেকে দলের পলিটব্যুরো সদস্যরা আপাতত সূত্র খুঁজছেন।
ছাত্র-নেতা ছাড়াও সিপিএমের অন্দরে বিবেচনায় রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের নাম। তিনি দীর্ঘ দিন বিভিন্ন রাজ্যকে নিয়ে গড়া কর বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হওয়ায় দিল্লির রাজনৈতিক মহলে পরিচিত মুখ।
এ ছাড়াও, দলের অন্দরে চর্চায় আছে রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ (অঞ্জন) বেরা এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যের নাম। শেষ পর্যন্ত বর্ষীয়ান শ্যামলবাবুর জায়গায় ছাত্র-নেতাকে প্রার্থী করা হলে সিপিএমের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হবে।
আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে তাঁদের দলের রাজ্যসভার সাংসদ একেবারে শূন্য হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সৈরানি। আর এক শরিক আরএসপি-র অবস্থাও একই। তবে এ বারের ভোটে একমাত্র আসন তাদেরই দিতে হবে, এমন অনড় অবস্থান কোনও শরিকই নেয়নি। বৈঠকে ঠিক হয়, সিপিএমের প্রার্থীর নাম ঠিক হলে বিমানবাবু শরিকদের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
তবে এ সবের বাইরে পঞ্চম আসনের জন্য সমীকরণই লোকসভা ভোটের আগে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বামেদের উদ্বৃত্ত ভোট ১২। সেখানে কংগ্রেসের আছে ৩৮টি ভোট। তাই প্রার্থী দেওয়ার দায়িত্ব নেবে তারাই। ১০ নম্বর জনপথ-ঘনিষ্ঠ এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে হোসেনুর রহমানই এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে বিশিষ্ট মহল ও সামগ্রিক ভাবে সংখ্যালঘু সমাজে তাঁর কদর রয়েছে। তাই তাঁকে সমর্থন দিতে বামেরাও প্রস্তুত।” পক্ষান্তরে, তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, “কংগ্রেস-বাম যে হাত মিলিয়ে চলে, এটা আগেও দেখা গিয়েছে। এখন ফের তা দেখা যাচ্ছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.