ছাত্রভোটে বিরোধীদের ভরসা ই-প্রচার
গামী সপ্তাহের গোড়ায় ছাত্রভোট। অথচ, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সে ভাবে প্রচার করে উঠতে পারেনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) বিরোধী সংগঠনগুলো। অন্তত, অভিযোগ এমনই। এই পরিস্থিতিতে জমে উঠেছে ‘ই-প্রচার’। ফেসবুকের মতো সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের আবেদন তুলে ধরছেন। ‘শিক্ষাস্বার্থে’, ‘ছাত্রস্বার্থে’ নিজেদের সংগঠনের মনোনীত প্রার্থীদের জয়ী করার আবেদন জানাচ্ছেন। পেজে কেউ লিখছেন, ‘ছাত্রসমাজ আমাদের পাশে, আমরা গর্বিত, আমরা নিসংশয়। আমাদের রাঙাবে চোখ, এত সাধ্য রাখে না সময়।’ কেউ আবার সরাসরিই আবেদন জানাচ্ছেন, ‘লাইব্রেরিতে নতুন সংস্করণের বই সরবরাহ, পরিকাঠামো উন্নয়ন করে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন।’ শুধু ছাত্র পরিষদ, ডিএসও, এসএফআইয়ের মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোই নয়, সোস্যাল সাইটে ছাত্রভোটের প্রচার করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।
কিন্তু, কেন এমন ‘ই-প্রচার’? ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “হাতে গোনা দু’-তিনটি কলেজ ক্যাম্পাস বাদ দিলে কোথাও প্রচার করার পরিবেশ নেই। রাতের অন্ধকারে টিএমসিপি কর্মীরা আমাদের পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে দিচ্ছে, নয়তো খুলে দিচ্ছে। এটা কী সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ!” তাঁর কথায়, “ভোট এগিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের কাছে আমাদের সংগঠনের আবেদন পৌঁছনো জরুরি। তাই কর্মী-সমর্থকদের অনেকে সোস্যাল সাইটের মাধ্যমে প্রচার করছেন।” প্রায় একই বক্তব্য এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার। তিনি বলেন, “সোস্যাল সাইটের মাধ্যমে খুব সহজে সকলের কাছে বার্তা পৌঁছনো যায়।”
ফেসবুকে ভোট প্রচার ডিএসও, ছাত্র পরিষদ নেতা-কর্মীদের। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সৌগতর কথায়, “এ বার কী ভাবে ছাত্রভোট হচ্ছে, তা সকলেই দেখছেন। সর্বত্র পেশিশক্তির দাপট চলছে। যে সংখ্যক আসনে আমাদের প্রার্থী রয়েছে, তার থেকেও বেশি সংখ্যক আসনে আমরা প্রার্থী দিতে পারতাম। কিন্তু, টিএমসিপির গুণ্ডামির জন্য তা সম্ভব হল না।” ডিএসও’র জেলা সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, “কয়েকটি কলেজ ক্যাম্পাসেই প্রচারের সুযোগ রয়েছে। বাকি কলেজে প্রচারের পরিবেশই নেই। নানা বাধা-প্রতিকূলতা আসছে।” তাঁর কথায়, “তাই ব্যক্তিগত ভাবে আমাদেরও কেউ কেউ সোস্যাল সাইটে প্রচার করছেন।”
ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “সাংগঠনিক দুর্বলতা থেকে সকলের নজর ঘোরাতেই ওরা আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে।” তবে তিনিও মানছেন সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রচারের কথা। জেলা সভাপতির কথায়, “ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট আজকের দিনে প্রচারের একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের বহু কর্মী-সমর্থকও সাইটের মাধ্যমে প্রচার করছেন।”
আগামী ২৭ জানুয়ারি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন রয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ, ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে মনোনয়ন-পর্ব ফুরিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ, এ বার ছাত্রভোটে টিএমসিপিরই জয়জয়কার। নামমাত্র আসনে বিরোধী-প্রার্থী থাকায় ভোটের আগেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠন চালকের আসনে। তবে, মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো শহরে সামান্য হলেও উত্তেজনা রয়েছে। একই ভাবে উত্তেজনা রয়েছে চাঁইপাট, বেলদা, হিজলিতে। কারণ, এই সব এলাকার কলেজে টিএমসিপিকে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন? বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের মোট আসন সংখ্যা ১৪৫টি। এর মধ্যে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে মাত্র ২১টি আসনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এ বার প্রার্থীই দিতে পারেনি এসএফআই, ছাত্র পরিষদের মতো সংগঠন। যে ২১টি আসনে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে, তার মধ্যে ১৭টি ডিএসও’র। অর্থাৎ, ১২৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে টিএমসিপি। ফলে, ২১টি আসনে ভোটের ফল যাই হোক, ছাত্র সংসদে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
একই ভাবে টিএমসিপি দাপট দেখিয়েছে কলেজে। কেমন? পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ২৪টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কলেজে শুধু টিএমসিপির কর্মী-সমর্থকরাই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অন্য দিকে, বাকি যে ১১টি কলেজে বিরোধী-প্রার্থী রয়েছে, তারমধ্যে মাত্র ৫টি কলেজে টিএমসিপিকে লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ছাত্র সংসদ কার দখলে যাবে, বলা মুশকিল। বাকি ৬টি কলেজের সংসদে অবশ্য তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, এই সব কলেজে নামমাত্র আসনে বিরোধী- প্রার্থী রয়েছে। অন্যদিকে, যে সব কলেজে টিএমসিপিকে লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে, সেখানেও অবাধ প্রচারের সুযোগ নেই বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
এই পরিস্থিতিতে জমে উঠেছে ‘ই-প্রচার’। ছাত্র পরিষদের এক কর্মী বলছিলেন, “টিএমসিপি ক্যাম্পাসে প্রচার করতে দিতে না-পারে, কিন্তু সাইটের মাধ্যমে প্রচার আটকানোর সাধ্য ওদের আছে না কি!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.