|
|
|
|
স্কুলছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের নালিশ, গ্রেফতার শিক্ষক
ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • সাঁইথিয়া |
চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সাঁইথিয়া। ক্ষুব্ধ জনতাকে বাগে আনতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায় বলেও অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে সাঁইথিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সনৎকুমার দাস ওই স্কুলেরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সাঁইথিয়ারই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাসিন্দা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মেয়েটি সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বীরভূমের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “গুলি চালানোর অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ওই স্কুলে যায়। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জনতার ছোড়া ঢিলেই বরং কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” ধৃত শিক্ষককে আজ, শুত্রবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হবে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ও শিশু সুরক্ষা আইনের ৭/৯এফ/১১আই ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ওই স্কুলে একটি অনুষ্ঠান ছিল। পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই ঘটনার কথা জানাজানি হতে স্কুলের চিত্র পাল্টে যায়। নিগৃহীতা ওই মেয়েটির পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরেই মেয়েটির উপরে নানা রকমের যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছিলেন। বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পরে মেয়েটি জানায়, তার বুকে ব্যাথা হচ্ছে। মেয়েটির ঠাকুমা তাঁকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করান। কিন্তু কী কারণে বুকে ব্যাথা তখনও তা স্পষ্ট হয়নি। পরে ওই ছাত্রীর পরিবার মেয়েটির এক সহপাঠীর কাছ থেকে জানতে পারে ঘটনার পিছনে রয়েছেন ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। মেয়েটির বাবা বলেন, “ওই সহপাঠীর থেকে জানতে পারি স্কুলের মিড-ডে মিল খাওয়ার পরে এবং ছুটি হয়ে গেলে ফাঁকা ক্লাসঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই শিক্ষক মেয়ের উপরে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন চালান। বুধবার স্কুলের টিফিন পিরিয়ডেও তিনি একই কাণ্ড করেছেন। তাতেও ওর শরীর খারাপ হয়।” |
|
স্কুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই দিন বিকেলেই মেয়েটির পরিবার সাঁইথিয়ার পদত্যাগী পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখকে ঘটনার কথা জানায়। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করতে বীরেন্দ্রবাবু ওই শিক্ষককের দেখা করার কথা ছিল। খবর ছড়াতেই স্কুল চত্বরে ভিড় জমতে শুরু করে। বিক্ষোভ শুরু হয় স্কুল চত্বরে। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রীর পরিবারের সদস্যেরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, গণপ্রহার শুরু হতে পারে, এই আশঙ্কায় ছাত্রীর এক জামাইবাবু শিক্ষককে একটি স্কুলঘরে তালা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে জনতা পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। উত্তেজিত এক সময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকেলও ছুড়তে শুরু করে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাঁদের দিকে তেড়ে যায়। অভিযোগ, এ সময়ই পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। মারমুখী জনতার হাত থেকে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে কোনও রকমে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষক অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। এর পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে। কারণ, সম্প্রতি আমি বাম শিক্ষক সংগঠন ছেড়ে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনে যুক্ত হয়েছি।” তাঁর দাবি, “বুধবার স্কুলেরই এক ছাত্রীর টিফিন বক্স হারিয়ে গিয়েছিল। তা ওই ছাত্রীর (নিগৃহীতা) কাছ থেকে পাওয়া যায়। আমি তখন ওকে আদর করে বুঝিয়ে বলি, এমনটা করা ঠিক নয়। এর বেশি কিছু হয়নি।” এ দিন উপস্থিত অন্য শিক্ষকেরা অবশ্য ঘটনা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সাঁইথিয়া চক্রের স্কুল পরিদর্শক দেবদীপ সরকার বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।”
এ দিকে, নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীর দিদি বলেন, “ও যখন খুব ছোট তখন আমার মা মারা যান। আমরা সকলে মিলে ওকে বড় করছি। একজন শিক্ষক শিশুর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটাতে পেরে, ভেবেই শিউড়ে উঠছি।” তাঁদের দাবি, ওই শিক্ষক স্কুলের অন্য কোনও মেয়ের সঙ্গে এমন কিছু ঘটিয়েছেন কিনা, তাও পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত। |
|
|
|
|
|