রাজ্যে তিনটি কৃষি কলেজ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। দু’টি কৃষি কলেজ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এবং একটি উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকবে। বর্ধমান সদর, বাঁকুড়ার শুশুনিয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে কৃষি কলেজ হবে। রাজ্য কৃষি দফতরের বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের জমিতেই কলেজ তিনটি গড়ে তোলা হবে। ফলে কলেজের জন্য নতুন করে জমি খুঁজতে হবে না। তাতে অনেকটা সময় এবং অর্থ দু’টোই বাঁচবে বলে মনে করছেন রাজ্যের কৃষি কর্তারা। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই প্রকল্প প্রস্তাব জমা পড়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভায় তা গৃহীত হয়েছে। তিনটি কলেজে ২৫টি করে আসন থাকবে বলে জানা গিয়েছে। ২৫টি আসনের মধ্যে ৪০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। কৃষি বিজ্ঞানের ১১টি বিষয়কে যুক্ত করে পাঠক্রম চালু করা হবে বলে জানা গিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা ছেলেমেয়ে এই কলেজে পড়ার সুযোগ পাবে। মাধ্যমিকস্তরে পরীক্ষার মূল্যায়ণও ভর্তির সময়ে করা হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যে দু’টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে প্রায় ১০০ জন কৃষি স্নাতক বের হন। চাকরির বাজারে তাঁদের যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে। রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রেই বছরে প্রায় ১০০ জন কৃষি স্নাতকের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সার ও কীটনাশক কোম্পানি, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, কৃষি পণ্য ও বিপণন কোম্পানিতেও কৃষি স্নাতকদের চাহিদা রয়েছে। আগামী দিনে সে চাহিদা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে বিভিন্ন বণিকসভা। সে কথা মাথায় রেখেই তিনটি কলেজে প্রায় ৭৫ জন ছাত্র প্রতি বছরে তৈরি করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পানাগড়ে মাটি উৎসবে তিনটি কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করবেন বলে জানা গিয়েছে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কলেজ তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই আপাতত ওই দু’টি জায়গায় ক্যাম্পাস করা হবে। তাতে আইনি সমস্যা হবে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্লাস শুরু হবে। দু’বছরের মধ্যে কলেজের নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে তার অনুমোদন দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি কৃষি দফতরের স্টেট এগ্রিকালচারাল টেকনোলজিস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (সাটসা)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম ভৌমিক বলেন, “এতে কৃষি নিয়ে ভিন্ রাজ্যে পড়তে যাওয়া ছাত্রের সংখ্যা কমবে। প্রয়োজনীয় কৃষি স্নাতক পাওয়া যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার নিজে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি স্নাতক। দীর্ঘদিন তিনি বেসরকারি সংস্থার উচ্চ পদে কাজ করেছেন। বললেন, “আমার কর্মজীবনে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ জন কৃষি স্নাতককে চাকরি দিয়েছি। কৃষি পরিবার থেকে স্নাতক হলে সমস্যার সমাধান অনেকটা সহজ হবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলার চাষি পরিবারকে প্রযুক্তিগত ভাবে স্বয়ম্ভর করে তুলবে।” |