|
|
|
|
চিড়িয়াখানায় কাঁদছে, কাঁপছে তিন অতিথিই
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিন ভিআইপি অতিথি নিয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানার অফিসার আর কর্মীরা এখন মহাব্যস্ত। কিছুটা উদ্বিগ্নও।
কারণ, ওই তিন অতিথির কারও শরীর ভাল নেই। মনও যারপরনাই খারাপ। খাঁচার মধ্যে থরথর কাঁপছে তারা। চোখের কোণে জল। খাবার বড় একটা মুখে তুলছে না। ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না। নীরব চোখে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে আতঙ্ক আর দিশাহারা ভাব। আপাতত ওদের ঠাঁই হয়েছে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে। সেখানে সুস্থ হয়ে উঠলে আলিপুর চিড়িয়াখানার সব থেকে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠবে ওই তিন জন। ওরা এক থেকে দেড় বছর বয়সি তিন শিম্পাঞ্জি। একটি বালিকা। দু’টি বালক। এত ছোট শিম্পাঞ্জি এর আগে কখনও আসেনি আলিপুর চিড়িয়াখানায়। |
|
আলিপুর চিড়িয়াখানার পুরনো বাসিন্দা বাবুকে
বৃহস্পতিবার লেন্স-বন্দি করেছেন দেবাশিস রায়। |
তবে কোনও চিড়িয়াখানা থেকে আসেনি ওরা। বুধবার রাতে সুপ্রদীপ গুহ নামে বাগুইআটির এক পাখি ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে ওই তিন শিম্পাঞ্জিকে উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর। তিন শিম্পাঞ্জির মধ্যে একটিকে চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয় বুধবার গভীর রাতে। অন্য দু’টি শিম্পাঞ্জি বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ সেখানে পৌঁছয়। চিড়িয়াখানার হাসপাতালে একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছে তিন জনকে। নতুন পরিবেশে ধাতস্থ হওয়ার জন্য।
তদন্তকারীরা জানান, মধ্য আফ্রিকা থেকে বিমানে হংকং হয়ে ওই শিম্পাঞ্জিদের ঢাকায় আনা হয়েছিল। সেখান থেকে সড়কপথে কলকাতায়। তাদের নিয়ে পাচারকারীরা কবে মধ্য আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, জানা যায়নি এখনও। হংকং, বাংলাদেশ হয়ে কত দিনে তারা কলকাতায় পৌঁছেছে, তা-ও অজানা। কিন্তু সফরে যত দিনই লাগুক, দীর্ঘদিন যে তিন শিম্পাঞ্জির কোনও পরিচর্যা হয়নি, তাদের বিধ্বস্ত চেহারাতেই সেটা স্পষ্ট। চিড়িয়াখানার হাসপাতালে প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে পশু চিকিৎসকেরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ বলেন, “নতুন পরিস্থিতিতে ধাতস্থ করার জন্য তিন শিম্পাঞ্জিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়েছে। চিকিৎসাও চলছে।”
তিন অতিথির জন্য বিশেষ মেনু বা খাদ্যতালিকাও তৈরি। কলা, আপেল, ল্যাকটোজেন, সেরেল্যাক। তবে পেট পুরে খাচ্ছে না ওরা। বুধবার রাতে যে-শিশু শিম্পাঞ্জিটিকে আলাদা ভাবে চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সারা দিনই সে ছিল মনমরা। তবে রাতে অন্য দু’জনকে পেয়ে তাকে কিছুটা চনমনে মনে হয়েছে পশু চিকিৎসকদের। এক সময় তিন জনে গলা জড়াজড়ি করে বসে ছিল নতুন বাসায়। কাঁপছিল বলে তাদের গায়ে দেওয়া হয় গরম কাপড়। এক পশু চিকিৎসক বলেন, “যে-কোনও সংক্রমণ খুব সহজেই শিশু শিম্পাঞ্জিদের কাবু করে ফেলতে। পারে। তাই যত ক্ষণ তারা বাইরে থাকবে, তত ক্ষণ তাদের শরীরে নানা ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। যে-তিনটি শিম্পাঞ্জি এখানে এসেছে, তাদের দেহে কোনও সংক্রমণ আছে কি না, দেখতে হবে।”
আলিপুর চিড়িয়াখানায় জিরাফ, জেব্রা, জাগুয়ারের মতো প্রাণীদের বাচ্চা হলেও শিম্পাঞ্জির বাচ্চা কখনও হয়নি। দর্শকেরা তাই সব সময় এই চিড়িয়াখানায় প্রাপ্তবয়স্ক শিম্পাঞ্জিই দেখেছেন। এখন চিড়িয়াখানায় বাবু নামে যে-শিম্পাঞ্জিটি রয়েছে, তার বয়স ২৬ (চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জিরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছর বাঁচে)। বাবুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গিনী খুঁজছেন চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষ। এখনও তা মেলেনি। এর মধ্যে এ ভাবে তিন-তিনটি শিম্পাঞ্জি যে চিড়িয়াখানায় চলে আসবে, কর্তৃপক্ষ তা ভাবতেও পারেননি। চিড়িয়াখানার এক কর্তার মন্তব্য, “শিম্পাঞ্জিগুলিকে বাঁচানোটা এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।”
বাগুইআটির বাড়ি থেকে আটক করা পাঁচটি মার্মোসেট বুধবার রাতেই পৌঁছয় চিড়িয়াখানায়। তাদেরও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। তাদের মধ্যে দু’টি একেবারেই শিশু। কয়েক দিন পরে তাদের চিড়িয়াখানার অন্য মার্মোসেটদের সঙ্গে রাখা হবে বলে চিড়িয়াখানার সূত্রের খবর। শিম্পাঞ্জি, মার্মোসেট ছাড়াও সুপ্রদীপের বাড়িতে পাঁচটি ম্যাকাও, ছ’টি কাকাতুয়া এবং চারটি ‘গ্রে প্যারট’ বা ধূসর টিয়া বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেগুলো এখনও ওই বাড়িতেই আছে। চিড়িয়াখানার কর্তারা জানান, পাখিগুলো হাতে পেলে তাঁরা তাদের পাখিদের খাঁচাতেই আলাদা ভাবে রাখবেন। |
|
|
|
|
|