শাসক দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের জেরে তিন দিন ধরে উত্তেজনা রয়েছে আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েত এলাকার শেখপুর গ্রামে। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য-সহ কয়েক জনকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। জাহানারা বেগম নামে ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটার অভিযোগ মানেনি। গোলমালে জড়িত অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানিয়েছেন, শেখপুরে তৃণমূল নেতা আকবর আলির অনুগামীদের সঙ্গে আরামবাগের বর্তমান পুরপ্রধান, ওই দলেরই স্বপন নন্দীর অনুগামীদের বিবাদ দীর্ঘদিনের। গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থিপদ নিয়ে সেই বিবাদ বড় আকার নেয়। আকবরের অনুগামীরা প্রার্থী হিসেবে দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়ান। তার মধ্যে শেখপুর ৪ নম্বর পঞ্চায়েত আসনে জিতে যান জাহানারা বেগম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাসেও দু’পক্ষের বিবাদ মেটেনি। সোমবার থেকে মারধরের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগও উঠছিল দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে যায় পুলিশ।
জাহানারার অভিযোগ, “আমি ঘরে একা ছিলাম। মহিলা পুলিশ-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আমার বিরুদ্ধে এলাকায় অশান্তি বাধানোর অভিযোগ তুলে লাঠিপেটা করে। আমার দেড় বছরের ছেলেকেও রেয়াত করেনি।” তবে, এ নিয়ে জাহানারা বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
পুলিশের দাবি, তল্লাশি চালানোর সময় ওই মহিলা বাধা দিচ্ছিলেন। মহিলা পুলিশকর্মীরা তাঁকে সরিয়ে দেন। কাউকে মারধর করা হয়নি। গ্রামে গোলমালে জড়িত অভিযোগে আব্বাস আলি নামে এক জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা পলাতক।
স্বপন নন্দীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা নির্মল পোড়েলের অভিযোগ, “জাহানারা সিপিএমের দুষ্কৃতীদের নিয়ে গ্রামে দলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে চলেছে।” পক্ষান্তরে, আকবর আলির অনুগামী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা আমির চৌধুরীর পাল্টা অভিযোগ, “বিনা প্ররোচনায় আমাদের লাগাতার মারধর করে চলেছে দলেরই একটি গোষ্ঠী। আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অভিযোগ করছে। পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য-সহ আমাদের কয়েক জনকে পেটানো হল।”
গ্রামে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়ে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার দাবি, “ব্যক্তিগত বা পাড়াগত ঝগড়া নিয়ে গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে দল বা পঞ্চায়েতের কোনও যোগ নেই। অশান্তির সঙ্গে যারাই যুক্ত থাক, পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” |