আলু চাষে নাবিধসা রোগ দেখা দেওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে গোঘাটের চারটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের। চিন্তায় কৃষি দফতরও। রোগের প্রতিকারে কী ধরনের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে ওই দফতরের পক্ষ থেকে লিফলেট বিলি, গ্রামে সচেতনতা শিবির এবং কৃষি-প্রযুক্তি সহায়কদের সাহায্যে প্রচার চালানো শুরু হয়েছে। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, ওষুধ প্রয়োগ করেও আলুর পচন থামানো যাচ্ছে না।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোঘাটে এ বার মোট আট হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বদনগঞ্জ-ফলুই ১ ও ২, পশ্চিমপাড়া এবং শ্যামবাজার এই চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক হারে পোখরাজ বা সুপার সিক্স জাতীয় জলদি প্রজাতির আলু চাষ হয়েছে । মূলত ওই সব জমির আলুতেই নাবিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, আলুগাছের ডাঁটায় এবং কাণ্ডে বাদামি রংয়ের ক্ষত হচ্ছে। সেই ক্ষত তাড়াতাড়ি বেড়ে গিয়ে পচন ধরে গোটা গাছ কালো হয়ে যাচ্ছে। মাটির তলার আলুতেও পচন ধরছে।
মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “কুয়াশা এবং শীতের ওঠানামার কারণে ওই চারটি পঞ্চায়েতে আলুচাষে নাবিধসা রোগ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যে সব জমিতে পোখরাজ বা সুপার সিক্স জাতীয় জলদি প্রজাতির আলু চাষ হয়েছে সেই জমিতেই নাবিধসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জ্যোতি বা চন্দ্রমুখী প্রজাতির আলুগাছগুলি বিশেষ আক্রান্ত হয়নি। ধসা রোগ প্রতিকারে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছি।”
রোগ প্রতিকারে কৃষি দফতর ওই সব জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখা বা অতি প্রয়োজনে মাটি ভেজানোর মতো হালকা সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে। সার দেওয়া বন্ধ রাখা এবং ছ’রকম ছত্রাকনাশকের মধ্যে যে কোনও একটি স্প্রে করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
তবে, ওই চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ঠিক কত পরিমাণ জমির আলু নাবিধসা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই হিসাব এখনও পুরোপুরি করে উঠতে পারেনি কৃষি দফতর। তবে, চাষিদের অভিযোগ, ৬০ শতাংশের উপর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পশ্চিমপাড়ার বাবুরামপুর গ্রামের চাষি শেখ রমজান খান বলেন, “মাঘ মাসের গোড়ায় পাঁচ বিঘা জমিতে পোখরাজ আলু চাষ করেছিলাম ভাল লাভের আশায়। বিঘাপিছু খরচ হয়েছে গড়ে ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু সব জমির আলুই রোগাক্রান্ত হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।” প্রায় একই বক্তব্য ফলুই গ্রামের বিকাশ চানকেরও। তিনি বলেন, “দু’বিঘা জমিতে পোখরাজ আলু চাষ করেছি। কিন্তু ধসা রোগের ফলে কোনও আলুই ঘরে তুলতে পারব না বলে মনে হচ্ছে।” |