রৌশনারাকে আজ কুর্নিশ জানাবে রাজ্য সরকার
গুনও তাকে দমাতে পারেনি। ‘নবজন্মে’ও পড়াশোনার জন্য জেদটা একই রকম রয়ে গিয়েছে রৌশনারা খাতুনের।
রৌশনারা খানাকুলের কাঁটাপুকুর গ্রামের সেই কিশোরী, বিয়ে করতে না চাওয়ায় কেরোসিন ঢেলে যাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল তার সৎমা, সৎ দিদিমা এবং বাবার বিরুদ্ধে। ৮০% দগ্ধ অবস্থায় তাকে যখন এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বাঁচার আশা ছিলই না। চিকিৎসা চলে তিন মাস। ঘটনার পর তাকে বাড়ি ছাড়তে হলেও মেয়েটি পড়াশোনা ছাড়েনি। তৈরি হচ্ছে মাধ্যমিকের জন্য। সারা গায়ে পোড়া দাগ নিয়ে রৌশনারা বলে, “বিয়ে নয়। আগে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। পরে বিয়ের কথা ভাবব।”
বছর পনেরোর মেয়ের এই সাহসিকতাকেই আজ, শুক্রবার কুর্নিশ জানাতে চলেছে রাজ্য। রবীন্দ্র সদনে ‘জাতীয় শিশুকন্যা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে তাকে পুরস্কৃত করবে সমাজকল্যাণ দফতর। তার জন্য ব্লক প্রশাসন গাড়ির ব্যবস্থা করেছে। শুনে রৌশনারা বলে, “ভাল লাগছে। সবাইকে বলেছি। বাবা-মাকেও।”
‘মা’ অর্থাৎ রৌশনারার সৎমা দুলেহারা বেগম ও বাবা শেখ রফিকুল ইসলামকে গত বছর ৮ মে-র ঘটনার পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাঁরা এখন জামিনে মুক্ত। হাসপাতাল থেকে রৌশনারাকে বাড়িতে ফিরতে দেননি তার পিসি নেহেরা বেগম। কাঁটাপুকুর থেকে এক কিলোমিটার দূরে পোল গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এখন সেখানেই থাকে রৌশনারা।
সেখান থেকেই পুরস্কারের খবর সৎমা-বাবাকে জানাতে ভোলেনি মেয়েটি। তার কথায়, “সে দিন ঠিক কী হয়েছিল, আজও জানি না। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। অভিযোগটা করেছিলেন জেঠামশাই। পুরস্কার পাচ্ছি শুনে বাবা-মা খুশি।” তার আর্তি, “আমার পুড়ে যাওয়া নিয়ে কেউ যেন মা-বাবাকে দায়ী না করেন। যেখানে যাই অনেকেই সৎমায়ের প্রসঙ্গ তোলেন। কষ্ট হয়। ওঁদের ক্ষমা করে দিয়েছি।”
ক’মাসে রৌশনারার সঙ্গে পাল্টেছেন রফিকুল ও তাঁর স্ত্রী দুলেহারাও। মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ এখনও মানেন না। তবে, মানছেন যে, নাবালিকা মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করে ঠিক করেননি। দুলেহারার কথায়, “অনুষ্ঠানে যাব। সবাইকে বলব, দেখো আমি সেই মা, যে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়ে অন্যায় করেছি। সকলের কাছে ক্ষমা চাইব। মেয়ে আমাকে ভুল বোঝেনি।” জরির কারিগর রফিকুল বলেন, “মেয়ে পুরস্কার পাবে, আনন্দ হচ্ছে। মেয়েকে বলেছি, তুই যত দূর পড়তে চাইবি যে কোনও মূল্যে পড়াব।”
পাতুলের গণেশবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দেবে রৌশনারা। স্কুল তার জন্য গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করেছে। বন্ধুদের সঙ্গে পিসির বাড়ির কাছেবেড়ায় রৌশনারা। আর ডুব দেয় পড়াশোনায়।
এর ফাঁকেই থাকে মা-বাবার জন্য অপেক্ষা। মাধ্যমিকের পরই কাঁটাপুকুরে ফিরতে চায় রৌশনারা। সাহসিনীর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে গোটা গ্রামও।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.