অবাধে হারাচ্ছে সবুজ,
নিধিরাম প্রশাসন সেই দর্শকই

গাছ কাটার হিড়িকে দক্ষিণ প্রান্তের ইএম বাইপাস প্রায় মরুভূমির চেহারা নিলেও সরকারি হিসেবে তার কোনও প্রতিফলন নেই। বন দফতর জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে কলকাতা পুর-এলাকায় গাছ কাটা পড়েছে সাকুল্যে ১ হাজার ৭৮৫টি। মানে দু’হাজারও নয়!
এত কম? পরিবেশবিদদের কাছে তথ্যটা হাস্যকর ঠেকছে। তবে সরকারের যুক্তি মজুত। বন দফতরের বক্তব্য, এটা হল তাদের অনুমতি নিয়ে কাটা গাছের সংখ্যা। অনুমতি ছাড়া কাটা গাছের হিসেব এর মধ্যে নেই বলে জানিয়েছেন বনকর্তারা।
অর্থাৎ, বেআইনি ভাবে যে বিপুল গাছ কাটা হয়েছে ও হচ্ছে, সে ইঙ্গিত সরকারের কথাতেই স্পষ্ট। ২০০৬-এর আইনে অবৈধ ভাবে গাছ কাটায় শাস্তির বিধান রয়েছে। কারও শাস্তি হয়েছে কি? শুনে এক বনকর্তার পাল্টা প্রশ্ন, “সরকারি সংস্থাগুলোই তো বেশি নিয়ম ভাঙছে! কে শাস্তি দেবে?”
ওই বন-আধিকারিক জানাচ্ছেন, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত জমিতে বড় বড় গাছ কেটে আবাসন গড়ে উঠছে। আইন অনুযায়ী, কোনও বহুতল বা আবাসন-প্রকল্পে মোট জমির অন্তত ২০ শতাংশ সবুজায়নের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। সেখানে বাগান হবে, গাছ লাগাতে হবে। না-হলে প্রকল্পের অনুমোদনই পাওয়ার কথা নয়। আইন ভাঙলে সংশ্লিষ্ট পুরসভা কী ব্যবস্থা নিতে পারে, ২০০৬-এর আইনে তা-ও পরিষ্কার। অথচ কলকাতা পুর-এলাকায় এই সবুজ-শর্ত পূরণের কার্যত কোনও বালাই নেই। কেন?
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের ব্যাখ্যা, “আইনটিকে পুর-আইন বা বাড়ি তৈরির বিধির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। সেটা এখনও হয়নি বলেই নিয়মটা কার্যকর করা যাচ্ছে না।” আপাতত নতুন আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার আগে কিছুটা জায়গা সবুজের জন্য যাতে ছাড়া হয়, পুরসভা সে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ।
শুধু এই শর্ত নয়। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, নির্মাণকাজের সময়ে একটা গাছ কাটলে পাঁচটা নতুন গাছ লাগানোর নিয়মের তোয়াক্কা করেন না অধিকাংশ প্রোমোটার। এ ভাবে কলকাতায় সবুজের ছোঁয়া দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। ক্ষয়ের ব্যাপকতা কত, তার হিসেবও নেই। বস্তুত, কলকাতায় কোথায় কত গাছ রয়েছে, কোনটা কী ধরনের গাছ, তাদের বয়স কত, কোন গাছ কোন বয়সে পৌঁছলে কাটা যেতে পারে এ সবের কোনও তথ্যই কলকাতা পুরসভা, বন দফতর কিংবা কেএমডিএ-র হাতে মজুত নেই।
কারণ, কলকাতায় এখনও এক বারের জন্যও গাছসুমারি হয়নি!
পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, কোন গাছের আয়ু কখন ফুরোবে কিংবা কোন গাছ জনস্বার্থে কত বছর পরে কাটা উচিত, গাছসুমারিতেই তা ধরা পড়ে। সেই মতো গাছ চিহ্নিত করে আশপাশে কবে নতুন গাছ লাগানো দরকার, তার পরিকল্পনা তখনই ছকে ফেলা উচিত। পরিকল্পনা কার্যকর হলে গাছটি কাটার সময়ে দেখা যায়, নতুন গাছ ইতিমধ্যে ডালপালা মেলে পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করছে। দূষণ প্রতিরোধে বিদেশের বিভিন্ন বড় শহরে এ ভাবেই গাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কলকাতায় গাছসুমারি না-হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে কে কখন কোন গাছ, কোন বয়সের গাছ কোথা থেকে কেটে নিয়ে গেল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারও হদিস থাকছে না। সমস্যার সুরাহায় পুরসভা অবশ্য সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে গাছসুমারির দায়িত্ব। ঠিক হয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে ১ থেকে ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে গাছসুমারি হবে। পরের এক বছর হবে বাকি সব ওয়ার্ডে।
সুমারি না হয় হবে। কিন্তু গাছ বাঁচানোর আইন ঠিকঠাক প্রয়োগ হচ্ছে না কেন, পরিবেশবিদ মহলে এটাও বড় প্রশ্ন। ওঁদের আক্ষেপ, যত গাছ কাটা হচ্ছে, তার তিন-পাঁচ গুণ নতুন গাছ রোপণের নিয়মটি প্রশাসনিক গাফিলতির দরুণ স্রেফ কাগজে-কলমে থেকে যাচ্ছে। জাতীয় বনসৃজন ও প্রকৃতি উন্নয়ন পর্ষদের কো-অর্ডিনেটর তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসীম মজুমদারের পর্যবেক্ষণ, “ব্যর্থতার জন্য শুধু বন দফতরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সমস্যার বড় কারণ, উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে।” তা হলে কি এমনই চলবে?
বন দফতর কিন্তু আশা দিচ্ছে। রাজ্যের চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট (সিসিএফ) সৌরভ চৌধুরী বলছেন, “রাস্তা চওড়া করা, নিকাশি প্রকল্প, উড়ালপুল ও মেট্রো রেলের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজের কারণে বছর দুয়েক যাবৎ কিছু জায়গায় বনসৃজন বন্ধ রাখা হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ফের চারা লাগানো শুরু হবে। ইএম বাইপাস তো বটেই, ডায়মন্ড হারবার রোড, জেমস লং সরণির মতো আরও কিছু রাস্তার ধারে বনসৃজনের যথেষ্ট অবকাশ আছে বলে মনে করেন বনকর্তারা। দফতরের দাবি: গত এক বছরে খাস কলকাতায় ৩৫৭০টি নতুন গাছ পোঁতা হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়ামের আশপাশে সেনার রোপণ করেছে পাঁচ হাজার চারা।
নতুন চারার ক’টা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকছে? তা যাচাইয়ের কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে কি?
সিসিএফ সৌরভবাবু বলেন, “এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এক বার সমীক্ষা করানো হয়েছিল। ২০১০ সালের ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, গড়ে ৭৪ শতাংশ গাছ বাঁচছে। আবার ২০১৬-য় সমীক্ষা হবে।” মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “বনসৃজনের পরে গাছ বাঁচার হার খতিয়ে দেখতে আমরা এ বার সমীক্ষা করানোর চেষ্টা করছি।”

বলির বৃক্ষ ২
আইন
• আবাসনে মোট জমির অন্তত ২০% সবুজ চাই
• নচেৎ প্রকল্পে অনুমোদন নয়
• কোনও ব্যক্তি একটি গাছ কাটলে লাগাবেন দু’টি
• নির্মাণকাজে ১টি গাছের ক্ষতিপূরণ ৫টি।
বাস্তব
• পুর-বিধি বা বিল্ডিং রুল্সে এই আইন যুক্তই হয়নি।
• পরিণামে আবাসন-বহুতলে বল্গাহীন বৃক্ষছেদন।

(শেষ)

পুরনো খবর:
হাতির হানায় মৃত
জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে দল ছুট দাঁতালের আক্রমণে মৃত্যু হল গৃহবধূর। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে জলদাপাড়ার উত্তর রেঞ্জের হাসিমারা ৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে। মাদারিহাটের মেঘনাদ সাহা নগরের বাসিন্দা মৃত সিনু ওঁরাও (৪৫) পাঁচ পড়শির সঙ্গে কাঠ কুড়োতে জঙ্গলে ঢোকেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.