|
|
|
|
টেলিকমকর্মীর মুক্তিতে আন্দোলন
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও আগরতলা
২৩ জানুয়ারি |
মিজো গাড়িচালকদের মুক্ত করতে একদিকে সে রাজ্যে তীব্র আন্দোলন, অন্যদিকে অপহৃত টেলিকমকর্মী দীপ মণ্ডলের জন্য বাঙালিদের উদাসীনতাএই বৈপরীত্যে অবাক মিজোরাম পুলিশ।
পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, অপহৃত দুই গাড়িচালকের মুক্তির দাবিতে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভের ‘ঝড়’ উঠেছিল। তাতে জঙ্গি সংগঠন এবং সরকারদু’তরফের উপরই চাপ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, অপহৃত বাঙালি টেলিকমকর্মী দীপ মণ্ডলের জন্য তাঁর পরিবার ছাড়া কোনও বাঙালি সংগঠন বা ত্রিপুরার বাঙালিরা সরব হননি।
দীপবাবুও কয়েকদিনের মধ্যেই মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করার পাশাপাশি মামিতের এসপি রোডিংলিয়ানা চাওংথু বলেন, “দীপ বাঙালি। অপহরণকারীরা ত্রিপুরার। দীপকে আটকে রাখা হয়েছে বাংলাদেশে। মিজো দুই চালক এবং ওই বাঙালি টেলিকমকর্মীর জন্য মিজোরামে এত আন্দোলন হল। ত্রিপুরার বাঙালিরাও যদি একজোট হয়ে জঙ্গিদের উপরে চাপ দিতেন, তাহলে পুলিশ-প্রশাসনের অনেকটাই সুবিধা হত।”
এ নিয়ে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, ‘‘অপহৃত বাঙালি ছেলেটিকে উদ্ধারের ব্যাপারে মিজোরাম থেকে সরকারি পর্যায়ে ত্রিপুরা সরকারকে অনুরোধ না করা হলে, রাজ্য কী ভাবে উদ্যোগী হবে? এখনও পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে কোনও সংগঠন বা রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন এ বিষয়ে জঙ্গিদের আবেদন জানিয়েছে কি না জানা নেই।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বিধায়ক আশিস সাহাও জানিয়েছেন, রাজনৈতিক যুব সংগঠন বা সামাজিক সংগঠন এখনও এ নিয়ে ত্রিপুরায় কোনও আন্দোলন শুরু করেনি।
প্রায় দু’মাস আটকে রাখার পর, মামিত জেলার ডাম্পারেংপুই থেকে অপহৃত দুই গাড়ি চালক সাংলিয়ানথাংগা ও লালজামলিয়ানাকে ২০ জানুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন জঙ্গলে মুক্তি দেয় জঙ্গিরা। কিন্তু, তাঁদের সঙ্গেই অপহৃত দীপবাবুকে ছাড়া হয়নি। রবিবার তিনি বাড়িতে ফোন করে জানান, তাঁকে জঙ্গিরা মারধর করছে। জমি-বাড়ি বিক্রি করে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতেও চাপ দিচ্ছে অপহরণকারীরা।
মঙ্গলবার সকালে মিজো সীমানার সিলসুরি গ্রামে পৌঁছন মুক্ত দুই চালক। তাঁদের মামিত পৌঁছতে রাত হয়ে যায়। এসপি জানান, মাঝরাস্তায় প্রত্যেকটি গ্রামেই তাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় টাকা, ডিম, মাংস। মামিতে পৌঁছনোর পর, তাঁদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালানো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি দু’জনকে সম্বর্ধনা দেয়। দেওয়া হয় টাকা, দেশি মুর্গি ও অন্য উপহার। এখানেই শেষ নয়। বুধবার আইজলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর লালজিরলিয়ানা ও মিজো ছাত্র সংগঠন তাঁদের সম্বর্ধনা দেন।
এসপি জানান, এখনও তিনি দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাননি। প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানিয়েছে, ৬ জন সশস্ত্র এনএলএফটি জঙ্গি এবং ৬ জন ব্রু জঙ্গি তাঁদের বাংলাদেশের কোনও জঙ্গলে আটকে রেখেছিল। কখনও গাছে, কখনও গ্রামের বাড়িতে, কখনও বা ঝুম-কুটিরে তাঁদের রাখা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই বদলে যেত জঙ্গিদের আস্তানা। তাঁদের উপরে অপহরণকারীরা কোনও অত্যাচার করেনি। তাহলে দীপ মণ্ডল কেন মারধরের কথা বললেন?
এসপি বলেন, “মুক্ত চালকরা জানিয়েছে, তাঁদের ও দীপকে বাড়িতে মারধরের কথা বলতে বাধ্য করা হত। যাতে, বাড়ির লোক ভয়ে মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করে। তবে, জঙ্গিরা দীপবাবুকে মারেনি।”
ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, যে সব রিয়াং শরণার্থী মিজোরামের মামিথ জেলা থেকে পালিয়ে উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, অপহৃত দু’জন মিজো গাড়ি চালককে মুক্তি দেওয়ার পরই তাঁরা স্বভূমিতে ফিরে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে কয়েক’শো রিয়াং সম্প্রদায়ের মানুষ উত্তর ত্রিপুরায় চলে এসেছিলেন। |
|
|
|
|
|