দু’দিন বাদেই প্রজাতন্ত্র দিবস। দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি আরোহী-বিহীন গাড়ি থেকে উদ্ধার হল প্রায় ৭০ কেজি ‘পাওয়ার জেল’ এবং হাজার ছয়েক ডিটোনেটর। কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে সেগুলি কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল, তা জানা যায়নি। কিন্তু গোটা ঘটনায় রাজ্য প্রশাসন উদ্বিগ্ন।
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, নম্বর প্লেট দেখে প্রথমে মনে করা হচ্ছিল গাড়িটি ছত্তীসগঢ়ের। পরে যন্ত্রাংশের নম্বর পরীক্ষা করে বোঝা যায়, সেটি আসলে মধ্যপ্রদেশের বিদিশা এলাকার গাড়ি। এর পিছনে ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখছে রাজ্য। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে এই রাজ্যকে উপদ্রুত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও প্রশাসনের আশঙ্কা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ জাতীয় সড়কে টহলদার পুলিশ মুচিপাড়া ব্রিজের কাছাকাছি জায়গায় একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। পুলিশের সন্দেহ হয়। গাড়ির ভিতরে তল্লাশি চালিয়ে ছ’টি বস্তা পাওয়া যায়। পরীক্ষা করে পুলিশ দেখে, পাঁচটির ভিতরে ডিটোনেটর রয়েছে। গড়ে প্রতিটিতে প্রায় বারোশো হিসাবে ডিটোনেটরের সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। অন্য বস্তাটিতে রয়েছে বিস্ফোরক সামগ্রী ‘পাওয়ার জেল’। গাড়ি এবং বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করে নিউটাউন শিপ থানার বিধাননগর ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
কে কেন ফেলে গেল গাড়িটি? |
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছিল গাড়ির আরোহীরা। রাস্তায় নিয়মিত পুলিশের টহলদারি দেখে তারা আর গাড়িটি সারানোর ঝুঁকি নেয়নি। মাঝরাস্তায় গাড়ি ফেলেই তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, আসানসোল-রানিগঞ্জে কয়লাখনি এলাকায় ডিটোনেটর নিয়মিত লাগে। তা চুরি করে দুষ্কৃতীরা অনেক সময়েই খনির বাইরে নিয়ে আসে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলেই মনে করছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, উদ্ধার হওয়া ডিটোনেটরগুলি কয়লা খনিতে ব্যবহারের জন্য নয়। অন্য কোনও উদ্দেশ্যে সেগুলি ব্যবহার করা হয়। ছ’টি বস্তার পাঁচটি দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এবং একটি কর্ণাটকের এক চিনি কারখানার। গাড়ির নম্বর ছত্তীসগঢ়ের, যন্ত্রাংশ মধ্যপ্রদেশের ছাপ দেওয়া। দুই রাজ্যেই মাওবাদী তৎপরতা যথেষ্ট। ফলে, এই ঘটনায় মাওবাদীদের যোগ থাকা অসম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবস বা তার আগে কোনও নাশকতামূলক কাজে এগুলি ব্যবহারের উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে।”
রাতে আবার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, গাড়িটিকে ধাওয়া করে ধরা হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে টহলদার বাহিনী ছোট থাকায় চালক বা আরোহীদের ধরা যায়নি। তদন্তের জন্য কয়েকটি রাজ্যে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাড়ির আরোহীদের ধরার চেষ্টা চলছে।” |