|
|
|
|
মন্ত্রীকে শুধু ভাষা নিয়েই সতর্ক করলেন অরবিন্দ
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৩ জানুয়ারি |
ভাঙলেন, তবু একেবারেই মচকালেন না। বিরোধীরা দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীকে অপসারণের প্রবল দাবি তুললেও তাঁর বিরুদ্ধে ন্যূনতম কড়া ব্যবস্থাও নিলেন না মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ সোমনাথকে শুধু ডেকে পাঠিয়ে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলা হল। প্রকাশ্যে তাঁর আচরণ বা মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও কোনও কড়াকড়ি চাপায়নি দল। যার নিট ফল, কংগ্রেস-আপ স্নায়ুযুদ্ধের পারদ চড়ল আরও কয়েক ধাপ।
দিন কয়েক আগে সোমনাথ বলেছিলেন, “অরুণ জেটলি ও হরিশ সালভের মুখে থুতু দেব।” সেই মন্তব্যের কথা মাথায় রেখেই কি আজকের সতর্কবাণী। চার বিদেশিনির বাড়িতে সদলবল চড়াও হয়ে তাঁদের শ্লীলতাহানির আরও গুরুতর যে অভিযোগ সোমনাথের মাথায় ঝুলছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ আপের। দলীয় সূত্রের খবর, বিচার বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে নারাজ অরবিন্দ। ওই বিদেশিনিদের এক জন ভিডিও ফুটেজ দেখে সোমনাথকে চিহ্নিত করেছেন। আজ ডিসিপি (দক্ষিণ দিল্লি)-র কাছ থেকে দু’দিনের মধ্যে এই ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
আজ উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করেন অরবিন্দ। বেরিয়ে বলেন, রুটিন সাক্ষাতে এসেছিলেন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে জল্পনার অবকাশ থাকছে। দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলও দেখা করে উপ-রাজ্যপালের সঙ্গে। সোমনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগের যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, দিল্লি পুলিশকে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার জন্য উপ-রাজ্যপালকে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। |

দিল্লিতে দলের বৈঠকে আইনমন্ত্রী
সোমনাথ ভারতী। ছবি: পিটিআই। |
ঘটনাচক্রে, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধেই আজ এফআইআর দায়ের হয়েছে। রেল ভবনের সামনে ধর্নায় বসে ১৪৪ ধারা ভাঙা, হিংসা ও জনতাকে খেপিয়ে তোলার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে এনেছে দিল্লি পুলিশ। রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, কেজরিওয়ালের ধর্না তুলতে দু’জন পুলিশকে সবেতন ছুটিতে পাঠানোর ‘আংশিক সমঝোতা’টুকুও করা উচিত হয়নি হাইকম্যান্ডের। দরকার ছিল কড়া থাকার। আজ কেজরিওয়াল ঘুরিয়ে কেন্দ্রের তাসই খেলেছেন। সোমনাথের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করেননি। আবার তাঁকে সতর্ক করার বার্তা দিয়ে বিরোধীদের দাবি আংশিক মেনেছেন।
বলতে গেলে, এক রোমাঞ্চকর রাজনৈতিক নাটক দেখছে রাজধানী। যেখানে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে প্রধান শাসক দল ও সমর্থক দলের মধ্যে। যা দেখে বিশেষজ্ঞদের মত, বিষয়টি ক্রমশ এমন দিকে গড়াচ্ছে যেখান থেকে কংগ্রেস বা আপ কারওই ফেরার পথ নেই। কেজরিওয়াল চাইছেন, পরিস্থিতি এমন করে তুলতে যাতে সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস জানে, সমর্থন প্রত্যাহার হলে কেজরিওয়ালেরই লাভ। সে ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যাবতীয় বিতর্ক হিমঘরে চলে যাবে। আপ তখন খোলা মনে লোকসভা ভোটের জন্য ঝাঁপাবে। বিপদ বাড়বে কংগ্রেসের। অতএব তাদের রণকৌশল, চাপে রাখব আবার সমর্থনও তুলব না।
কিন্তু কত দিন? শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি হবে এই নাটকের? কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা ব লেন, “প্রত্যেক ঘটনারই নিজস্ব একটা গতি থাকে। সেটাই প্রকৃতির নিয়ম।” সঙ্ঘাতের পারদ চড়ছে ঠিকই। কিন্তু মাঝপথে কোন ঘটনা অপেক্ষা করে আছে, কেউ জানে না। রাজধানীর রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করা দু-এক জনের মনে পড়ে যাচ্ছে, ১৯৮৯ সালের কথা। একই সঙ্গে বিজেপি ও বামেদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছিলেন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। বিজেপি বলেছিল, মণ্ডল কমিশন নিয়ে এগোতে পারবেন বিশ্বনাথপ্রতাপ। সরকারের সমর্থন থাকবে। একই সঙ্গে রামমন্দির কর্মসূচিও জারি রাখবে বিজেপি। সমীকরণের আবহে আচমকা যোগ হয় একটি ঘটনা। রথযাত্রায় বেরোনো লালকৃষ্ণ আডবাণীকে গ্রেফতার করে বসে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদের পুলিশ। যার জেরে কেন্দ্রের থেকে সমর্থন তুলে নিতে হয় বিজেপিকে।
পোড়খাওয়া রাজনীতিকরা তাই বলছেন, আপ-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই এখন ধৈর্য ধরা ছাড়া গতি নেই। কে বলতে পারে, আচমকা কোনও রাজনৈতিক ঝটকাই হয়তো তাদের দৈনিক টানাপোড়েনকে পৌঁছে দেবে চূড়ান্ত গন্তব্যে। |
|
|
 |
|
|