দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করার কথা। আর সে জন্য তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। কিন্তু স্পোর্টস কমপ্লেক্স উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু হলেও যাঁদের জমিতে সেটি গড়ে উঠেছে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি এখনও বিশ বাঁও জলে। ওই সব জমিদাতারা চাকরির দাবি নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে দরবার করলেও তাঁরা কোনও আশ্বাসের বাণী শোনাতে পারেননি। এতে জমিদাতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। যার ফলে র্স্পোটস কমপ্লেক্স উদ্বোধন নিয়ে ঝামেলার আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে বাম জমানায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী থাকার সময় এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য তাঁর দফতর থেকে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কমপ্লেক্স নির্মাণের জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে রায়দিঘি পঞ্চায়েতে ২ নম্বর চোদ্দোরশ্মি গ্রামের কাছে প্রায় ১৭ বিঘা জমি চাষিরা দিতে রাজি হন। তবে তাঁদের মধ্যে ৭-৮ জন চাষির দাবি ছিল স্পোর্টস কমপ্লেক্স চালু হলে সেখানে স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সেইমতো ঘোষণাও হয়েছিল শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর আর কোনও সাড়া মেলেনি বলে ওই পরিবারগুলির দাবি। |
কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের পর তৃণমূলের পরিচালনায় বর্তমানে কমপ্লেক্সের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ফের উঠেছে জমিদাতাদের চাকরির প্রশ্নটিও। জমিদাতাদের একজন স্থানীয় ২ নম্বর ১৪ রশ্মি গ্রামের বাসিন্দা অলক সরকারের দাবি, “স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জমি পাওয়া নিয়ে সে সময় সমস্যা হয়। তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আমার বাবা প্রয়াত অমিয় সরকার ওই কমপ্লেক্সের জন্য সাড়ে ৭ বিঘা জমি দান করেন। শিলান্যাসের সময় ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসনের উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়েছিল এই কমপ্লেক্স বাবার স্মৃতি হিসাবে নাম লেখা থাকবে। এবং এখানে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হলে আমার পরিবার-সহ অন্য জমিদাতা পরিবারের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বর্তমানে ওই কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পথে। কারা ওই কমপ্লেক্সে চাকরি পাবে সে নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি।” আর এক জমিদাতা গোপাল বৈদ্য বলেন, “আমাদের পরিবারের জমি রয়েছে ওই কমপ্লেক্সে। প্রতিশ্রুতি মতো আমরাও চাকরির দাবিদার। সে বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে বলা হয়েছে। তবে প্রয়াত অমিয়বাবুর ওই কমপ্লেক্সটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অবদান অনেক।” সমস্ত কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রমেশ পুরকাইত। তিনি বলেন, “ওই কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেব্রুয়ারি ৮ তারিখে আসার কথা শুনেছি। সঙ্গে থাকবেন ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্র। জমিদাতাদের চাকরি বিষয়ে আমার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি।”
তিন তলা ভবনের ওই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেল ভবন নির্মাণের কাজ শেষ। ভবনে তিন তলায় রয়েছে দর্শকদের বসার আসন। দোতলায় অফিস ঘর। এক তলায় ইন্ডোর গেমের ব্যবস্থা। মাঠে থাকছে ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট-সহ অন্য খেলার ব্যবস্থা। প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমার সময়েই কমপ্লেক্সের নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আবার নতুন করে কী করছে জানি না। তবে জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বা অস্থায়ী পদে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারাই ঠিক করবে।”
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ওই স্পোর্টস কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করার কথা। কমপ্লেক্সে নিয়ম মেনেই কর্মী নিয়োগ করা হবে।” |