মিলেছে শুধুই প্রতিশ্রুতি, মেলেনি উড়ালপুল
শোহর রোডের নিত্য যানজটের যন্ত্রণা মুক্তি পেতে হাবরা ২ নম্বর রেলগেটের কাছে অনেক দিন ধরেই একটি উড়ালপুল তৈরির দাবি করে আসছিলেন হাবরার মানুষ। প্রতি ভোটেই উড়ালপুল তৈরির প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু বাস্তবে আর উড়ালপুল পায়নি হাবরা। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক উড়ালপুল তৈরিতে আর কোনও বিলম্ব করা হবে না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি বলে হাবরাবাসীর অভিযোগ।
হাবরার ২ নম্বর রেল গেট থেকে চোংদা পর্যন্ত মাত্র রাস্তা তিন কিলোমিটার। কিন্তু যানজটের কারণে এই রাস্তাটুকু পেরোতে সময় লেগে যায় এক ঘণ্টারও বেশি। ২০০৮ সালে বাম আমলে তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ওই বছরের মার্চেই উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হবে। দু’কিলোমিটার লম্বা উড়ালপুলটি তৈরি করতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা খরচ হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনুসারী শিল্পের জন্যও আশ্বাস দেন তিনি।
দমদমের প্রাক্তন সাংসজ সিপিএমের অমিতাভ নন্দীও একাধিকবার ওই উড়ালপুল তৈরি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অবধিই।
নিত্য এমন যানজটেই নাকাল হতে হয় হাবরাবাসীদের। ছবি: শান্তনু হালদার।
এর পরে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে হাবরা থেকে জেতেন তৃণমূলের জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনিও একই প্রতিশ্রুতি দেন। উদ্যোগীও হন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাজ থমকে আছে।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, হাবরা শহরে যশোহর রোডে স্থানীয় ১ নম্বর ও ২ নম্বর রেলগেটে আরও দু’টি উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই দু’টি উড়ালপুল ১১০ মিটার ও ১৩০ মিটার লম্বা হবে। দু’টি তৈরি করতে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা করে খরচ হবে। তিনি বলেন, “ওই দু’টি উড়ালপুল তৈরির জন্য ২০১২ সালের জুলাই মাসে ৩৭ কোটি টাকা রেলকে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজ তৈরির জন্য টেন্ডারও ডাকা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর নির্দেশে কাজটির গতি কমিয়ে দিয়েছে রেল। উন্নয়ন নিয়ে অধীরবাবু রাজনীতি করছেন।”
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “পূর্ব রেলের কর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছি কেন কাজ বন্ধ রয়েছে। আলোচনা করে কাজ শুরু করা হবে।”
ইতিমধ্যেই মাটি পরীক্ষার ম্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। উড়ালপুলের পাশাপাশি কয়েকটি ভূগর্ভপথও তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক ভাবে ওই দু’টি উড়ালপুলের অনুমোদন দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায় কাজটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে কাজ থমকে রয়েছে।”
হাবরা শহরের যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক এখানে সরু হয়ে গিয়েছে। বনগাঁ-বাগদা, গাইঘাটা, গোবরডাঙা, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়ার মানুষকে সড়কপথে কলকাতা যেতে হলে হাবরা হয়েই যেতে হয়। মুমুর্ষু রোগী নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে বা হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স করে যেতে হলে যানজটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। এমনকী দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকার কারণে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে।
এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পণ্যবাহী ট্রাকও ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। ঢাকা-কলকাতা সরকারি বাসও হাবরা শহরের উপর দিয়েই যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় যানজটের সমস্যা না মেটায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বাসিন্দারা জানান, অনেক ক্ষণ ওই যানজটে দাঁড়িয়ে থাকার পরে যে গতিতে গাড়ি চলতে শুরু করে তাতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকী অনেকে মারাও গিয়েছেন। রাস্তার উপরে যাত্রী তোলার নামে দীর্ঘক্ষণ বাস, ট্রেকার, অটো দাঁড়িয়ে থাকে। যন্ততত্র দাঁড়িয়ে থাকে ভ্যান। অতীতে পুরসভার তরফে রাস্তার দু’ধারে নর্দমার উপরের স্ল্যাব থেকে জবরদখল সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নজরদারির অভাবে তা ফের দখল হতে বসেছে। হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য ১ নম্বর রেলগেটের কাছে হকার মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, লাইসেন্সহীন ভ্যান রিকশার দাপট এখনও কাটেনি। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও ফের বলেছেন, “হকার মার্কেট ও উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হলে হাবরা শহর যানজটমুক্ত হবে।”
মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন হাবরার মানুষ।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.