রাস্তা এতটাই সঙ্কীর্ণ যে দমকলের গাড়িই ঢুকতে পারল না। আগুন নেভাতে হল স্থানীয় বাসিন্দাদের। দমকলকে দাঁড়িয়ে থাকতে হল ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তপসিয়া থানার ধোবিয়া মাঠে একটি বস্তিতে আগুন ধরে যায়। ভস্মীভূত হয়ে যায় এই বস্তির প্রায় ১৫টি ঝুপড়ি। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। তাঁরা সকলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। তবে আগুনে কোনও হতাহতের খবর নেই। |
অগ্নিকাণ্ডের পরে। বৃহস্পতিবার, তপসিয়ায়। |
দমকল জানিয়েছে, খবর পেয়ে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন এবং তপসিয়া থানার পুলিশকর্মীরা যান। তবে রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ হওয়ার ফলে দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। দমকলকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে। বস্তিবাসীরাই পাশের একটি পাতকুয়ো এবং আশেপাশের বাড়ি থেকে জল এনে আগুন নেভান।
কেন ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারল না দমকল? ঘিঞ্জি এলাকায় ঢোকার জন্য কিছু দিন আগেই ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করেছে দমকল। তেমন একটি গাড়িও এ দিন গিয়েছিল দুর্ঘটনাস্থলে। কিন্তু দমকলের বক্তব্য, রাস্তা এতই সঙ্কীর্ণ ছিল যে ছোট গাড়িও ঢোকানো সম্ভব হয়নি। মাঝপথেই সেটি আটকে যায়। দমকল সূত্রে খবর, আগুন নেভানোর জন্য দমকলের যে জল দেওয়ার পাইপ রয়েছে, তা ২০ ফুট লম্বা। ওই এলাকাটি অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং গলির রাস্তা খুব সরু হওয়ায় দমকলের গাড়িকে প্রায় ৪০ ফুটেরও বেশি দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে সেখান থেকে জলের পাইপগুলিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
দমকল কর্তাদের বক্তব্য, তপসিয়া, তিলজলা, কড়েয়ার মতো কলকাতা পুরসভার একাধিক ঘিঞ্জি এলাকা রয়েছে, যেখানে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি পৌঁছতে পারবে না। বছর খানেক আগে তিলজলা এলাকায় এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল দমকল-বাহিনীকে। সরু রাস্তা এবং আশেপাশে জলের জোগান না থাকার জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঘিঞ্জি এলাকাগুলির ভিতরে, যেখানে সম্ভব সেখানে দমকলের গাড়ি ঢোকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর যেখানে সম্ভব নয় সেই এলাকায় দমকলের গাড়ি যত দূর পর্যন্ত ঢুকতে পারে, সেই জায়গার কাছে জলের জোগানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে পুরসভা ও দমকল কর্তৃপক্ষ যৌথ ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সমীক্ষা চালান। এর পরেই শহরের ১৪১টি ওয়ার্ড ঘুরে ৮১টি জায়গা চিহ্নিত করেন পুর-প্রশাসন ও দমকল দফতরের অফিসারেরা। |
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই সব জায়গায় গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আর তা চালানোর জন্য একটি করে চাবিও দমকল দফতরের হাতে দেওয়া হয়েছে। আগুন নেভাতে জলের প্রয়োজন হলে, তা ব্যবহার করতে পারবে দমকল বাহিনী। যদিও এ দিন যে এলাকায় আগুন লেগেছিল, সেখানে কোনও গভীর নলকূপ বসানো হয়নি বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এলাকাটি পার্ক সার্কাস পাম্পিং স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় গভীর নলকূপ বসানো হয়নি।” ওই ওয়াডের্র কাউন্সিলর দেবাংশু রায় বলেছেন, “কলকাতা পুরসভাকে এই ব্যাপারে বারবার জানানো হয়েছে। পুরসভা বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়নি।”
|