কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েত
তিন দশকের আন্দোলনে মিটতে চলেছে জলসঙ্কট
তিন দশক ধরে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের জন্য তাঁরা কখনও রাস্তা অবরোধ করেছেন, কখনও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কখনও সামিল হয়েছেন বিক্ষোভে। অবশেষে জলসঙ্কট মিটতে চলেছে চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের চারটি মৌজার বাসিন্দাদের। তৈরি হচ্ছে জলপ্রকল্প। বিশাল জলাধার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাইপলাইনের সাহায্যে আগামী বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
সিমলা, ধরমপুর, চুঁচুড়া এবং উত্তর চন্দননগর এই চারটি মৌজা নিয়ে কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। বেশির ভাগই গরিব। পঞ্চায়েতের এক দিকে চুঁচুড়া পুর এলাকা। অন্য দিকে, চন্দননগর পুর এলাকা। দু’টি পুর এলাকাতেই বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ হয় নিয়মমাফিক। কিন্তু মাঝে পড়ে কয়েক দশক ধরে জলসঙ্কটে ভুগছে কোদালিয়া। কেননা, সেখানে গড়ে ওঠেনি বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ ব্যবস্থা। গ্রামের যাঁরা অবস্থাপন্ন, তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে বাড়িতে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ গ্রামবাসীকে ব্যবহার করতে হয় পুকুর বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রাস্তার কলের জল। সেই জল নিতেও আবার প্রতিদিন লাইন পড়ে সকাল-সন্ধ্যায়। তাই বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন গ্রামবাসীরা।

তৈরি করা হচ্ছে জলাধার। ছবি: তাপস ঘোষ।
সেই দাবি মেনেই জলপ্রকল্প গড়তে উদ্যোগী হয় পঞ্চায়েত। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি পল্লিশ্রী এলাকায় জলাধার নির্মাণের ছাড়পত্র মেলে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জলাধার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১০০ ফুট উঁচু এবং দেড় লক্ষ গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধার নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ময়নাডাঙা, দেবীপুর এবং ফার্ম সাইড রোডের বাসিন্দাদের দানের জমিতে গড়া হচ্ছে তিনটি পাম্প হাউসও। গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল তুলে জলাধারে পাঠানো হবে। তার পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা সরবরাহ করা হবে। গোটা প্রকল্পটিতে খরচ হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বাংলা নববর্ষের দিন থেকেই বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ শুরু করা হবে।” একই আশ্বাস চুঁচুড়া সদর মহকুমার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুস্মিত বাগচীরও।
১৯৭৮ সালে তৈরি হয় কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েত। তখন থেকে ২০০৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। কিন্তু তারা জলসঙ্কট মেটানোর কোনও চেষ্টাই করেনি বলে অভিযোগ তৃণমূলের। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের কোদালিয়া-১ ও ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক অমল মিস্ত্রি। তাঁর দাবি, “আমরা অনেক দিন ধরেই জল সরবরাহ প্রকল্প চালু করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাছে দরবার করেছি। কিন্তু জায়গার অভাবে আমরা প্রকল্পের চূড়ান্ত খসড়া জমা দিতে পারিনি।”
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সদর) সুস্মিতবাবু বলেন, “আগে পঞ্চায়েত যে পদ্ধতিতে এই প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করেছিল, তাতে বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে অসুবিধা হত। তার পরে নতুন ভাবে আর কোনও প্রকল্পের খসড়া জমা পড়েনি। বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিতে যে খসড়া জমা দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতেই প্রকল্পটি গড়া হচ্ছে।”
দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরে নিজের বাড়িতে এ বার পানীয় জল মিলবে, এই খুশিতেই এখন মজেছেন গ্রামবাসীরা। পল্লিশ্রীর বাসিন্দা, ৭৫ বছরের বৃদ্ধ শান্তিরাম হালদার বলেন, “জীবনের বেশির ভাগটাই কাটল জলের সমস্যায়। শেষ জীবনে একটু স্বস্তি পাব, খুবই আনন্দ হচ্ছে।” ময়নাডাঙার স্বপন মৈত্র বলেন, “আর কষ্ট করে বাইরে থেকে জল বয়ে আনতে হবে না। নববর্ষে এটা সত্যিই একটা সুখবর।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.